বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৮

দ্বারকা সত্যভামা নরকাসুর কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথি লক্ষ্মী-কমলা শিব দশমহাবিদ্যা প্রভৃতি


দ্বারকা সত্যভামা নরকাসুর  কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথি    লক্ষ্মী-কমলা  শিব  দশমহাবিদ্যা প্রভৃতি

শেয়ার করেছেন      প্রণব কুমার কুণ্ডু


অমৃতকথা
অমৃতকথা

নরকাসুর নামে এক অসুর দ্বারকার ওপর আক্রমণ করেছিল। কৃষ্ণ দ্বারকায় ছিলেন না, তাঁর স্ত্রী সত্যভামা ওই অসুরকে বধ করেন। যেদিন অসুরকে বধ করা হয় সেটা ছিল কৃষ্ণা চতুর্দ্দশী তিথি। অসুরের মৃত্যু হওয়ায় সেইদিন সন্ধ্যায় দ্বারকার অধিবাসীরা আলোকমালায় নগরীকে সুসজ্জিত করেন চতুর্দ্দশ প্রদীপ দিয়ে—সেটা চতুর্দ্দশী তিথি ছিল বলে। তাকে পশ্চিম ভারতে আজও নরক-চতুর্দ্দশী বলা হয়। নরক চতুর্দ্দশীর সংশ্লিষ্ট দিনকে পূর্বভারতে বলে ভূত-চতুর্দ্দশী। আর তার পরবর্ত্তী দিনে পূর্ব ভারতে শ্যামাপূজা করা হয়। শ্যামা সম্বন্ধে আগেই বলে দিয়েছি:

‘‘শীতকালে ভবেদুষ্ণা গ্রীষ্মে চ সুখশীতলা।
অসতীপুষ্পবর্ণাভা সা শ্যামা পরিকীর্ত্তিতা।।’’

কিন্তু দ্বারকায় সেই দিনটার পরের দিন মানুষেরা খুব উৎসব করেছিল। খাওয়ানো-দাওয়ানো, বাজী পোড়ানো, আর সন্ধ্যায় (সন্ধ্যা মানে প্রদোষ; অনুমানিক রাত্রি আট ঘটিকাকে প্রদোষ বলে।) সেই সময়ে সত্যভামা দেবীর পূজা করেছিল। আর সেই থেকে সত্যভামা মহালক্ষ্মী নামে পূজিতা হয়ে আসছেন। ওই অঞ্চলের মানুষেরা ওই দিন হিসাবের খাতাও নূতন করে লেখেন, দীপাবলী করেন। দীপাবলীকে কথ্য বাংলায়, কথ্য ভাষায়, বলে ‘দেয়ালী’। যাই হোক, তাই হলেন মহালক্ষ্মী। এই মহালক্ষ্মী পূজাও পৌরাণিক শাক্তাচারে স্বীকৃত হয়েছিল আর কোথাও কোথাও মহালক্ষ্মী পূজার পূর্বে অলক্ষ্মীর পূজা করে অলক্ষ্মীকে বিদায় করে তারপরে মহালক্ষ্মীর পূজা করা হয়। এই দীপান্বিতা লক্ষ্মী বা মহালক্ষ্মী শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী ছিলেন। আসল নাম সত্যভামা। এই যে লক্ষ্মী বা মহালক্ষ্মী ইনি পৌরাণিক নন। পুরাণের যুগের আগেকার, কারণ কৃষ্ণের সময় পুরাণের চেয়ে আগেকার সময়। এই মহালক্ষ্মী শিবের সময়ের চেয়ে সাড়ে তিন হাজার বছর পরেকার। সুতরাং ইনিও শিবের দুহিতা হতে পারেন না। এ হল লক্ষ্মীর আরেকটা অবস্থা। পৌরাণিক শাক্তাচারে ইনিই লক্ষ্মী বা মহালক্ষ্মী রূপে স্বীকৃতা। এ ছাড়া আর লক্ষ্মীর বর্ণনা আমরা পাই জৈনতন্ত্র, বৌদ্ধতন্ত্র ও শিবোত্তর তন্ত্রের যুগে দশমহাবিদ্যার দশম মহাবিদ্যা রূপে, ‘কমলা’ নামে। অনেকে মনে করেন, এই যে মহালক্ষ্মী ও কমলা—এঁরা একই। এ ধারণাটাও ঠিক নয়। মহালক্ষ্মী হলেন কৃষ্ণের সময়কার—কৃষ্ণের স্ত্রী সত্যভামা (দশমহাবিদ্যা হল বৌদ্ধতন্ত্র, জৈনতন্ত্র আর শিবোত্তর তন্ত্রের একটা সংমিশ্রণ।) তিনের থেকে কিছু কিছু নিয়ে এই দশমহাবিদ্যার কল্পনা করা হয়েছিল। সুতরাং এই যে কমলারূপী লক্ষ্মী—যে লক্ষ্মীকে কমলা নামে অভিহিত করা হয়, তিনি তো আসলে লক্ষ্মীই নন অর্থাৎ লক্ষ্মী কমলা হতে পারেন না। আর দশমহাবিদ্যার যুগ শিবের সময়কার চেয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার বছর পরেকার যুগ। সুতরাং তিনি শিবের কন্যাও হতে পারেন না। মানুষ কমলা আর লক্ষ্মীকে অভিন্ন ভাবতে শুরু করেছে পৌরাণিক যুগ থেকে—পৌরাণিক শাক্তাচারের যুগ।

‘‘কমলা অচলা হন পরিশ্রম গুণে
আসল্যে অলক্ষ্মী আসি বাড়ে দিনে দিনে।’’

এসব কথায় প্রমাণিত হয় যে মানুষ লক্ষ্মী আর কমলাকে এক বলে ভেবেছিল। দশমহাবিদ্যার প্রতিটি মহাবিদ্যাকেই শিবের স্ত্রী বলে ভাবা হত। সুতরাং শিবের কন্যা তিনি নন, হতেই পারেন না। কমলা সম্বন্ধে বলা হচ্ছে—‘‘কাঞ্চনকান্তিঃ সুদীপ্তা সুমনোহরা কমলা হরহৃদিবাসিনী’’ অর্থাৎ রঙটা হবে সোণার মত আর খুব চকচকে, আর দেখতে খুব ভাল, তিনি শিবিরে হৃদয়ে অধিষ্ঠিতা, তিনি শিবের পত্নী-শিবানী। তাহলে দেখছ, অনেকে যে ভাবে লক্ষ্মী হল শিবের মেয়ে, দুর্গার মেয়ে—ভাবটা ঠিক নয়।

শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তির ‘নমঃ শিবায় শান্তায়’ থেকে

সূত্র : বর্তমান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন