Pratyusha Koley এতে BoiPoka (বইপোকা)
'যা নেই মহাভারতে তা নেই ভারতে' এটা তো আমরা জানি কিন্তু যা আমরা জানি অথচ ভাবি না তা হলো 'যা ঘটবে আগামীতে তা আছে মহাভারতে'।আজ্ঞে হ্যাঁ,আজ যে সমস্ত ঘটনা আইনগতভাবে স্বীকৃত লাভ করছে,আমাদের প্রগতিশীল করছে তার সমস্ত কিছুই মহাভারতে আছে।
মহাভারতের প্রধান চরিত্রগুলোর পাশাপাশি প্রধান চরিত্রের সাথে সম্পর্কিত ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের দিকে একটু নজর দিলে বিষয়টা আরো স্পষ্ট হবে।মহাভারতের এরকমই একটি ব্যতিক্রমী আকর্ষণীয় নারী চরিত্র হলো কৌরব্য নাগের কন্যা উলূপী।
#উলূপী_কে?
ঐরাবত বংশসম্ভূত 'কৌরব্য' নাগের কন্যা উলূপী।তিনি ছিলেন অপরূপা সুন্দরী।যথা সময়েই নাগরাজের এই কন্যার বিয়ে হয় স্বজাতির এক নাগরাজ সুপর্ণের সাথে।তবে বিয়ের অল্পকিছুকাল পরেই সুপর্ণ গরুড় সম্প্রদায়ের পক্ষীর হাতে নিহত হন।মহাভারতের পুরাণ মতে গরুড় ও নাগ সম্প্রদায় বৈমাত্রেয় ভাই তথা একে অন্যের চরম শত্রু।অর্থাৎ ভ্রাতৃশত্রুতার বলি হন উলূপীর স্বামী।বিয়ের খুব অল্প দিনেই নিজের স্বামীকে হারিয়ে চরম মানসিক কষ্টে দিন কাটাতে লাগলেন উলূপী।মেয়ের এই যন্ত্রণায় পিতা কৌরব্যও যথেষ্ট দুঃখ পেলেন।
মহাভারত আমাদের জীবনের,সংসারের,সমাজের উপাখ্যান সুতরাং স্বাভাবিক নিয়মেই সময়ের সাথে উলূপীর শোকের মাত্রা কমে এলো।আরো একটা জিনিস মাথায় রাখা প্রয়োজন;সেসময় পরমাসুন্দরী উলূপীর ভরা যৌবন,অবলম্বন হিসাবে কোন সন্তানও নেই সুতরাং ভরা যৌবনে কামের তাড়নায় অন্য পুরুষকে কামনা খুব একটা অস্বাভাবিক কি? ঘটলও তাই।কী ঘটল তা জানতে একটু অন্যদিকে যেতে হবে।
#অর্জুন_ও_উলূপীর_বিয়ে
দ্রৌপদীর পাঁচ পতি তথা পঞ্চপান্ডবের মধ্যে এই শর্ত স্থির হয় যে একজন ভ্রাতা এক বছর করে দ্রৌপদীর সাথে এক ঘরে কাটাবেন।সেসময় যদি অন্য কোন ভ্রাতা ওই ঘরে প্রবেশ করেন তবে তাঁকে ১২ বছর ব্রহ্মচর্য পালনে যেতে হবে।শর্ত স্থির করার কিছুকালের মধ্যে পরিস্থিতির চাপে অর্জুন এই নিয়ম লঙ্ঘন করে যুধিষ্ঠির ও কৃষ্ণার শয়নকক্ষে প্রবেশ করতে বাধ্য হলেন।নিয়ম অনুসারে অর্জুন ১২ বছর বনবাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।এই বারো বছর বনবাসের সময়কালে বিভিন্ন পথ,প্রান্তর,বন-জঙ্গল অতিক্রম করে অর্জুন উপস্থিত হলেন গঙ্গাদ্বারে বর্তমানের হরিদ্বারে।গঙ্গার তীরে এসে অর্জুন গঙ্গা এবং সংলগ্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক শোভায় এতটা মুগ্ধ হলেন যে কিছুকাল সেখানে থাকবেন মনস্থির করলেন।আশ্রম স্থাপন করে সেখানে ব্রাহ্মণদের উপস্থিতিতে যজ্ঞের সূচণা করলেন।
এর পরবর্তীতে কোন এক সকালে পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পনের মনস্থির করে গঙ্গাবক্ষে নামলে সেখানে ঘটল আশ্চর্য এক ঘটনা।তর্পন সম্পন্ন করে হোমের মনবাসনা নিয়ে অর্জুন জল থেকে উঠতে চেষ্টা করলে কোন এক অপরূপা সুন্দরী অর্জুনকে নিয়ে চলে গেলেন জলের গভীরের কোন এক রাজপ্রাসাদের যজ্ঞগৃহে।দুঃসাহসিক এই কাজটি যে অপরূপা সুন্দরী ঘটিয়েছিলেন তিনি আর কেউ নন তিনি হলেন উলূপী।
কৌরব্যর রাজগৃহে হোম সম্পাদনের পর অর্জুন এবার উলূপীর পরিচয়,তার এরূপ ঘটনা ঘটানোর কী কারণ জানতে চাইলে উলূপী নিজের পরিচয় বর্ণনা করলেন।একইসাথে কোনরকম দ্বিধাবিভক্ত না হয়ে সরাসরি জানালেন গঙ্গাবক্ষে অর্জুনের স্নানের সময় তার রূপে,ব্যক্তিত্বে মোহিত হয়েছেন উলূপী।শুধু এইটুকুই নয় উলূপী যে অর্জুনের দর্শনে কার্মাত হয়ে পড়েছেন সেকথাও লুকিয়ে রাখেননি।সর্বশেষে তিনি অর্জুনকে পতি রূপে,সঙ্গীরূপে প্রার্থনা করলেন।
সব শুনে অর্জুন জানিয়েছেন তিনি উলূপীর প্রতি আকর্ষিত কিন্তু যে কারণে তিনি বনবাসী সেই পরিস্থিতিতে উনি অন্য কারো সাথে কী করে অন্তরঙ্গ হতে পারেন?অর্জুনও যে প্রকৃতই উলূপীর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন তার প্রমাণ এর পরবর্তীতেই পাওয়া যায় যখন এই সংকটের মুহুর্তে অর্জুন উলূপীর উপরই দায়িত্ব দেন একটা উপায় বের করার যেখানে ধর্মও রক্ষিত হবে আবার উলূপীর মনোবাসনাও পূর্ণ হবে।
অর্জুনের এই প্রস্তাবে উলূপীর ব্যাখ্যা প্রমাণ দেয় কেবল রূপবতীই নন উলূপী বুদ্ধিমতী,যুদ্ধিবাদী,দৃঢ় চরিত্রের এক নারী।তিনি শুরুতেই অর্জুনকে যে কারণ দেখান তা হলো অর্জুনের ব্রহ্মচর্য পালন কেবল মাত্র দ্রৌপদীকে কেন্দ্র করে সেখানে উলূপী সম্পূর্ণ অন্য নারী তার সাথে অন্তরঙ্গ হওয়ায় ধর্ম সংকট হওয়ার কোন কারণ নেই।
যদিও উলূপী জানতেন এই যুক্তি যে খুব একটা শক্তিশালী নয়।তাই তিনি এরপর অকাট্য এক যুক্তির অবতারনা করেন।যে যুক্তির পর অর্জুন আর আপত্তি করতে পারেননি।যুক্তিটি ছিলো উলূপী স্বামীহীন কামার্ত এক নারী,তার জীবন দুঃখে ভরা সেখান থেকে পীড়িত এক নারীকে রক্ষা করা তথা সাহায্য করা এক ক্ষত্রিয়ের অবশ্য কর্তব্য।এই কর্তব্য পালনে অর্জুনের ধর্ম সংকট তো নয়ই বরং ধর্ম রক্ষাই হবে।
এমনিতেই একথা স্পষ্ট যে অর্জুনের প্রথম থেকেই উলূপীকে পছন্দ ছিলো নাহলে যে অর্জুন গুরুর আদেশ পালনে দ্রুপদের মতো যোদ্ধাকে জীবিত ধরে আনতে পারেন,যিনি মৎসচক্ষু ভেদ করে নরপতিদের পরাজিত করে দ্রৌপদীকে পত্নী রূপে পান তিনি এক নারীর বাহুবল থেকে নিজে মুক্ত না করে তার হাতে বন্দি হয়ে চললেন?
স্বভাবতই অর্জুন আর আপত্তি করেননি।
উলূপীর পিতা কৌরব্যর সম্মতিতেই অর্জুনের সাথে উলূপীর বিয়ে হয়।অর্জুন-উলূপীর বিয়েই সম্ভবত প্রথম বিধবা বিবাহ।বিদ্যাসাগর মহাশয় বিধবাবিবাহের সূচনা করলে সেসময় বিধবা বিবাহের সমর্থকরা অর্জুন-উলূপীর বিয়েকে বিশ্বের প্রথম বিধবা বিবাহ বলে উল্লেখ করেন।বিদ্যাসাগর পরাশরসংহিতা থেকে প্রমাণ না দেওয়া অবধি পন্ডিতরা বিধবা বিবাহ প্রসঙ্গে অর্জুন-উলূপীর বিয়ের কথাই উল্লেখ করতেন।
ঐরাবত বংশসম্ভূত 'কৌরব্য' নাগের কন্যা উলূপী।তিনি ছিলেন অপরূপা সুন্দরী।যথা সময়েই নাগরাজের এই কন্যার বিয়ে হয় স্বজাতির এক নাগরাজ সুপর্ণের সাথে।তবে বিয়ের অল্পকিছুকাল পরেই সুপর্ণ গরুড় সম্প্রদায়ের পক্ষীর হাতে নিহত হন।মহাভারতের পুরাণ মতে গরুড় ও নাগ সম্প্রদায় বৈমাত্রেয় ভাই তথা একে অন্যের চরম শত্রু।অর্থাৎ ভ্রাতৃশত্রুতার বলি হন উলূপীর স্বামী।বিয়ের খুব অল্প দিনেই নিজের স্বামীকে হারিয়ে চরম মানসিক কষ্টে দিন কাটাতে লাগলেন উলূপী।মেয়ের এই যন্ত্রণায় পিতা কৌরব্যও যথেষ্ট দুঃখ পেলেন।
মহাভারত আমাদের জীবনের,সংসারের,সমাজের উপাখ্যান সুতরাং স্বাভাবিক নিয়মেই সময়ের সাথে উলূপীর শোকের মাত্রা কমে এলো।আরো একটা জিনিস মাথায় রাখা প্রয়োজন;সেসময় পরমাসুন্দরী উলূপীর ভরা যৌবন,অবলম্বন হিসাবে কোন সন্তানও নেই সুতরাং ভরা যৌবনে কামের তাড়নায় অন্য পুরুষকে কামনা খুব একটা অস্বাভাবিক কি? ঘটলও তাই।কী ঘটল তা জানতে একটু অন্যদিকে যেতে হবে।
#অর্জুন_ও_উলূপীর_বিয়ে
দ্রৌপদীর পাঁচ পতি তথা পঞ্চপান্ডবের মধ্যে এই শর্ত স্থির হয় যে একজন ভ্রাতা এক বছর করে দ্রৌপদীর সাথে এক ঘরে কাটাবেন।সেসময় যদি অন্য কোন ভ্রাতা ওই ঘরে প্রবেশ করেন তবে তাঁকে ১২ বছর ব্রহ্মচর্য পালনে যেতে হবে।শর্ত স্থির করার কিছুকালের মধ্যে পরিস্থিতির চাপে অর্জুন এই নিয়ম লঙ্ঘন করে যুধিষ্ঠির ও কৃষ্ণার শয়নকক্ষে প্রবেশ করতে বাধ্য হলেন।নিয়ম অনুসারে অর্জুন ১২ বছর বনবাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।এই বারো বছর বনবাসের সময়কালে বিভিন্ন পথ,প্রান্তর,বন-জঙ্গল অতিক্রম করে অর্জুন উপস্থিত হলেন গঙ্গাদ্বারে বর্তমানের হরিদ্বারে।গঙ্গার তীরে এসে অর্জুন গঙ্গা এবং সংলগ্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক শোভায় এতটা মুগ্ধ হলেন যে কিছুকাল সেখানে থাকবেন মনস্থির করলেন।আশ্রম স্থাপন করে সেখানে ব্রাহ্মণদের উপস্থিতিতে যজ্ঞের সূচণা করলেন।
এর পরবর্তীতে কোন এক সকালে পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পনের মনস্থির করে গঙ্গাবক্ষে নামলে সেখানে ঘটল আশ্চর্য এক ঘটনা।তর্পন সম্পন্ন করে হোমের মনবাসনা নিয়ে অর্জুন জল থেকে উঠতে চেষ্টা করলে কোন এক অপরূপা সুন্দরী অর্জুনকে নিয়ে চলে গেলেন জলের গভীরের কোন এক রাজপ্রাসাদের যজ্ঞগৃহে।দুঃসাহসিক এই কাজটি যে অপরূপা সুন্দরী ঘটিয়েছিলেন তিনি আর কেউ নন তিনি হলেন উলূপী।
কৌরব্যর রাজগৃহে হোম সম্পাদনের পর অর্জুন এবার উলূপীর পরিচয়,তার এরূপ ঘটনা ঘটানোর কী কারণ জানতে চাইলে উলূপী নিজের পরিচয় বর্ণনা করলেন।একইসাথে কোনরকম দ্বিধাবিভক্ত না হয়ে সরাসরি জানালেন গঙ্গাবক্ষে অর্জুনের স্নানের সময় তার রূপে,ব্যক্তিত্বে মোহিত হয়েছেন উলূপী।শুধু এইটুকুই নয় উলূপী যে অর্জুনের দর্শনে কার্মাত হয়ে পড়েছেন সেকথাও লুকিয়ে রাখেননি।সর্বশেষে তিনি অর্জুনকে পতি রূপে,সঙ্গীরূপে প্রার্থনা করলেন।
সব শুনে অর্জুন জানিয়েছেন তিনি উলূপীর প্রতি আকর্ষিত কিন্তু যে কারণে তিনি বনবাসী সেই পরিস্থিতিতে উনি অন্য কারো সাথে কী করে অন্তরঙ্গ হতে পারেন?অর্জুনও যে প্রকৃতই উলূপীর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন তার প্রমাণ এর পরবর্তীতেই পাওয়া যায় যখন এই সংকটের মুহুর্তে অর্জুন উলূপীর উপরই দায়িত্ব দেন একটা উপায় বের করার যেখানে ধর্মও রক্ষিত হবে আবার উলূপীর মনোবাসনাও পূর্ণ হবে।
অর্জুনের এই প্রস্তাবে উলূপীর ব্যাখ্যা প্রমাণ দেয় কেবল রূপবতীই নন উলূপী বুদ্ধিমতী,যুদ্ধিবাদী,দৃঢ় চরিত্রের এক নারী।তিনি শুরুতেই অর্জুনকে যে কারণ দেখান তা হলো অর্জুনের ব্রহ্মচর্য পালন কেবল মাত্র দ্রৌপদীকে কেন্দ্র করে সেখানে উলূপী সম্পূর্ণ অন্য নারী তার সাথে অন্তরঙ্গ হওয়ায় ধর্ম সংকট হওয়ার কোন কারণ নেই।
যদিও উলূপী জানতেন এই যুক্তি যে খুব একটা শক্তিশালী নয়।তাই তিনি এরপর অকাট্য এক যুক্তির অবতারনা করেন।যে যুক্তির পর অর্জুন আর আপত্তি করতে পারেননি।যুক্তিটি ছিলো উলূপী স্বামীহীন কামার্ত এক নারী,তার জীবন দুঃখে ভরা সেখান থেকে পীড়িত এক নারীকে রক্ষা করা তথা সাহায্য করা এক ক্ষত্রিয়ের অবশ্য কর্তব্য।এই কর্তব্য পালনে অর্জুনের ধর্ম সংকট তো নয়ই বরং ধর্ম রক্ষাই হবে।
এমনিতেই একথা স্পষ্ট যে অর্জুনের প্রথম থেকেই উলূপীকে পছন্দ ছিলো নাহলে যে অর্জুন গুরুর আদেশ পালনে দ্রুপদের মতো যোদ্ধাকে জীবিত ধরে আনতে পারেন,যিনি মৎসচক্ষু ভেদ করে নরপতিদের পরাজিত করে দ্রৌপদীকে পত্নী রূপে পান তিনি এক নারীর বাহুবল থেকে নিজে মুক্ত না করে তার হাতে বন্দি হয়ে চললেন?
স্বভাবতই অর্জুন আর আপত্তি করেননি।
উলূপীর পিতা কৌরব্যর সম্মতিতেই অর্জুনের সাথে উলূপীর বিয়ে হয়।অর্জুন-উলূপীর বিয়েই সম্ভবত প্রথম বিধবা বিবাহ।বিদ্যাসাগর মহাশয় বিধবাবিবাহের সূচনা করলে সেসময় বিধবা বিবাহের সমর্থকরা অর্জুন-উলূপীর বিয়েকে বিশ্বের প্রথম বিধবা বিবাহ বলে উল্লেখ করেন।বিদ্যাসাগর পরাশরসংহিতা থেকে প্রমাণ না দেওয়া অবধি পন্ডিতরা বিধবা বিবাহ প্রসঙ্গে অর্জুন-উলূপীর বিয়ের কথাই উল্লেখ করতেন।
#সিঙ্গেল_মাদার_উলূপী?
অর্জুন-উলূপীর বিয়ের পর অর্জুন এক রাত্রি উলূপীর সাথে সমস্ত রকম রমণ করেন,উলূপীর সমস্ত কামনা তৃপ্ত করে পরেরদিন ভোরে বিদায় গ্রহণ করেন।এরপর দীর্ঘকাল আর উলূপীর সাথে অর্জুনের দেখা হয়নি।
অর্জুন উলূপীর একরাত্রির মিলনে এক পুত্রের সৃষ্টি হয়। তিনি হলেন ইরাবন।এই ইরাবন বীর যোদ্ধা এছাড়াও মহাভারতের আকর্ষণীয় একটি চরিত্র।ইরাবন সম্পর্কে পরবর্তীতে একদিন বিস্তারিত আলোচনা হবে।
ইরাবনের জন্মলাভ এবং বেড়ে ওঠা পুরোটাই হয়েছে একাকী উলূপীর দ্বারা।অর্থাৎ এক্ষেত্রে উলূপীকে সিঙ্গেল মাদার বলাই যায়।ইরাবনের জন্মের সময় থেকে বড় হয়ে ওঠা কোনক্ষেত্রেই অর্জুন উপস্থিত থাকেননি।উল্টোদিকে ইরাবনের জন্মের পরই উলূপী তার দেবর অশ্বসেনের দ্বারা শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হন।এই পর্বে অশ্বসেনের উলূপীর প্রতি বিরূপ হওয়ার কারণ সেযুগে নিয়ম ছিলো কোন স্ত্রীলোক অকালে স্বামীহারা হলে সন্তানলাভের জন্য 'নিয়োগ' প্রথার।নিয়োগ প্রথার ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ ছিলেন ভাসুর,দেবর রা।কিন্তু নিয়োগ প্রথার আয়োজনের আগেই উলূপী অর্জুনকে বিয়ে করেন এবং সন্তান ধারন করেন।খুব স্বাভাবিক ভাবে শ্বশুরবাড়ি থেকে উৎখাত হয়ে উলূপী অশ্রয় নেন বাপের বাড়িতে।
#বভ্রুবাহন_ও_অর্জুনের_যুদ্ধে_উলূপী।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধশেষে যুধিষ্ঠির রাজা হলে মুনিঋষিরা জ্ঞাতি হত্যার প্রায়শ্চিত্তের জন্য অশ্বমেধ যজ্ঞের পরামর্শ দিলেন। ঋষিগণের পরামর্শে মহাবীর অর্জুন অশ্বমেধের ঘোড়া নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন।কোন রাজ্যকে বশ্যতা স্বীকার করিয়ে,কোন রাজ্য যুদ্ধে জয় করে অর্জুন উপস্থিত হলেন মণিপুরে।সেসময় মণিপুরের রাজা অর্জুনপুত্র বভ্রুবাহন।পিতার উপস্থিতির সংবাদ পেয়ে বভ্রুবাহন বশ্যতা স্বীকারের ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন।বভ্রুবাহনের এহেন ইচ্ছে দেখে অর্জুন দুঃখ পেলেন,ক্রুদ্ধ হয়ে বভ্রুবাহনকে তিরস্কার করতে লাগলেন এই বলে যে অর্জুনের পুত্র হয়ে,একজন ক্ষত্রিয় হয়ে বভ্রুবাহন কী করে এত ভীতু,কাপুরুষ হলেন।অর্জুন তার পিতা সেই পরিচয় এখানে অস্তিত্বহীন এক্ষেত্রে অর্জুন বভ্রুবাহনের রাজ্যদখল করতে এসেছেন এসময় প্রকৃত যোদ্ধার উচিত সন্মুখ সমরে উপস্থিত হওয়া।অর্জুনের এই আফসোস যথাযথ কারণ তিনি বভ্রুবাহন কে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে দেখননি,তার অপরপুত্র ইরাবন ক্ষেত্রজ পুত্র হয়েও যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন তার আর এক সন্তান অভিমন্যু অসীম বীরত্বের পরিচয় বহন করেছেন আর বভ্রুবাহন কী না বিনা যুদ্ধে বশ্যতা স্বীকার করছেন।
উল্টোদিকে বভ্রুবাহন মায়ের শিক্ষায় এমনভাবে শিক্ষিত যে কোন অবস্থাতেই সে পিতার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবে না।
এমতবস্থায় আবির্ভাব হলো উলূপীর।তিনি সেখানে উপস্থিত হয়েই বভ্রুবাহন কে পরিচয় দিলেন যে বভ্রুবাহন যেনো তাঁকে নিজের 'মা' ই মনে করেন।উলূপী বভ্রুবাহন কে আরো জানালেন যে তিনি বভ্রুবাহনের মাতা হিসাবে অর্জুনের সাথে যুদ্ধের আদেশ দিচ্ছেন।এই যুদ্ধে কোন রকম ধর্মের সংশয় ঘটবে না বরং ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত ভালো হবে।উলূপীমাতার আদেশে বভ্রুবাহন অর্জুনের সাথে যুদ্ধে অরতীর্ণ হলেন।অস্বাভাবিক ভাবে শুধু যুদ্ধে জয়লাভই নয় বভ্রুবাহন অর্জুনকে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত করলেন।
পিতার মৃত্যুতে বভ্রুবাহন জ্ঞান হারালেন।
স্বামীর মৃত্যু দেখে দিশেহারা চিত্রাঙ্গদা উলূপীকে তিরস্কার করতে লাগলেন।চিত্রাঙ্গদার ধারণা উলূপী পুনরায় বিয়ে করার জন্য কিংবা এতকাল তাঁর প্রতি অর্জুনের অবহেলার জন্য বভ্রুবাহন কে উত্তেজিত করে প্রতিশোধ নিয়েছেন।
এই পর্বেও উলূপী কিন্তু সেই অর্জুনকে বিয়ে করার সময়ের মতোই ধীর স্থির অথচ লক্ষ্যে অবিচল।চিত্রাঙ্গদার এত তিরস্কার,অভিযোগেও উলূপী স্থির থেকেছেন।শোকে চিত্রাঙ্গদার বিলাপের মাঝেই সংজ্ঞা ফিরে পেলেন বভ্রুবাহন।তিনিও বিলাপ শুরু করেল পিতৃহত্যার অনুশোচনা নিয়ে।বভ্রুবাহনের অনুশোচনা দেখে উলূপী তার ভুল ভাঙলেন।নাগদের বিশ্বাসের সঞ্জীবন মণি হাতে বভ্রুবাহন কে ডেকে উলূপী জানালেন আফসোস করার কোন কারণ নেই,যে অর্জুনকে দেবরাজ ইন্দ্র সহ সকল দেবতারা পরাজিত করতে পারে না তাঁকে বভ্রুবাহন কী করে পরাজিত করবে? প্রকৃতপক্ষে উলূপীই 'মোহিনী' নামের এক মায়া স্থাপন করে অর্জুনকে আচ্ছন্ন করেছিলেন।যে কারণেই বভ্রুবাহন অর্জুনকে পরাজিত তথা নিহত করতে পেরেছেন।তিনি আরো জানালেন পুরোটাই তিনি অর্জুনের খুশির জন্যই করেছেন কারণ শিষ্যের কাছে গুরুর কিংবা পুত্রের কাছে পিতার পরাজয় যে কোন গুরু বা পিতার কাছেই বড় আনন্দের।আর তাছাড়াও অর্জুন বভ্রুবাহনের মধ্যে ক্ষত্রিয় সত্ত্বা দেখতে চেয়েছিলেন।বভ্রুবাহনের এই বীরত্বে তিনি খুশিই হবেন।এখানেই শেষ না করে বভ্রুবাহনের হাতে সঞ্জীবন মণি দিয়ে সেটি অর্জুনের বুকে স্থাপন করতে বলেন।সঞ্জীবন মণির গুণে অর্জুন প্রাণ ফিরে পেলে উলূপী এই যুদ্ধে প্ররোচনার প্রকৃত কারণ ব্যাখ্যা করলেন।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুন অন্যায় ভাবে শিখন্ডির সহায়তায় পিতামহ ভীষ্মকে নিরস্ত্র অবস্থায় হত্যা করেছিলেন।এমনকী সেসময় ভীষ্ম যুদ্ধ অবধি করছিলেন না।এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত যদি অর্জুন মৃত্যুর আগে না করে যেতেন আর ওনার যথাসময় মৃত্যু হতো তবে ওনার নরকে ঠাঁই হতো।একারণেই উলূপীর বভ্রুবাহনকে যুদ্ধের এই প্ররোচনা প্রদান তথা 'মোহিনী' মায়ার অবতারণা।
এখন প্রশ্ন অর্জুনের এই পাপ,তার ভবিষ্যত পরিণতি সম্পর্কে উলূপী কীভাবে জানলেন?উলূপীরই উপরই কেন এই দায়িত্ব এসে পরলো?
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় ভীষ্ম নিহত হওয়ার পর অষ্টবসু গণ গঙ্গায় স্নান সেরে গঙ্গার সঙ্গে আলোচনা করলেন যে অর্জুন অন্যায় ভাবে নিরস্ত্র,যুদ্ধবিরত ভীষ্মকে হত্যা করেছেন।তাই ওনারা অর্জুনকে অভিশাপ দেবেন।গঙ্গাও এতেও সম্মতি প্রদান করলেন।
উলূপীর বাসস্থান গঙ্গাবক্ষ হওয়ায় অষ্টবসু ও গঙ্গার এই আলোচনা শুনে বিব্রত হয়ে উলূপী হাজির হলেন পিতার কাছে।কৌরব্য জামাইয়ের বিপদের কথা শুনে বসুগণের প্রবল যাজন করলে বসুগণ তখন জানান যে একমাত্র মণিপুরের অধিপতি বভ্রুবাহন অর্জুনকে যুদ্ধক্ষেত্রে ধরাশায়ী করলেই অর্জুনের অভিশাপমুক্তি ঘটবে।একারণেই উলূপীর মণিপুর আগমন তথা পিতা-পুত্রের এই যুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরি।
রূপবতী,স্বাধীনচেতা,জ্ঞানী,যুক্তিবাদী,প্রগতিশীল প্রতিভাবান যাই বলা হোক না কেন মহাভারতের উলূপী চরিত্রের জন্য কম বলা হবে।একদিকে একাকী সন্তানপালন উল্টোদিকে কেবলমাত্র একদিনের জন্যও কাছে পেয়েও স্বামীর প্রতি প্রবল ভালোবাসা;দায়িত্বপরায়ণতা থেকে সত্যিকারের প্রেমিকা হয়ে ওঠা মহাভারতের আপাত ক্ষুদ্র এই চরিত্রটির বিস্তার অতি বৃহৎ।এমনকী মহাভারতের একদম শেষলগ্নে অর্জুনের ধরাধাম ত্যাগের খবরে উলূপী গঙ্গায় আত্মবিসর্জন দিয়েছেন।অর্থাৎ শুরুতে কেবল কামের বশে হলেও পরবর্তীতে অর্জুনকে তিনি মন-প্রাণ দিয়েই ভালোবেসেছেন।এই কারণে চিত্রাঙ্গদা থেকে স্বয়ং অর্জুন উভয়েরই উলূপীর প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শনের উদাহরণ দেখা যায়।কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের বিবরণেও উচ্চারিত হয়েছে আদর্শ মাতা,আদর্শ পত্নী,স্বাধীনচেতা,আত্মনির্ভরশীল ব্যতিক্রমী উলূপীর নাম।
শেয়ার করেছেন :- প্রণব কুমার কুণ্ডু
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন