'ওম' উচ্চারণ করতে করতে ধ্যানে চলে যান
প্রাণেতে শান্তি পান !
প্রাণেতে শান্তি পান !
শেয়ার করেছেন :- প্রণব কুমার কুণ্ডু
প্রণব কুমার কুণ্ডু
প্রণব কুমার কুণ্ডু
কীভাবে ‘ওম’ উচ্চারণ করলে শান্তি পাওয়া যায়?
শারীরিক অসুখের সঙ্গে মানসিক অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তার সম্পর্ক নিবিড়। তাই প্রতিদিন ‘ওম’ ধ্বনি সহযোগে ধ্যান করলে মন শান্ত হয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়। তবে ধ্যান করার কিছু নিয়ম রয়েছে। জানাচ্ছেন যোগ বিশারদ প্রেমসুন্দর দাস।
প্রেমসুন্দর দাস
যোগ বিশারদ
‘ওম’ উচ্চারণকে ভাঙলে পাওয়া যায় ‘অ-উ-ম।’ অর্থাৎ ‘আমি’। আমির মধ্যেই সৃষ্টি-স্থিতি-লয়। সমস্ত শব্দেরই শুরু ওম থেকে। আবার শেষও ‘ওম’ শব্দে। একটি সরু ও ফাঁপা নলের মধ্যে দিয়ে যে শব্দই উচ্চারণ করা হোক না কেন, শেষ অবদি তা প্রতিধ্বনিত হয় ‘অউম’ রূপে। সমস্ত শব্দেরই যোগ ‘আমি’-এর সঙ্গে। কীভাবে?
‘ওম’ উচ্চারণের সঙ্গে ‘চ্যান্টিং মেডিটেশন’ বা ‘ধ্বনিসহ ধ্যান’-এর বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে। সঠিকভাবে ওম উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের কোটি কোটি কোষের মধ্যে কম্পন তৈরি হয়। এই উদ্ভূত অবস্থাকে বলে সাইকোফিজিও নিউরোলজিক্যাল হারমোনি! সাইকো অর্থাৎ মন। ফিজিও অর্থ শরীর আর নিউরো অর্থ স্নায়ু। ওম উচ্চারণে স্নায়ু মারফত দেহের সঙ্গে মনের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। প্রশ্ন হল তাতে লাভটা কী? ঠিক কথা। দেখুন, শরীরের মতো মনের একটা স্বাস্থ্য আছে। না থাকলে মন ভালো নেই বা মন ভালো আছে বলতাম না। মনই হল শরীরের নিয়ন্ত্রক। কিন্তু মন নিয়ন্ত্রণ করে কে? আমরা বলি ‘আত্মা’। আত্মাই হল মনের ও শরীরের সর্বময় নিয়ন্ত্রক।
এই আত্মার ধ্বনিই প্রতিফলিত হয় হৃদয়ের স্পন্দনে— লাবডুব-লাবডুব লাবডুব! এই শব্দকে সরু ও ফাঁপা নলের মধ্যে প্রেরণ করলে মিলবে ‘অউম-অউম-অউম’। মানে আমি আছি- আমি আছি- আমি আছি।’
ক্রিয়াযোগে খেচরী মুদ্রার সাহায্যে জ্যোতিধ্যান করা হয় ওম শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে। খেচর শব্দের অর্থ হল আকাশ। আকাশ অর্থাৎ ব্রহ্ম! খেচরী মুদ্রার সাহায্যে জ্যোতিধ্যান করলে মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাস্নায়ুর সংযোগ সংঘটিত হয়। সঠিকভাবে ওম উচ্চারণ সহযোগে এই ক্রিয়াযোগে ব্রহ্মের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। কথিত আছে, কোনও ব্যক্তি খেচরী মুদ্রা সহযোগে ক্রিয়াযোগে ধ্যানে সফল হলে, তাঁর কাছে সৃষ্টির কোনও কিছুই দৃষ্টির অতীত থাকে না। তিনি রিপু জয় করতে সক্ষম হন। মনে রাখতে হবে, রিপুর অধীনে মন থাকার কারণেই আমরা এত অস্থির হয়ে পড়ি। অতএব মনের স্থিরতা আনা জরুরি।
ধ্যান অনেক রকম আছে। উদাহরণ হিসেবে জ্যোতিধ্যান, শবধ্যান, শীর্ষধ্যান, শব্দ ধ্যান, বাহ্যিক ধ্যান ইত্যাদির কথা বলা যায়। তবে ক্রিয়াযোগে সবসময়ই অন্তর্মুখী ধ্যানের কথা বলা হয়েছে। শ্যামাচরণ লাহিড়ী, যুক্তেশ্বর গিরি, স্বামী শিবানন্দ মহারাজ-এর মতো যোগীরা বারবার ক্রিয়াযোগের মাধ্যমে আত্মোপলব্ধির কথা বলেছেন।
তবে সকলেই এভাবে ক্রিয়াযোগের মাধ্যমে নিরাকারের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে নিতে পারবেন না। তবে মন শান্ত রাখার জন্য সাধারণ ভাবে ধ্যান করা যায়। বিশেষ করে স্নায়ুর সমস্যাজনিত সমস্যায় ধ্যান করলে বিশেষ ফল মেলে।
এই প্রসঙ্গেই বলা যায়, ধ্যানের কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। কেউ ১০ মিনিট ধ্যান করতে পারেন। কেউ আবার আধঘণ্টাও ধ্যান করতে পারেন। এমনকী সারাদিন ধরেও ধ্যান করা যায়। আমরা যেমন ঘুমের মধ্যে দিয়ে শরীর ও মন শান্ত করি, কর্মক্ষম করে তুলি, তেমনই ধ্যানও হল প্রাকৃতিক স্নায়ু শান্ত করার ওষুধ।
কীভাবে ধ্যান করবেন
শরীর কষ্ট পাবে না এমন জায়গায় বসুন। বসে ধ্যান করতে হয়। পদ্মাসনে বসতে না পারলে বাবু হয়েও বসে ধ্যান করা যায়। তবে শিরদাঁড়া রাখতে হবে সোজা। ধ্যান করার জন্য কোনও নির্জন স্থান নির্বাচন করতে পারলে সবচাইতে ভালো হয়।
চ্যান্টিং মেডিটেশন
ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে ওম উচ্চারণ করুন। শ্বাস ছাড়ুন ধীরে ধীরে। সমস্ত মনোনিবেশ করুন ওম উচ্চারণের দিকে। মন অস্থির হবে, তবু মনের সম্পূর্ণ নিবেশ ঘটাতে হবে শব্দের দিকে। এভাবে চোখ বন্ধ করে ‘ওম’ উচ্চারণ করে যান। চ্যান্টিং মেডিটেশনের সাফল্য হল, দ্রুত মন স্থির করে ফেলা সম্ভব হয়। যে কোনও পরিস্থিতিতে, যখন মন খুব চঞ্চল ও দুশ্চিন্তাময় হয়ে উঠেছে তখনও ওম উচ্চারণ করা যায়। ধীরে ধীরে মন শান্ত হবে।
শারীরিক অসুখের সঙ্গে মানসিক অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তার সম্পর্ক নিবিড়। তাই প্রতিদিন ‘ওম’ ধ্বনি সহযোগে ধ্যান করলে মন শান্ত হয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়। তবে ধ্যান করার কিছু নিয়ম রয়েছে। জানাচ্ছেন যোগ বিশারদ প্রেমসুন্দর দাস।
প্রেমসুন্দর দাস
যোগ বিশারদ
‘ওম’ উচ্চারণকে ভাঙলে পাওয়া যায় ‘অ-উ-ম।’ অর্থাৎ ‘আমি’। আমির মধ্যেই সৃষ্টি-স্থিতি-লয়। সমস্ত শব্দেরই শুরু ওম থেকে। আবার শেষও ‘ওম’ শব্দে। একটি সরু ও ফাঁপা নলের মধ্যে দিয়ে যে শব্দই উচ্চারণ করা হোক না কেন, শেষ অবদি তা প্রতিধ্বনিত হয় ‘অউম’ রূপে। সমস্ত শব্দেরই যোগ ‘আমি’-এর সঙ্গে। কীভাবে?
‘ওম’ উচ্চারণের সঙ্গে ‘চ্যান্টিং মেডিটেশন’ বা ‘ধ্বনিসহ ধ্যান’-এর বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে। সঠিকভাবে ওম উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের কোটি কোটি কোষের মধ্যে কম্পন তৈরি হয়। এই উদ্ভূত অবস্থাকে বলে সাইকোফিজিও নিউরোলজিক্যাল হারমোনি! সাইকো অর্থাৎ মন। ফিজিও অর্থ শরীর আর নিউরো অর্থ স্নায়ু। ওম উচ্চারণে স্নায়ু মারফত দেহের সঙ্গে মনের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। প্রশ্ন হল তাতে লাভটা কী? ঠিক কথা। দেখুন, শরীরের মতো মনের একটা স্বাস্থ্য আছে। না থাকলে মন ভালো নেই বা মন ভালো আছে বলতাম না। মনই হল শরীরের নিয়ন্ত্রক। কিন্তু মন নিয়ন্ত্রণ করে কে? আমরা বলি ‘আত্মা’। আত্মাই হল মনের ও শরীরের সর্বময় নিয়ন্ত্রক।
এই আত্মার ধ্বনিই প্রতিফলিত হয় হৃদয়ের স্পন্দনে— লাবডুব-লাবডুব লাবডুব! এই শব্দকে সরু ও ফাঁপা নলের মধ্যে প্রেরণ করলে মিলবে ‘অউম-অউম-অউম’। মানে আমি আছি- আমি আছি- আমি আছি।’
ক্রিয়াযোগে খেচরী মুদ্রার সাহায্যে জ্যোতিধ্যান করা হয় ওম শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে। খেচর শব্দের অর্থ হল আকাশ। আকাশ অর্থাৎ ব্রহ্ম! খেচরী মুদ্রার সাহায্যে জ্যোতিধ্যান করলে মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাস্নায়ুর সংযোগ সংঘটিত হয়। সঠিকভাবে ওম উচ্চারণ সহযোগে এই ক্রিয়াযোগে ব্রহ্মের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। কথিত আছে, কোনও ব্যক্তি খেচরী মুদ্রা সহযোগে ক্রিয়াযোগে ধ্যানে সফল হলে, তাঁর কাছে সৃষ্টির কোনও কিছুই দৃষ্টির অতীত থাকে না। তিনি রিপু জয় করতে সক্ষম হন। মনে রাখতে হবে, রিপুর অধীনে মন থাকার কারণেই আমরা এত অস্থির হয়ে পড়ি। অতএব মনের স্থিরতা আনা জরুরি।
ধ্যান অনেক রকম আছে। উদাহরণ হিসেবে জ্যোতিধ্যান, শবধ্যান, শীর্ষধ্যান, শব্দ ধ্যান, বাহ্যিক ধ্যান ইত্যাদির কথা বলা যায়। তবে ক্রিয়াযোগে সবসময়ই অন্তর্মুখী ধ্যানের কথা বলা হয়েছে। শ্যামাচরণ লাহিড়ী, যুক্তেশ্বর গিরি, স্বামী শিবানন্দ মহারাজ-এর মতো যোগীরা বারবার ক্রিয়াযোগের মাধ্যমে আত্মোপলব্ধির কথা বলেছেন।
তবে সকলেই এভাবে ক্রিয়াযোগের মাধ্যমে নিরাকারের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে নিতে পারবেন না। তবে মন শান্ত রাখার জন্য সাধারণ ভাবে ধ্যান করা যায়। বিশেষ করে স্নায়ুর সমস্যাজনিত সমস্যায় ধ্যান করলে বিশেষ ফল মেলে।
এই প্রসঙ্গেই বলা যায়, ধ্যানের কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। কেউ ১০ মিনিট ধ্যান করতে পারেন। কেউ আবার আধঘণ্টাও ধ্যান করতে পারেন। এমনকী সারাদিন ধরেও ধ্যান করা যায়। আমরা যেমন ঘুমের মধ্যে দিয়ে শরীর ও মন শান্ত করি, কর্মক্ষম করে তুলি, তেমনই ধ্যানও হল প্রাকৃতিক স্নায়ু শান্ত করার ওষুধ।
কীভাবে ধ্যান করবেন
শরীর কষ্ট পাবে না এমন জায়গায় বসুন। বসে ধ্যান করতে হয়। পদ্মাসনে বসতে না পারলে বাবু হয়েও বসে ধ্যান করা যায়। তবে শিরদাঁড়া রাখতে হবে সোজা। ধ্যান করার জন্য কোনও নির্জন স্থান নির্বাচন করতে পারলে সবচাইতে ভালো হয়।
চ্যান্টিং মেডিটেশন
ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে ওম উচ্চারণ করুন। শ্বাস ছাড়ুন ধীরে ধীরে। সমস্ত মনোনিবেশ করুন ওম উচ্চারণের দিকে। মন অস্থির হবে, তবু মনের সম্পূর্ণ নিবেশ ঘটাতে হবে শব্দের দিকে। এভাবে চোখ বন্ধ করে ‘ওম’ উচ্চারণ করে যান। চ্যান্টিং মেডিটেশনের সাফল্য হল, দ্রুত মন স্থির করে ফেলা সম্ভব হয়। যে কোনও পরিস্থিতিতে, যখন মন খুব চঞ্চল ও দুশ্চিন্তাময় হয়ে উঠেছে তখনও ওম উচ্চারণ করা যায়। ধীরে ধীরে মন শান্ত হবে।
শারীরিক লাভ
৮০ শতাংশ অসুখ সাইকো সোমাটিক। মনের অস্থিরতায় শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর হর্মোন বের হয়, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করে। তাই ধ্যান করে মন শান্ত করতে পারলেই বাকি অসুখ হাতের মুঠোয় চলে আসবে। ধ্যান করলে বুদ্ধি, স্মৃতিশক্তি বাড়ে, অবসাদ দূর হয়, বাড়ে আত্মবিশ্বাস। এছাড়া স্নায়ুর ক্ষমতা বাড়ে, বাড়ে ফুসফুসের ধারণ ক্ষমতাও। এমনকী ব্যথার ওপরেও জয়লাভ করা সম্ভব হয়।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক
( বর্তমান )
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন