রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

হিন্দুধর্ম মতে- সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর কে ?


হিন্দুধর্ম মতে- সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর কে ?


ফেসবুক থেকে        শেয়ার করেছেন         প্রণব কুমার কুণ্ডু


হিন্দুধর্ম মতে- সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর কে ?

( এই পোস্টটি U V jay এর উদ্দেশ্যে নিবেদিত, যে মনে করে শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর নয়। # কিন্তু শ্রীকৃষ্ণই যে ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা, এই পোস্টে পাবেন তার তাত্ত্বিক প্রমাণ।)
বহু দেব-দেবী এবং বহু ভগবানের চাপে পড়ে প্রায় সব হিন্দুই এই অস্পষ্টতায় ভুগে যে, আসলে তাদের সৃষ্টিকর্তা কে ? এই অস্পষ্টতা থেকে অনেক হিন্দুর মনে হীনম্মন্যতারও সৃষ্টি হয়, তাদের মনে হতে থাকে হিন্দু ধর্ম ভূয়া এবং এক পর্যায়ে লাভ জিহাদের ফাঁদে পড়ে বা যাকাতের টাকার লোভে পড়ে বা খ্রিষ্টান মিশনারীদের হাতে পড়ে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করাও তাদের পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। এজন্য, এই ধর্মান্তরের চক্র থেকে বাঁচতে, প্রতিটি হিন্দুর, হিন্দুধর্ম সম্পর্কে আপ টু বটম একটা স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার, আসলে তার ধর্ম কী ও কেনো ? ধর্ম সম্পর্কে এই স্বচ্ছ ধারণা থাকলেই, হিন্দুরা তাদের ধর্ম নিয়ে গর্ববোধ করবে, হীনম্মন্যতায় না ভুগে বরং আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগবে এবং কখনো কোনো পরিস্থিতিতেই ধর্ম ত্যাগ করবে না, উল্টো, অন্যদেরকেই হিন্দু বানানোর চেষ্টা করবে।
আপাদমস্তক ইসলাম একটি মিথ্যা ও বোগাস ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও, সিনিয়র ধান্ধাবাজ মুসলমানরা, ইসলাম সম্পর্কে মুসলমানদের আত্মতৃপ্তিকে ধরে রাখার জন্য বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করে এবং মাঝে মাঝেই কিছু মিথ্যা গল্প ও থিয়োরি বাজারে ছাড়ে। যেমন- “কোরান রিসার্চ করেই বিজ্ঞানীরা সব আবিষ্কার করে”, আর এটা শুনে মুসলমানরা এই আত্মতৃপ্তিতে ভুগে যে, আমরা মুসলমানরা কোনো কিছু আবিষ্কার করতে না পারলেও আমাদের কোরান রিসার্চ করেই তো বিজ্ঞানীরা সব আবিষ্কার করে, সুতরাং আমাদের ধর্মই গ্রেট! তারপর, চাঁদে গিয়ে নীল আর্মস্ট্রং আযান শুনতে পেয়েছে এবং নবী যে আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করেছিলো, তারপর জোড়া লাগিয়েছিলো, জোড়ার সেই দাগ দেখতে পেয়ে ইসলামকে সত্য ধর্ম মনে করে পৃথিবীতে এসে ইসলাম গ্রহন করেছে। একই ভাবে সুনীতা উইলিয়ামস মহাকাশে গিয়ে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখে শুধুমাত্র দু্টি জায়গা মহাকাশ থেকে দেখা যাচ্ছে এবং সেই দুটি জায়গা হলো মক্কা ও মদীনা, এরপর সে পৃথিবীতে এসে ইসলাম গ্রহন করেছে। এরকম মিথ্যা গল্পের শেষ নেই, এসব ই মূর্খ মুসলমানদেরকে ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট রাখার অপকৌশল মাত্র।
কিন্তু হিন্দুধর্ম বিষয়ে কোনো হিন্দুকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য কোনো মিথ্যাচারের প্রয়োজন নেই, হিন্দুধর্মের প্রকৃত বিষয়গুলো প্রকৃতভাবে জানলে বা জানালেই যে কোনো হিন্দু আত্মতৃপ্তিতে ভুগতে বাধ্য, যে চেষ্টাটা আমি করে যাচ্ছি। মনে রাখবেন, যখন কোনো মুসলমান প্রকৃত ইসলামকে জানবে, তখন হয় সে ইসলাম ত্যাগ করে মানুষ হবে, না হয় জঙ্গী হয়ে আত্মঘাতি বোমা ফাটিয়ে মরবে; কিন্তু যখন কোনো হিন্দু, হিন্দুধর্মের প্রকৃত সত্য বা তত্ত্বকে জানবে, তখন সে নাস্তিকতা বা অন্যধর্মে কনভার্ট হওয়ার চিন্তা ছেড়ে আরও শক্তভাবে হিন্দুত্বকে আঁকড়ে ধরবে, যার প্রমাণ আমি নিজে; তার কারণ, হিন্দু ধর্ম নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে আমি আজ পর্যন্ত এমন একটা বিষয় পাই নি, যেটা নিয়ে কারো কাছে লজ্জা পেতে হবে বা তার কোনো কিছু অমানবিক এবং বিশ্বসভ্যতা ও মানুষের জন্য হুমকি স্বরূপ, তাহলে হিন্দু ধর্ম নিয়ে আমাকে হীনম্মন্যতায় ভুগতে হবে কেনো ? বরং হিন্দু হিসেবে যে আমার জন্ম হয়েছে, এটা নিয়ে এখন আমি প্রাউড ফিল করি এবং গত কয়েক বছরে অন্তত কয়েক লক্ষ হিন্দুর মধ্যে আমি এই গর্ববোধকে সঞ্চার করতে পেরেছি।
যা হোক, ফিরে যাই আজকের আলোচনায়- হিন্দুধর্ম মতে সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর কে ?
হিন্দু শাস্ত্রের প্রধান দুটি শব্দ হলো- ঈশ্বর এবং ভগবান। আমরা প্রায় কোনো হিন্দু, ঈশ্বর এবং ভগবানের মধ্যে পার্থক্য জানতাম না বা এখনও জানি না বলে সৃষ্টিকর্তা কে, এই প্রশ্নের উত্তরে অস্পষ্টতায় ভুগতাম বা এখনও ভুগি। কারণ, হিন্দু শাস্ত্র মতে ভগবান অনেক বা বহু, কিন্তু বহু ভগবান তো আর সৃষ্টিকর্তা হতে পারে না, সৃষ্টিকর্তা মাত্র একজন। আবার, ঈশ্বর ও ভগবান, এই দুটো শব্দের পার্থক্য অনেক হিন্দুই জানে না বলে বা দুটো শব্দের অর্থ একই মনে করেও অনেকে ঝামেলার মধ্যে পড়ে; কারণ, ভগবান যেহেতু বহু, সেহেতু তখন ঈশ্বরও বহু হয়ে যায়, কিন্তু ঈশ্বর তো আর বহু নয়, ঈশ্বর একজন বা এক।
তাহলে ঈশ্বর এবং ভগবানের মধ্যে পার্থক্যটা আসলে কী ?
যার রূপ থাকে, তাকে যেমন বলে রূপবান; তেমনি- যশ, বীর্য, ঐশ্বর্য, শ্রী, জ্ঞান, বৈরাগ্য- এই ছয়টি গুণকে বলে ‘ভগ’ আর এগুলো যার মধ্যে থাকে, তাকে বলে ভগবান; আর সকল গুণ যার মধ্যে থাকে তাকে বলে ঈশ্বর। কিন্তু সাধারণ মানুষ হিসেবে জন্ম নেওয়া কারো পক্ষে এই ছয়টি গুণ অর্জন করা সম্ভব নয়, শুধু অবতার রূপে জন্ম নেওয়া কারো পক্ষেই কেবল এই ছয়টি গুণ অর্জন করা সম্ভব; এছাড়াও প্রায় সব দেবতা এই ছয়টি গুনের অধিকারী, এই জন্যই বলা হয়- ভগবান রামচন্দ্র, ভগবান পরশুরাম, ভগবান ইন্দ্র, ভগবান বিষ্ণু, ভগবান শিব, ভগবান ব্রহ্মা, ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ এবং আরো অনেককে। কিন্তু পরমেশ্বর বা ঈশ্বর বলা হয় শুধু মানবরূপে জন্মগ্রহনকারী শ্রীকৃষ্ণ এবং পরমব্রহ্ম বা ব্রহ্মকে। তাহলে এখানে দেখা যাচ্ছে যে, ভগবান উপাধির অধিকারী শুধু অবতারগণ এবং দেবতারা; তাহলে শ্রীকৃষ্ণকে একই সাথে ভগবান এবং ঈশ্বর বলা হচ্ছে কেনো ? হিসাবটা খুব সহজ, অন্যান্য সব অবতার ছিলো বিষ্ণুর আংশিক অবতার, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন পূর্ণ অবতার। তাই কৃষ্ণের মধ্যে সকল গুণ ছিলো বলেই সে ঈশ্বর এবং যার মধ্যে সকল গুণ থাকে, তার মধ্যে তো ছয়টি গুণ থাকবেই, তাই সে একই সাথে ভগবান এবং ঈশ্বর। ব্যাপারটি এমন- সকল ক্ষমতার যিনি অধিকারী, তিনি প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু যারা আংশিক ক্ষমতার অধিকারী তারা মন্ত্রী। তাহলে বিষয়টি দাঁড়ালো- সকল মন্ত্রীই প্রধানমন্ত্রী নয়, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মাত্রই যেকোনো মন্ত্রী। ঠিক তেমন, সকল ভগবান ঈশ্বর নন, কিন্তু ঈশ্বর মাত্রই ভগবান।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিষ্ণুর পূর্ণ অবতার হলেও শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর হন, বিষ্ণু তো পরমব্রহ্ম বা ব্রহ্মের তিনটি রূপ- ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর- এর একটি রূপ মাত্র ?
এই ধারণা ই হিন্দুধর্মের সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কিত ধারণার সকল জটিলতার মূল। আমরা ব্রহ্ম বা ঈশ্বরকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করে একেকটি ভাগে এক তৃতীয়াংশ ক্ষমতাকে বন্টন করে দিয়েছি এবং নানা আজগুবি গল্পের পুরাণ কাহিনী লিখে, সেই তিনজনের মধ্যে নানা ঝগড়া বিবাদও লাগিয়ে দিয়েছি, ফলে তারা তিনজন সম্পূর্ণভাবে আলাদা তিনটি সত্ত্বাতে পরিণত হয়েছে, কিন্তু ব্যাপারটা আসলে সেরকম নয়।
ব্রহ্ম বা ঈশ্বর যখন সৃষ্টি করেন, তখন তারই নাম ব্রহ্মা, যখন পালন করেন, তখন তারই নাম বিষ্ণু এবং যখন ধ্বংস করেন, তখনই তার নাম শিব বা মহেশ্বর। এই তিনটি নাম, তিনটি আলাদা আলাদা সত্ত্বা নয়, একই ঈশ্বরের আলাদা তিনটি নাম মাত্র। এর প্রমাণ আছে গীতার অনেক শ্লোকে, যেগুলো আপনারা কিছু পরেই জানতে পারবেন; তার আগে দেখাই- অনেকের ধারণা মতে, ব্রহ্মের তিন ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ ক্ষমতার অধিকারী বিষ্ণুর অবতার হলেও- শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে পূর্ণ ব্রহ্ম বা পরমেশ্বর ?
একটু আগেই বলেছি, ব্রহ্মকে যদি আমরা ‘ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর’ এই তিনভাগে ভাগ করি, তাহলেই আমরা ঝামেলায় পড়বো এবং এই অংক কোনোদিনই মেলাতে পারবো না। আবার এটাও বলেছি, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর, আলাদা আলাদা কোনো সত্ত্বা নয়, তারা এই ব্রহ্মের তিনটি আলাদা নাম মাত্র। এখন আমি যে সূত্রের কথা বলছি, সেই সূত্র দ্বারা অংকটাকে সমাধান করার চেষ্টা করুন, দেখুন অংকটা মিলে কি না ?
ব্রহ্মের শক্তি ১০০%, ব্রহ্ম যখন সৃষ্টিকর্তা হিসেবে কাজ করেন, তখন তার নাম হয় ব্রহ্মা; আমি যেহেতু বলেছি- ব্রহ্মা, ব্রহ্মের তিন ভাগের এক ভাগ নয়, ব্রহ্মা, ব্রহ্মেরই অপর নাম; সেহেতু ব্রহ্মের ১০০% শক্তি চলে এলো ব্রহ্মার কাছে। একইভাবে ১০০% শক্তি যাবে ব্রহ্মের পালনকারী রূপ বিষ্ণু এবং ধ্বংসকারী রূপ শিবের কাছে। তার মানে ব্রহ্মা, বিষ্ণু বা মহেশ্বর, যে নামই বলি না কেনো প্রত্যেকেই ব্রহ্ম এবং সবার শক্তি ১০০%, এই সূত্রে বিষ্ণুর শক্তিও ১০০%, যা পূর্ণ শক্তি। এখন এই বিষ্ণুর পূর্ণ অবতার হিসেবে কৃষ্ণের মধ্যেও থাকবে ১০০% শক্তি, এই সূত্রেই কৃষ্ণ, পূর্ণব্রহ্ম বা পরমেশ্বর।
অংকের মাধ্যমে উপরে যা বললাম, এখন দেখুন গীতার মধ্যে সেই কথাগুলোর সমর্থন আছে কি না ? খুব বেশি কিছু না বুঝলেও, শুধু যদি কৃষ্ণের বিশ্বরূপের থিয়োরিটা ভালো করে বোঝা যায়, তাহলেই কিন্তু পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, কৃষ্ণই সবকিছু এবং সবকিছুর আশ্রয় কৃষ্ণের মধ্যেই; কৃষ্ণের বিশ্বরূপের মধ্যে যা কিছু নাই, তার পূজা প্রার্থনা ও আরাধনা করার কোনো প্রয়োজন নেই।
কিন্তু আমরা এই মূল থিয়োরি না বুঝে, শুধু বহু দেবতারই নয়, নির্বোধের মতো- যারা অবতার নয়, অবতার বলে শাস্ত্রে যাদের স্বীকৃতিও নেই, সেইরকম- বহু ব্যক্তিরও পূজা করে চলেছি । একটা কথা মনে রাখবেন, শাস্ত্রের অবতারিক স্বীকৃতির বাইরে সাধারণ মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়ে অসাধারণ হয়ে উঠা ব্যক্তিগণ আপনার গুরু হতে পারেন, আপনাকে মুক্তির পথ দেখাতে পারেন, আপনার শ্রদ্বার পাত্র হতে পারেন, সম্মানের পাত্র হতে পারেন, কিন্তু দেবতার স্থানে বসিয়ে সে পূজার যোগ্য নন। যে সব ব্যক্তি দেবতার মতো বসে পূজা নেন এবং যারা তার পূজা করেন, তারা উভয়েই চরম অপরাধ করে চলেছে এবং তারা উভয়েই পাপী।
চৈতন্যদেব, লোকনাথ, রামকৃষ্ণ, প্রণবানন্দ, অনুকূল চন্দ্র, হরিচাঁদ, প্রভুপাদ এবং আরও যারা ছোট খা্টো নাম না জানা আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতাগণ- সবাই এই থিয়োরির অন্তর্ভূক্ত; এরা সবাই মানুষকে ধোকা দিয়ে, বিভ্রান্ত করে, পৃথিবীতে নিজেদের অমর হওয়ার পথ তৈরি করেছে মাত্র। পূজা পাওয়ার যোগ্য শুধু মাত্র অবতার এবং দেবতাগণ; কারণ, এরা আপনাকে মুক্তি দিতে পারে বা মোক্ষ লাভ করাতে পারে। যে মানুষ নিজেই মুক্তিপ্রার্থী, যার নিজের মুক্তিলাভই নিশ্চিত নয়, সে কিভাবে আপনাকে মুক্তি দেবে ? কোনো উকিল, ব্যারিস্টার, জজ কি আইনের বাইরে গিয়ে আপনার ফাঁসির দণ্ড থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে ? তারা তো শুধু আপনাকে মুক্তির পথ দেখাতে পারে; আপনাকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র রাষ্ট্রপতি, যিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। সেই রাষ্ট্রপতিরই আধ্যাত্মিক রূপ হলো ঈশ্বররূপ শ্রীকৃষ্ণ, আপনি তার পূজা করেন, তার আদর্শকে ধারণ করেন, আপনি অন্য কারো পূজা করতে যাবেন কেনো ? আর তাদের পূজা করলে কি আপনি মুক্তি পাবেন ? থিয়োরি এবং বাস্তবতা কি তাই বলে ?
উপরের আলোচনায়, প্রধানমন্ত্রীকে একবার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, পরে আবার রাষ্ট্রপতিকে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী বললাম। আসলে বাংলাদেশ-ভারতের ভেজাল গণতন্ত্রের কারণে উদাহরণের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে এরকম বলতে হলো। আমেরিকান গণতন্ত্র হলে শুধু রাষ্ট্রপতি বললেই হতো। বাংলাদেশে, ভারতে, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু কিছু কিছু কাজ আবার প্রধানমন্ত্রী করতে পারেন না, করেন রাষ্ট্রপতি, সেটাও আবার প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে, মারার জন্য হাতে তরোয়াল তুলে দিয়ে বলেছে, আমি অর্ডার না দিলে মারবি না, বোঝেন অবস্থা ! তুই যদি নিজের হাতেই মারবি, তাহলে তরোয়ালটাও নিজের হাতে রাখ না! এজন্যই বললাম ভেজাল গণতন্ত্র।
যা হোক, ঈশ্বর হিসেবে কৃষ্ণই যে সব কিছু, এবার সেই প্রমাণগুলো তুলে ধরছি গীতার আলোকে-
গীতার ১০/৬ নং শ্লোকে বলা হয়েছে,
“মহর্ষয়ঃ সপ্ত পূর্বে চত্বারো মনবস্তথা।
মদভাবা মানসা জাতা যেষাং লোক ইমাঃ প্রজাঃ।।”
এর অর্থ – সপ্ত মহর্ষি, তাদের পূর্বজাত সনকাদি চার কুমার ও চতুর্দশ মনু, সকলেই আমার মন থেকে উৎপন্ন হয়ে আমা হতে জন্মগ্রহণ করেছে এবং এই জগতের স্থাবর জঙ্গম আদি সমস্ত প্রজা তাঁরাই সৃষ্টি করেছেন।
আমরা জানি যে, ব্রহ্মার মন থেকে উৎপন্নদের মনু বলা হয়, কিন্তু এখানে শ্রীকৃষ্ণ বললেন, চতুর্দশ মনু তার মন থেকেই উৎপন্ন, তার মানে ব্রহ্মাই শ্রীকৃষ্ণ।
আবার দেখুন, অর্জুনকে বিশ্বরূপ দেখাতে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণ তার দেহে কাকে ধারণ করেছিলেন-
গীতার ১১/১৫ নং শ্লোকের মধ্যে বলা আছে,
“ব্রহ্মাণমীশং কমলাসনস্থনম”
অর্থাৎ, অর্জুন, শ্রীকৃষ্ণের দেহে কমলাসনে স্থিত ব্রহ্মাকে দেখতে পাচ্ছেন।
আবার, ১০/২৩ এর প্রথম শ্লোকে বলা আছে,
“রুদ্রানাং শঙ্করশ্চাস্মি”
এর মানে হলো- রূদ্রদের মধ্যে আমি শিব।
অর্থাৎ, শ্রীকৃষ্ণই যে শিব এখানে তা প্রমাণিত।
এছাড়াও দেখুন, শ্রীকৃষ্ণই যে- ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর তার প্রমাণ,
গীতার ১৩/১৭ নং শ্লোকে বলা আছে,
“অবিভক্তং চ ভূতেষু বিভক্তমিব চ স্থিতম।
ভূতভর্তৃ চ তজজ্ঞেয়ং গ্রসিষ্ণু প্রভবিষ্ণু চ।।”
এর অর্থ- পরমাত্মাকে যদিও সমস্ত ভূতে বিভক্তরূপে বোধ হয়, কিন্তু তিনি অবিভক্ত। যদিও তিনি সর্বভূতের পালক (বিষ্ণু), তবু তাকে সংহার কর্তা ( শিব) ও সৃষ্টিকর্তা (ব্রহ্মা) বলে জানবে।
শুধু তাই নয়, শ্রীকৃষ্ণই যে ব্রহ্ম, সেই কথা বলা আছে গীতার ১৪/২৭ নং শ্লোকে,
“ব্রহ্মণো হি প্রতিষ্ঠাহমমৃতস্যাব্যয়স্য চ।
শাশ্বতস্য চ ধর্মস্য সুখস্যৈকান্তিকস্য চ।।”
এর অর্থ- আমিই নির্বিশেষ ব্রহ্মের প্রতিষ্ঠা বা আশ্রয়। অব্যয় অমৃতের, শাশ্বত ধর্মের এবং ঐকান্তিক সুখের আমিই আশ্রয়।
এছাড়াও গীতার ১০/৩১ নং শ্লোকে বলা আছে,
“রামঃ শস্ত্রভৃতামহম্”
এর অর্থ- আমিই রাম।
এবং গীতার ১০/২৪ নং শ্লোকে বলা আছে
“সেনানীনামহং স্কন্দঃ”
এর অর্থ- সেনাপতিদের মধ্যে আমি কার্তিক।
এসব ছাড়াও সকল দেবতার পূজার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তিনি গীতার ৯/২৩ নং শ্লোকে বলেছেন,
“যেহপ্যন্যদেবতাভক্তা যজন্তে শ্রদ্ধয়ান্বিতাঃ।
তেহপি মামেব কৌন্তেয় যজন্ত্যবিধিপূর্বকম।।”
এর অর্থ- হে কৌন্তেয়, যারা অন্য দেবতাদের ভক্ত এবং শ্রদ্ধা সহকারে তাদের পূজা করে, প্রকৃতপক্ষে তারা অবিধিপূর্বক আমারই পূজা করে।
উপরের এই আলোচনা থেকে পাঠক বন্ধুদেরকে নিশ্চয় এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, বহু দেবতার পূজা করলেও, আমরা আসলে এক ঈশ্বররেই পূজা করি, সেই ঈশ্বর হলেন মানবরূপে জন্মগ্রহনকারী শ্রীকৃষ্ণ, আধ্যাত্মিকভাবে যিনিই পরমব্রহ্ম বা ব্রহ্ম। সুতরাং হিন্দু শাস্ত্র মতে, এই বিশ্বজগতের সকল কিছুর স্রষ্টা পরম ব্রহ্ম বা পরমেশ্বর, মানবরূপে যিনি শ্রীকৃষ্ণ।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীকৃষ্ণ।
From: Krishna kumar das
💜 জয় হোক সনাতনের 💜

চিত্রে থাকতে পারে: 10 জন ব্যক্তি
আরও প্রতিক্রিয়া 
মন্তব্যগুলি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন