রবিবার, ২ আগস্ট, ২০২০

গান্ধিজি বিশ্বভারতী রবীন্দ্রনাথ ও নেতাজি

গান্ধিজি বিশ্বভারতী রবীন্দ্রনাথ ও নেতাজি

শেয়ার করেছেন :- প্রণব কুমার কুণ্ডু
প্রণব কুমার কুণ্ডু







এই দিনে
2 বছর আগে
27 জুলাই, 2018
সবাই এর সাথে শেয়ার করা হয়েছে
সবাই
বিশ্বভারতী আজো ব্রাত্য করে রেখেছে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকে
...........................................
বিশ্বভারতী থেকে এক প্রকার ব্রাত্য বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। নেতাজিকে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চেয়ে জহরলাল নেহেরুকে লেখা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুরুত্বপূর্ণ চিঠি বিশ্বভারতীর আরকাইভে থাকলেও সেটি প্রদর্শিত হয় না। এছাড়া ছাত্র জীবনের পরে কবিগুরুর জীবদ্দশায় ১৯৩৫ ও ১৯৩৮ সালে নেতাজি দুবার শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন।এমনকী কবির সঙ্গে নেতাজির ৬৮ টিরও বেশি চিঠি আদান-প্রদান হয়েছে।
কিন্তু, দু-একটি ছবি ছাড়া কোন চিঠিই বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনে প্রদর্শিত হয়না। প্রসঙ্গত, মহাত্মা গান্ধীর শান্তিনিকেতনে আসার দিনটি আজও ‘গান্ধী পূর্ণাহ্য’ হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। নেতাজিকে ফাইল বন্দী করে রাখায় রীতিমত ক্ষোভ ছড়িয়েছে প্রবীণ আশ্রমিক থেকে শুরু করে দুই মহাপুরুষের অনুরাগীদের মধ্যে। সকলের দাবি, কবিগুরুর সঙ্গে নেতাজির বিভিন্ন সময়ের ছবি, নথি প্রদর্শিত করা হোক বিশ্বভারতীতে।
এই প্রসঙ্গে যদিও, বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন কুমার দত্ত বলেন, “এই প্রসঙ্গটি আমাদের মাথায় আছে। আমরা গুরুদেব ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বিভিন্ন সময়ের ছবি, চিঠিপত্র, নথি নিয়ে একটি আলাদা প্রদর্শনী করব। এটা আলোচনার পর্যায়ে আছে। সকলেই তাহলে এই বিষয়ে জানতে পারবেন অনেক কিছু”।বিশ্বভারতীর ইতিহাস ও রবীন্দ্রভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯১৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সুভাষচন্দ্র বসু প্রথমবার শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন। তখনও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা হয়নি| পরবর্তীকালে রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করার পর ১৯৩৫ সালে নেতাজি শান্তিনিকেতনে আসেন কবিগুরুর সঙ্গে দেখা করতে। এরপরেও ১৯৩৮ সালের ৮ ডিসেম্বর শেষবার তিনি শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন। এই সময়ের মধ্যে নেতাজি শ্রীনিকেতনের একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন, কবির সঙ্গে আম্রকুঞ্জে বসে তৎকালীন দেশের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গে আলোচনা করেন, বোলপুরে একটি কৃষক মজুর সভাতেও যোগ দিয়েছিলেন নেতাজি|
কবিগুরু শান্তিনিকেতনে থাকাকালীন ‘দ্যা ইন্ডিয়ান স্টাগেল ১৯২০-৩৪’ নামক বইয়ের জন্য লেখা চেয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চিঠি দিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। কবির লেখা সঞ্চয়িতা পড়ে ১৯৩৭ সালের ৩০ জানুয়ারী কবিকে চিঠি লিখে সম্মানজ্ঞাপন করেছিলেন নেতাজি। একই ভাবে ১৯৩৯ সালের ১৯ জানুয়ারী উত্তরায়ণে বসে নেতাজিকে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার ক্ষেত্রে সমর্থন জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন কবি, চিঠিতে সুভাষকে মহাত্মা গান্ধীর বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করার আবেদনও করেছিলেন কবি। দুজনের আদান-প্রদান হওয়া এই রকম প্রায় ৬৮ টি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি রবীন্দ্রভবনে থাকলেও প্রদর্শিত হয়না।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, নেতাজিকে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী দেখতে চেয়ে জহরলাল নেহেরুকে চিঠি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই চিঠিটিও বিশ্বভারতীর কাছে রয়েছে। প্রসঙ্গত, ১৯১৫ সালের ১০ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার ফিনিক্স স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে গান্ধীজী প্রথম শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন সেই দিনটি আজও ‘গান্ধী পূর্ণাহ্য’ হিসাবে পালন হয়ে আসছে। অথচ নেতাজি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্রাত্য রয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রবীণ আশ্রমিকরা। নেতাজি-কবিগুরুর সু-সম্পর্কের তথ্য বিশ্বভারতীর অনেক পড়ুয়ার কাছেই আজানা থেকে গিয়েছে।
প্রবীণ আশ্রমিক তথা ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে গুরুদেবের সম্পর্ক ছিল নিবিড়। গুরুদেব নেতাজিকে খুবই স্নেহ করতেন। রবীন্দ্রভবনে তাঁদের দুজনের সম্পর্কিত বহু নথি আছে। কিন্তু, সেগুলি প্রদর্শিত হয়না এটা অত্যন্ত দুঃখজনক”। প্রায় একই ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আশ্রমিক সুবোধ মিত্র।তিনি বলেন, “বিশ্বভারতী গুরুদেব ও নেতাজি সম্পর্কিত নথি, তথ্য প্রকাশ করতে পারেনি এটা কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা। এই মহান বীর বিপ্লবীর পদধূলীর সমস্ত তথ্য প্রদর্শিত হলে বরং রবীন্দ্রভবন প্রদর্শশালায় আরও মানুষের ভিড় বাড়ত। গুরুত্বপূর্ণ ওই সকল চিঠি গুলিকে প্রদর্শিত করুক বিশ্বভারতী এটাই চাই আমরা”।
------০-----
এই দিনে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন