পুরুলিয়ার লাবণ্যপ্রভা ঘোষ
শেয়ার করেছেন :- প্রণব কুমার কুণ্ডু
প্রণব কুমার কুণ্ডু
স্মরণ করি ...
***********************************************
লাবণ্য প্রভা ঘোষ (১৪ই আগস্ট,১৮৯৭-১১ই এপ্রিল,২০০৩) ভারতের একজন গান্ধীবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং মানভূম জেলায় অনুষ্ঠিত বাংলা ভাষা আন্দোলনের একজন নেত্রী ছিলেন। জীবনের শেষভাগে তিনি দারিদ্র্যপীড়িত অবস্থায় একটি আশ্রমে বসবাস করেন। তাঁর একমাত্র আয় ছিল স্বাধীনতা যোদ্ধাদের দেওয়া ভাতা। ভারতের স্বাধীনতার আগে ও পরে সারা জীবন তিনি সাধারণ মানুষের অধিকারের জন্য লড়ে গেছেন।
লাবণ্য প্রভা ১৮৯৭ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ই আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৮ খ্রীষ্টাব্দে এগারো বছর বয়সে স্বাধীনতা সংগ্রামী অতুলচন্দ্র ঘোষের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। তিনি কখনও বিদ্যালয়ে যান নি, তবে তাঁর বাবা তাঁকে শিখিয়েছিলেন। তাঁর পিতা ঋষি নবারুন চন্দ্রও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। পিতা ঋষি নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্ত, লাবণ্য প্রভা ও তার স্বামী একত্রে পুরুলিয়ায় “শিল্পাশ্রম” স্থাপন করেন। এই স্থানে সুভাষ চন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাশ ও অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী জড়ো হতেন। তিনি ছিলেন পুরুলিয়ার প্রথম মহিলা MLA, যিনি লোক সেবক সংঘের হয়ে নির্বাচিত হন। তিনি মানভূম অঞ্চলে স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র "শিল্পশ্রমে" সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি পুরুলিয়ার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় নেতৃত্ব দেন। তার পুত্র অরুণ চন্দ্র ঘোষ এবং ঊর্মিলা মজুমদারও স্বাধীনতা আন্দোলনে ছিলেন এবং তারাও মায়ের সঙ্গে শিল্পাশ্রমে থাকতেন।
লাবণ্য প্রভা শিল্পাশ্রমের সক্রিয় সদস্য হিসেবে মানভূম অঞ্চল থেকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি তার স্বামী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সাপ্তাহিক সাময়িকী “মুক্তি”-তে লেখালেখি করতে এবং ১৯৬১ সালে তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পরে তিনি সাময়িকীর সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
তিনি ১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত লবণ সত্যাগ্রহ, ১৯৪২ খ্রীষ্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলন ও ১৯৪৫ খ্রীষ্টাব্দের পতাকা সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগদান করে বহুবার কারাবরণ করেন। ১৯৪১ সালে তিনি পৃথক সত্যগ্রহ পালন করেছিলেন এবং ব্রিটিশরা তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। ১৯৪২ সালে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে ভারতছাড় আন্দোলনের অংশ হিসাবে লাবণ্য প্রভা ঘোষ এবং তাঁর কন্যা কমলা ঘোষ একত্রে মিলে পুরুলিয়ার শিল্পআশ্রমে প্রতিবাদের আয়োজন করেছিলেন এবং উভয়কে ব্রিটিশরা গ্রেপ্তার করেছিল। তিনি ব্রিটিশ রাজত্বকালে পুরুলিয়ায় হওয়া বেশ কয়েকটি বিক্ষোভের শীর্ষনেত্রী ছিলেন।
ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর লাবণ্য প্রভা বিহারের মানভূম জেলায় বাংলা ভাষা আন্দোলনে যোগদান করেন। এই আন্দোলনে তিনি তিনবার গ্রেপ্তার হন। ১৯৫৬ খ্রীষ্টাব্দের ২০শে এপ্রিল তিনি পাকবিড়া গ্রাম থেকে কলকাতা শহরের দিকে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রার নেতৃত্ব দেন ও ৭ই মে কলকাতা পৌঁছালে কারাবরণ করেন।
ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য ভাষাশহীদ স্মারক সমিতির পক্ষ থেকে ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে সমাদৃত করেছিলেন।
২০০৩ খ্রীষ্টাব্দের ১১ই এপ্রিল ১০৬ বছর বয়সে অত্যন্ত দরিদ্র অবস্থায় তাঁর মৃত্যু ঘটে।
(সৌজন্যে : উইকিপিডিয়া)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন