স্মৃতি : জাতীয় পতাকা
সেটিংস
আমরা আশা করি আপনি Facebook-এ আপনার অতি সাম্প্রতিক স্মৃতিগুলি থেকে অনেক দিন আগের স্মৃতিগুলি আবার ফিরে দেখা উপভোগ করবেন।
সবাই এর সাথে শেয়ার করা হয়েছে
পতাকার ইতিহাস
কোনো পতাকাই কেবল এক খন্ড রঙিন কাপড় মাত্র নয় -- প্রতীক ৷
জাতীয় পতাকা হল রাষ্ট্রের প্রতিনিধি তথা প্রাণময় জীবন-দর্শন যার মাধ্যে দিয়ে প্রতিবিম্বিত হয় জাতির সামগ্রিক রাষ্ট্র-চরিত্র |
জাতীয়
পতাকার মর্যাদা সম্পর্কে কতখানি অনুভূতিপ্রবণ ও কর্তব্যনিষ্ঠ হওয়া উচিত
সে সম্পর্কে একটা ঘটনার কথা তুলে ধরলাম ১৯৬৮ সালের ১লা জানুয়ারী ভারত -
ওয়েষ্ট ইণ্ডিজের তৃতীয় টেষ্টের তৃতীয় ম্যাচে কলকাতার রনজি ষ্টেডিয়ামে
হঠাৎ গোলমাল শুরু হয়ে যায় | ষ্টেডিয়ামের এক কোনায় আগুন দেখা যায় সেই
খানেই যুগপৎ উড়ছিল দুই দেশের জাতীয় পতাকা , সঙ্গে সঙ্গে ভয়ঙ্কর আগুনের
মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওয়েষ্ট ইণ্ডিজ দলের সেবারের দলের সহ-অধিনায়ক কনারড়
হান্ট এবং পাতনোন্মুখ ওয়েষ্ট ইণ্ডিজের পতাকা কাঁধে তুলে নিয়ে প্রায়
মৃত্যুমুখ থেকে বেরিয়ে এলেন ,
জাতীয় পতাকা জীবনের চেয়েও বড় তার একটি দূষ্টান্ত রাখলেন হান্ট I
পরাধীন ভারত স্বাধীন হবে ,স্বাধীন ভারতে জাতীয় পতাকা কেমন হবে তার চর্চা শুরু হয়েছে ,
ধারাবাহিকভাবে জাতীয় পতাকা তৈরির প্রচেষ্ঠা শুরু হয় বঙ্গভঙ্গের সময়, ১৯০৫ সালে।
১৯০৫
সালে বারাণসীতে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেসন বসে ,ভগিনী নিবেদিতার নিবাসে জান
জাতীয় নেতৃবৃন্দ , নিবেদিতার কাছে জাতীয় পতাকার পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত চান
| নিবেদিতা যে পতাকার প্রস্তাব দেন.তা ছিল পূর্ণ #গৈরিক
৷ পতাকার মাঝখানে ছিল একটি বজ্রচিহ্নি এবং দেবনাগরীতে লেখা বন্দেমাতরম l
পরের লক্ষ্মৌ অধিবেসনে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণবসত সেটি আর স্বীকৃত বা গৃহীত
হয় নি |
তারপর
১৯০৬ সালের ৭ই আগষ্ট 'বয়কট দিবসে' কলকাতায় জাতীয় কংগ্রের প্রথম দলীয়
পতাকা উত্তোলণ করেন রাষ্ট্রগুরু.সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ,যা
পর্যায়ক্রমে গাঢ় সবুজ , গাঢ় হলুদ এবং গাঢ় লাল | সবুজ অংশে ছিল আটটি
শ্বেত পদ্ম, হলুদ অংশে দেবনগরীতে লেখা বন্দেমাতরম ,লাল অংশে বাঁ দিকে সাদা
রঙের সূর্য আর ডান দিকে সাদা রঙের অর্ধেচন্দ্র ও তারা ৷
১৯১৭ সালে কংগ্রেসের পাতাকা পরিবর্তন করে হোমরুল পতাকা করা হয় ,পরে অবশ্য এই পতাকাও বাতিল করা হয় ৷
১৯২০
সালে জাতীয় পতাকার কথা চিন্তা করা হয় আন্দোলনকে জোরদার করার জন্য ,
বিজয়ওয়াড়া কংগ্রেস অধিবেশনে মাদাম কমা প্রস্তাবিত তেরঙা পতাকা টা ছিল এই
রকম যথাক্রমে সবুজ মুসলিমদেয় জন্য ,সাদা খৃষ্টান আর লাল হিন্দুদের জন্য আর
মাঝ খানে একটি চরকা | এখানেও নিবেদিতার প্রস্তাবিত গেরুয়া স্থান পেল
না, দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ হিন্দুদের জন্য দেওয়া হলো লাল তাও আবার সবার নীচে
|
এই
সিদ্ধান তেও সবাই রাজি নন, পতাকাটি সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির অনুমোদন না
পাওয়া সত্বেও বিভিন্ন কংগ্রেস সন্মেলনে কিন্তু উত্তোলিত হতে থাকে ৷
গঠন
করা হলো ফ্ল্যাগ কমিটি ১৯৩১ সালে করাচীতে কংগ্রেসের জাতীয় কার্যকরী
সমিতির অধিবেশনে | ৭ জন বিশিষ্ট সদস্য কে নিয়ে গঠিত হয় ফ্ল্যাগ কমিটি
,আহায়ক ছিলেন ডঃ পট্টভি সীতারামাইয়া , অন্যান্য সদস্যরা হলেন জহরলাল
নেহরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, অধ্যক্ষ ডি পি
কালেলকর, ডঃ এন এস হার্ডিকর এবং মাষ্টার তারা সিং |
ফ্ল্যাগ
কমিটি কিছু প্রশ্নমালা তৈরি করে বিভিন্ন প্রদেশে পাঠানো হলো যে স্বাধীন
ভারতের জাতীয় পতাকা কেমন হওয়া উচিত ,মতামত জানানোর শেষ দিন ১ জুন ধার্য
করা হলেও ৫ জুলাই পর্যন্ত গৃহীত হয় |
১৯৩১
সালের ৮ ও ৯ জুলাই ফ্ল্যাগ কমিটির দুটি বৈঠক রাখা হয় , সমস্থ প্রদেশের
লিখিত মতামত আসে ,তাতে দেশের জাতীয় পতাকা হবে পূর্ণ #গৈরিক সবাই এই মতদেন
l
ফ্ল্যাগ
কমিটি সিদ্ধান্ত নিলেন ভারতের জাতীয় পতাকা হবে পূর্ণ গৈরিক আর তার মাঝে
একটা অন্য রঙের চরকা থাকবে , এটা ছিল সিদ্ধান্ত ৷ কংগ্রেসের তিরঙা পতাকা
নিয়েও বিস্তর চিন্তা ভাবনা চলে , এক প্রকার জোর করেই পাশ করা হয় কংগ্রেসের
তিরঙা পতাকাকে I
এবার দেখা যাক, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কারো সঙ্গে কারো যোগাযোগ নেই তা সত্তেও জাতীয় পতাকা পূর্ণ গৈরিক হোক একি ভাবনা সবার মনে এলো কোথা থেকে |
গৈরিক পতাকা ভারতে প্রাচীন পরম্পরা অনুসারে প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে
*ছোট ছোট রাজ্য কে একত্রিত করে এক বিরাট রাষ্ট্রের স্থাপন করে ছিলেন ইন্দ্র ,ইন্দ্রের পতাকা ছিল #গৈরিক |
*বাল্মিকি রামায়ণে উল্লেখ আছে রামের স্বর্ণধ্বজার ৷
*মহাভারতে পাওয়া যায় অর্জুনের রত্নজ্যেতি সিন্দুর অর্থাৎ #গেরুয়া পতাকার কথা,
* শ্রীকৃষ্ণের রথের মাথায় উড়তো গরুড় চিহ্নিত #গেরুয়া পতাকা।
* কৌরব দের একমাত্র বোন দুঃশলার স্বামী সিন্ধুর রাজা জয়দ্রথের ছিল বরাহ চিহ্নিত #গৈরিক পতাকা ৷
*ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের পতাকা ছিল #গৈরিক ৷
*হরিহর বুক্ক ,প্রতাপ রুদ্র প্রভৃতি রাজা নিজের স্বাধীন রাজ্যের প্রতীক ছিল #গৈরিক I
প্রাচীন এতিহ্যের সঙ্গে পরম্পরাগতভাবে সম্পর্কিত তা হল গৈরিক ,তাই সমস্থ ভোট গৈরিক পতাকে সমর্থন করেছিল ৷
১৯২৯ সালে শিখ প্রতিনিধিরা গান্ধিজির সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় পতাকা যাতে গৈরিক হয় তার চাপ সৃষ্টি করেছিল |
বৌদ্ধদেরও আপত্তির কোনো কারণ ছিল না ,স্বয়ং বুদ্ধদেব ছিলেন গৈরিক ধারী মন্ন্যাসী |
মুসলিম দেরো আপত্তির কোনো কারণ ছিল না ,
শোনা
যায় পয়গম্বর হজরত মহম্মদ নিজেও একটি যুদ্ধে গৈরিক পতাকা বহন
করেছিলেন (১৯৬৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর , অর্গানাইজার পত্রিকাতে প্রকাশিত তথ্য)
এবং Constituent Assembly তে পতাকা সম্পর্কে আলোচনা চলাকালীন এক মুস্লিম
সদস্য সৈয়দ মহম্মদ সাদুল্লা গৈরিক পতাকা কেই সমর্থন করেন I
ডাঃ হেডগেওয়ার, ডাঃ রাধাকৃষ্ণন্ ,ডাঃ সুনীতিকুমার চ্যাটার্জী ,ডঃ আম্বেদকর প্রমূখ ব্যাক্তিত্ব গৈরিক পতাকার সমর্থনেই ছিলেন |
শেষ
পর্যন্ত ১৯৪৭ সালের ২২ শে জুলাই গান্ধী-নেহরু মানসিকতাবাদীদের সমর্থনের
জোরে ১৯৩১ সালের প্রস্বাবিত তেরঙা পতাকাই গৃহীত হল |
তবে ডঃ আম্বেদকরের
আপ্রাণ প্রচেষ্টার ফলে কংগ্রেসের চরকার বদলে হলো অশোকের ধর্মচক্র |
গান্ধীজি এতেও রাজি হচ্ছিলেন না |
পণ্ডিত নেহরু গান্ধীকে আশ্বস্ত করেন যে
এই চক্রটি আসলে চরকারই চাকা এবং যথেষ্ট সদ্ধেহ থাকা সত্তেও গান্ধীজী নেহরুর
কথা মেনে নেন ৷
দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যে মহামতি অশোক প্রতিষ্ঠিত মহান ধর্মের
পরিবর্তনশীল চক্র কে শেষ পর্যন্ত চরকার চাকা বলে চালাতে হল I
১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট লালকেল্লায় চক্র শোভিত তেরঙা পতাকা প্রথম উত্তোলিত হয় ৷ বলা হয় এটি ভারতবাসীর প্রগতির প্রতীক ৷
এই
পতাকা নির্ধারিত হয়ে যাবার পরও ঠিক হল ভারতের প্রদেশগুলির রাজ্যপালরা
জাতীয় পতাকার পাশাপাশি.ব্যবহার করবেন অশোকস্তম্ভ ও `সত্যেমেব জয়তে' লেখা
#গেরুয়া পতাকা ৷
প্রচ্ছন্নভাবে হলেও স্বীকার করে নেওয়া হলো গৈরিক পতাকাই ভারতবর্ষের সনাতন পরম্পরার জাতীয় প্রতীক |
এই হলো ভারতের জাতীয় পতাকার ইতিহাস |
আমি গর্বিত আমি ভারতবাসী এবং তিরঙা পতাকার প্রতি আমার যথাযোগ্য সন্মান |
তথ্যসুত্র:- *.গৈরিক পতাকা,
*স্বস্তিকা পত্রিকা ৷
বুবুল মাহাত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন