জিন্নার একমাত্র জীবিত বংশধর ভারতের ধনকুবের শিল্পপতি
জিন্নার একমাত্র জীবিত বংশধর
ভারতের ধনকুবের শিল্পপতি
নয়াদিল্লি:
জন্ম পাকিস্তানে অথচ বেড়ে উঠেছেন ভারতে, এমন খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বদের
তালিকা বেশ লম্বা। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। প্রখ্যাত গীতিকার ও
চলচ্চিত্র পরিচালক গুলজার। ঋষি কাপুরদের পৈতৃক ভিটেও পাকিস্তানের
পেশোয়ারে। বলে শেষ করা যাবে না। দেশভাগের সময় অনেকেই পরিবার পরিজনদের নিয়ে
এদেশে এসেছেন। তারপর নিজেদের ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেছেন। এই তথ্যে
বিস্ময়ের কিছু নেই। কিন্তু খোদ পাকিস্তানের জন্মদাতা যিনি, সেই
‘কয়েদ-ই-আজম’ মহম্মদ আলি জিন্নার নাতি কি না আগাগোড়া ভারতীয় নাগরিক — এই
খবরে সামান্য হলেও কৌতূহল তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। আর সেই কৌতূহলের পারদ আরও
কিছুটা চড়তে পারে অন্য একটি তথ্যে। সেটি হল, জিন্নার সরাসরি বংশধরদের মধ্যে
তিনিই একমাত্র জীবিত। তিনি ছাড়া ভারত কিংবা পাকিস্তানে জিন্না’র আর কোনও
উত্তরসূরী নেই। সেই ভদ্রলোক অবশ্য মোটেও খবরের আড়ালে থাকা ছাপোষা ব্যক্তি
নন। বরং, ভারতীয় শিল্পমহলে তাঁর নাম আজও সম্ভ্রমের সঙ্গে উচ্চারিত হয়। তিনি
নুসলি ওয়াদিয়া। ভারতের প্রথমসারির শিল্পপতিদের একজন। ধনকুবের। বাণিজ্যের
দুনিয়ায় তাঁর উত্থানের কাহিনী যেমন চমকপ্রদ। তেমনই বিস্ময়কর হচ্ছে নুসলির
ব্যক্তি জীবনের অতীত ইতিহাসও।
ঐতিহাসিকদের একটা বড় অংশ মনে করেন, ভারত ভাগের সলতে পাকানোয় প্রত্যক্ষ মদত ছিল জিন্নার। সেই কাজে তিনি সফলও হয়েছিলেন। অর্জন করেছিলেন পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেলের পদ। কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে, অনুগামীদের পাশে পেলেও নিজের মেয়েকেই দেশে ফেরাতে ব্যর্থ হন তিনি। এর নেপথ্যের কাহিনি পরে খোলসা করেন জিন্নার সেই সময়ের সহকারী মহম্মদ আলি করিম। তিনি এক জায়গায় জানিয়েছেন, জিন্নার মেয়ে দিনা ছিলেন হুবহু তাঁর বাবার ছাঁচে গড়া। ডাকাবুকো আর ঠোঁটকাটা। উনিশ বছর বয়সেই দিনা মুম্বইয়ের শিল্পপতি নেভিল ওয়াদিয়ার প্রেমে পড়েন। তারপর অনেক ভেবেচিন্তে দু’জনে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বাবাকে না জানিয়ে কিছুতেই এক পা এগতে চাননি দিনা। একদিন সাহস করেই জিন্নার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সবকিছু খুলে বলেন তিনি। ফল যা হওয়ার তাই হয়। স্বাভাবিকভাবেই বেঁকে বসেন জিন্না। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এ বিয়ে কোনওমতেই হতে পারে না। একজন পার্সি ছেলের হাতে মেয়েকে কিছুতেই তুলে দিতে পারেন না তিনি। দেশে তো অনেক মুসলিম ছেলে রয়েছে। তাঁদের কাউকেই কি দিনার পছন্দ নয়? সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন জিন্না। কিন্তু ক্রুদ্ধ জিন্নাহ চোখে চোখ রেখে ধীর গলায় দিনা এর জবাবে যা বলেছিলেন, তা কোনও মুসলিম পরিবারের মেয়ের পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল কি না সন্দেহ। করিমের কথা ধার করে বললে দিনার জবাব ছিল এরকম— ‘বাবা, তাহলে আপনি ভারতে হাজারো মুসলিম মেয়ে থাকা সত্ত্বেও বেছে বেছে কেন একজন পার্সি রমণীকেই ঘরে আনলেন?’ দিনার মা রতনবাঈ পেটিট ছিলেন পার্সি। বিয়ের পর তিনি মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন। নাম পাল্টে রাখেন মারিয়ম।
যাইহোক, দিনার স্পষ্ট জবাবের ফল ভালো হয়নি। বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। মুম্বইয়ে ফিরে নেভিলের সঙ্গে নতুন করে সংসার পাতেন। এর পরই দম্পতির কোল আলো করে জন্ম নেন নুসলি। বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় আর কোনওদিন পাকিস্তানে যাননি দিনা। যাবতীয় পারিবারিক সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন ভারতীয় নাগরিকের পরিচয়েই বাকি জীবন কাটিয়েছেন। ছেলেকেও সেই আদর্শে বড় করে তুলেছেন দিনা। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে মৃত্যু হয় তাঁর। মা’য়ের একগুঁয়ে স্বভাব অর্জন করেছেন নুসলি। টাটা-বিড়লা, আম্বানি-আদানিদের বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় তিনিও সমানে টক্কর দিয়ে চলেছেন। হাজার হোক, দোর্দন্ড ‘কয়েদ-ই-আজম’-এর রক্ত বইছে তাঁর শরীরে। যুদ্ধের আগে পরাজয় স্বীকারের অর্থ নুসলির অজানা!
নুসলি ওয়াদিয়া
ঐতিহাসিকদের একটা বড় অংশ মনে করেন, ভারত ভাগের সলতে পাকানোয় প্রত্যক্ষ মদত ছিল জিন্নার। সেই কাজে তিনি সফলও হয়েছিলেন। অর্জন করেছিলেন পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেলের পদ। কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে, অনুগামীদের পাশে পেলেও নিজের মেয়েকেই দেশে ফেরাতে ব্যর্থ হন তিনি। এর নেপথ্যের কাহিনি পরে খোলসা করেন জিন্নার সেই সময়ের সহকারী মহম্মদ আলি করিম। তিনি এক জায়গায় জানিয়েছেন, জিন্নার মেয়ে দিনা ছিলেন হুবহু তাঁর বাবার ছাঁচে গড়া। ডাকাবুকো আর ঠোঁটকাটা। উনিশ বছর বয়সেই দিনা মুম্বইয়ের শিল্পপতি নেভিল ওয়াদিয়ার প্রেমে পড়েন। তারপর অনেক ভেবেচিন্তে দু’জনে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বাবাকে না জানিয়ে কিছুতেই এক পা এগতে চাননি দিনা। একদিন সাহস করেই জিন্নার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সবকিছু খুলে বলেন তিনি। ফল যা হওয়ার তাই হয়। স্বাভাবিকভাবেই বেঁকে বসেন জিন্না। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এ বিয়ে কোনওমতেই হতে পারে না। একজন পার্সি ছেলের হাতে মেয়েকে কিছুতেই তুলে দিতে পারেন না তিনি। দেশে তো অনেক মুসলিম ছেলে রয়েছে। তাঁদের কাউকেই কি দিনার পছন্দ নয়? সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন জিন্না। কিন্তু ক্রুদ্ধ জিন্নাহ চোখে চোখ রেখে ধীর গলায় দিনা এর জবাবে যা বলেছিলেন, তা কোনও মুসলিম পরিবারের মেয়ের পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল কি না সন্দেহ। করিমের কথা ধার করে বললে দিনার জবাব ছিল এরকম— ‘বাবা, তাহলে আপনি ভারতে হাজারো মুসলিম মেয়ে থাকা সত্ত্বেও বেছে বেছে কেন একজন পার্সি রমণীকেই ঘরে আনলেন?’ দিনার মা রতনবাঈ পেটিট ছিলেন পার্সি। বিয়ের পর তিনি মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন। নাম পাল্টে রাখেন মারিয়ম।
যাইহোক, দিনার স্পষ্ট জবাবের ফল ভালো হয়নি। বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। মুম্বইয়ে ফিরে নেভিলের সঙ্গে নতুন করে সংসার পাতেন। এর পরই দম্পতির কোল আলো করে জন্ম নেন নুসলি। বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় আর কোনওদিন পাকিস্তানে যাননি দিনা। যাবতীয় পারিবারিক সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন ভারতীয় নাগরিকের পরিচয়েই বাকি জীবন কাটিয়েছেন। ছেলেকেও সেই আদর্শে বড় করে তুলেছেন দিনা। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে মৃত্যু হয় তাঁর। মা’য়ের একগুঁয়ে স্বভাব অর্জন করেছেন নুসলি। টাটা-বিড়লা, আম্বানি-আদানিদের বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় তিনিও সমানে টক্কর দিয়ে চলেছেন। হাজার হোক, দোর্দন্ড ‘কয়েদ-ই-আজম’-এর রক্ত বইছে তাঁর শরীরে। যুদ্ধের আগে পরাজয় স্বীকারের অর্থ নুসলির অজানা!
নুসলি ওয়াদিয়া
শেয়ার করেছেন :- প্রণব কুমার কুণ্ডু
প্রণব কুমার কুণ্ডু
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন