মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০২০

নবিজির মৃত্যু

 

  নবিজির মৃত্যু

 

সংশয় – চিন্তার মুক্তির আন্দোলন

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, যুক্তি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব

নবী মুহাম্মদের করুণ মৃত্যু

ভূমিকা

ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক নবী মুহাম্মদ মক্কা, মদিনা ও অন্যান্য অঞ্চলে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছেন। অসংখ্য মানুষকে তিনি বানিয়েছেন দাস দাসী, দখল করেছেন তাদের জায়গা সম্পত্তি, যুদ্ধবন্দীদের হত্যা এবং তাদের ক্রীতদাস দাসী বানানো ছাড়াও তার অপরাধের পরিমাণ বিপুল। এমনকি, কাফের নারীদের স্বামী ভাই পিতাদের হত্যা করে তাদের গনিমতের মাল নাম দিয়ে সেইসব ক্রীতদাসীদের সাথে যৌন সংগম করেছেন, সাহাবীদেরকেও করতে উৎসাহ দিয়েছেন। তার ভয়ংকর জিহাদের কবলে ঘরবাড়ি হারিয়েছে অনেক মানুষ, স্বজনকে লাশের পাহাড় আর অমুসলিমদের উপাসনালয়ের ধ্বংসস্তুপের মধ্যে ইসলামের নবী গড়ে তুলেছেন তার ইসলামী সাম্রাজ্য। এতকিছু করেও তার মৃত্যু কিন্তু খুব সুখকর হয় নি। তার মৃত্যু হয়েছিল অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং যন্ত্রণাকাতর। আজকের আলোচনা নবী মুহাম্মদের মৃত্যু। সেটি কেন, এবং কীভাবে হয়েছিল তার বিবরণ।

খায়বারে বিষযুক্ত ভেড়ার মাংশ

একের পর এক ইহুদী গোত্র ভিটেমাটি ছাড়া করা এবং কয়েকটি ইহুদী গোত্রের ওপর নৃশংস গণহত্যা চালাবার কারণে ইহুদী গোত্রসমূহ নবী মুহাম্মদের ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত ছিল। বিশেষ করে বনূ কুরাইযা গোত্রের ৬০০-৯০০ পুরুষকে একদিনে হত্যা করায় তারা ব্যাথিত ছিল, তারা প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছিল। কিন্তু সংখ্যা এবং শক্তিতে কম হওয়ায় তারা কিছুই করতে পারছিল না। খায়বারে আক্রমণের সময় নবী মুহাম্মদ যয়নব বিনতে হারিস নামক এক ইহুদী নারীর বাসায় খাবার খেয়েছিলেন। সেখানে তাদেরকে বিষযুক্ত ভেড়ার মাংশ খেতে দেয়া হয়। মাংশের সামান্য অংশ নবী মুহাম্মদও মুখে দিয়ে ফেলেছিলেন (এর প্রমাণ পরে দেয়া হবে)। কিন্তু একজন সাহাবীর মৃত্যুতে তিনি মুখে থাকা খাবারের অংশ ফেলে দেন এবং ইহুদী নারীকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি খাবারে বিষ মিশিয়েছেন কিনা। ইহুদী নারীটি উত্তর দেয়, আপনি যদি সত্যি নবী হয়ে থাকেন তাহলে আমি যা করেছি তাতে এই বিষে আপনার ক্ষতি হবে না। আর যদি আপনি কেবল আক্রমণকারী হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনার থেকে মানুষকে শান্তি দিলাম।

এ বিষয়ক তথ্যসমূহ উল্লেখ করছি, তার আগে কোরআনের একটি আয়াত পড়ে নেয়া দরকার। মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন [1],

এটা (কোরআন) বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ।
সে (মুহাম্মদ) যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত,
তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম,
অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা/প্রধান ধমনী
তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না।
[ কোরআন হাক্কাহঃ ৪৩-৪৭ ]

এবারে আসুন, সেই হাদিসসমূহ দেখে নিই [2]-

গ্রন্থের নামঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৪/ রক্তমূল্য
পরিচ্ছেদঃ ৬. কাউকে বিষ খাইয়ে হত্যা করলে কি তাকেও হত্যা করা হবে?
৪৫১৩। ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যুরোগে আক্রান্ত ছিলেন তখন উম্মু মুবাশশির (রাঃ) তাঁকে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আপনার রোগ সম্পর্কে কি ভাবছেন? আর আমি আমার ছেলের রোগ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন নই সেই বিষ মেশানো বকরীর গোশত ব্যতীত যা সে খায়বারে আপনার সঙ্গে খেয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমিও ঐ বিষ ছাড়া আমার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন নই। এ মুহূর্তে তা আমার প্রধান ধমনি কেটে দিচ্ছে।[1]
সনদ সহীহ।
[1]. আবূ দাঊদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ্ ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক (রহঃ)

আরো কয়েকটি হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, নবী মুহাম্মদ তার প্রধান ধমনী কেটে দেয়ার মত যন্ত্রণা অনুভব করতেন [3]

গ্রন্থের নামঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৪/ রক্তমূল্য
পরিচ্ছেদঃ ৬. কাউকে বিষ খাইয়ে হত্যা করলে কি তাকেও হত্যা করা হবে?
৪৫১২। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিয়া গ্রহণ করতেন কিন্তু সাদাকাহ গ্রহণ করতেন না। বর্ণনাকারী বলেন, খায়বারের এক ইয়াহুদী মহিলা একটি ভুনা বকরীতে বিষ মিশিয়ে তাঁকে হাদিয়া দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা আহার করেন এবং লোকজনও আহার করে। তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের হাত গুটিয়ে নাও। কারণ এটি আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, এটি বিষযুক্ত। (বিষক্রিয়ার ফলে) বিশর ইবনুল বারাআত ইবনু মা‘রূর আল-আনসারী (রাঃ) মারা যান। তিনি ইয়াহুদী মহিলাকে ডেকে এনে প্রশ্ন করেনঃ তুমি যা করলে তা করতে তোমাকে কিসে প্ররোচিত করেছে?
সে বললো, আপনি যদি সত্যি নবী হয়ে থাকেন তাহলে আমি যা করেছি তাতে আপনার ক্ষতি হবে না। আর যদি আপনি বাদশাহ হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনার থেকে মানুষকে শান্তি দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলে পরে তাকে হত্যা করা হলো। অতঃপর তিনি যে ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন সেই সম্পর্কে বলেনঃ আমি সর্বদা সেই লোকমার ব্যথা অনুভব করছি যা আমি খায়বারে খেয়েছিলাম। এই সময়ে তা আমার প্রধান ধমনি কেটে দিয়েছে।[1]
হাসান সহীহ।
[1]. বুখারী, আহমাদ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

এবারে আসুন, ইবনে ইসহাকের প্রখ্যাত সীরাত গ্রন্থ থেকে এই বিষয়টি পড়ে নিই ( বই থেকে ছবি তুলে দেয়ায় ছবির কোয়ালিটি খারাপ হয়েছে বলে দুঃখিত)- [4]

মৃত্যু
মৃত্যু

তাবারি ৮ম খণ্ডের ১২৪ পৃষ্ঠাতেও এই ঘটনা পাওয়া যায়।

History of al Tabari vol-8 p124

নবীর শরীরে বিষের লক্ষণ

নবী মুহাম্মদ যে বিষ খানিকটা মুখে দিয়ে ফেলেছিলেন, সেটি যে তার শরীরে প্রবেশ করেছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় আরেকটি সহিহ হাদিসে। তার শরীরে পরিষ্কার বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। একজন প্রখ্যাত সাহাবীর সহিহ হাদিস অনুসারে, তিনি নবীর আলজিহবা এবং তালুতে এরপর থেকে বিষের ক্রিয়া প্রত্যক্ষ করতেন [5]

গ্রন্থের নামঃ সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৪০/ সালাম
পরিচ্ছেদঃ ১৮. বিষ
৫৫১৭। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ইয়াহুদী মহিলারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বিষ মেশানো বকরীর গোশত নিয়ে এল। তিনি তা থেকে (কিছু) খেলেন। পরে তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে আসা হল। তিনি তাকে এ বিষয় জিজ্ঞেস করলে সে বলল, আমি আপনাকে মেরে ফেলার ইচ্ছা করেছিলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ এ ব্যাপারে তোমাকে কিংবা তিনি বললেনঃ আমার উপরে ক্ষমতা দিবেন এমন নয়। তারা (সাহাবীগণ) বললেন, আমরা কি তাকে কতল করে ফেলব? তিনি বললেন, না। রাবী বলেন, এরপর থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আলজিভ ও তালুতে (তার ক্রিয়া) আমি প্রত্যক্ষ করতাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

হাদিসটি পাবেন সহিহ মুসলিম গ্রন্থে [6]

নবীর জিহবায় বিষের প্রভাব

এই একই হাদিস আপনি পাবেন সুনান আবু দাউদ শরীফেও [7]

গ্রন্থের নামঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৪/ রক্তমূল্য
পরিচ্ছেদঃ ৬. কাউকে বিষ খাইয়ে হত্যা করলে কি তাকেও হত্যা করা হবে?
৪৫০৮। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা জনৈকা ইয়াহুদী নারী বিষ মিশ্রিত একটি ভূনা ছাগী নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে উপস্থিত হলে তিনি তা থেকে খেলেন। অতঃপর তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত করা হলে তিনি তাকে এ জন্য প্রশ্ন করলেন। সে বললো, আমি আপনাকে হত্যা করার জন্যই এটা করেছি। তিনি বললেন, ‘‘এ ব্যাপারে আল্লাহ তোমাকে সফল হতে দেননি অথবা তিনি বলেছেন, আমার উপর তোমাকে সফল হতে দেননি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন সাহাবীগণ বললেন, একে আমরা হত্যা করবই। তিনি বললেন, না। আনাস (রাঃ) বললেন, আমি সর্বদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আলাজিভে তা (বিষের ক্ষত চিহ্ন) দেখতে পেতাম।[1]
সহীহ।
[1]. বুখারী, মুসলিম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

উল্লেখ্য, সেই ইহুদী নারী নবীকে রীতিমত চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন, যে সে আসলেই নবী হয়ে থাকলে তার কোন ক্ষতিই হবে না। এই কারণে নবী তাকে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করতে পারেন নি, তবে পরে ঠিকই হত্যা করেছিলেন।

হাদিসটি পাবেন [8]

মৃত্যু

সুস্থ হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন নবী

নবী মুহাম্মদ এই বিশাল মহাবিশ্বের স্রষ্টা সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাকের প্রেরিত রাসুল এবং ফেরেশতা-জ্বীন-ইনসান সকলের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বলে নিজেকে দাবী করার পরেও, তার আল্লাহ, ফেরেশতা বাহিনী, জ্বীন বাহিনী, কেউই তাকে খায়বারের সেই বিষযুক্ত ভেড়ার মাংশ বিষয়ে এতটুকু সাবধান করে নি। বিষয়টি খুবই সন্দেহজনক। এতবড় মহাবিশ্বের স্রষ্টার সবচাইতে কাছের বন্ধু নবী মুহাম্মদ, যার আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ ভেঙ্গে দুইভাগ হয়ে যায়, যার মোজেজার কোন সীমা নেই, যার ক্ষমতা ও মর্যাদা সব মানুষ, ফেরেশতা ও জ্বীনের চাইতেও বেশি, আল্লাহ বা ফেরেশতারা একটু আগে সাবধান করলেই তার আর বিষক্রিয়ায় যন্ত্রণা নিয়ে মরতে হতো না। পরবর্তীতে নবী মুহাম্মদ বেঁচে উঠার, সুস্থ হওয়ার অনেক চেষ্টাই করেছেন, কিন্তু সফল হন নি। বিষ তো আর আল্লাহ নবী রাসুল চেনে না, বিষ তার স্বাভাবিক কাজই করে। নিচের হাদিস তার প্রমাণ [9]

গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৭৬/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ৭৬/৩২. কুরআন পড়ে এবং সূরা নাস ও ফালাক অর্থাৎ (মু‘আব্বিযাত) পড়ে ফুঁক দেয়া।
৫৭৩৫. ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) … ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রোগে ওফাত পান সেই রোগের সময়ে তিনি নিজ দেহে ‘মু‘আব্বিযাত’ পড়ে ফুঁক দিতেন। অতঃপর যখন রোগের তীব্রতা বেড়ে গেল, তখন আমি সেগুলো পড়ে ফুঁক দিতাম। আর আমি তাঁর নিজের হাত তাঁর দেহের উপর বুলিয়ে দিতাম। কেননা, তাঁর হাতে বারাকাত ছিল। রাবী বলেনঃ আমি যুহরীকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কীভাবে ফুঁক দিতেন? তিনি বললেনঃ তিনি তাঁর দু’ হাতের উপর ফুঁক দিতেন, অতঃপর সেই দু’ হাত দিয়ে আপন মুখমন্ডল বুলিয়ে নিতেন। [৪৪৩৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২১১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)

নবী মুহাম্মদের করুণ মৃত্যু

এবারে আসুন দেখি, মহাবিশ্বের স্রষ্টা সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাকের সর্বাপেক্ষা প্রিয় মানুষ, সর্বাপেক্ষা প্রিয় রাসুল নবী মুহাম্মদের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল [10]

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান) (كتاب المغازى)
হাদিস নম্বরঃ [4094]
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ২২৪৭. নাবী (সাঃ) এর রোগ ও তাঁর ওফাত। মহান আল্লাহর বাণীঃ আপনিতো মরণশীল এবং তারাও মরণশীল। এরপর কিয়ামত দিবসে তোমরা পরস্পর তোমাদের প্রতিপালকের সম্মুখে বাক-বিতন্ডা করবে (৩৯ঃ ৩০,৩১) ইউনুস (রহঃ) যুহরী ও উরওয়া (রহঃ) সুত্রে বলেন, আয়শা (রাঃ) বলেছেন, নবী (সাঃ) যে রোগে ইন্তিকাল করেন সে সময় তিনি বলতেন, হে আয়শা! আমি খায়বারে (বিষযুক্ত) যে খাদ্য ভক্ষণ করেছিলাম, আমি সর্বদা তার যন্ত্রণা অনুভব করছি। আর এখন সেই সময় আগত, যখন সে বিষক্রিয়ার আমার প্রাণবায়ু বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে

হাদিসটি পাবেন সহিহ বুখারীতে [11]

মুহাম্মদের বিষে মৃত্যু
বিষক্রিয়ায় মুহাম্মদের মৃত্যু

নবী মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমাও নবীর মৃত্যু যন্ত্রণায় কষ্ট দেখে কষ্ট পেতেন। কী প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে নবীর মৃত্যু হয়েছে, এই হাদিস থেকেই তা বোঝা যায় [12]-

গ্রন্থের নামঃ সুনানে ইবনে মাজাহ
হাদিস নম্বরঃ [1629]
অধ্যায়ঃ ৬/ জানাযা
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৬/৬৫. নাবী ﷺ -এর ইনতিকাল ও তাঁর কাফন-দাফন।
৩/১৬২৯। আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যু যন্ত্রণা তীব্রভাবে অনুভব করেন, তখন ফাতেমাহ (রাঃ) বলেন, হায় আমার আব্বার কত কষ্ট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আজকের দিনের পরে তোমার আব্বার আর কোন কষ্ট থাকবে না। তোমার আব্বার নিকট এমন জিনিস উপস্থিত হয়েছে, যা কিয়ামাত পর্যন্ত কাউকে ছাড়বে না।
সহীহুল বুখারী ৪৪৬২, আহমাদ ১৬০২৬, সহীহাহ ১৬৩৮, মুখতাসার শামাযিল ৩৩৪, বুখারী শেষ বাক্য বাদ দিয়ে। তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

হাদিসটি পাবেন সুনানু ইবনে মাজাহ শরীফে [13]

ফাতিমা ও মৃত্যুশয্যায় মুহাম্মদ
ফাতিমা ও মৃত্যুশয্যায় মুহাম্মদ

নবীর প্রিয় স্ত্রী আয়েশাও বলেছেন, নবীর মৃত্যু যন্ত্রণা ছিল ভয়াবহ। এত কষ্টই নবী পেয়েছেন, যে আয়েশা এরপরে আর কারো মৃত্যু সহজ হতে দেখলে ইর্ষাকাতর হতেন না [14]

গ্রন্থের নামঃ সূনান তিরমিজী (ইফাঃ)
হাদিস নম্বরঃ [981]
অধ্যায়ঃ ১০/ কাফন-দাফন
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ মৃত্যুর সময় কষ্ট হওয়া।
৯৮১. হাসান ইবনুুস সাববাহ আল-বাগদাদী (রহঃ) …… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, মৃত্যুর সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যে কষ্ট হতে দেখেছি এরপর কারো মৃত্যুর সময় আসান হতে দেখতে আমার আর কোন ঈর্ষা হয় না। – মুখতাসার শামাইল মুহাম্মাদিয়া ৩২৫, বুখারি, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৯৭৯ [আল মাদানী প্রকাশনী]
রাবী বলেন, আমি এই হাদিস সম্পর্কে আবূ যুরআ (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বলেছিলাম, রাবী আব্দুর রাহমান ইবনুল আলা কে? তিনি বললেন, ইনি হলেন আলা ইবনুল লাজলাজ। তাঁকে এইরূপেই আমরা জানি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

হাদিসটি পাবেন তিরমিযী শরীফে [15]

মুহাম্মদের মৃত্যু যন্ত্রণা

বলা বাহুল্য, হযরত মুহাম্মদের মৃত্যু যেকোন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর চাইতে বহুগুণ যন্ত্রণাদায়ক হয়েছিল, তা এই হাদিসগুলো থেকেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। সূনান সানাঈ শরীফ থেকে আরেকটি হাদিস পড়ে নিই-

গ্রন্থের নামঃ সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ২১/ জানাজা
পরিচ্ছেদঃ ৬/ মৃত্যু যন্ত্রণা
১৮৩৩। আমর ইবনু মানসূর (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুকালীন সময়ে তার মাথা আমার থুতনি এবং গলদেশের মাঝখানে ছিল। তার মৃত্যু যন্ত্রণা দর্শনের পর আমি অন্য কারো মৃত্যু যন্ত্রণা খারাপ মনে করি না।
[সহীহ, মুখতাসার শামাইল ৩২৫]
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)

উপসংহার

সবচাইতে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এইরকম কষ্টকর মৃত্যুশয্যাতেও নবী মুহাম্মদের ফুলের মত সুন্দর চরিত্র নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েন নি নবীর প্রিয় স্ত্রী আয়েশা। নবীর সিরাত গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মৃত্যুশয্যাতেও আয়েশা নবীকে বলছেন, নবীর আগে যদি আয়েশার মৃত্যু হতো, তাহলে নবী আয়েশাকে দাফন করেই আরেক বিবি নিয়ে আয়েশার ঘরেই আরেক বিবি তুলতেন। অর্থাৎ, নবীর চরিত্র আয়েশা খুব ভালভাবেই জানতেন এবং বুঝতেন [16]

মৃত্যু

তথ্যসূত্রঃ
  1. আল কোরআন, সূরা হাক্কাহঃ ৪৩-৪৭ []
  2. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৪৫১৩ []
  3. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৪৫১২ []
  4. সিরাতে রাসুলাল্লাহ (সাঃ), অনুবাদ, শহীদ আখন্দ, প্রথমা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৫৫৬, ৫৫৭ []
  5. সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ৫৫১৭ []
  6. সহিহ মুসলিম। ইমাম মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ ইবনে মুসলিম আল কুশাইরী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন। পঞ্চম খণ্ড। পৃষ্ঠা ২০০ []
  7. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৪৫০৮ []
  8. সুনান আবু দাউদ, তাহক্বীক আল্লামা মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, প্রকাশক- মোঃ জিল্লুর রহমান জিলানী, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬০ []
  9. সহীহ বুখারী (তাওহীদ), হাদিস নম্বরঃ ৫৭৩৫ []
  10. সহীহ বুখারী (ইফাঃ), হাদিস নম্বরঃ ৪০৯৪ []
  11. সহিহ বুখারী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন। সপ্তম খণ্ড। পৃষ্ঠা ২৩৩, ২৩৪। অনুচ্ছেদ ২২৪৭ []
  12. সুনানে ইবনে মাজাহ, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ১৬২৯ []
  13. সুনানু ইবনে মাজাহ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। দ্বিতীয় খণ্ড। পৃষ্ঠা ৭৪, ৭৫। হাদিস নম্বর ১৬২৯ []
  14. সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), হাদিস নম্বরঃ ৯৮১ []
  15. সহিহ আত-তিরমিযী । হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী। তাহক্বীক আল্লামা মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী।। দ্বিতীয় খণ্ড। পৃষ্ঠা ৩০৪। হাদিস নম্বর ৯৭৯ []
  16. সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, সম্পাদনা পরিষদের তত্ত্বাবধানে অনুদিত, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১৩ []

12 thoughts on “নবী মুহাম্মদের করুণ মৃত্যু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন