বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর


    ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

    ফেসবুক থেকে          শেয়ার করেছেন         প্রণব কুমার কুণ্ডু

শ্রদ্ধাঞ্জলি ...
********************************************
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (২৬শে সেপ্টেম্বর, ১৮২০ – ২৯শে জুলাই, ১৮৯১) উনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। তাঁর প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য প্রথম জীবনেই তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ বুৎপত্তি ছিল তাঁর। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। তাঁকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে অভিহিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি রচনা করেছেন জনপ্রিয় শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয় সহ, একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা।
অন্যদিকে বিদ্যাসাগর মহাশয় ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারকও। বিধবা বিবাহ ও স্ত্রীশিক্ষার প্রচলন, বহুবিবাহ ও বাল্য বিবাহের মতো সামাজিক অভিশাপ দূরীকরণে তাঁর অক্লান্ত সংগ্রাম আজও স্মরিত হয় যথোচিত শ্রদ্ধার সঙ্গে। বাংলার নবজাগরণের এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘দয়ার সাগর’ নামে। দরিদ্র, আর্ত ও পীড়িত কখনই তাঁর দ্বার থেকে শূন্য হাতে ফিরে যেত না। এমনকি নিজের চরম অর্থসংকটের সময়ও তিনি ঋণ নিয়ে পরোপকার করেছেন। তাঁর পিতামাতার প্রতি তাঁর ঐকান্তিক ভক্তি ও বজ্রকঠিন চরিত্রবল বাংলায় প্রবাদপ্রতিম। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন প্রাচীন ঋষির প্রজ্ঞা, ইংরেজের কর্মশক্তি ও বাঙালি মায়ের হৃদয়বৃত্তি।
বাঙালি সমাজে বিদ্যাসাগর মহাশয় আজও এক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরে তাঁর স্মৃতিরক্ষায় স্থাপিত হয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানী কলকাতার আধুনিক স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বিদ্যাসাগর সেতু তাঁরই নামে উৎসর্গিত।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে সেপ্টেম্বর (বাংলা ১২২৭ বঙ্গাব্দের ১২ আশ্বিন, মঙ্গলবার) বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বীরসিংহ সেই সময় অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ ছিলেন সুপণ্ডিত ও বলিষ্ঠ দৃঢ়চেতা পুরুষ। ইনিই ঈশ্বরচন্দ্রের নামকরণ করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় চাকুরি করতেন। পরিবার নিয়ে শহরে বাস করা তাঁর সাধ্যের অতীত ছিল। সেই কারণে বালক ঈশ্বরচন্দ্র গ্রামেই মা ভগবতী দেবী ও ঠাকুরমার সঙ্গে বাস করতেন।
চার বছর নয় মাস বয়সে ঠাকুরদাস বালক ঈশ্বরচন্দ্রকে গ্রামের সনাতন বিশ্বাসের পাঠশালায় ভর্তি করে দেন। কিন্তু সনাতন বিশ্বাস বিদ্যাদানের চেয়ে শাস্তিদানেই অধিক আনন্দ পেতেন। সেই কারণে রামজয় তর্কভূষণের উদ্যোগে পার্শ্ববর্তী গ্রামের কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায় নামে এক উৎসাহী যুবক বীরসিংহে একটি নতুন পাঠশালা স্থাপন করেন। আট বছর বয়সে এই পাঠশালায় ভর্তি হন ঈশ্বরচন্দ্র। তাঁর চোখে কালীকান্ত ছিলেন আদর্শ শিক্ষক। কালীকান্তের পাঠশালায় তিনি সেকালের প্রচলিত বাংলা শিক্ষা লাভ করেছিলেন।
১৮২৮ সালের নভেম্বর মাসে পাঠশালার শিক্ষা সমাপ্ত করে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য পিতার সঙ্গে কলকাতায় আসেন। তাঁদের সঙ্গে কলকাতায় এসেছিলেন কালীকান্ত ও চাকর আনন্দরাম গুটিও। কথিত আছে, পদব্রজে মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় আসার সময় পথের ধারে মাইলফলকে ইংরেজি সংখ্যাগুলি দেখে তিনি সেগুলি অল্প আয়াসেই আয়ত্ত করেছিলেন। কলকাতার বড়বাজার অঞ্চলের বিখ্যাত সিংহ পরিবারে তাঁরা আশ্রয় নেন। এই পরিবারের কর্তা তখন জগদ্দুর্লভ সিংহ। ১৮২৯ সালের ১ জুন সোমবার কলকাতা গভর্নমেন্ট সংস্কৃত কলেজে ( যা বর্তমানে সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল নামে পরিচিত) ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন তিনি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই সংস্কৃত কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৮২৪ সালে; অর্থাৎ, ঈশ্বরচন্দ্রের এই কলেজে ভর্তি হওয়ার মাত্র পাঁচ বছর আগে। তাঁর বয়স তখন নয় বছর। এই কলেজে তাঁর সহপাঠী ছিলেন মুক্তারাম বিদ্যাবাগীশ ও নদিয়া-নিবাসী মদনমোহন তর্কালঙ্কার। বিদ্যাসাগরের আত্মকথা থেকে জানা যায় মোট সাড়ে তিন বছর তিনি ওই শ্রেণীতে অধ্যয়ন করেন।
ব্যাকরণ পড়ার সময় ১৮৩০ সালে সংস্কৃত কলেজের ইংরেজি শ্রেণীতেও ভর্তি হন ঈশ্বরচন্দ্র। ১৮৩১ সালের মার্চ মাসে বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য মাসিক পাঁচ টাকা হারে বৃত্তি এবং ‘আউট স্টুডেন্ট’ হিসেবে একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ ও আট টাকা পারিতোষিক পান। সংস্কৃত কলেজে মাসিক বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রদের ‘পে স্টুডেন্ট’ ও অন্য ছাত্রদের ‘আউট স্টুডেন্ট’ বলা হত। অন্যদিকে তিন বছর ব্যাকরণ শ্রেণীতে পঠনপাঠনের পর বারো বছর বয়সে প্রবেশ করেন কাব্য শ্রেণীতে। সে যুগে এই শ্রেণীর শিক্ষক ছিলেন বিশিষ্ট পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার। ১৮৩৩ সালে ‘পে স্টুডেন্ট’ হিসেবেও ঈশ্বরচন্দ্র ২ টাকা পেয়েছিলেন। ১৮৩৪ সালে ইংরেজি ষষ্ঠশ্রেণীর ছাত্র ঈশ্বরচন্দ্র বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য ৫ টাকা মূল্যের পুস্তক পারিতোষিক হিসেবে পান। এই বছরই ক্ষীরপাই নিবাসী শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্যের কন্যা দীনময়ী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়।
১৮৩৫ সালে ইংরেজি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রূপে পলিটিক্যাল রিডার নং ৩ ও ইংলিশ রিডার নং ২ পারিতোষিক পান। এই বছরই নভেম্বর মাসে সংস্কৃত কলেজ থেকে ইংরেজি শ্রেণী উঠিয়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বর্ষে সাহিত্য পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে পনেরো বছর বয়সে প্রবেশ করেন অলংকার শ্রেণীতে। অলংকার শাস্ত্র একটি অত্যন্ত কঠিন বিষয়। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই তিনি সাহিত্য দর্পণ, কাব্যপ্রকাশ ও রসগঙ্গাধর প্রভৃতি অলংকার গ্রন্থে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।
১৮৩৬ সালে অলংকার পাঠ শেষ করেন। বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে রঘুবংশম্, সাহিত্য দর্পণ, কাব্যপ্রকাশ, রত্নাবলী, মালতী মাধব, উত্তর রামচরিত, মুদ্রারাক্ষস, বিক্রমোর্বশী ও মৃচ্ছকটিক গ্রন্থ পারিতোষিক পান। ১৮৩৭ সালের মে মাসে তাঁর ও মদনমোহনের মাসিক বৃত্তি বেড়ে হয় আট টাকা।
এই বছরই ঈশ্বরচন্দ্র স্মৃতি শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেই যুগে স্মৃতি পড়তে হলে আগে বেদান্ত ও ন্যায়দর্শন পড়তে হত। কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্রের মেধায় সন্তুষ্ট কর্তৃপক্ষ তাঁকে সরাসরি স্মৃতি শ্রেণীতে ভর্তি নেন। এই পরীক্ষাতেও তিনি অসামান্য কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন এবং হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ত্রিপুরায় জেলা জজ পণ্ডিতের পদ পেয়েও পিতার অনুরোধে তা প্রত্যাখ্যান করে ভর্তি হন বেদান্ত শ্রেণীতে। শম্ভুচন্দ্র বাচস্পতি সেই সময় বেদান্তের অধ্যাপক। ১৮৩৮ সালে সমাপ্ত করেন বেদান্ত পাঠ। এই পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং মনুসংহিতা, প্রবোধ চন্দ্রোদয়, অষ্টবিংশতত্ত্ব, দত্তক চন্দ্রিকা ও দত্তক মীমাংসা গ্রন্থ পারিতোষিক পান। সংস্কৃতে শ্রেষ্ঠ গদ্য রচনার জন্য ১০০ টাকা পুরস্কারও পেয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র। ১৮৪০-৪১ সালে ন্যায় শ্রেণীতে পঠনপাঠন করেন ঈশ্বরচন্দ্র। এই শ্রেণীতে দ্বিতীয় বার্ষিক পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে তিনি পারিতোষিক পান। ন্যায় পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে ১০০ টাকা, পদ্য রচনার জন্য ১০০ টাকা, দেবনাগরী হস্তাক্ষরের জন্য ৮ টাকা ও বাংলায় কোম্পানির রেগুলেশন বিষয়ক পরীক্ষায় ২৫ টাকা – সর্বসাকুল্যে ২৩৩ টাকা পারিতোষিক পেয়েছিলেন।
জন্ম গ্রহণ কালে তার পিতামহ তার বংশানু্যায়ী নাম রেখেছিলেন "ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়"। ১৮৩৯ সালের ২২ এপ্রিল হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষা দেন ঈশ্বরচন্দ্র। এই পরীক্ষাতেও যথারীতি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ১৬ মে ল কমিটির কাছ থেকে যে প্রশংসাপত্রটি পান, তাতেই প্রথম তাঁর নামের সঙ্গে 'বিদ্যাসাগর' উপাধিটি ব্যবহৃত হয়। এই প্রশংসাপত্রটি ছিল নিম্নরূপ :
HINDOO LAW COMMITTEE OF EXAMINATION
We hereby certify that at an Examination held at the Presidency of Fort William on the 22nd Twenty-second April 1839 by the Committee appointed under the provisions of Regulation XI 1826 Issur Chandra Vidyasagar was found and declared to be qualified by his eminent knowledge of the Hindoo Law to hold the office of Hindoo Law officer in any of the Established Courts of Judicature.
H.T. Prinsep
President
J.W.J. Ousely
Member of the Committee of Examination
This Certificate has been granted to the said Issur Chandra Vidyasagar under the seal of the committee. This 16th Sixteenth day of May in the year 1839 Corresponding with the 3rd Third Joistha 1761 Shukavda.
J.C.C. Sutherland
Secy To the Committee
(পুরনো বানান অপরিবর্তিত)
সংস্কৃত কলেজে বারো বছর পাঁচ মাস অধ্যয়নের পর তিনি এই কলেজ থেকে অপর একটি প্রশংসাপত্র লাভ করেন। ১৮৪১ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রাপ্ত দেবনাগরী হরফে লিখিত এই সংস্কৃত প্রশংসাপত্রে কলেজের অধ্যাপকগণ ঈশ্বরচন্দ্রকে 'বিদ্যাসাগর' নামে অভিহিত করেন। প্রশংসাপত্রটি নিম্নরূপ:
অস্মাভিঃ শ্রীঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরায় প্রশংসাপত্রং দীয়তে। অসৌ কলকাতায়াং শ্রীযুত কোম্পানী সংস্থাপিত বিদ্যামন্দিরে ১২ দ্বাদশ বৎসরান্ ৫ পঞ্চমাসাংশ্চোপস্থায়াধোলিখিত শাস্ত্রাণ্য ধীতবান্
ব্যাকরণম্... শ্রীগঙ্গাধর শর্ম্মভিঃ
কাম্যশাস্ত্রম্... শ্রীজয়গোপাল শর্ম্মভিঃ
অলঙ্কারশাস্ত্রম্... শ্রীপ্রেমচন্দ্র শর্ম্মভিঃ
বেদান্তশাস্ত্রম্... শ্রীশম্ভুচন্দ্র শর্ম্মভিঃ
ন্যায়শাস্ত্রম্... শ্রীজয়নারায়ণ শর্ম্মভিঃ
জ্যোতিঃশাস্ত্রম্... শ্রীযোগধ্যান শর্ম্মভিঃ
ধর্মশাস্ত্রম্... শ্রীশম্ভুচন্দ্র শর্ম্মভিঃ
সুশীলতয়োপস্থিতস্বৈত স্বৈতেষু শাস্ত্রেষু সমীচীনা বুৎপত্তিরজনিষ্ট।
১৭৬৩ এতচ্ছকাব্দীয় সৌরমার্গশীর্ষস্য বিংশতি দিবসীয়ম্।
Rasamoy Dutt. Secretary.
10 Decr 1841.
বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন নারীশিক্ষার বিস্তারের পথিকৃৎ। তিনি উপলব্ধি করেন যে, নারিজাতির উন্নতি না ঘটলে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির প্রকৃত উন্নতি সম্ভব নয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও ড্রিংকওয়াটার বেথুন উদ্যোগী হয়ে কলকাতায় হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই ভারতের প্রথম ভারতীয় বালিকা বিদ্যালয়। বিদ্যসাগসর ছিলেন এই বিদ্যালয়ের সম্পাদক। এটি বর্তমানে বেথুন স্কুল নামে পরিচিত। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান জেলায় মেয়েদের জন্য তিনি একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রামাঞ্চলে নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি বাংলার বিভিন্ন জেলায় স্ত্রীশিক্ষা বিধায়নী সম্মেলনী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ব্যাক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে মে মাসের মধ্যে নদীয়া, বর্ধমান, হুগলী ও মেদিনীপুর জেলায় ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় ১৩০০ ছাত্রী এই স্কুলগুলিতে পড়াশোনা করত। পরবর্তীকালে তিনি সরকারের কাছে ধারাবাহিক তদবির করে সরকার এই স্কুলগুলোর কিছু আর্থিক ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হয়। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় বালিকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮৮ টি। এরপর কলকাতায় ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন (যা বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ নামে পরিচিত) এবং নিজের মায়ের স্মৃতি উদ্দেশ্যে নিজ গ্রাম বীরসিংহে ভগবতী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
সংস্কৃত শাস্ত্রের বিরাট পণ্ডিত হয়েও পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি গ্রহণে দ্বিধা করেননি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রবল সমর্থক ছিলেন তিনি। হিন্দু বিধবাদের অসহনীয় দুঃখ, তাঁদের প্রতি পরিবারবর্গের অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার গভীরভাবে ব্যথিত করেছিল তাঁকে। এই বিধবাদের মুক্তির জন্য তিনি আজীবন সর্বস্ব পণ করে সংগ্রাম করেছেন। হিন্দুশাস্ত্র উদ্ধৃত করে প্রমাণ করেছেন, যে লোকাচার ধর্মের নামে সমাজে প্রচলিত, আসলে তা ধর্মবহির্ভূত স্থবিরতার আচারমাত্র। তাঁর আন্দোলন সফল হয়েছিল। ১৮৫৬ সালে সরকার বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ ঘোষণা করেন। তবে শুধু আইন প্রণয়নেই ক্ষান্ত থাকেননি বিদ্যাসাগর মহাশয়। তাঁর উদ্যোগে একাধিক বিধবা বিবাহের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। তাঁর পুত্রও এক ভাগ্যহীনা বিধবাকে বিবাহ করেন। এজন্য সেযুগের রক্ষণশীল সমাজ ও সমাজপতিদের কঠোর বিদ্রুপ ও অপমানও সহ্য করতে হয় তাঁকে। বিধবা বিবাহ প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বহুবিবাহের মতো একটি কুপ্রথাকে নির্মূল করতেও আজীবন সংগ্রাম করেন বিদ্যাসাগর মহাশয়। প্রচার করেন বাল্যবিবাহ রোধের সপক্ষেও। এর সঙ্গে সঙ্গে নারীশিক্ষার প্রচারেও যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। শুধু কলকাতায় নয়, নারীমুক্তির বার্তা বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে, বিভিন্ন জেলাতেও বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করে নারীশিক্ষার সপক্ষে জোর প্রচার চালান তিনি। যদিও তাঁর এই উদ্যোগও সমাজের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব দ্বারা নিন্দিত হয়। কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত পর্যন্ত অত্যন্ত হীন বাক্যবাণে নারীমুক্তি আন্দোলনের ব্যঙ্গ করেন। তবু তাঁর জীবদ্দশাতেই নারীশিক্ষা আন্দোলন ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অন্যতম কৃতিত্ব শিক্ষা সংস্কার। হিন্দুশাস্ত্রবিদ হয়েও ধর্মকে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে নির্বাসিত করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি বিদ্যাসাগর মহাশয়। সংস্কৃত কলেজের দ্বার শূদ্রদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া, অষ্টমী ও প্রতিপদের পরিবর্তে রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির প্রবর্তন ছাড়াও বেদান্ত ও সাংখ্যকে ভ্রান্তদর্শন বলে ব্যাখ্যা করে তার পরিবর্তে দেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের পক্ষে তাঁর মতদান, এক উদার ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাদর্শের সূচনা ঘটায়। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার তিনি ছিলেন একান্ত পক্ষপাতী। এজন্য বাংলা বর্ণমালাকে সংস্কৃত ব্যাকরণের অযৌক্তিক নিয়মজাল থেকে মুক্ত করে নির্মেদ ও আধুনিক করে তোলাকে তিনি বিশেষ প্রয়োজনীয় মনে করেছিলেন। বর্ণপরিচয় গ্রন্থে তাঁর লিপিসংস্কারই পরবর্তীকালে বাংলা লিপির আদর্শ হয়ে দাঁড়ায়। আজ পর্যন্ত এই লিপিই বাংলায় প্রচলিত। অন্যদিকে বিভিন্ন উচ্চমানের পাঠ্যপুস্তক রচনা করেও তিনি শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতিতে বিশেষ সহায়তা করেন। এই সব পাঠ্যপুস্তকগুলিও তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাচেতনার উজ্জ্বল নিদর্শন। এছাড়াও গ্রামে গ্রামে স্কুল স্থাপন, দরিদ্র ছাত্রদের জন্য অবৈতনিক বিদ্যালয়, উচ্চশিক্ষার্থে কলেজ স্থাপন করে শুধুমাত্র কলকাতার উচ্চবিত্ত সমাজেই নয়, সমগ্র বাংলার ঘরে ঘরে সাক্ষরতার আলো জ্বালানোর ব্রত নেন তিনি। মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশনে তিনি দেখিয়ে দেন শুধুমাত্র ভারতীয় অধ্যাপকদের সাহায্যেই ইংরেজের তুল্য উচ্চমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গঠন সম্ভব কিনা।
বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশ ও বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার প্রবর্তনেও বিশেষ আগ্রহী ছিলেন বিদ্যাসাগর মহাশয়। তাঁর রচনায়, কার্যে নানাভাবে বিজ্ঞান প্রীতির নিদর্শন রেখেছেন তিনি। এমনকি উনিশ শতকের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও তত্ত্ব সম্পর্কেও নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন বলেও জানা যায়।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চরিত্র ছিল কঠোর ও কোমলের সংমিশ্রণ। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন প্রবল জেদী ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট মাথা নত করা থেকে কাজ থেকে অবসর নেওয়া তিনি শ্রেয় মনে করতেন। ইংরেজকেও তিনি প্রভুর দৃষ্টিতে দেখতেন না। তাদের সমস্ত অন্যায়ের প্রতিবাদে তাঁর কণ্ঠরোধ করা সম্ভবপর ছিল না। অন্যদিকে দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য সর্বদা তাঁর হৃদয়ে সহানুভূতি পূর্ণ থাকত। তিনি দরিদ্রদের মনের ব্যথা অনুভবও করতে পারতেন। কেউ অর্থসংকটে পড়ে তাঁর দরজায় এলে তিনি কখনোই তাঁকে শূন্য হাতে ফেরাতেন না। কত দরিদ্র ছাত্র তাঁর অর্থে পড়াশোনা এবং খাওয়াপরা চালাত। দুর্ভিক্ষের সময় তিনি অন্নসত্র খুলে সকলকে দুই বেলা খাওয়াতেন। একবার কয়েকজন অন্নসত্রে খিচুড়ি খেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তিনি সকলকে দুইবেলা মাছ ভাত খাওয়ানোর নির্দেশ দেন। যাঁরা অন্নসত্রে খেতে লজ্জা পেতেন, তাঁদের বাড়িতে গোপনে চালডাল বা টাকাও পাঠাতেন। এজন্য কখনই তিনি লোকের দানের উপর নির্ভর করতেন না। সব খরচ নিজে দিতেন। মাইকেল মধুসূদন বিদেশে ঋণগ্রস্ত হয়ে যখন তাঁর কাছে অর্থসাহায্য চান, তখন তাঁর নিজের কাছে অর্থ ছিল না। তিনি ধার করেও মাইকেলকে সাহায্য করেন। কার্মাটারে সাঁওতালদের সঙ্গে বাস করতে গিয়ে তিনি তাদেরও হয়ে ওঠেন। তারাও নানাভাবে তাঁর নিকট সাহায্য পেয়ে তাঁকে পরম শ্রদ্ধার আসনে স্থাপন করে। দেশের আপামর দরিদ্রসাধারণ সংস্কৃত শাস্ত্রবিশারদ বিদ্যাসাগরকে জানত দয়ার সাগর নামে।
মাতৃভক্তি ছিল তাঁর চরিত্রে অন্যতম গুণ। মনে করা হয়, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সংস্কার আন্দোলন ও মুক্তচেতনার নেপথ্যে জননী ভগবতী দেবীর বিশেষ প্রেরণা ছিল। বীরসিংহ গ্রামে তিনি মায়ের নির্দেশে বিদ্যালয়, অবৈতনিক ছাত্রাবাস ইত্যাদি গড়েছিলেন। তাঁর বিধবা বিবাহ প্রবর্তনেও এই গ্রাম্য মহিলার বিশেষ অবদান ছিল। তিনিই পুত্রকে আদেশ করেছিলেন, বিধবাদের দুঃখনিবৃত্তির বন্দোবস্ত করতে। শোনা যায়, এই মায়ের ডাকে একবার তিনি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ দামোদর নদ সাঁতরেও পার হয়েছিলেন।
বিদ্যাসাগর রচিত গ্রন্থাবলী:
শিক্ষামূলক গ্রন্থ:
বর্ণপরিচয় (১ম ও ২য় ভাগ ; ১৮৫৫)
ঋজুপাঠ (১ম, ২য় ও ৩য় ভাগ ; ১৮৫১-৫২)
সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা (১৮৫১)
ব্যাকরণ কৌমুদী (১৮৫৩)
অনুবাদ গ্রন্থ:
হিন্দি থেকে বাংলা:
বেতাল পঞ্চবিংশতি (১৮৪৭ ; লল্লুলাল কৃত বেতাল পচ্চীসী অবলম্বনে)
সংস্কৃত থেকে বাংলা:
শকুন্তলা (ডিসেম্বর, ১৮৫৪ ; কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ অবলম্বনে)
সীতার বনবাস (১৮৬০ ; ভবভূতির উত্তর রামচরিত ও বাল্মীকি রামায়ণ-এর উত্তরাকান্ড অবলম্বনে)
মহাভারতের উপক্রমণিকা (১৮৬০ ; ব্যাসদেব মূল মহাভারত-এর উপক্রমণিকা অংশ অবলম্বনে)
বামনাখ্যানম্ (১৮৭৩ ; মধুসূদন তর্কপঞ্চানন রচিত ১১৭টি শ্লোকের অনুবাদ)
ইংরেজি থেকে বাংলা:
বাঙ্গালার ইতিহাস (১৮৪৮ ; মার্শম্যান কৃত হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল অবলম্বনে রচিত)
জীবনচরিত (১৮৪৯ ; চেম্বার্সের বায়োগ্রাফিজ অবলম্বনে রচিত)
নীতিবোধ (প্রথম সাতটি প্রস্তাব – ১৮৫১ ; রবার্ট ও উইলিয়াম চেম্বার্সের মরাল ক্লাস বুক অবলম্বনে রচিত)
বোধোদয় (১৮৫১ ; চেম্বার্সের রুডিমেন্টস অফ নলেজ অবলম্বনে রচিত)
কথামালা (১৮৫৬ ; ঈশপস ফেবলস অবলম্বনে রচিত)
চরিতাবলী (১৮৫৭ ; বিভিন্ন ইংরেজি গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা অবলম্বনে রচিত)
ভ্রান্তিবিলাস (১৮৬৯ ; শেক্সপিয়রের কমেডি অফ এররস অবলম্বনে রচিত)
ইংরেজি গ্রন্থ:
পোয়েটিক্যাল সিলেকশনস্
সিলেকশনস্ ফ্রম গোল্ডস্মিথ
সিলেকশনস্ ফ্রম ইংলিশ লিটারেচার
মৌলিক গ্রন্থ:
সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৫৩)
বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৫৫)
বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (প্রথম খন্ড ১৮৭১, ২য় খন্ড ১৮৭৩)
অতি অল্প হইল এবং ”আবার অতি অল্প হইল দুখানা পুস্তক (১৮৭৩, বিধবা বিবাহ বিরোধী পন্ডিতদের প্রতিবাদের উত্তরে 'কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য' ছদ্মনামে।)
ব্রজবিলাস (১৮৮৪)
রত্নপরীক্ষা (১৮৮৬)
প্রভাবতী সম্ভাষণ (সম্ভবত ১৮৬৩)
জীবন-চরিত (১৮৯১ ; মরণোত্তর প্রকাশিত)
শব্দমঞ্জরী (১৮৬৪)
নিষ্কৃতি লাভের প্রয়াস (১৮৮৮)
ভূগোল খগোল বর্ণনম্ (১৮৯১ ; মরণোত্তর প্রকাশিত)
সম্পাদিত গ্রন্থ:
অন্নদামঙ্গল (১৮৪৭)
কিরাতার্জ্জুনীয়ম্ (১৮৫৩)
সর্বদর্শনসংগ্রহ (১৮৫৩-৫৮)
শিশুপালবধ (১৮৫৩)
কুমারসম্ভবম্ (১৮৬২)
কাদম্বরী (১৮৬২)
বাল্মীকি রামায়ণ (১৮৬২)
রঘুবংশম্ (১৮৫৩)
মেঘদূতম্ (১৮৬৯)
উত্তরচরিতম্ (১৮৭২)
অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ (১৮৭১)
হর্ষচরিতম্ (১৮৮৩)
পদ্যসংগ্রহ প্রথম ভাগ (১৮৮৮ ; কৃত্তিবাসি রামায়ণ থেকে সংকলিত)
পদ্যসংগ্রহ দ্বিতীয় ভাগ (১৮৯০ ; রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রচিত অন্নদামঙ্গল থেকে সংকলিত)
(সৌজন্যে :উইকিপিডিয়া)


'প্রণব কুমার কুণ্ডুর বিভিন্ন বিষয়ক রচনা'র দর্শকদের দেশের নাম


'প্রণব কুমার কুণ্ডুর বিভিন্ন বিষয়ক রচনা'র দর্শকদের দেশের নাম



Blog :   pranabk3.blogspot.com

যোগাযোগ :

Twitter.com / pkkundu10
Twitter.com / pkkundu101

Facebook.com / pkkundu10

Plus.Google.com / Pranab Kumar Kundu

Mobile : 8017435180 / 9123007729



দর্শক-দেশগুলির নাম :

১। ভারত
২। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
৩। জার্মানি
৪। ফ্রান্স
৫। অস্ট্রিয়া
৬। বেলজিয়াম
৭। সুইডেন
৮। ফিলিপাইন
৯ । আয়ারল্যান্ড
১০ । বাংলাদেশ
১১। ইসরায়েল
১২ । সিঙ্গাপুরc
১৩ । ডেনমার্ক
১৪ । ইউক্রেন
১৫ । রাশিয়া
১৬ । স্পেন
১৭ । সংযুক্ত আরব আমিরাত
১৮ । নেদারল্যান্ডস
১৯ । যুক্তরাজ্য
২০ । তাইওয়ান
২১ । অস্ট্রেলিয়া
২২ । তুর্কমেনিস্তান
২৩ । সুইজারল্যান্ড
২৪ । চিলি
২৫ । বলিভিয়া
২৬ । পর্তুগাল
২৭ । জাপান
২৮ । রুয়ান্ডা
২৯ । ব্রাজিল
৩০ । তুরস্ক
৩১ । দক্ষিণ কোরিয়া
৩২ । হংকং
৩৩ । পোল্যান্ড
৩৪ । পাকিস্তান
৩৫ । হাঙ্গেরি
৩৬ । গ্রীস
৩৭ । কানাডা
৩৮ । পেরু
৩৯ । ইরাক
৪০ । সিঙ্গাপুর
৪১ । আননোন রিজিয়ন
৪২ । কম্বোডিয়া
৪৩ । দক্ষিণ আফ্রিকা
৪৪ । সৌদি আরব
৪৫ । উখরাইন
         প্রভৃতি।

+ Unknown Region as declared by Google+

সর্বমোট পোস্টসংখ্যা  ১৪৫৪
সর্বমোট দর্শকসংখ্যা  ৬২,১০৬

প্রণব কুমার কুণ্ডু।








মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৮

কবি চৈতালি চৌধুরি




    কবি চৌতালি চৌধুরি

লাইক করুনআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
মন্তব্য
মন্তব্যগুলি

রবিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৮

গোয়ায় পর্তুগিজরা কি কি করেছে ?


গোয়ায় পর্তুগিজরা কি কি করেছে ?


দেখুন এবং শুনুন


Shefali vaidya-এর
The Barbaric Goan Inquisition by Portuguese Missionaries
এবং অন্যান্য YouTube গুলি।


প্রণব কুমার কুণ্ডু।



শনিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৮

রূপক রায়ের কলাম ( পাঁচ )


   রূপক রায়ের কলাম ( পাঁচ )


    ফেসবুক থেকে          শেয়ার করেছেন               প্রণব কুমার কুণ্ডু


পুত্রবধূ জয়নাবকে মুহম্মদের বিবাহ এবং জায়েদের নির্মম পরিণতির ইতিহাস :
জন্মসূত্রে জায়েদ এর পুরো নাম জায়েদ বিন হারিথ। এর মানে হলো সে হারিথ নামে কোনো এক ব্যক্তির পুত্র। এই জায়েদ ছিলো জন্মসূত্রে সিরিয়ার অধিবাসী এবং বাল্যকালে তাকে কেউ চুরি ক’রে ক্রীতদাস হিসেবে মুহম্মদের ৪০ বছর বয়স্কা খালাম্মা টাইপের স্ত্রী খাদিজার কোনো এক আত্মীয়ের কাছে বিক্রি করে দেয়, পরে সে ঐ নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে খাদিজার কাছে হ্যান্ডওভার হয় এবং খাদিজার কাছেই বড় হতে থাকে।
এরপর ২৫ বছর বয়সী মুহম্মদের সাথে খাদিজার বিয়ে হলে জায়েদ ও মুহম্মদের খুব ভাব হয় এবং খাদিজা, জায়েদকে, মুহম্মদের অধীনে দিয়ে দেয়, ফলে জায়েদ ক্রীতদাস অবস্থা থেকে মুক্ত হয়। পরে, জায়েদের বাবা, তার ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে মক্কায় আসে এবং জায়েদের সন্ধান মুহম্মদের কাছে পেলে, জায়েদকে যেকোনো মূল্যে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু মুহম্মদ, যেহেতু তার কোনো পুত্র সন্তান জীবিত ছিলো না, সেহেতু সে, জায়েদকে দত্তক পুত্র হিসেবে নেয় এবং মক্কায় সর্বসমক্ষে ঘোষণা করে,
“হে লোক সকল, আমি জায়েদকে আমার পুত্র হিসেবে সর্ব সমক্ষে স্বীকার করে নিচ্ছি, আর তোমরা তার সাক্ষী থাকো, আজ থেকে আমি তার উত্তরাধিকারী, আর সে আমার উত্তরাধিকারী।”- (মিশকাত হাদিস, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৪০)
এই ঘোষণার পূর্বাপর ঘটনার কারণে জায়েদ তার জন্মদাতা পিতার সাথে যেতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তার পিতা, পেয়েও সন্তান হারানোর শোক ও গভীর মনোবেদনা নিয়ে চোখের জলে মক্কা ত্যাগ করে। নিজের পিতাকে অস্বীকার করে তার সাথে না যাওয়ার ফল জায়েদেক কিভাবে ভোগ করতে হয়েছিলো, তা এই পোস্ট পড়া শেষে উপলব্ধি করতে পারবেন।
যা হোক, এরপর জায়েদ বিবাহযোগ্য হলে, মুহম্মদ তারই ফুফাতো বোন জয়নাবের সাথে তার বিয়ে দেয়। মুহম্মদ যখন জয়নাবের জন্য বিয়ের প্রস্তাব জয়নাবের বাড়ি পাঠায়, তখন জয়নাব ভেবেছিলো মুহম্মদই তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু যখন সে শুনে তার বিয়ে হচ্ছে জায়েদের সাথে তখন সে একটু মনক্ষুণ্নই হয়; কারণ, জয়নাবের স্বপ্ন ছিলো মুহম্মদের সাথেই তার বিয়ে হোক। কেননা, মুহম্মদ তখন মদীনার একচ্ছত্র রাজা, আর রাজা যতই বৃদ্ধ হোক, রাজাকে বিয়ে করে রাজরানী হওয়ার সুখ ও প্রভাব প্রতিপত্তি কে না চায় ? কিন্তু রাজাকে না পেলেও রাজার ইচ্ছাকে পাশ কাটানোর ক্ষমতা শুধু জয়নাবেরই নয়, মদীনার কারোরই ছিলো না; তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও জয়নাবকে জায়েদের ঘরে যেতে হয়। জয়নাব ও জায়েদের এই বিয়ে হয় ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে, মুহম্মদের মক্কা থেকে মদীনায় পলায়নের ৭ বছর পর।
বিয়ের কিছু দিন পরেই, মুহম্মদ কোনো একটা কাজে জায়েদের বাড়ি যায় এবং হঠাৎ করে ঘরে ঢুকে পড়ায় জয়নাবকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে মুহম্মদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,
“সকল প্রশংসা আল্লাহ্র, হৃদয় যেভাবে চায় তিনি সেভাবে বদলে দিতে পারেন।”
আপনারা বাস্তব অবস্থা একটু বিশ্লেষণ করলেই বুঝবেন, জীবনে দুই একবার ঘরের লোকদের সামনে এরকম ঘটনা ঘটা অসম্ভব কিছু নয়; কোনো সভ্য পুরুষ যেমন এই ধরণের ঘটনাকে দেখেও না দেখার ভান করে বা করবে, তেমনি কোনো সভ্য মহিলাও এসব ঘটনা ঘটার পর তা ভুলে যেতে চেষ্টা করে বা করবে, সেটা অন্যকে বলা তো দূরের কথা। কিন্তু জয়নাব, জায়েদ যখন বাড়িতে আসে তখন তাকে সব বলে দেয়- যেন পাড়ার কোনো লোক তাকে টিজ করেছে বা কুপ্রস্তাব দিয়েছে!
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব শুনে জায়েদ তার স্ত্রীকে বলতো- যা হয়েছে ভুলে যাও, ঘরের লোকেদের সামনে ওসব হয়েই থাকে, এরপর থেকে কেয়ার থাকবে যাতে এমন আর না ঘটে।
কিন্তু সব শুনেই জায়েদ তার পিতার কাছে ছুটে যায় এবং বলে, “আপনার মনে হয় জয়নাবকে পছন্দ হয়েছে, আমি ওকে তালাক দিচ্ছি, আপনি ওকে বিয়ে করুন।”
জয়নাবের কাছ থেকে সব ঘটনা শুনে জায়েদের কি এমন হয়েছিলো যে- সে নিজের পিতাকে, তারই স্ত্রীকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিচ্ছে ? মানুষ তার নিজের স্ত্রীকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করে, জীবন দেয়; কারণ, রক্তের সম্পর্কের কেউ না হলেও স্ত্রী ই যে কোনো মানুষের কাছে একসময় হয়ে উঠে সবচেয়ে আপন, তাই স্ত্রীর তুলনায় পিতা-মাতা-ভাই-বোন-আত্মীয়-স্বজন সবাই তুচ্ছ হয়ে যায়। সেই স্ত্রীকে জায়েদ কেনো স্বেচ্ছায় তার পিতার বিছানায় তুলে চাচ্ছে, এর পেছনের ঘটনাটা আসলে কী ? এই স্বেচ্ছাদানের পেছনে জায়েদের মনে আসলে কী কাজ করছিলো ?
প্রকৃতপক্ষে জায়েদ খুব ভালো করেই জানতো তার পিতা মুহম্মদের মনস্তত্ত্ব। জায়েদ যখনই জয়নাবের কাছে শুনেছে যে, তাকে ঐ স্বল্প বসনে দেখেই মুহম্মদ বলে উঠেছে-
“সকল প্রশংসা আল্লাহর, হৃদয় যেভাবে চায় তিনি সেভাবে বদলে দিতে পারেন।”
তখনই জায়েদ বুঝে গিয়েছিলো যে, তার পিতা, তার স্ত্রীকে পছন্দ করে ফেলেছে, আর কোনো উপায় নেই, আর বেশি সময়ও নেই, এখন একমাত্র কাজই হলো অপেক্ষা না করে নিজেই গিয়ে পিতার কাছে এই প্রস্তাব দেওয়া। জায়েদের এতটা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ হলো, জায়েদ নিজের চোখে দেখেছে, নিজের উদ্দেশ্য সাধনে তার পালক বাপ কী পরিমান নিষ্ঠুর ও নৃশংস হতে পারে। কারণ, মুহম্মদ ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে একদিনে ৮০০ কুরাইজা ইহুদিকে হত্যা করে গনিমতে মাল হিসেবে তাদের সকল নারী শিশু এবং তাদের সম্পদ দখল করেছিলো এবং সেই গণহত্যার রাতেই কুরাইজা গোত্রের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে রিহানাকে শয্যা সঙ্গিনী বানিয়েছিলো। এরপর ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে খয়বরের যুদ্ধের সময় গোত্রপতি কিনানার স্ত্রী সাফিয়াকে দখল করার জন্য, কিভাবে কিনানার বুকের উপর জ্বলন্ত কাঠ রেখে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে কিনানাকে হত্যা করে তার স্ত্রী সাফিয়াকে দখল করে সেই রাতেই তাকে ভোগ করেছিলো, এসব ঘটনা মুহম্মদ ঘটিয়েছে জায়েদের চোখের সামনেই। তাই জায়েদ ছিলো আতঙ্কিত, সে ভেবেছিলো, আর কোনো রক্ষা নেই, এখনই স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন না করলে যে কোনো প্রকারেই হোক তাকে খুন করে হলেও তার পিতা, তার স্ত্রীকে হস্তগত করবেই, যেহেতু তার পিতার মনে তার স্ত্রীকে লেগে গিয়েছে এবং এর জন্য যদি প্রয়োজন হয় আরবের প্রচলিত রীতি নীতি উল্টাতে এবং তাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য কোরানের নামে বাণী নাজিল করতেও মুহম্মদ দেরি করবে না; বাস্তবে হয়েছিলোও তাই। কিন্তু নিজের স্ত্রীকে, মুহম্মদের বিছানায় তুলে দিয়েও কি জায়েদ তার শেষ রক্ষা করতে পেরেছিলো ? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন পোস্টটি-
আতঙ্কিত হয়ে জায়েদ যখন তার বাপের কাছে গিয়ে বলে, আমি জয়নাবকে তালাক দিচ্ছি, আপনি ওকে বিয়ে করুন। তখন মুহম্মদ ভদ্রতা দেখিয়ে বলে,
“তোমার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করো না এবং আল্লাহকে ভয় করো” (কোরান, ৩৩/৩৭)।
মুহম্মদ যদি কোনো সভ্য মানুষ হতো তাহলে এই কথা না বলে বলতো, “তুমি এমন প্রস্তাব আমাকে দেওয়ার সাহস কী করে পাও ? তুমি আমার পুত্র, আর জয়নাব আমার মেয়ের মতো।”
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মুহম্মদ যদি নৃশংস সন্ত্রাসী না হয়ে কোনো সভ্য মানুষ হতো, তাহলে সে জয়নাবের সামনে- কখন কার মন পরিবর্তন করিয়ে দেয় – ঐ কথা না বলে বৌমাকে ঐ অবস্থায় দেখেও তার পোষাক ঠিক করার জন্য তাকে সময় দিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকতো, আর জায়েদকে তার পিতার কাছে এসে এই ধরনের প্রস্তাব দেওয়ার প্রয়োজনই পড়তো না।
কিন্তু মুখে মুহম্মদ লোকলজ্জার ভয়ে জায়েদকে ঐ কথা বললেও তার মনের কথা ওটা ছিলো না, মুহম্মদ সব সময় ভাবছিলো কিভাবে জয়নাবকে কব্জা করা যায়। ভাবনাতেই তো মানুষের মনে বাণীর উদয় হয়, তাই কয়েক দিন ভাবনার পর মুহম্মদের ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করার জন্য তার দালাল আল্লাও মুহম্মদের ইচ্ছা পূরণের বাণী নিয়ে এসে হাজির! সেই দিন মুহম্মদ ছিলো আয়েশার ঘরে, আয়েশার বয়স তখন মাত্র ১৪/১৫, খাদিজা মারা যাওয়ার পরেও মুহম্মদের ঘরে তখন্ ৫ টা বউ। মুহম্মদের উপর নাজিল হলো কোরানের ৩৩/৩৭ আয়াত-
“হে নবী, সেই সময়ের কথা স্মরণ করো, যখন তুমি সেই ব্যক্তিকে যার প্রতি আল্লাহ এবং তুমি অনুগ্রহ করেছিলে, বলেছিলে যে, তোমার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করো না এবং আ্ল্লাহকে ভয় কর। তখন তুমি নিজের মনে সেই কথা লুকিয়েছিলে, যা আল্লা প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। তুমি লোকদেরকে ভয় করেছিলে, অথচ আ্ল্লাহর অধিকার সবচেয়ে বেশি যে, তুমি তাকেই ভয় করবে। পরে জায়েদ যখন তার নিকট হতে নিজের অধিকার পূর্ণ করে নিলো, তখন আমি তাকে তোমার সহিত বিবাহ দিলাম, যেন নিজেদের পোষ্যপুত্রদের স্ত্রীদের ব্যাপারে মুমিন লোকদের কোনো অসুবিধা না থাকে… যখন তারা তাদের নিকট হতে নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করে নিয়েছে। আল্লার নির্দেশই তো পালিত হওয়া উচিত ছিলো।”
এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর মুহম্মদ হাসি মুখে বলে, “কে জয়নবের কাছে যাবে ও তাকে সুসংবাদ দিবে? তাকে বিবাহ করার জন্য আল্লাহ্ আমাকে আদেশ করেছেন।”
উপরে আমি আল্লাকে মুহম্মদের দালাল বলেছি, এতে আল্লাকে কম সম্মান দেওয়া হচ্ছে বা তাকে কম উপাধি দেওয়া হচ্ছে, আসলে বলা উচিত………….দালাল।
এই আয়াত এবং এই কথা বলার পরপরই আয়েশা মুহম্মদকে বলেছিলো, “আমার মনে হয় আল্লা আপনার ইচ্ছ পূরণ করতে খুবই উদগ্রীব এবং একটুও সময় নেয় না।” (মুসলিম- ৮/৩৪৫৩)
প্রথমে জায়েদ আতঙ্কিত হয়ে মুহম্মদের সাথে তার স্ত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও পরে অনেক কিছু চিন্তা করে জায়েদ যদি তার মত পাল্টায়, সেজন্য মুহম্মদ ঐ আয়াতের মাধ্যমে এই কথাও স্মরণ করিয়ে দিলো যে, জায়েদ যেন ভুলে না যায় যে, সে মুহম্মদের অনুগ্রহ প্রাপ্ত, কেননা মুহম্মদই তাকে ক্রীতদাস থেকে মুক্তি দিয়ে দত্তক পুত্র হিসেবে নিয়েছিলো, তাই আয়াতে বলা হলো-
“সেই ব্যক্তিকে যার প্রতি আল্লাহ এবং তুমি অনুগ্রহ করেছিলে”
মুসলামানদের ইতিহাসে লেখা আছে, মুহম্মদকে নাকি মক্কার লোকজন সম্মান দিয়ে আল আমিন উপাধি দিয়েছিলো, এই ‘আল আমিন’ এর মানে হলো বিশ্বস্ত এবং সে বিশ্বস্ত এই কারণে যে, সে নাকি কোনো দিন মিথ্যা কথা বলে নি। কিন্তু মুহম্মদ যে মিথ্যুক তার প্রমান কোরানেই আছে। যদিও মুহম্মদ একবার দাসী মারিয়ার সাথে সেক্স করার জন্য উমরের মেয়ে হাফসার ঘর ব্যবহার করবে ব’লে, উমর তাকে ডেকেছে এই মিথ্যা বলে হাফসাকে তার বাপের বাড়ি পাঠিয়েছিলো- সেই প্রসঙ্গ আজ নয়, অন্য একদিন, আজ এই প্রসঙ্গেই থাকি।
যা হোক, ‘তোমার স্ত্রীকে রাখো এবং আল্লাকে ভয় কর’, মুহম্মদ, জায়েদকে এই কথা বললেও মুহম্মদ যে সেটা সত্য বলে নি এবং নিজের মনের মধ্যে আসল সত্য লুকিয়েছে সেই কথা বলা হচ্ছে আয়াতের এই অংশে-
“(যখন তুমি জায়েদকে) বলেছিলে যে, তোমার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করো না এবং আ্ল্লাহকে ভয় কর। তখন তুমি নিজের মনে সেই কথা লুকিয়েছিলে, যা আল্লা প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন।”
মুহম্মদ যে লোকলজ্জার ভয়ে তার মনের কথা গোপন করে এই মিথ্যা বলেছিলো, তার প্রমান আছে আয়াতের এই অংশে-
“তুমি লোকদেরকে ভয় করেছিলে, অথচ আ্ল্লাহর অধিকার সবচেয়ে বেশি যে, তুমি তাকেই ভয় করবে।”
এরপর, আয়াতে বলা হচ্ছে-
“পরে জায়েদ যখন তার নিকট হতে নিজের অধিকার পূর্ণ করে নিলো, তখন আমি তাকে তোমার সহিত বিবাহ দিলাম।”
মৃত্যু পর্যন্ত কোনো স্ত্রীর কাছে তার স্বামীর অধিকার পূর্ণ হয় না। কিন্তু এখানে ‘অধিকার পূর্ণ করা’ বলতে বোঝাচ্ছে জয়নাবকে জায়েদেক তালাক দেওয়ার অধিকার। এখানে আর একটা ছোট্ট তথ্য দিয়ে রাখি, ইসলামে তালাক দেওয়ার অধিকার শুধু স্বামীর, কোনো মুসলিম নারী, সে যতই নির্যাতিতা হোক আর যা ই হোক, কখনো তার স্বামীকে তালাক দিতে পারে না। যেসব দেশের মুসলিম মহিলারা স্বামীকে তালাক দিতে পারে, সেটা সেদেশের রাষ্ট্রীয় আইনের বলে, ইসলামি আইনের জোরে নয়।
আয়াতের এই অংশ, “তখন আমি তাকে তোমার সহিত বিবাহ দিলাম।” দেখে আমার মনে এই প্রশ্ন দেখা দিলো যে, আল্লার যদি মুহম্মদ ও জয়নাবের বিয়ের কাজী হওয়ার এতই শখ ছিলো, তাহলে জায়েদের সাথে জয়নাবের বিয়ের আগেই তার সেই শখ পূরণ করলো না কেনো ? কেনো জায়েদের সাথে জয়নাবের বিয়ে দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিলো ? নাকি, এর আগে জয়নাবকে বিয়ে করতে মুহম্মদের ইচ্ছা জাগে নি বলে আল্লারও সে কথা মনে আসে নি ?
যা হোক, কেনো আল্লা মুহম্মদের সাথে তার পুত্রবধূর বিয়ে দিলো, সে সম্পর্কে আল্লা নিজেই একটি ব্যাখ্যা কোরানের এই আয়াতেই দিয়ে রেখেছে, আর তা হলো-
“তখন আমি তাকে তোমার সহিত বিবাহ দিলাম, যেন নিজেদের পোষ্যপুত্রদের স্ত্রীদের ব্যাপারে মুমিন লোকদের কোনো অসুবিধা না থাকে…”
যেন এটা ছিলো আল্লার কাছে একটা মহা সমস্যা! মনে হয়, তখন পৃথিবীর প্রতিটা ঘরে ঘরে ছিলো দত্তক বা পোষ্য পুত্র এবং সেই পোষ্যপুত্রের স্ত্রীরা রাত দিন চব্বিশ নয় ছাব্বিশ ঘন্টা আল্লার কাছে এই ফরিয়াদ করে চলেছিলো যে, হে আল্লা, আমরা যেন আমাদের স্বামীদের তালাক পেয়ে আমাদের বুড়া শশুরকে বিয়ে করতে পারি, হে আল্লা, তুমি সেই ব্যবস্থা আমাদের জন্য করে দাও! হে আল্লা, আমাদের এই এতটুকু প্রার্থনা তুমি মঞ্জুর করো। করো। করো। সেই প্রার্থনা শুনেই মনে হয় আল্লা এই বিধান দিয়েছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে পৃথিবীর ০.০০১% পরিবারেও দত্তক পুত্র কোনো দিন ছিলো না আর এখনও নেই; আর মুসলমান ছাড়া পৃথিবীর সকল জাতির মানুষ কোনো কারণে কোনো শিশুকে দত্তক হিসেবে নিলে, তাকে নিজের ছেলে মেয়ের মতোই দেখে; মুসলমানদের মতো এই চিন্তা করে দত্তক নেয় না যে, বড় হলে এই ছেলের বউকে আমি বিয়ে করবো বা দত্তক নেওয়া কন্যাকেই বউ বানাবো। দত্তক কন্যাকে মুসলমানদের বিয়ে করা সম্পর্কে কারো যদি কোনো সন্দেহ থাকে, তাহলে শুনে রাখুন, ইরানে দত্তক কন্যাকে বিয়ে করা বৈধ এবং এর স্বীকৃতি আছে কোরানেই, দেখে নিন নিচে-
“তোমরা যদি ইয়াতিমদের (অনাথ) প্রতি অবিচার করাকে ভয় কর তবে যেসব স্ত্রীলোক তোমাদের পছন্দ হয়, তাদের মধ্য হতে দুই দুই, তিন তিন, চার চার জনকে বিয়ে করে নাও। কিন্ত তোমাদের মনে যদি আশংকা জাগে যে, তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ (সুবিচার) করতে পারবে না তাহলে একজন স্ত্রী ই গ্রহণ করো কিংবা সেই সব মেয়েলোকদেরকে স্ত্রীত্বে বরণ করে নাও যারা তোমাদের মালিকানাভূক্ত হয়েছে। অবিচার হতে বাঁচার জন্য এটাই অধিকতর সহজ কাজ।”- (কোরান, ৪/৩)
এই আয়াতের প্রথম অংশে বলা হচ্ছে-
“তোমরা যদি ইয়াতিমদের (অনাথ) প্রতি অবিচার করাকে ভয় কর তবে যেসব স্ত্রীলোক তোমাদের পছন্দ হয়, তাদের মধ্য হতে দুই দুই, তিন তিন, চার চার জনকে বিয়ে করে নাও।”
এখানে যেহেতু বিয়ে করার কথা বলা হচ্ছে, সেহেতু এটা স্পষ্ট যে দত্তক নেওয়া কন্যাদের কথাই বলা হচ্ছে। এখানে আরও বলা হচ্ছে, অবিচার করাকে ভয় করলে তাদেরকে বিয়ে করো। আল্লা যে কী রকমের বলদ, সেটা এই বাক্য থেকে বোঝা যায়; যে লোক কন্যার প্রতি সুবিচার করতে পারে না, সে নাকি ঐ কন্যা তার স্ত্রী হলে তার প্রতি সুবিচার করবে ! সেজন্য সুবিচার করতে না পারলে তাদেরকে বিয়ে করতে নির্দেশ দিচ্ছে। সেটাও আবার একজনকে নয়- ২, ৩ বা ৪ জনকে।
একটা লোক কখনোই দুইজনকে সমান চোখে দেখতে পারে না, তাদের মধ্যে কিছু না কিছু বৈষম্য তাকে করতেই হবে; আর এখানে আল্লার বিধান বলছে ২, ৩ বা ৪ জনকে একসাথে বিয়ে করে তাদের প্রতি সুবিচার করতে, আল্লাকে বলদ উপাধি দেওয়া ঠিক হচ্ছে না, কারণ বলদেরও কিছু বুদ্ধি থাকে, আল্লা আসলে নির্বোধ।
আবার এই আয়াতেই বলা হচ্ছে, “তোমাদের মনে যদি আশংকা জাগে যে, তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ (সুবিচার) করতে পারবে না তাহলে একজন স্ত্রী ই গ্রহণ করো”
আয়াতের এই অংশের জন্যই জাকির নায়েক মার্কা মুসলমানরা জোর গলায় বলে যে, একমাত্র কোরানেই বলা হয়েছে একজনকে বিয়ে করো, আর অন্য কোনো ধর্মের গ্রন্থে বলা নেই যে কতজন স্ত্রী রাখা যাবে। এই বলে জাকির এটা বোঝাতে চায় যে, মুসলমানরাই কোরান অনুযায়ী একগামী, আর অন্য ধর্মের পুরুষরা বহুগামী। কিন্তু এই আয়াতে উপরের অংশে কী বলা হয়েছে, সেটা তারা উল্লেখ করে না। আমরা যখন কোনো আয়াতের কথা উল্লেখ করবো তখন মুসলমানরা বলে, এই আয়াতের পূর্বাপর উল্লেখ করা হয় নি- এই আয়াতের ব্যাখ্যা এমন নয়। কিন্তু তারা যখন আয়াতের উল্লেখ করবে, তখন তাদের হিসেবে কোনো পূর্বাপরের প্রয়োজন নেই, এমনই সুবিধাবাদী হলো এই মুসলমানরা।
একগামী বহুগামী বিষয়ে মুসলমানদেরকে বলছি, অন্যান্য ধর্মের গ্রন্থগুলো, কোরানের মতো রাস্তার পাশে বিক্রি হওয়া সস্তা কোনো চটি বই নয় যে, তাতে- একজন পুরুষের কয়টি স্ত্রী থাকা উচিত- এমন সস্তা বিষয় লিখা থাকবে। প্রকৃতি একজন পুরুষের জন্য একজন নারীই সৃষ্টি করেছে এবং একজন পুরুষের সমস্ত রকম চাহিদা পূরণের জন্য একজন নারীই যথেষ্ট, এইটুকু বোঝার মতো জ্ঞান বুদ্ধি সাধারণ মানুষেরও আছে, পৃথিবীর সকল মানুষ মুসলমানদের মতো নির্বোধ নয় যে, ধর্মগ্রন্থ প’ড়ে তাদেরকে সেই জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
যা হোক, উপরের আয়াতের এই অংশ- “তোমাদের মনে যদি আশংকা জাগে যে, তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ (সুবিচার) করতে পারবে না”- এর সরল মানে হলো, আপনাকে কোনো কিছু খেতে না দিয়েই বলা হচ্ছে তার টেস্ট সম্পর্কে আগাম মন্তব্য করতে। পরিস্থিতিটা কতটা অবাস্তব একবার চিন্তা করুন, এমনই অবাস্তব হলো ইসলাম।
আবার আয়াতের শেষ অংশের দিকে বলা হচ্ছে,
“সেই সব মেয়েলোকদেরকে স্ত্রীত্বে বরণ করে নাও যারা তোমাদের মালিকানাভূক্ত হয়েছে।”
এর মানে হলো, যেসব মেয়েদেরকে তোমরা গনিমতে মাল হিসেবে যুদ্ধ করতে গিয়ে ধরে এনেছো বা যাদেরকে টাকা দিয়ে কিনে এনেছো, যদিও তাদের সাথে সেক্স করতে চাইলে অসুবিধা নেই, তবে ইচ্ছে করলে তাদেরকে বিয়ে করতে পারো। আল্লার মনে হয় এই ধারণা ছিলো যে, পৃথিবীতে চিরদিন এরকম যুদ্ধ করে নারী ধরে আনার রীতি বজায় থাকবে আর ক্রীতদাস প্রথাও থাকবে, তাই মুসলমানদের জন্য চিরকালের বিধান কোরানের আয়াতে আল্লা এসব লিখে দিয়েছে। এই আয়াতের শেষ বাক্য হলো,
“অবিচার হতে বাঁচার জন্য এটাই অধিকতর সহজ কাজ”
অবিচারটি কী ? অবিচারটি হলো, কন্যা হিসেবে যাকে দত্তক নিয়েছো, তাকে দেখে যদি তোমার কামভাব জাগে, তাকে যদি কন্যার নজরে দেখতে না পারো, তাহলে সেটা অবিচার; এই অবিচার থেকে বাঁচার জন্য আল্লা বলছে, এত ভাবনা চিন্তার দরকার নেই, বিয়ে করে তাকে সোজা বিছানায় নিয়ে গিয়ে তার উপর কাম ঢেলে দাও। যদি একটাতে তোমার শখ না মিটে, তাহলে ২টা, ৩টা বা ৪টার উপর একের পর এক ঢালো। আর কন্যাসমদের বিছানায় নেওয়া যদি কোনো কারণে কঠিন হয়ে যায়, আর তোমাদের ঈমানদণ্ড যদি তাদের কারণে উত্থিত থাকে, তাহলে সেটাও অবিচার, এই অবিচার হতে বাঁচার জন্য সহজ উপায় হলো যুদ্ধবন্দিনী বা ক্রীতদাসীদের উপর লালসাকে ঢেলে দেওয়া; কারণ, এটা কন্যাসমদের বিছানায় নিয়ে যাওয়ার চেয়ে সহজ।
যা হোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাই, জায়েদ তো ভয়-ত্রাসে আগে থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলো জয়নাবকে তালাক দেওয়ার। আয়েশার ঘরে ঐ আয়াত ডাউনলোড হওয়ার সাথে সাথে যখন জয়নাবের কাছে ঐ খবর এলো যে আল্লা নিজে মুহম্মদ ঔ জয়নাবের বিয়ে দিয়ে দিয়েছে, তখন তা শুনেই জায়েদ জয়নাবকে তালাক দিয়ে দেয় আর এতে জয়নাবও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না; কারণ, তার তো শুরু থেকেই মুহম্মদকে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিলো, এখন সেটা বাস্তবায়িত হচ্ছে দেখে জয়নাব বেশি খুশিই হলো। মুহম্মদের বয়স তখন ৫৮ আর জয়নাব সদ্য যুবতী।
আরবের মেয়েদের রুচি কোনো লেভেলে ছিলো সেটা একটু চিন্তা করুন; যুবক জায়েদকে ফেলে অনায়াসে জয়নাব বাপের বয়সী এবং বাপতুল্য শশুর মুহম্মদকে বিয়ে করে তার বিছানায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো! আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের মেয়েদের রুচি এখনও সেই লেভেলেই আছে। পৃথিবীর সকল দেশে এমনকি অন্যান্য মুসলিম দেশের মেয়েরাও এখন স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে চায় না, কিন্ত আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশের মেয়েরা অনায়াসে চার সতীনের সাথে সংসার করে এবং যখন তখন তালাক খেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিক্ষাও করে। যে ইসলাম, নারীদেরকে একটা নিশ্চিন্ত সংসারের অধিকার দেয় নি, একান্ত আপন করে তাকে একজন পুরুষের অধিকার দেয় নি, সেই ইসলামের অনুসারী মুসলমানরা আবার জোর গলায় বলে- একমাত্র ইসলামই নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা। এরা আসলে এই কথাগুলো মুখ দিয়ে বলে না পাছা দিয়ে বলে, সেটা নিয়ে একটা গবেষণা হওয়া দরকার।
তালাকের প্রসেস সম্পন্ন হলে, মুহম্মদ, সাবেক পুত্রবধূ জয়নাবকে নিয়ে গিয়ে ঘরে তুলে, আল্লা যেহেতু নিজে তাদের বিয়ে দিয়েছিলো, সেহেতু মনে হয় কবুল টবুল বলার অনুষ্ঠানের আর দরকার হয় নি। যা হোক, আগের বিয়েগুলোতে না করলেও, এই বিয়ে উপলক্ষে মুহম্মদ তিন দিন ব্যাপী ভোজসভার আয়োজন করে। কারণ, মুহম্মদ এটা জানতোই যে এই বিয়ে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠবে, তাই খাইয়ে দাইয়ে যদি লোকজনকে কিছুটা ঠাণ্ডা রাখা যায়; কিন্তু তবুও মুহম্মদকে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিলো।
যা হোক, বিয়ে উপলক্ষে লোকজন খাওয়া দাওয়া শেষ করেও উঠে না গিয়ে গল্পে মশগুল ছিলো, এদিকে বিছানায় জয়নাবের কাছে যাওয়ার জন্য মুহম্মদের আর তর সইছিলো না, শেষ পর্যন্ত পর্যন্ত মুহম্মদ নিচের এই আয়াত ডাউনলোড করে তাদেরকে বলে,
“ভোজনশেষে তোমরা চলিয়া যাইও; তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হইয়া পড়িও না। কারণ তোমাদের এই আচরণ নবীকে পীড়া দেয়, সে তোমাদিগকে উঠাইয়া দিতে সংকোচ বোধ করে।”- (কোরান, ৩৩/৫৩)
যা হোক, সেক্স না করলে ইসলামের বিবাহ আবার পূর্ণতা পায় না, তারপর মুহম্মদ, জয়নাবের সাথে রাত কাটিয়ে তার ও জয়নাবের বিবাহকে পূর্ণতা দেয়।
এবার দেখা যাক, এই ঘটনার পর জায়েদের কী পরিণতি হলো-
মুহম্মদের এই পুত্রবধূকে বিয়ে করার পর মদীনার লোকজনের মধ্যে এ নিয়ে খুব সমালোচনা হতে লাগলো, প্রধান প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ালো, কেউ তার ছেলের বউকে বিয়ে করতে পারে কি না ? এটা কোনো রীতির পর্যায়ে পড়ে কি না ? এর জবাবে মুহম্মদের …… দালাল আল্লা, তার দোস্তের কাছে ওহী পাঠিয়ে বলে দিলো-
“আল্লা কোনো ব্যক্তির দেহে দুটি অন্তর রাখেন নি। তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকেও তিনি তোমাদের প্রকৃত পুত্র বানিয়ে দেন নি।”- (কোরান, ৩৩/৪)
এই আয়াতের মাধ্যমে জায়েদকে মুহম্মদ যে পিতৃত্বের অধিকার দিয়েছিলো তা মুহম্মদ কেড়ে নিলো বা অস্বীকার করলো। প্রকৃত পিতাকে অস্বীকার ক’রে তার সাথে ফিরে না যাওয়ার শাস্তি জায়েদের শুরু হলো।
মুহম্মদের খাদিজার গর্ভের দুটি ছেলে মারা গিয়েছিলো, পরে মিশরের রাজার উপহার দেওয়া দাসী মারিয়ার গর্ভেও মুহম্মদের একটি ছেলে জন্ম নেয়, সেও ১৮ মাস বয়সে মারা যায়। এই পুত্রহীনতার সুযোগ নিয়ে মুহম্মদ আয়াত নামিয়ে বলে দিলো,
“মুহম্মদ তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নয়, বরং আল্লার রসূল ও সর্বশেষ নবী”-(কোরান, ৩৩/৪০)
এই কথাগুলো, আল্লার, মুহম্মদকে নবুয়ত্ব (৬১০খ্রি.) দেওয়ার ১৯ বছর পর ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে মনে পড়লো কেনো ? আল্লা যদি মুহম্মদকে কোনো পুরুষের পিতা না ই বানাবে তাহলে দাসী মারিয়ার গর্ভে তার পুত্র ইব্রাহিমের জন্ম দিয়েছিলো কেনো ? না, জন্ম দেওয়ার পর তার মনে হয়েছিলো, এ হে ভুল হয়ে গেছে, তাই কি তাকে আবার ইব্রাহিমকে মেরে ফেলতে হয়েছিলো ? ভুল তাহলে আল্লারও হয়? তাহলে আল্লা কোন মুখে এই দাবী করে যে সে সর্বজ্ঞানী ? সর্বজ্ঞানী হলে তো তার অতীত, ভবিষ্যৎ সবই জানার কথা, তার আবার ভুল হবে কেনো ?
যা হোক, জন্মসূত্রে আরবের রীতি অনুযায়ী জায়েদের নাম ছিলো জায়েদ বিন হারিথ/হারিস; দত্তক নেওয়ার পর তার নাম হয় ‘জায়েদ বিন মুহম্মদ’। কিন্তু মুহম্মদ যেহেতু জায়েদের পিতৃত্ব কেড়েই নিলো, তাহলে সে তাকে আর তার নাম ব্যবহার করতে দেবে কেনো ? তাই মুহম্মদ আরেকটি আয়াত নামিয়ে এনে বললো,
“পোষ্যপুত্রদেরকে তাদের পিতার সহিত সম্পর্কসূত্রে ডাকো, এ আল্লাহর নিকট অধিক ইনসাফের কথা”- (কোরান, ৪/৫)
এর মানে হলো, মুহম্মদ, জায়েদের পিতৃত্ব অস্বীকার করলেও অভ্যাস বশতঃ লোকজন তাকে ‘জায়েদ বিন মুহম্মদ’ বলে সম্বোধন করছিলো। এটাও মুহম্মদের সহ্য হলো না, সে এই আয়াত নামিয়ে জায়েদের নাম থেকে একেবারে তার নাম বাদ দিয়ে ‘জায়েদ বিন হারিথ’ বানিয়ে দিলো।
এভাবে একে একে মুহম্মদ- জায়েদের বউ, পিতৃত্বের অধিকার, নাম- সব কেড়ে নিয়ে তাকে উদ্ভ্রান্ত বানিয়ে পথে ছেড়ে দিলো। এই অবস্থায় একজন পুরুষের কী মানসিক অবস্থা হবে সেটা একবার কল্পনা করুন। জায়েদের এই সব হারানোর পরও মুহম্মদ তাকে নিষ্কৃতি দেয় নি; কারণ, তখন মদীনাতে জায়েদের উপস্থিতই ছিলো মুহম্মদের জন্য বিড়ম্বনা ও অস্বস্তির; মুহম্মদ জায়েদের এই উপস্থিতিকেও আর সহ্য করতে চাইলো না। সব কেড়ে নেওয়ার পর তখন শুধু জায়েদের জীবনটা নেওয়ারই বাকি ছিলো মুহম্মদের, মুহম্মদ সেই প্ল্যানও করে ফেললো।
জয়নাবকে বিয়ে করার পরপরই, নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে মুহম্মদ, মুতা নামক এক স্থানে অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়, মুহম্মদের অভিযান মানেই ‘প্রথমে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত, আর তা স্বীকার না করলেই তলোয়ার’। মুহম্মদ, এই অভিযানের নেতা নির্বাচিত করে জায়েদকে এবং তাকেই পতাকা বহনের দায়িত্ব দেয়। যুদ্ধের সময় যে পতাকা বহন করতো তাকে থাকতে হতো সবার সামনে এবং ৯৮% ক্ষেত্রে এই পতাকাবাহী প্রথমেই মারা পড়তো এজন্য যে, শত্রুপক্ষ প্রথমে তাকেই টার্গেট করে বর্শা বা তীর ছুঁড়তো। শুধু এখানেই শেষ নয়, এই যুদ্ধে জায়েদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে মুহম্মদ যতটা সম্ভব ছোট বাহিনী পাঠায় যাতে মুসলমানরা পরাজিত হয় এবং জায়েদের নিশ্চিত মৃত্যু হয়। ঘটনা ঘটেও তাই, সচরাচর মুসলমান বাহিনী কোথাও পরাজিত না হলেও মুতাতে পরাজিত হয় এবং জায়েদ সহ বহু মুসলমান মারা যায় এবং মুহম্মদের প্ল্যান সাকসেস হয়।
এইভাবে জায়েদ তার আপন পিতাকে অস্বীকার করে এক নিষ্ঠুর, বর্বর, লম্পট ও নৃশংস ব্যক্তিকে পিতা হিসেবে স্বীকার করার শাস্তি- প্রথমে তার স্ত্রী, তারপর পিতৃত্ব, তারপর নাম এবং সবশেষে জীবন হারিয়ে – ভোগ করে যায়।
জয় হিন্দ।
💜 জয় হোক সনাতনের 💜