বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০২২

অনুশীলন সমিতি

 অনুশীলন সমিতি


Pranab Kumar Kundu শেয়ার করেছেন !



 
কলকাতার অনুশীলন সমিতির স্থাপনা - ২৪ মার্চ, ১৯০২ : উদ্দেশ্য অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা অর্জন
অনুশীলন সমিতি বিশ শতকের প্রথমভাগে বাংলায় গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনগুলির মধ্যে অন্যতম। এ সমিতি ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল। বিশ শতকের প্রথম দশকে বাংলার যুবকদের শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক উন্নয়ন- এ তিন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নিবেদিত ক্ষুদ্র যুবসংগঠনগুলির মধ্য থেকে বিপ্লবী দলগুলির জন্ম হয়েছে বলে ধরা যায়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, স্বামী বিবেকানন্দ ও অরবিন্দ ঘোষ কর্তৃক বিকশিত মতবাদের দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাঁরা বাঙ্গালীদের আত্মিক, শারীরিক ও বুদ্ধিতে বলিষ্ঠ হওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁদের চিন্তা-চেতনাকে কার্যকর করার জন্য প্রকৃত বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদ শুরু হওয়ার বহুপূর্ব হতেই মানসিক যোগাভ্যাস ও শারীরিক ব্যায়ামের জন্য গ্রাম ও শহর এলাকায় অনুশীলন সমিতি নামে অসংখ্য যুব সংগঠন গঠিত হয়।
বিপ্লবী আন্দোলনের প্রস্তুতির অঙ্গ হিসাবে অতীস চন্দ্র বসুর উদ্যোগে এবং ব্যারিস্টার প্রমথনাথ মিত্রের সভাপতিত্বে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে ২৪শে মার্চ কলকাতার ১২ নং মদন মিত্র লেনে অনুশীলন সমিতি স্থাপিত হয় । এই সমিতির আর একজন প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন সতীশচন্দ্র বসু । এই সময় সহসভাপতি হন চিত্তরঞ্জন দাস এবং অরবিন্দ ঘোষ এবং অনুশীলন সমিতির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
যে সব আশু ঘটনাবলির কারণে বিপ্লববাদ হঠাৎ করে শুরু হয়েছিল সেগুলি হলো লর্ড কার্জনের অপ্রিয় শিক্ষা সংস্কার ও বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫)। ১৯০৬ সালের মার্চ মাসে সমিতির সদস্যবৃন্দ যুগান্তর নামে একটি সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা প্রকাশনার কাজ শুরু করে। এতে বিদ্রোহের কথা খোলাখুলিভাবে প্রচার করা হয়। সারা বাংলায় সমিতির শাখা স্থাপিত হয়।
১৯০৫ সালে ঢাকায় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বিপিনচন্দ্র পালের জ্বালাময়ী বক্তৃতা শ্রোতাদেরকে ভীষণভাবে আলোড়িত করে এবং এতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিপিনচন্দ্র পালের বক্তৃতার পর ঢাকা সরকারি কলেজের এককালের শিক্ষক ও পরবর্তী সময়ে ঢাকায় ‘ন্যাশনাল স্কুলে’র প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক পুলিনবিহারী দাসের নেতৃত্বে ৮০ জন যুবক ১৯০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় ঢাকা অনুশীলন সমিতি গঠন করে। এর প্রধান কার্যালয় ছিল ঢাকাতে। পুলিনবিহারী দাস কর্তৃক ঢাকা অনুশীলন সমিতি পরিচালিত হয়।
সমিতি ও স্বদেশী আন্দোলনের লক্ষ ও কার্যপদ্ধতি প্রায় একই রকম ছিল। কলকাতা অনুশীলন সমিতি ও ঢাকা অনুশীলন সমিতি অনেকটা রাশিয়া ও ইতালির গুপ্ত সংগঠন গুলির আদলেই গড়ে উঠেছিল। উনিশ শতকে শেষে ও বিশ শতকে প্রথমদিকে বিপ্লবী আন্দোলনের পথিকৃৎ ব্যারিস্টার প্রমথনাথ মিত্র ১৯০২ সালে কলকাতা অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। বরোদার মহারাজার আর্মি বাহিনী থেকে সামরিক ট্রেনিং প্রাপ্ত তরুণ বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ ব্যানার্জী ও অরবিন্দ ঘোষের ছোট ভাই বারীন্দ্রকুমার ঘোষ তাঁকে এটি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে কলকাতা অনুশীলন সমিতি সদ্যসদের শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করার মাধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করে রেখেছিল এবং ১৯০৭ বা ১৯০৮ সাল পর্যন্ত এ সমিতি তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ রূপ পরিগ্রহ করে নি।
১৯০৭ সাল হতে অনুশীলন সমিতির সদস্যগণ বিপ্লবী কর্মকান্ডে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। ১৯০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর নব প্রতিষ্ঠিত পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের লেফটেন্যান্ট গভর্নর যে ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন সেটি বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এর অল্প কয়েকদিন পর ২৩ ডিসেম্বর তারা ঢাকার প্রাক্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. অ্যালেনকে হত্যা করার চেষ্টা করে। ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল তারা ভুলবশত দুজন নিরপরাধী মহিলা মিসেস ও মিস কেনেডিকে হত্যা করে। অথচ তাদের টার্গেট ছিল কলকাতার ম্যাজিস্ট্রেট ও পরবর্তীকালে বিহারের মুজাফ্ফরপুরের জেলা জজ ডগলাস কিংসফোর্ড। মুজাফ্ফরপুরের ঘটনার সাথে জড়িত প্রফুল্ল চাকি পরবর্তীসময়ে ধরা না দিয়ে আত্মহত্যা করেন এবং তাঁর সহযোগী ক্ষুদিরাম বসু ধরা পড়েন ও বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়। বাংলার বিপ্লবের ইতিহাসে মুজাফ্ফরপুরের হত্যাকান্ড একটি বিখ্যাত ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত। এ ঘটনার পর থেকে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী বাংলার জনগণের নায়কে পরিণত হন। পরবর্তী সময়ে কলকাতার মানিকতলার বাগানে একটি বোমা তৈরীর কারখানা আবিষ্কার হয়। অনুশীলন সমিতির জনৈক নেতা বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে তথাকথিত আলীপুর ষড়যন্ত্র মামলার আওতায় বিচারাধীনে আনা হয়।
আলীপুর মামলার কারণে ধরপাকড় ও পুলিশি হানা ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। ফলে অনুশীলন সমিতিতে বিভাজন দেখা দেয়। যদিও সমিতিগুলি একটির থেকে অন্যটি স্বাধীন ছিল, তবুও প্রমথনাথ মিত্র, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ এবং পুলিনবিহারী দাসের যৌথ পরিচালনায় সেখানে কেন্দ্রীয় অ্যাকশন কমিটির মতো একটি কমিটি ছিল। সরকার সমিতিগুলিকে দুটি প্রধান দলে চিহ্নিত করে- যুগান্তর দল ও ঢাকা অনুশীলন দল। মোটামুটিভাবে পুলিশ পশ্চিমবঙ্গের বিপ্লবীদেরকে যুগান্তরের নামানুসারে যুগান্তর দল এবং পূর্ববঙ্গের বিপ্লবীদেরকে ঢাকা অনুশীলন সমিতি বলে চিহ্নিত করে। পশ্চিমবঙ্গের বৈপ্লবিক কর্মকান্ড ১৯১০ সালের পর হতে কিছু কালের জন্য কার্যত বন্ধ হয়ে যায় এবং তখন থেকে বৈপ্লবিক কর্মকান্ডের কেন্দ্র পূর্ববঙ্গে স্থানান্তরিত করা হয়।
সাংগঠনিকভাবে ঢাকা অনুশীলন সমিতি পুলিনবিহারী দাসের পরিচালনাধীনে একটি স্বাধীন সংগঠন ছিল। কিন্তু প্রমথনাথ মিত্রের কলকাতা অনুশীলন সমিতির সঙ্গে এর সংযোগ ছিল এবং পুলিনবিহারী দাস কলকাতা গেলে সেখানেই অবস্থান করতেন।
সদস্যদের অধ্যয়ন তালিকায় প্রধানত পৌরাণিক কাহিনীভিত্তিক রচনাই বেশি ছিল। তাদের জন্য সুপারিশকৃত বইগুলির মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দের গ্রন্থসমূহকে প্রথম স্থান দেওয়া হয়েছে। অনুশীলন সমিতিতে কেউ যখন ভর্তি হতো, তখন শপথ নিতে হতো।
ঢাকা অনুশীলন সমিতি শীঘ্রই এর কলকাতার মূল সংগঠনকে গুরুত্বহীন করে দেয়। পূর্ববঙ্গের অন্যান্য জেলাসমূহে এটি বিস্তার লাভ করে এবং ১৯৩২ সালের মধ্যে এর শাখার সংখ্যা হয় ৫০০। পুলিনবিহারী দাসের সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য ঢাকা অনুশীলন সমিতি দ্রুত প্রসার লাভ করেছিল এবং প্রধান অবস্থানে ছিল। বরোদির (ঢাকা জেলা) ভূপেশচন্দ্র নাগ পুলিনবিহারী দাসের যোগ্যতম সহকর্মী ছিলেন এবং পুলিনবিহারী দাস গ্রেপ্তার হলে তিনি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। যশোরের শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু ছিলেন একজন বিপ্লবী এবং শুরু থেকেই ঢাকা অনুশীলন সমিতির ‘শাখাসমূহের পরিদর্শক’ ছিলেন। এসব সমিতির সদস্যবৃন্দ অধিকাংশই ছিল ভদ্র পরিবার হতে আগত স্কুল ও কলেজের ছাত্র। ভর্তিকৃত সদস্যদের দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়, যথা: সন্ন্যাসী ও গৃহী (পরিবারের লোক)।
পুলিন দাস ঢাকায় ন্যাশনাল স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় মনে করেছিলেন যে, এটি হবে বৈপ্লবিক শক্তি গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। পুলিনবিহারীর বৈপ্লবিক তৎপরতার সাফল্যের মূলে রয়েছে তাদের অনুশীন পদ্ধতি। তাঁর ছাত্ররা প্রথমে লাঠি ও কাঠের তরবারি দিয়ে অনুশীলন করত। পরে তারা অনুশীলন করত ছোরা ও পিস্তল দিয়ে।
পুলিনবিহারী দাস যখন গ্রেফতার হন এবং ডাকাতির দায়ে অভিযুক্ত করে তাঁকে যখন যাবজ্জীবন নির্বাসন দেওয়া হয়, বাহ্যত তখন থেকেই ঢাকা অনুশীলন সমিতি ভেঙ্গে যায়। এর পর সমিতি সম্পূর্ণরূপে গা ঢাকা দেয় এবং মফস্বলের সমিতির সদস্যদের সঙ্গে সাময়িককালের জন্য সমস্ত যোগাযোগ স্থগিত করে দেয়। কিন্তু ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী ও প্রতুলচন্দ্র গাঙ্গুলির নতুন নেতৃত্বে সমিতি শীঘ্রই তার কর্মকান্ড পুনরায় শুরু করে। ১৯১৩ সালের বিখ্যাত বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলা প্রমাণ করে যে, শুধু বরিশাল জেলাতেই সমিতির শত শত বিপ্লবী অনুসারী ছিল।
প্রথম মহাযুদ্ধ পর্যন্ত যুগান্তর দলের সঙ্গে ঢাকা অনুশীলন সমিতির সম্পর্ক ছিল দুর্বল। মহাযুদ্ধের পরিস্থিতি বাংলার সন্ত্রাসীদেরকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার সুযোগ করে দেয়। যুগান্তর বৈপ্লবিক কেন্দ্রসমূহের জোট (ফেডারেশন) হিসেবে সারাদেশে আবার আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু সরকার সন্দেহভাজনদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখত। নিরাপত্তা গোয়েন্দাদেরকে সহজেই স্থানীয় পর্যায়ে নিয়োজিত করা যেত বলে তাদের দৃষ্টি এড়িয়ে সন্দেহভাজন লোকজন কদাচিৎই চলাফেরা করতে পারত। অসহযোগ আন্দোলনের সময় যুগান্তর দল গান্ধীর সাথে সহযোগিতা করে, কিন্তু ঢাকা অনুশীলনদল তাদের বৈপ্লবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। ১৯২৪ সালে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় জেলখানায় উভয় দলের সন্ত্রাসী হাজতিদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু নেতাদের একটানা বন্দিত্বের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে এ ঐক্য কার্যকর করা যায় নি।
মাস্টারদা সূর্যসেন পূর্ববঙ্গে শেষ বৈপ্লবিক কর্মকান্ড চালান। ঢাকা অনুশীলন সমিতি এবং যুগান্তর উভয় দলের সদস্য সূর্যসেন ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন-এর কাজ পরিচালনা করেন। এ ঘটনা সাংগঠনিক দিক ও শৌর্য-বীর্যে বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে অতুলনীয় ছিল। সূর্যসেনের বিচার হয় এবং ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি তারিখে তাঁকে ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। কিন্তু সূর্যসেনের যশ এবং সফলতা এমন এক সময়ে আসে যখন বিপ্লবী আন্দোলন তাঁর আদর্শ পরিবর্তন করে ফেলে এবং তা আংশিকভাবে কংগ্রেসের সাথে ও আংশিকভাবে সমাজতান্ত্রিক দলের সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। সূর্যসেনের ওই ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপের পর আর কোনো উল্লেখযোগ্য বিপ্লবী কর্মকান্ডের কথা শোনা যায় নি।
..............
শেয়ার করুন

গুপ্তিপাড়া

 গুপ্তিপাড়া

শেয়ার করেছেন :  Pranab Kumar Kundu 




ভোলা ময়রার জন্মভিটার সন্ধানে
মহানায়কের ১৫ তম জাতীয় চলচ্চিত্র উত্সবে (১৯৬৮) পুরস্কার পাওয়া সিনেমাটি দেখেছিলাম। সম্প্রতি দেখলাম পুনরুজ্জীবনের গল্পও। তবে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি হোক বা জাতিস্মর দুইটি চলচ্চিতেই যে পার্শ্বচরিত্রটি মনে বেশ দাগ কেটেছিল সে হল ভোলা ময়রা। পিতৃদত্ত নাম ভোলানাথ নায়েক। তৎকালীন বাংলার জনপ্রিয় কবিয়াল। পদবী নায়েক হলেও সম্ভবত পারিবারিক পেশার কারণেই নামকরণ হয়েছিল ভোলা ময়রা। নামজাদা এই কবিয়াল এক বিদেশি অ্যান্টনি সাহেবের কাছে কবিগানে পরাজিত হয়েছিলেন ঠিকই, তবে হার স্বীকার করে ভোলা সাহেবকে তাঁর কাছে টেনে নিয়েছিলেন। মাল্যদান করে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। সমাজের মাথাদের ভোলা বোঝাতে সাহায্য করেছিলেন যে সাম্প্রদায়িকতার উর্দ্ধে গিয়ে একজন প্রকৃত শিল্পীর গুণের কদর অবশ্যই করা উচিত।
ভোলা ময়রা সম্পর্কে আরও জানার জন্য সাহায্য নিলাম ইন্টারনেটের। অনেক খোঁজাখুজির পর জানতে পারলাম নদিয়া, হুগলি ও বর্ধমান এই তিন জেলার সম্মিলিত স্থলে অবস্থিত গুপ্তিপাড়া বলে এক জায়গায় জন্ম তাঁর। ভেবে দেখলাম বেরিয়ে পড়লে মন্দ হয় না।
হাওড়া থেকে ৭৫ কিমি দূরত্বে ব্যান্ডেল-কাটোয়া লাইনে অবস্থিত গুপ্তিপাড়া। হাওড়া থেকে ট্রেনে গুপ্তিপাড়া পৌঁছতে দুই ঘণ্টারও কম সময় লাগে। হুগলি নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘিরেই গড়ে উঠেছে গুপ্তিপাড়ার জনবসতি। পশ্চিমবাংলার সব থেকে উন্নতমানের ধানও পাওয়া যায় এই গুপ্তিপাড়া থেকেই। অন্যদিকে, ফলের রাজা আম বলতেই প্রথম যে জায়গাটার নাম মনে আসে তা মালদহ হলেও গুপ্তিপাড়ার হিমসাগর আমেরও কিন্তু জাতীয় জনপ্রিয়তা আছে।
স্টেশন থেকে বেরিয়েই প্রথমে চোখে পড়েছিল ইতি-উতি ছড়ানো বেশ কিছু মিষ্টির দোকান। ট্রেন যাত্রার ধকলে খিদেও পেয়েছিল। দোকানে ঢুকে জানতে পারলাম এক নতুন তথ্য। বাংলার মিষ্টি শিল্পেরও সূচনা হয়েছিল গুপ্তিপাড়াতেই। ভোলা ময়রার জন্মস্থানের ব্যাপারটা সবাই একবাক্যে স্বীকার করলেও বিস্তারিত সঠিক তথ্য কেউই দিতে পারল না। বরং গুপ্তিপাড়ার প্রাচীন ময়রাদের কাজ-কর্ম নিয়ে জানলাম অনেক ইতিহাস। এখানেই সবার প্রথম আবিষ্কার হয়েছিল মাখা সন্দেশ। আর সেই মিশ্রণকে আকার দিয়ে নামকরণ করা হয় গুপো সন্দেশ। গোঁফের নিচে স্ব-সম্মানেই জায়গা করে নিল গুপো সন্দেশ। এরপর রিক্সা করে রওনা দিলাম মন্দির চত্বরের উদ্দেশ্যে। বাংলার স্থাপত্য শিল্পের অদ্ভূত নিদর্শন আজও বহন করে চলেছে গুপ্তিপাড়ার ৪ বৈষ্ণব মন্দির।
চৈতন্য, বৃন্দাবনচন্দ্র, রামচন্দ্র এবং কৃষ্ণচন্দ্র। এই ৪ মন্দিরেরই নির্মাণকাল ভিন্ন। মধ্য ষোড়শ শতাব্দীতে বিশ্বর রায় কর্তক নির্মিত চৈতন্য মন্দিরটিই সর্বাধিক প্রাচীন। চৈতন্য মন্দিরের গায়ের টেরাকোটা শিল্প কালের নিয়মে আজ বিলুপ্তির পথে। ৬০ ফুট উচ্চতার বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দিরটিই অন্যান্য মন্দিরগুলোর তুলনায় আকারে ও উচ্চতায় সবচেয়ে বড়। ১৮১০ সালে নির্মিত এই মন্দিরে বাংলার ঐতিহ্যশালী টেরাকোটা শিল্প না থাকলেও বাইরের ও ভেতরের উভয় দেওয়ালেই আছে রং-বেরঙের ছবি আঁকা। বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দিরকে মাঝে রেখে দুই পাশে রয়েছে রামচন্দ্র মন্দির এবং কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির। অষ্টাদশ শতাব্দীতে শেওড়াফুলির রাজা হরিশচন্দ্র রায় নির্মাণ করেন একচালার রামচন্দ্র মন্দিরটি। এই মন্দিরের গায়ে অভূতপূর্ব টেরাকোটা শিল্পের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করা যায়। রামায়ণের নানা ঘটনা থেকে শুরু করে তৎকালীন যুগের দৈনন্দিন জীবনেরও বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি তুলে ধরা হয়েছে টেরাকোটার মাধ্যমে।
১৭৪৫ সালে নবাব আলিবর্দি খাঁ-র শাসনকালে তৈরি হয় কৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরটি। এই মন্দিরটি আটচালাবিশিষ্ট। গুপ্তিপাড়ার ঐতিহ্য শুধু মন্দিরেই সীমাবদ্ধ নয়। বৈষ্ণব সংস্কৃতি দ্বারা ভালভাবেই প্রভাবিত গুপ্তিপাড়া। স্থানীয় মানুষ আজও একই উদ্যমের সঙ্গে রাস, দোল এবং রথযাত্রা পালন করে চলেছে। গুপ্তিপাড়ার সব থেকে বড় উৎসব হল রথযাত্রা। পশ্চিমবাংলার সর্বাধিক প্রাচীন ও বৃহৎ রথগুলোর মধ্যে গুপ্তিপাড়ার রথ অন্যতম। দূরত্ব অতিক্রম করার দিকে সমগ্র ভারতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে গুপ্তিপাড়ার রথ। প্রথমটা অবশ্যই পুরীর রথের জন্য নির্দিষ্ট স্থান। ভগবান বৃন্দাবনচন্দ্রের ঘরে ফেরার আগের দিন অর্থাৎ উল্টোরথের প্রাক্কালে ভাণ্ডারলুট উৎসব খুব ধুমধাম করে পালিত হয় গুপ্তিপাড়ায়। পূর্ব ভারতের বহু দর্শনার্থী এদিন গুপ্তিপাড়ায় আসেন রথের দড়ি টানার সৌভাগ্য লাভ করতে।
গুপ্তিপাড়াতেই প্রথম বারোয়ারি দুর্গাপুজোর প্রচলন হয়। ১৭৩০ সালে সেন রাজাদের বাড়ির দুর্গাপূজায় অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেন কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে ১২ জন মিলে একটি সংগঠন তৈরি করে ১৭৬১ সাল থেকে সূচনা করেন বারোয়ারি দুর্গাপূজার।
‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই
পাইলেও পাইতে পারো, অমূল্য রতন’
ভেবেছিলাম ভোলা ময়রার জীবন সম্বন্ধে আরও জানতে পারব। সেই উদ্দেশ্য সফল হল না ঠিকই, তবে জানতে পারলাম বাংলার মিষ্টির উৎসের কথা। জানলাম বারোয়ারি দুর্গাপূজার আদি ইতিহাস। জানলাম বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিশ্বস্ত সেনাপতি মোহনলালের জন্মস্থানও এই গুপ্তিপাড়া। গুপ্তিপাড়ায় আসার উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও কলকাতায় ফিরলাম একরাশ ইতিহাস, শিল্প ও সংস্কৃতির সাক্ষী হয়ে ।
সুজয় চক্রবর্তী
৩১ অক্টোবর ২০১৪
গুপ্তিপাড়া নিয়ে ইংরাজীতে একটা ভালো লেখা পড়েছিলাম, আগ্রহী পাঠকরা পড়ে দেখতে পারেন নিচের লিংক এ ক্লিক করে
শেয়ার করুন


Vishuddhi Films 53.5K subscribers

 



53.5K subscribers
China is a super power today because it publicized the historical injustice done on them. This brought generous help from America & Japan. Jewish Holocaust also was displayed in Museums to sensitize people of the world. But for Hindus the evidence & history of destruction by the Arabs & Turks were wiped out. Will Durant wrote that the Mohammedan Conquest of India is probably the bloodiest story in History. Yoga is India’s most ancient continuity, but it was valued by Indians only after its successful return from the west. At the time of Islamic invasions Buddhism was prevalent in North India. Buddhist Monks became the first target of Jihadi's since Islam believes in the destruction of Idols. The assault of Turks is the main reason for the disappearance of Buddhism from India. The Caves where the Buddhist Monks once used to meditate became the launching pad of Sept 11 attacks in America. Mathura, the city of Hindus, Jains and Buddhists cultures was destroyed around 20 times. The city of Vrindavan was lost for Centuries after its Destruction. The city was then rediscovered by Chaitanya Mahaprabhu. Northern Indian does not have a single Stupa or a Temple now in its original form. Queen Ahilyabai visited every single corner of the country to rebuild the broken temples, but it was not enough as more than 2000 temples had been destroyed. The period of destruction of Temples, and the period of disappearance of Natyashastra, is tragically the same. Followed by ---- Episode 15, Indian Resistance & Survival Wisdom https://youtu.be/PNAIA6fHaGw ============================================================================== Brief Description of Documentary Series Indian Civilisation, Continuities & Change. YouTube Channel - Vishuddhi Films. 24 Episodes in Hindi & English each. Subscribe Now : https://www.youtube.com/c/VishuddhiFi... The series is deeply researched, rightfully interpreted and beautifully filmed, from India & world sites and Museums. The series depicts the continuities of Cultural Traditions, Knowledge systems and Philosophical thoughts of India. It explores the reasons and wisdom behind the continuities of Indian Civilization and her unique identity in the world ? This 24 Episodes series shows India's magnificent Iconography, Temple Art, Diverse Cultures, Ancient Relics, Wall paintings, Manuscripts, Meditative Music & Dance with the wisdom of India, in the most enthralling & entertaining way. Unique Features : - 10 years of extensive research and Filming - 141 Indian Sites, Museums & Libraries - 52 International Sites & Museums - 30 eminent Scholars have contributed from the field of Philosophy, History, Archaeology, Sanskrit, Art and Aesthetics, Indology, Mind sciences, Psychology and Yoga. Presenter : Shri Suraj & Vallabh Bhanshali Directors : Dr Deepika Kothari & Ramji OM, IRAS Scholars : Yogacharya BKS Iyengar Production : Vishuddhi Films & Desh Apnayen S Foundation Writer, Director of Photography : Ramji Om Narration : Kabir Bedi Editor : Santosh Rout Background Music : Tutun B Roy Website- www.vishuddhifilms.com You Tube Channel : Vishuddhi Films #AttacksonIndia #AttacksonBuddhism #AttacksonTemple #HistoryofIndia #AncientIndia #IndianCivilization 00:00 Could Muslims become the protectors of Hindu's? 03:31 Will Durant on Indian Conquest 05:17 Yoga, India's most ancient continuity 06:01 Why did Buddhism disappear from India? 06:57 Attacks on Indian Centers of Learning 07:47 Attacks on Hinduism, Buddhism & Jainism 10:30 Why North India doesn't have any ancient Temple or Stupa? 12:16 Queen Ahilyabai's work on rebuilding Temples of India 13:19 Attacks on Indian Temples.
SHOW LESS