বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২০

জাতীয় পতাকা

 

স্মৃতি :  জাতীয় পতাকা

সেটিংস
আমরা আশা করি আপনি Facebook-এ আপনার অতি সাম্প্রতিক স্মৃতিগুলি থেকে অনেক দিন আগের স্মৃতিগুলি আবার ফিরে দেখা উপভোগ করবেন।
 
সবাই এর সাথে শেয়ার করা হয়েছে

🇮🇳 পতাকার ইতিহাস 🇮🇳
কোনো পতাকাই কেবল এক খন্ড রঙিন কাপড় মাত্র নয় -- প্রতীক ৷
জাতীয় পতাকা হল রাষ্ট্রের প্রতিনিধি তথা প্রাণময় জীবন-দর্শন যার মাধ্যে দিয়ে প্রতিবিম্বিত হয় জাতির সামগ্রিক রাষ্ট্র-চরিত্র |
 
জাতীয় পতাকার মর্যাদা সম্পর্কে কতখানি অনুভূতিপ্রবণ ও কর্তব্যনিষ্ঠ হওয়া উচিত সে সম্পর্কে একটা ঘটনার কথা তুলে ধরলাম ১৯৬৮ সালের ১লা জানুয়ারী ভারত - ওয়েষ্ট ইণ্ডিজের তৃতীয় টেষ্টের তৃতীয় ম্যাচে কলকাতার রনজি ষ্টেডিয়ামে হঠাৎ গোলমাল শুরু হয়ে যায় | ষ্টেডিয়ামের এক কোনায় আগুন দেখা যায় সেই খানেই যুগপৎ উড়ছিল দুই দেশের জাতীয় পতাকা , সঙ্গে সঙ্গে ভয়ঙ্কর আগুনের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওয়েষ্ট ইণ্ডিজ দলের সেবারের দলের সহ-অধিনায়ক কনারড় হান্ট এবং পাতনোন্মুখ ওয়েষ্ট ইণ্ডিজের পতাকা কাঁধে তুলে নিয়ে প্রায় মৃত্যুমুখ থেকে বেরিয়ে এলেন ,
জাতীয় পতাকা জীবনের চেয়েও বড় তার একটি দূষ্টান্ত রাখলেন হান্ট I
 
পরাধীন ভারত স্বাধীন হবে ,স্বাধীন ভারতে জাতীয় পতাকা কেমন হবে তার চর্চা শুরু হয়েছে ,
ধারাবাহিকভাবে জাতীয় পতাকা তৈরির প্রচেষ্ঠা শুরু হয় বঙ্গভঙ্গের সময়, ১৯০৫ সালে।
 
১৯০৫ সালে বারাণসীতে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেসন বসে ,ভগিনী নিবেদিতার নিবাসে জান জাতীয় নেতৃবৃন্দ , নিবেদিতার কাছে জাতীয় পতাকার পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত চান | নিবেদিতা যে পতাকার প্রস্তাব দেন.তা ছিল পূর্ণ #গৈরিক ৷ পতাকার মাঝখানে ছিল একটি বজ্রচিহ্নি এবং দেবনাগরীতে লেখা বন্দেমাতরম l পরের লক্ষ্মৌ অধিবেসনে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণবসত সেটি আর স্বীকৃত বা গৃহীত হয় নি |
 
তারপর ১৯০৬ সালের ৭ই আগষ্ট 'বয়কট দিবসে' কলকাতায় জাতীয় কংগ্রের প্রথম দলীয় পতাকা উত্তোলণ করেন রাষ্ট্রগুরু.সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ,যা পর্যায়ক্রমে গাঢ় সবুজ , গাঢ় হলুদ এবং গাঢ় লাল | সবুজ অংশে ছিল আটটি শ্বেত পদ্ম, হলুদ অংশে দেবনগরীতে লেখা বন্দেমাতরম ,লাল অংশে বাঁ দিকে সাদা রঙের সূর্য আর ডান দিকে সাদা রঙের অর্ধেচন্দ্র ও তারা ৷
 
১৯১৭ সালে কংগ্রেসের পাতাকা পরিবর্তন করে হোমরুল পতাকা করা হয় ,পরে অবশ্য এই পতাকাও বাতিল করা হয় ৷
 
১৯২০ সালে জাতীয় পতাকার কথা চিন্তা করা হয় আন্দোলনকে জোরদার করার জন্য , বিজয়ওয়াড়া কংগ্রেস অধিবেশনে মাদাম কমা প্রস্তাবিত তেরঙা পতাকা টা ছিল এই রকম যথাক্রমে সবুজ মুসলিমদেয় জন্য ,সাদা খৃষ্টান আর লাল হিন্দুদের জন্য আর মাঝ খানে একটি চরকা | এখানেও নিবেদিতার প্রস্তাবিত গেরুয়া স্থান পেল না, দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ হিন্দুদের জন্য দেওয়া হলো লাল তাও আবার সবার নীচে | 
 
এই সিদ্ধান তেও সবাই রাজি নন, পতাকাটি সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির অনুমোদন না পাওয়া সত্বেও বিভিন্ন কংগ্রেস সন্মেলনে কিন্তু উত্তোলিত হতে থাকে ৷
 
গঠন করা হলো ফ্ল্যাগ কমিটি ১৯৩১ সালে করাচীতে কংগ্রেসের জাতীয় কার্যকরী সমিতির অধিবেশনে | ৭ জন বিশিষ্ট সদস্য কে নিয়ে গঠিত হয় ফ্ল্যাগ কমিটি ,আহায়ক ছিলেন ডঃ পট্টভি সীতারামাইয়া , অন্যান্য সদস্যরা হলেন জহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, অধ্যক্ষ ডি পি কালেলকর, ডঃ এন এস হার্ডিকর এবং মাষ্টার তারা সিং |
 
ফ্ল্যাগ কমিটি কিছু প্রশ্নমালা তৈরি করে বিভিন্ন প্রদেশে পাঠানো হলো যে স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা কেমন হওয়া উচিত ,মতামত জানানোর শেষ দিন ১ জুন ধার্য করা হলেও ৫ জুলাই পর্যন্ত গৃহীত হয় |
 
১৯৩১ সালের ৮ ও ৯ জুলাই ফ্ল্যাগ কমিটির দুটি বৈঠক রাখা হয় , সমস্থ প্রদেশের লিখিত মতামত আসে ,তাতে দেশের জাতীয় পতাকা হবে পূর্ণ #গৈরিক সবাই এই মতদেন l
 
ফ্ল্যাগ কমিটি সিদ্ধান্ত নিলেন ভারতের জাতীয় পতাকা হবে পূর্ণ গৈরিক আর তার মাঝে একটা অন্য রঙের চরকা থাকবে , এটা ছিল সিদ্ধান্ত ৷ কংগ্রেসের তিরঙা পতাকা নিয়েও বিস্তর চিন্তা ভাবনা চলে , এক প্রকার জোর করেই পাশ করা হয় কংগ্রেসের তিরঙা পতাকাকে I
 
এবার দেখা যাক, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কারো সঙ্গে কারো যোগাযোগ নেই তা সত্তেও জাতীয় পতাকা পূর্ণ গৈরিক হোক একি ভাবনা সবার মনে এলো কোথা থেকে |
 
গৈরিক পতাকা ভারতে প্রাচীন পরম্পরা অনুসারে প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে 
 
*ছোট ছোট রাজ্য কে একত্রিত করে এক বিরাট রাষ্ট্রের স্থাপন করে ছিলেন ইন্দ্র ,ইন্দ্রের পতাকা ছিল #গৈরিক |
 
*বাল্মিকি রামায়ণে উল্লেখ আছে রামের স্বর্ণধ্বজার ৷
 
*মহাভারতে পাওয়া যায় অর্জুনের রত্নজ্যেতি সিন্দুর অর্থাৎ #গেরুয়া পতাকার কথা,
 
* শ্রীকৃষ্ণের রথের মাথায় উড়তো গরুড় চিহ্নিত #গেরুয়া পতাকা।
 
* কৌরব দের একমাত্র বোন দুঃশলার স্বামী সিন্ধুর রাজা জয়দ্রথের ছিল বরাহ চিহ্নিত #গৈরিক পতাকা ৷
 
*ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের পতাকা ছিল #গৈরিক ৷
 
*হরিহর বুক্ক ,প্রতাপ রুদ্র প্রভৃতি রাজা নিজের স্বাধীন রাজ্যের প্রতীক ছিল #গৈরিক I
 
প্রাচীন এতিহ্যের সঙ্গে পরম্পরাগতভাবে সম্পর্কিত তা হল গৈরিক ,তাই সমস্থ ভোট গৈরিক পতাকে সমর্থন করেছিল ৷
১৯২৯ সালে শিখ প্রতিনিধিরা গান্ধিজির সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় পতাকা যাতে গৈরিক হয় তার চাপ সৃষ্টি করেছিল |
বৌদ্ধদেরও আপত্তির কোনো কারণ ছিল না ,স্বয়ং বুদ্ধদেব ছিলেন গৈরিক ধারী মন্ন্যাসী |
 
মুসলিম দেরো আপত্তির কোনো কারণ ছিল না , 
 
শোনা যায় পয়গম্বর হজরত মহম্মদ নিজেও একটি যুদ্ধে গৈরিক পতাকা বহন করেছিলেন (১৯৬৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর , অর্গানাইজার পত্রিকাতে প্রকাশিত তথ্য) এবং Constituent Assembly তে পতাকা সম্পর্কে আলোচনা চলাকালীন এক মুস্লিম সদস্য সৈয়দ মহম্মদ সাদুল্লা গৈরিক পতাকা কেই সমর্থন করেন I
 
ডাঃ হেডগেওয়ার, ডাঃ রাধাকৃষ্ণন্‌ ,ডাঃ সুনীতিকুমার চ্যাটার্জী ,ডঃ আম্বেদকর প্রমূখ ব্যাক্তিত্ব গৈরিক পতাকার সমর্থনেই ছিলেন |
 
শেষ পর্যন্ত ১৯৪৭ সালের ২২ শে জুলাই গান্ধী-নেহরু মানসিকতাবাদীদের সমর্থনের জোরে ১৯৩১ সালের প্রস্বাবিত তেরঙা পতাকাই গৃহীত হল | 
তবে ডঃ আম্বেদকরের আপ্রাণ প্রচেষ্টার ফলে কংগ্রেসের চরকার বদলে হলো অশোকের ধর্মচক্র | 
গান্ধীজি এতেও রাজি হচ্ছিলেন না | 
পণ্ডিত নেহরু গান্ধীকে আশ্বস্ত করেন যে এই চক্রটি আসলে চরকারই চাকা এবং যথেষ্ট সদ্ধেহ থাকা সত্তেও গান্ধীজী নেহরুর কথা মেনে নেন ৷ 
দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যে মহামতি অশোক প্রতিষ্ঠিত মহান ধর্মের পরিবর্তনশীল চক্র কে শেষ পর্যন্ত চরকার চাকা বলে চালাতে হল I
 
১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট লালকেল্লায় চক্র শোভিত তেরঙা পতাকা প্রথম উত্তোলিত হয় ৷ বলা হয় এটি ভারতবাসীর প্রগতির প্রতীক ৷
এই পতাকা নির্ধারিত হয়ে যাবার পরও ঠিক হল ভারতের প্রদেশগুলির রাজ্যপালরা জাতীয় পতাকার পাশাপাশি.ব্যবহার করবেন অশোকস্তম্ভ ও `সত্যেমেব জয়তে' লেখা #গেরুয়া পতাকা ৷
 
প্রচ্ছন্নভাবে হলেও স্বীকার করে নেওয়া হলো গৈরিক পতাকাই ভারতবর্ষের সনাতন পরম্পরার জাতীয় প্রতীক |
 
এই হলো ভারতের জাতীয় পতাকার ইতিহাস |
 
আমি গর্বিত আমি ভারতবাসী এবং তিরঙা পতাকার প্রতি আমার যথাযোগ্য সন্মান |
 
তথ্যসুত্র:- *.গৈরিক পতাকা,
*স্বস্তিকা পত্রিকা ৷
বুবুল মাহাত
সবার সাথে শেয়ার করা হয়েছে
 
 
 
 
 
 
 
 
 
প্রণব কুমার কুণ্ডু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন