অর্জুনের সাথে সুভদ্রার বিয়ে
লুচি ভাজা হয়েছিল দেশি গাওয়া ঘিয়ে !
শেয়ার করেছেন :- প্রণব কুমার কুণ্ডু
প্রণব কুমার কুণ্ডু
Hare Krishna একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন৷
😍😍হরে কৃষ্ণ😍😍
অর্জুনের সাথে সুভদ্রার বিয়ে দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ কি হিন্দুশাস্ত্রের বৈবাহিক নিয়মকে ভঙ্গ করেছিলেন?
সাধারণ দৃষ্টিতে এবং সাধারণভাবে- অর্জুন ও সুভদ্রার মধ্যের মামাতো পিসতাতো ভাই-বোনের সম্পর্ক দেখা গেলেও আসলে অর্জুন, কুন্তির বায়োলজিক্যাল অর্থাৎ গর্ভজাত সন্তান নয়। অর্জুন ছিলো কুন্তির মন্ত্রপ্রসাদ সন্তান, মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে ইন্দ্রদেবের আশীর্বাদে, কুন্তী, অর্জুনকে লাভ করেছিলো। শুধু অর্জুনই নয় কুন্তির পুত্র বলে খ্যাত কর্ণসহ পাঁচ পাণ্ডবদের কেউই কুন্তির গর্ভজাত সন্তান নয়, এমনকি কুন্তীর সাথে কোনো পুরুষের কখনো যৌন মিলনও হয় নি, এজন্য কুন্তীকে সব সময় কুমারী কুন্তী বলেই উল্লেখ করা হয়।
কুন্তীর পুত্র বলে খ্যাত, কেউই যে কুন্তীর গর্ভজাত সন্তান নয়, এটা বোঝা যাবে কুন্তীর প্রথম পুত্র বলে খ্যাত কর্ণের জন্মের ইতিহাস জানলে বা বুঝলে। কুন্তী ছিলেন যদুবংশীয় রাজা শূরসেনের কন্যা, যে শূরসেন ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের দাদু, এই সূত্রে কুন্তী শ্রীকৃষ্ণের পিসি হন। রাজা শূরসেন, তাঁর এক আত্মীয় নিঃসন্তান কুন্তীভোজকে এই কন্যা দান করেন। পালক পিতা কুন্তীভোজের নাম অনুসারে এই মেয়ের নাম হয় কুন্তী, কিন্তু কুন্তীর প্রকৃত নাম পৃথা।
যা হোক, কুন্তীভোজের প্রাসাদে একবার ঋষি দুর্বাসার আগমন ঘটলে- রাজকুমারী হয়েও কুন্তী, ঋষি দুর্বাসার সেবা শুশ্রুষা করে ঋষি দুর্বাসাকে সন্তুষ্ট করেন। এর ফলে ঋষি দুর্বাসা, কুন্তীকে একটি মন্ত্র শিখিয়ে দিয়ে বলেন, এই মন্ত্র পড়ে যে দেবতাকে আহ্বান করবে, সেই দেবতার আশীর্বাদে তোমার একটি পুত্র লাভ হবে।
দুর্বাসা চলে গেলে কুন্তী একদিন কৌতূহলবশতঃ সেই মন্ত্র পড়ে সূর্যদেবকে আহ্বান করেন।ফলে কুন্তীর একটি পুত্র লাভ হয়, পরে যার নাম হয় কর্ণ; লোকসমাজে এই সন্তানের কী পরিচয় দেবে, এই ভাবনায় কুন্তী তখন সেই ছেলেকে জলে ভাসিয়ে দেয়। এই ঘটনা এত দ্রুত ঘটে যে কুন্তী এবং তার এক দাসী ছাড়া এই ঘটনার কথা কেউ জানতেও পারে নি। কুন্তী যদি কর্ণকে গর্ভেধারণ করতো, তাহলে কি সেই ঘটনা রাজপরিবারের অন্য কেউ বা রাজ্যবাসী ঘূণাক্ষরেরও টের পেতো না ? অবশ্যই পেতো, কিন্তু সেরকম কিছু ঘটে নি। পরে স্বয়ংবর সভার মাধ্যমে কুন্তীর হস্তিনাপুরের রাজকুমার পাণ্ডুর সাথে বিবাহ হয় এবং বিয়ের পর বাসর হওয়ার পূর্বেই পাণ্ডুকে একটি যুদ্ধে যেতে হয়, যেই যুদ্ধের পর পাণ্ডু মাদ্রীকে বিয়ে করে আনে, ফলে কুন্তীর সাথে পাণ্ডুর যৌনমিলনই হয় না।
এরপর মাদ্রীর প্ররোচনায় পাণ্ডু দুই স্ত্রীকে নিয়ে বনবিহারের যায়, সেখানে হরিণরূপে সঙ্গমরত ঋষি কিন্দম এবং তার স্ত্রীকে ভুল করে হত্যা করে বসে। মারা যাওয়ার পূর্বে সেই ঋষি অভিশাপ দিয়ে যায়, পাণ্ডু যদি কখনো তার স্ত্রীদের সাথে সঙ্গম করে, তখনই তার মৃত্যু হবে। এই ভয়ে পাণ্ডু আর কোনো স্ত্রীর সাথে যৌনমিলন করে না এবং ঋষি হত্যার পাপের প্রায়শ্চিত্য করার জন্য দুই স্ত্রীকে নিয়ে রাজ্য ছেড়ে বনে চলে যায়। সেখানেই ঘটনাক্রমে কুন্তী, ঋষি দুর্বাসার মন্ত্রের মাধ্যমে তার পুত্র লাভ হবে এমনটা জানায়, যৌন ক্রিয়ার মাধ্যমে পাণ্ডু সন্তানের জন্ম দিতে পারবে না বলে কুন্তীর কথায় সম্মতি দেয় এবং দেবতাদেরকে পরপর আহ্বান করে কুন্তী- যুধিষ্ঠির, ভীম ও অর্জুনকে লাভ করে। এই দেখাদেখি মাদ্রীও সন্তান চাইলে, কুন্তী, মাদ্রীকেও মন্ত্র শিখিয়ে দেয়, ফলে একসাথে দুই দেবতাকে আহ্বান করায় মাদ্রীর দুইটি পুত্র লাভ ঘটে।
এই ব্যাপারগুলো ঘটে পুরোটাই অলৌকিকভাবে, কোনো বায়োলজিক্যাল নিয়ম ছাড়াই। যেহেতু গর্ভধারণ ছাড়াই কুন্তীর পুত্র লাভ ঘটে এবং কুন্তীর কোনোদিন কারো সাথে যৌনমিলনও হয় নি, তাই কুন্তী সর্বদা "কুমারী কুন্তী" নামেই পরিচিত থাকে।
উপরের এই ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে- নামে কুন্তীর পুত্র হলেও আসলে কুন্তীর সাথে অর্জুনের কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। অর্জুন আসলে কুন্তীর জন্য ইন্দ্রদেবের দান। তাই শ্রীকৃষ্ণ, সুভদ্রার সাথে অর্জুনের বিয়ে দিয়েছিলেন এবং এতে হিন্দুশাস্ত্রের বিবাহের যে নিয়ম- মাতার দিক থেকে পেছনের দিকে তিন পুরুষ পর্যন্ত এবং পিতার দিক থেকে ৭ পুরুষ পর্যন্ত কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না- তার কোনো ব্যতিক্রম হয় নি।
এই প্রসঙ্গে আরেকটা কথা বলে রাখছি- মহাভারতের অনেক ঘটনারই আজ পর্যন্ত কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই, যেমন যজ্ঞের আগুন থেকে দ্রৌপদী ও ধৃষ্টদম্ন্যুর জন্ম। কিন্তু তারপরও ঐতিহাসিক বাস্তবতার কারণে মহাভারতের কাহিনীকে অস্বীকার বা এটা কাল্পনিক, এমন বলারও ক্ষমতা আমাদের নেই। সেই সময় অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন সব মুনি-ঋষিদের জন্ম হয়েছিলো, তারাই এসব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারতো, বর্তমানে সেরকম অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি নেই বলেই সেরকম কিছু ঘটে না- আমাদেরকে এখন এটাই ধরে নিতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন