শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

পরকীয়া

পরকীয়া


পরকীয়া !          ফেসবুকের বন্ধুদের জন্য                   প্রণব কুমার কুণ্ডু'র প্রীতি-উপহার !



বর্তমান

পরকীয়া অপরাধ নয়: সুপ্রিম কোর্ট
শীর্ষ আদালত আরও জানাল, স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি নয়

নয়াদিল্লি, ২৭ সেপ্টেম্বর (পিটিআই): পরকীয়া আর ফৌজদারি অপরাধ নয়। ১৫৮ বছরের পুরনো ব্রিটিশ আমলের আইন বাতিল করে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই রায়ই দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ বৃহস্পতিবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ নম্বর ধারা খারিজ করে দিয়েছে। বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে জানিয়েছে, এই আইন অসাংবিধানিক, প্রকাশ্য স্বৈরাচারের সমান, প্রাচীনপন্থী এবং সমানাধিকার ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থীও বটে। এই আইন নারীর ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর আঘাত এবং এর জন্যই একজন পুরুষ তার স্ত্রীকে ‘সম্পত্তি’ হিসেবে গণ্য করে। আর তাই গতিশীল বিশ্ব সমাজের সঙ্গে পাল্লা দিতে এই ঔপনিবেশিক আইন বাতিল হওয়াই প্রয়োজন।
অর্থাৎ, শীর্ষ আদালতের এদিনের রায়ের পর পরকীয়ায় দোষী সাব্যস্ত হলে তার জন্য আর জেলযাত্রা হবে না। ৪৯৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী এতদিন পরকীয়ায় দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল এবং জরিমানার সাজা হতো। তবে যদি পরকীয়া সম্পর্কের জন্য পরিবার এবং সংসার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তাকে বিবাহবিচ্ছেদের কারণ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। প্রধান বিচারপতি ছাড়া এই বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি আর এফ নরিম্যান, বিচারপতি এ এম খানউইলকার, বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা এবং বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। শেষ নামটি এই মামলার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও বেশি উল্লেখযোগ্য। কেন? ১৯৮৫ সালে তাঁরই বাবা বিচারপতি ওয়াই ভি চন্দ্রচূড় তাঁর রায়ে এই আইনকে সাংবিধানিক মান্যতা দিয়েছিলেন। আবেদন ছিল এক মহিলার। যে পুরুষের সঙ্গে তাঁর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল, তাঁরই বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই মহিলার স্বামী। আবেদনে ওই মহিলা জানিয়েছিলেন, আইন লিঙ্গবৈষম্যের ধারক হয়ে কাজ করছে। যা কখনওই সঠিক নয়। আজ থেকে ৩৩ বছর আগে ‘পিতা’ বিচারপতি চন্দ্রচূড় রায় দিয়েছিলেন, সাধারণভাবে ধরে নেওয়া হয়, পুরুষই পরকীয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। নারী নয়। পরকীয়াকে যদি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, তাহলেই বিয়ে স্থিতিশীল হবে। আর এদিন ‘পুত্র’ বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় তাকেই অসাংবিধানিক ঘোষণা করলেন। ঠিক যেভাবে গত বছর ‘গোপনীয়তা’ সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণে বাবার রায়কেই খারিজ করে দিয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর জারি করা জরুরি অবস্থার সময় যে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ ব্যক্তি স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার নয় বলে রায় দিয়েছিল, তাতে ছিলেন সিনিয়র চন্দ্রচূড়। গত বছর আগস্ট মাসে সেই রায়ও খারিজ করেছিলেন চন্দ্রচূড়। এদিনের রায়ে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, পরকীয়াকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে দেখা মানে নারীর যৌনতার অধিকারের উপর আঘাত হানা। নারী কোনও পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এই আইন সমাজের পক্ষে ধ্বংসাত্মক এবং নারীর সম্মান ও গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারকে খর্ব করে। রাষ্ট্র বা বিয়েও সেই সব অধিকারকে অবজ্ঞা করতে পারে না। ৭৭ পাতার পৃথক রায়ে বিচারপতি চন্দ্রচূড় লিখেছেন, যে সমাজ নারীকে পবিত্রতা এবং মূল্যবোধের প্রতিমূর্তি হিসেবে ব্যাখ্যা করে, তাঁকেই কি না ধর্ষণ, সম্মান রক্ষার অজুহাতে হত্যা, লিঙ্গনির্ণয় এবং ভ্রূণহত্যার মতো জঘন্য অপরাধের শিকার হতে হয়! ‘নীতিবোধের প্রতিমূর্তি’ হয়েও নারীকে বাড়ির মধ্যেই তীব্র বৈষম্য মুখ বন্ধ করে সহ্য করে যেতে হয়। ৪৯৭ ধারার প্রধান লক্ষ্যই ছিল, স্ত্রীর যৌনতার অধিকারের উপর স্বামী তথা পুরুষের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা। এ তো প্রকাশ্য স্বৈরাচারেরই শামিল! এর অর্থই হল, বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রবেশ মাত্র একজন নারী তাঁর স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের অধিকারকে বিসর্জন দেবেন। যা কখনও কাম্য নয়। দাম্পত্যের সম্পর্কে সমানাধিকারের বদলে তাঁকে স্বামীর ইচ্ছার দাসী হয়ে থাকতে হয়। ৪৯৭ ধারা প্রত্যেক নারীর যৌনতার অধিকার, তাঁর অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করে।
শীর্ষ আদালত এদিন ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারাকে বাতিল করার পাশাপাশি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৮ নম্বর ধারাকেও অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি এ ব্যাপারে এদিন উল্লেখ করেন জাপান, চীন এবং অস্ট্রেলিয়ার কথা। সে সব দেশে পরকীয়া ফৌজদারি অপরাধ নয়। প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি খানউইলকার স্পষ্ট জানিয়েছেন, বৈষম্য অসাংবিধানিক এবং স্বামী তাঁর স্ত্রীর মনিব নন। প্রধান বিচারপতি মিশ্র জানান, পরকীয়া অসুখী দাম্পত্যের জন্ম দিতে পারে সত্যি। আবার এও ঠিক, অসুখী দাম্পত্যের জন্যই পরকীয়ার দরজা খুলে যায়।
সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান রেখা শর্মা জানিয়েছেন, ব্রিটিশ জমানার আইন। ওরা চলে গিয়েছে। আমরা এতদিন আইনটাকে বহন করে এসেছি। তাঁর সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন বহু আইনজীবী এবং সমাজকর্মী। আবার দিল্লির মহিলা কমিশনের প্রধান স্বাতী মালিওয়ালের মতো অনেকে মনে করছেন, এর ফলে অবৈধ সম্পর্কের দরজা হাট হয়ে যাবে। মহিলাদের যন্ত্রণা আরও বাড়বে।
যদিও প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি খানউইলকার একটি শর্ত কিন্তু আরোপ করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, পরকীয়া অপরাধ নয়। কিন্তু এর ফলে যদি স্বামী বা স্ত্রী আত্মঘাতী হন এবং তা যদি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জন্য বলেই প্রমাণিত হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে পরকীয়াকেও আত্মহত্যায় প্ররোচনা হিসেবেই গণ্য করা হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন