মুসলমানি অসভ্যতায় শুধু নারীধর্ষণ, হত্যা, লুণ্ঠন আর মন্দির ধ্বংস !
শেয়ার করেছেন :- প্রণব কুমার কুণ্ডু
হাজার বছরের ইতিহাস আমাদের ভারতের, আর আমরা গর্ব করি ভারতবাসী হয়ে। আমরা গর্বিত আমাদের রামায়ণ মহাভারতের মত মহাকাব্য নিয়ে, যাতে বর্ণিত আছে কত অজস্র স্থাপত্যকলা, পরিকাঠামোমূলক বর্ণনায় অজস্র মন্দিরের কথা। যদিও কালের কালো হাতে আজ আর অনেক কিছুই নেই, ধ্বংস হয়েছে আমাদের শতাধিক মন্দির। মোঘল, ব্রিটিশ প্রভৃতি বিদেশী শক্তি আমাদের দেশে এসে শুধু ধ্বংসই করেনি মন্দির, মন্দির ধূলিসাৎ করে তার ধ্বংসাবশেষের ওপর নিজেদের ধর্মের ধ্বজা তুলে মসজিদ বানিয়ে দিয়েছে। একসময় যেখানে সংস্কৃত শ্লোকাদির আওয়াজ কানে আসতো, যেখানে দিনরাত ভজন হত, আজ সেখানে মন্দির ত দুরের কথা, হিন্দুদের ধুলো অবধি পাওয়া যায়না, কায়েমি মুসলমান সাম্রাজ্যবাদের চিহ্ন নিয়ে এখনও চলেছে পুরাতন ঐতিহ্য বহনের নামে একপ্রস্থ মৌলবাদী সাম্রাজ্যবাদী স্বৈরতন্ত্রের স্বাক্ষরতার নিদর্শন।
মুসলমানরা তাদের রাজত্বকালে আমাদের হিন্দু সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে সব কিছু কেড়ে নিয়েছিল। কমবেশি ৩০০০ এর মত মন্দির ধংস করে তাতে মসজিদ, দরগাহ, মাজার স্থাপনা করেছিল। যদিও খালি জমির অভাব ছিল না কিন্ত তবুও সাম্রাজ্যবাদী মৌরসিপাট্টা কায়েম করতেই এবং হিন্দুদের ওপরে নিজেদের ক্ষমতার প্রভাব জারি করতেই হিন্দু সংস্কৃতি ও শিল্পের বিলুপ্তির মাধ্যমে তারা নিজেদের জয়ধ্বজা ওড়ানোর চেষ্টা করেছিল এবং তাতে যথেষ্ট সফলও হয়েছিল।
সেই রকম দশটা মসজিদের কথা বলা হল যেগুলো কোনও না কোনও মন্দির ধবংস করে তার ভগ্নস্তূপের ওপর করা হয়েছে।
১. রাম জন্মভূমি মন্দির,অযোধ্যা —-বাবরি মসজিদ:-
এক মতে বলা হয়, যে জমিতে বাবরি মসজিদ বানানো হয়েছিল ১৫২৮ সনে, সেটা আসলে রামের জন্মস্থান,যা রাম জন্মভূমি নামে পরিচিত। “মির বাকি” বাবরের খাস লোক সেখানে মন্দির ভেঙে, সেই যায়গায় বাবরের নামে মসজিদ বানায় (বাবরি মসজিদ)। হিন্দু মুসলিম উভয়েই এই মসজিদ – মন্দিরে নিজেদের ধর্মীয় আরাধনা করে থাকে, মসজিদের মধ্যে মুসলিমরা এবং মসজিদয়ের বাইরে হিন্দুরা।
অন্য মতে বলা হয়,বাবর রামচন্দ্রের মন্দির ধূলিসাৎ করে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেন।আবার কেউ বলেন বাবরের পূর্বে কোন মুসলমান আক্রমণকারী বানিয়েছে বাবরি মসজিদ কারন মসজিদের স্থাপত্য আরো পুরোনো আর এই সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট নির্দেশ নেই।
তবে সন্দেহের অবকাশ নেই যে মন্দির ছিল এক সময়, কারন মসজিদের নিচে মন্দিরের ধবংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
২. কাশী বিশ্বনাথ মন্দির—–জ্ঞানভাপি মসজিদ
বেনারসের কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের কথা জানেননা এমন কোন হিন্দু নেই যেখানে ভগবান শিবের আরাধনা করা হয়। ৩৫০০ বছরের পুরোনো শহর এই বেনারস। এটি হিন্দুদের অন্যতম ধর্মীয় জায়গা যেখানে জীবনে এএকবার অন্তত মানুষ পুণ্য অর্জন করতে অবশ্যই আসে আর নিজের মৃত পূর্বপুরুষের অস্থি গঙ্গায় ভাসিয়ে তার আত্মার শান্তি কামনা করে।আসল। এখানে মুখ্য পুজ্য হলেন বিশ্বনাথ বা বিশ্বেশ্বর যার অর্থ হল সমগ্র বিশ্বের স্রষ্টা। এই মন্দিরময় শহরটি পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা পুরানো শহর বলে বর্ণিত সাথে ৩৫০০ বছরের ইতিহাস সাথে করে।
কাশী বিশ্বনাথের আসল জ্যোতির্লিঙ্গটি পাওয়া যায় না। মুঘলদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পুরাতন মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ইতিহাস বলে এই মন্দির বহুবার ধবংস ও আক্রান্ত হয়েছিল মুসলমানদের দ্বারা। প্রথমবার আক্রান্ত হয় ১১৯৪ সালে, ২০ বছর বাদে আবার বানানো হয় মন্দির, আবার ভাঙা হয় ১৫ শতকে। আকবরের আমলে এটি আবার পুনর্নির্মিত হয় ১৬ শতকে।কিন্তু আকবরেরর বংশধর ও তাঁর নাতি ঔরঙ্গজেব আবার ১৬৬৯ সালে এটিকে ধ্বংস করেন এবং তার জায়গায় জ্ঞানভাপি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।
মারাঠা রানী অহল্যাবাই হোলকর ১৭৮০ সালে বর্তমান মন্দির বানান ওই মসজিদের কিছু দুরেই। মন্দিরের সোনার চূড়া দান করেছিলেন পাঞ্জাবের শিখ রাজা মহারাজা রঞ্জিত সিং ১৮৩৯ সালে।
৩. কৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির —– সাহি ইদ্গাহ মসজিদ
উত্তরপ্রদেশের মথুরায় অবস্থিত কৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির বা কৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির যা কেশব দেব মন্দির বলেও পরিচিত। কথিত আছে মথুরার মন্দিরের ন্যায় গুজরাটের দ্বারকার দ্বারকাধিশ মন্দির ও কৃষ্ণের পৌত্র বজ্রা দ্বারা নির্মিত বলে মমনে করা হয়। মথুরা কৃষ্ণের জন্মস্থান আর মন্দির বানানো হয় আনুমানিক ৫০০০ বছর আগে। এই মন্দিরটি দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে খ্রীষ্টপূর্ব ৪০০ সালে নির্মিত বলেও মনে করা হয়।
দ্বারকাধিশ মন্দিরের ১০১৭ সালে ধংসের পর আবার নতুন করে বানান বীর সিং দেও বা বীর সিং বুন্দেলা। কেশব দেও মন্দির ও ঔরঙ্গজেব ধংস করে তার উপরে নির্মাণ করে সাহি ইদ্গাহ মসজিদ। এই সুন্দর মন্দির টি বহু দূর থেকেও দেখা যেতো। এখন যে মন্দির টি আমরা দেখতে পাই, সেটা চতুর্থতম মন্দির, বানানো হয় ১৯৬৫ সালে। যদিও এই স্থান নিয়ে রাজনৈতিক তর্জা এখনো অব্যাহত। সাহি ইদ্গাহ মসজিদ বানানো হয় সব মন্দিরের ধংসাবশেষ দিয়ে যার প্রমান পাওয়া যায় ASI দ্বারা একটা ফলক, যাতে লেখা আছে যে এই সাহি ইদ্গাহ মসজিদ বানানো হয়েছে মন্দিরের ভাঙা পাথর, মুর্তির অবিশিষ্টাংশ দিয়ে।
৪. রুদ্র মহালয়া —– জামী মসজিদ
গুজরাটের পাটান জেলার সিদ্ধপুরে রুদ্র মহালয়া মন্দিরের ধংসাবশেষ অবস্থিত। সরস্বতী নদীর তীরে সিদ্ধপুর এক অতি প্রাচীন ও পবিত্র গ্রাম। এই গ্রামের নাম হয়েছে সিদ্ধরাজ জয়সিং এর নাম থেকে, যিনি এই মন্দির স্থাপনা করেন ১২ শতকে।
রুদ্র মহালয়া মন্দির নির্মাণকাজ শুরু হয় ৯৪৩ শতকে মুলারাজ সোলাংকির হাত ধরে। নির্মাণকল্প সমাপ্ত হয় ১১৪০ শতকে, সিদ্ধরাজ জয়সিং এর প্রয়াসে। এটি ১৪১০-১৪৪০ সালের মধ্যে আলাউদ্দিন খিলজির দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পরে এটি সম্পূর্ণভাবে প্রথম আহমেদ শাহ দ্বারা ধূলিসাৎ হয় এবং এর কিছু অংশ তখনই মসজিদে পরিণত হয়।
১০ শতকে সোলাংকি বংশের প্রতিষ্ঠাতা মুলারাজা সোলাংকি শুরু করেন এই মন্দিরের নির্মাণ, যিনি গুজরাটের সোলাংকি রাজত্বের স্থাপনা করেন। কথিত আছে মুলারাজা নিজের বয়সকালে আপন পাপ খণ্ডিত করবার জন্য এই মন্দিরের নির্মাণকল্প শুরু করেন। অজানা কারনে মন্দির নির্মাণ শেষ হয়নি। ১২ শতকে মজারাজ সিদ্ধরাজ জয়সিং মন্দির সম্পূর্ণ করেন এবং এটি সিদ্ধপুরের মুখ্য মন্দিরে পরিণত হয়।
অন্য একটি মতানুযায়ী গোবিন্দদাস ও মাধবদাস সবুজ শ্যামল পরিবেশের মধ্যে একটি পপবিত্র স্থান ও শিবলিঙ্গ খুঁজে পান। যা রুদ্র মহালয়া বলেও পরিচিত। ওখানে মন্দিরে সিদ্ধরাজ বিভিন্ন রাজাদের মূর্তি স্থাপন নিজের সাথে, এবং বলেন যদি কখনো ওই জায়গাটি তার বিশেষত্ব হারায় কখনো,তবুও ওই মন্দিরটি কখনো ধ্বংস হবে না।১২২৬ সালে মুঘলরাজ আলাউদ্দিন খিলজি তাঁর দুই সেনাপ্রধান উলুঘ খান ও নুসরত খান জলসেরির দ্বারা আবারো ওই মন্দির ধ্বংস করে সেখানে মসজিদ স্থাপন করে। আবার আহমেদ শাহ ১ এই মন্দির ভেঙে, পশ্চিম প্রান্তে এই জামী মসজিদ নির্মাণ করে।
৫. ভোজশালা– কামাল মৌলানা মসজিদ
মা সরস্বতীর এক অতি প্রাচীন মন্দির হল এই ভোজশালা। এই মন্দিরটির নির্মাণ করেন রাজা ভোজ যার রাজত্ব রাজস্থান থেকে উড়িষ্যা এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি মধ্যপ্রদেশের ধর জেলায় অবস্থিত যেটি রাজা ভোজয়ের রাজধানী ছিল।ভোজশালা ছিল হাজারো ছাত্র ও জ্ঞানী মানুষের সঙ্গমস্থল আর এটি শিক্ষা অর্জনের মুখ্য জায়গা ছিল।
ইসলামিক আক্রমণ শুরু হয় ৩৬ বছর আগেই যখন মৌলানা কামাল নামে একজন ফকির ১২৬৯ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে মালওয়াতে প্রবেশ করেন। তিনি এখানে বহু মানুষকে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেন এবং দীর্ঘ ৩৬ বছর এখানকার সমস্ত খবর জোগাড় করে সেগুলি আলাউদ্দিন খিলজিকে দিয়ে দেন।
খ্রীষ্টপূর্ব ১৩০৫ সালে ভোজশালা সর্বপ্রথম আলাউদ্দিন খিলজি দ্বারা আক্রান্ত হয়। রাজা মহাকালদেব ও তাঁর সেনার পরাজয়ের পরে আলাউদ্দিন খিলজি ১২০০ হিন্দু ছাত্র ও শিক্ষককে হত্যা করেন কারণ তারা ধর্মান্তরিত হতে চায়নি।
একজন মুসলিম শাসক দিলাবার খান বিজয় মন্দির ( সূর্য মার্তন্ড মন্দির ) ধ্বংস করেন এবং সরস্বতী মন্দিরের একটি অংশকে দরগায় পরিণত করতে চান। বর্তমানে মুসলিমরা এই বিজয় মন্দিরে নামাজ পাঠ করে এবং ষড়যন্ত্র করে এটিকে প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে যে এটি আসলে একটি দরগা যার নাম হল “লাট মসজিদ “। আবারো মেহমুদ শাহ ভোজশালা আক্রমণ করেন এবং এটিকে দরগায় পরিণত করার চেষ্টা করেন। তিনি সরস্বতী মন্দিরের বাইরের জমি জবরদখল করে সেখানে কামাল মৌলানার মৃত্যুর ২০৪ বছর পরে “কামাল মৌলানা মকবরা ” স্থাপন করেন।
১৯৯৭ সালের ১২ ই মার্চের পূর্বে হিন্দুদের দর্শন করার অনুমতি ছিল কিন্তু পুজা করার অনুমতি ছিল না।তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বর্তমানে কেবলমাত্র বসন্ত পঞ্চমীর দিন ভোজশালায় হিন্দুদের প্রবেশাধিকার ও পুজো করার অধিকার দেওয়া হয়েছে।
৬. আদিনাথ মন্দির —— আদিনা মসজিদ
পশ্চিমবাংলার পান্ডুয়াতে শিব মন্দির ভেঙে ১৩৫৮ – ৯০ শতকে শিকান্দার শাহ্ আদিনা মসজিদ নির্মাণ করে, যা এখন ভারতের অন্যতম সর্ব্ববৃহৎ বড় মসজিদ।
আদিনা মসজিদে… প্রবেশদ্বার, অন্দরমহল, দেওয়ালে দেওয়ালে হিন্দু দেবদেবীর বিগ্রহের ধংসাবশেষ লক্ষণীয়, যা কিনা বাংলার স্থাপত্যকলার নিদর্শনবাহী। যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে এই মন্দির আদিনাথের। সমস্ত নির্মাণকাজ বুঝিয়ে দেয় আদিনা মসজিদ হিন্দু শিব মন্দির ধংস করে বানানো হয়েছে। মসজিদের এক পাথরে শিবের নটরাজ মূর্তি এখনো আছে। অন্য এক পাথরে গনেশ এর মুর্তি পাওয়া গেছে।
কথিত আছে এই মসজিদের নাম টাও হিন্দুদের দেবাদিদেব আদিনাথের থেকে নেওয়া।
৭. ভদ্রকালী মন্দির ——-জামা মসজিদ
ভদ্রকালীর মন্দির ভেঙে ১৪২৪ শতকে আহমেদ শাহ্ ১ এখনকার জামা মসজিদ নির্মাণ করেন। আহমেদাবাদ বিভিন্ন সময়ে ভদ্রা, কর্নাবতী, রাজনগর ও আসাল নামে পরিচিত ছিল। ভদ্র নামটি এক দেবীর নামানুসারে দেওয়া হয়, যার নির্মাণ করেন রাজস্থানের মালওয়ার রাজপুত রাজারা যারা এই জায়গায় রাজত্ব করেন ৯ -১৪ শতকে।
অবশিষ্ট ১০০ টি পাথরের থাম্বায় খোদাই করা বিভিন্ন ফুল, লতাপাতা, পদ্ম ফুল, নানা দেবদেবীর মুর্তি, কুণ্ডলিনীর পরিস্কার ও ব্যাখ্যা করা, পার্বতীর মুর্তি, ও ঘণ্টা। পুরাণ, বেদ, রামায়ণ মহাভারতের মত ইতিহাসের লেখা খোদাই করা আছে এখনো যা দেখলেই বোঝা যায় হিন্দুদের মন্দির। যদি এটি মসজিদ হিসাবে নির্মিত হত,তাহলে কখনোই বিরাট হলঘরের মধ্যে একাধিক থাম্বা তৈরী করা হত না। মসজিদে নামাজ পরার জন্য কখনোই থাম্বা নির্মাণ করা হয় না বরং হিন্দু মন্দিরে থামগুলি হিন্দু সভ্যতা ও সংস্কৃতির নিদর্শন বহন করে।
আসল ভদ্র দূর্গ এখনো বিকৃত অবস্থায় ভগ্নস্তূপ আকারে ওখানে অবস্থান করছে। জামা মসজিদ এই ভদ্র দূর্গের বাইরে অবস্থান করছে যার দক্ষিণেরর রাস্তাটি তিন দরওয়াজা থেকে মানেকচক অবধি গেছে। আহমেদাবাদ নামটি এসেছে আহমেদ শাহ ১ য়ের নামানুসারে যিনি ১৪১১ সালে কর্ণাবতী দখল করেছিলেন। তিনি গুজরাটে আহমেদাবাদকে রাজধানীতে পরিণত করেন এবং সবরমতী নদীর পূর্ব দিকে ভদ্র দূর্গ নির্মাণ করেন।
৮. বিজয় মন্দির – বিজামন্ডল মসজিদ
বিদিশা হল মধ্যপ্রদেশের একটি শহর যা রাজধানী ভূপালের ৬০ কিমি দূরে অবস্থিত। বিদিশা বিজামন্ডল মসজিদ আর তার ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত। ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা বহু হিন্দু মন্দির ধ্বংস হয়ে গেছে বা মসজিদে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। বিজামন্ডল মসজিদও সেরকমই একটি উদাহরণ যেখানে হিন্দু মন্দির লু্ন্ঠন করে, তাকে জ্বালিয়ে, ধ্বংস করে, ভেঙে গুঁড়িয়ে সেখানকার মন্দিরের জিনিসপত্র ব্যবহার করেই মসজিদ গড়ে তোলা হয়।
বর্তমানে বিজামন্ডল সকল প্রাচীন ঐতিহ্য হারিয়ে সময়স্রোতে এক যন্ত্রণা ও দুঃখবাহী ঘটনার সাক্ষ্য বহন করছে। পরামর রাজাদের দ্বারা তৈরী হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দ্বারা তৈরী এই মসজিদটি দেবী চর্চিকারর ছিল। একটি অবশিষ্ট থামে খোদিত তথ্য থেকে জানা যায় যে এটি মালওয়ার রাজা নরবর্মন দ্বারা যুদ্ধে বিজয়প্রাপ্তির পরে নির্মাণ করা হয়। “বিজা” বা “বিজয়া” শব্দটি দেবী বিজয়া রাণী থেকে এসেছিল। বিজামন্ডল বা বিজয়া মন্দির হিন্দু দেবীর উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছিল।
ঔরঙ্গজেব ১৬৫৮–১৭০৭ সালে এই মন্দিরটি লুট করে, ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। তিনি সমস্ত দেবীমূর্তি মন্দিরের উত্তর দিকে মাটিতে পুঁতে দেন এবং মন্দিরটিকে মসজিদে পরিণত করেন। বর্তমানে মসজিদটিতে ইদের সময় বিশেষত লোকসমাগম হয়।
৯. সোমনাথ মন্দির — মন্দির পুনরুদ্ধার
সোমনাথ মন্দির গুজরাটের পশ্চিমাংশে সৌরাষ্ট্রের ভেরাভালের নিকট প্রভাস পাটনে অবস্থিত। এটি শিবের বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে প্রথম বলে মনে করা হয়। এটি গুজরাটের অন্যতম বিখ্যাত ও পবিত্র টুরিস্ট স্পট বলে গণ্য। বহুবার ধ্বংস ও পুনর্নির্মাণ করার পরে বর্তমানে এটি ১৯৫১ সালের মে মাসে চালুক্যরাজের সময় স্থাপত্য ও শিল্পকলার মাধ্যমে স্থাপিত হয়। বল্লভভাই প্যাটেলের তত্ত্বাবধানে এই মন্দিরের পুনর্নির্মাণ শুরু হয় এবং তৎকালীন মন্দির ট্রাস্টয়ের প্রধান কে.এম.মুন্সির তত্ত্বাবধানে এটি শেষ হয়।
সমস্ত মন্দিরের মূল্যবান ধনসম্পত্তি লুন্ঠিত হয় গজনীর আক্রমণে। এখানে একটি প্রচলিত গল্প আছে যে শয়তানের মূর্তি রাখা হত “আল – লাত ” মন্দিরে।যার জন্য এটি বারংবার লুন্ঠিত হয়। ইসলামের আগেও অনেক আরবীয় দস্যু দ্বারা এই মন্দিরটি লুন্ঠিত হয় কারণ এটি তাদের চন্দ্র দেবতার বলে তারা মনে করত।
১০২৬ খ্রীষ্টাব্দে গজনীর মাহমুদ প্রথম এই মন্দিরটি লুঠ করেন। তারপর লুঠ করেন আলাউদ্দিন খিলজির কম্যান্ডার আফজাল খান এবং তারপর ঔরঙ্গজেব।এটা বলা হয় যে এই মন্দিরটি কমবেশি ১৭ বার লুন্ঠিত ও ধ্বংস করা হয়। মূল মন্দিরটি গজনী ও অন্যান্য মুসলিম সম্রাট দ্বারা, ঔরঙ্গজেব ও পর্তুগিজদের দ্বারাও আক্রান্ত হয়।
১০. বিভিন্ন হিন্দু ও জৈন মন্দির–কাওয়াত আল– মুসলিম মসজিদ ধ্রুব স্তম্ভ/ বিষ্ণু ধ্বজা– কুতুব মিনার
দিল্লীর কুতুব মিনার আসলে ধ্রুব স্তম্ভ বা বিষ্ণু ধ্বজা যেটি রাজা বিক্রমাদিত্যেরও আগের এবং এতে বিভিন্ন আরবিক মোটিফ ও স্ক্রিপ্ট ছিল যা কুতুব উদ্দিন আইবকের সময়ে ১১৯১– ১২১০ খ্রীষ্টাব্দ অবধি।
যদি আমরা কুতুব মিনারের উপর থেকে দেখি,তাহলে এটি ২৪ টি পাপড়ি সমেত একটি পদ্মকে দেখায়। পদ্ম কখনোই ইসলামিক চিহ্ন নয় বরং এটি বৈদিক চিহ্ন এবং ভগবান ব্রক্ষা বিষ্ণুরর নাভিতে অবস্থিত কমলের দ্বারা জন্মগ্রহণ করেন বলে কথিত আছে।
কুতুব মিনার সংলগ্ন একটি শহর হল মেহরৌলি যা আসলে একটি সংস্কৃত শব্দ মিহিরা- আওয়ালি। এটি প্রমাণ করে যে এখানে বিক্রমাদিত্যর রাজসভার অন্যতম জ্ঞানী বরাহমিহির তাঁর বিভিন্ন অনুচর, পারিষদ, গণিতজ্ঞ
প্রভৃতির সাথে বসবাস করতেন। তাঁরা এই মিনারটিকে তাঁদের জ্যোতির্বিদ্যার বিভিন্ন পড়াশোনা ও আকাশ নিরীক্ষায় ব্যবহার করতেন। কুতুবউদ্দিন এই তথ্য দিয়ে গেছেন যে তিনি এই স্থানে ধ্বংসলীলা চালিয়েছেন কিন্ত কোথাও এরকম কিছু তথ্য দেন নি যাতে করে মনে হয় তিনি কোন মিনার স্থাপন করেছিলেন। এখানকার মন্দিরটির পরবর্তী নাম হয় কুয়াত- আল- ইসলাম মসজিদ।
দিল্লীর প্রথম মসজিদ হল কাবাত- আল- ইসলাম বা কাওয়াত – আল- ইসলাম যা পৃথ্বীরাজ চৌহান নির্মিত মন্দির ধ্বংস করার পরে কুতুবউদ্দিন আইবক স্থাপন করেন। তিনি গজনী ফিরে যাবার সময় সিহাবউদ্দিন ঘোরিকে নির্দেশ দিয়ে যান একটি লাল পাথর নির্মিত মসজিদ তৈরী করার জন্য আর বেশ কিছু অংশ যার মন্দির থেকে নেওয়া হয়েছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন