রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

গুরু


গুরু


শেয়ার করেছেন                       প্রণব কুমার কুণ্ডু

অমৃতকথা


* জ্ঞানেশ্বর আশ্রমের ‘মৃত্যোর্মামৃতং গময়’ থেকে

* বর্তমান থেকে শেয়ার করা হয়েছে !



** কলিযুগে কিছুকিছু সদগুরুরা, আবার অনেক 'কুলগুরুরা', নরাকার গুরু রূপে, সুব্রানিয়াম স্বামির,  মার্কেট ইকোনমির সুবিধা নিয়ে, বেশ ব্যবসা শুরু করেছেন ! **


ত্বমেব সর্বং


‘‘গুরোর্ব্রহ্ম নমাম্যহম্‌’’। ব্রহ্ম স্বরূপ গুরুকে প্রণাম করি। ‘‘গুরোরেব পরব্রহ্মঃ,তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।’’ পরব্রহ্ম গুরুকে প্রণাম করি। গুরুই ব্রহ্ম, গুরুই পরব্রহ্ম। গুরুকে অন্য কোন ‘শব্দে’ নির্দ্দেশ করা যায় না। তাঁর বিস্তার লীলায়, তিনি ‘‘ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিব একাকারে, এক দেহে এলে ধরণীর পরে।’’ ইহা তাঁর ভাতি পর্ব। ‘‘অস্তি’’ সত্তায় তিনি একং-অদ্বৈতং-শাশ্বতং-শান্তং-ব্যোমাতীতং পরব্রহ্ম। ‘‘ভাতি’’ পর্বে তিনি নরাকার পরব্রহ্ম। ‘নরাকার’—তবু পরব্রহ্ম। নিরাকারের নরাকার লীলা। ‘অস্তি’ সত্তায় একম, এর ভাতি ‘‘বহুস্যাম্‌’’।

‘‘তিনিই’’ অব্যক্ত, অরূপ, নির্গুণ, নিরাকার, চৈতন্যং, বিন্দু নাদ কলাতীতং। তিনিই ‘সত্‌’ স্বরূপে অরূপ, ‘চিত্‌’ স্বরূপে স্বরূপ এবং ‘আনন্দ’ স্বরূপে জীবে-জড়ে, ভক্ত-ভগবানে চিন্ময় আনন্দ, পুলকে অপরূপ।
তিনি—‘‘আকাশবত্‌ সুক্ষ্মশরীর আত্মা, ন দৃশতে বায়ু বদন্তবাত্মা!
সবাহ্যাভ্যন্তর নিশ্চলাত্মা, অন্তর্মুখং পশ্যতি তত মৈকং।।’’

আকাশবত্‌ সূক্ষ্মশরীর যে পরমাত্মা, তা মনের অগোচর। তবু তিনি বাহ্যে অভ্যন্তরে নিত্য বিরাজিত। সর্ব প্রকাশে অপ্রকাশে তিনি ‘অস্তি’ সত্তা ও ‘ভাতি’ সত্তা। বাহ্যে অদৃশ্য তবু সর্বত্র সর্বময়। মালিকার অভ্যন্তরের গ্রন্থি সূত্রবত্‌ অপরিহার্য সত্তা।

‘‘জ্ঞাত্বা সর্ব্বগতং ব্রহ্ম সর্ব্বজ্ঞ পরমেশ্বরম্‌।
অহং ব্রহ্মোতি নির্দ্দিষ্টঃ প্রমাণং তত্র কিং ভবেত্‌।’’
‘তত্ত্বমসি’ মহাবাক্য দ্বারাও তাঁকে ব্যাখ্যা করা যায় না। ‘‘আমিই ব্রহ্ম’’ এই অবস্থাই নির্দেশ করে—তবে সে গুরু ব্রহ্মকে বিশেষিত করবে কে?

‘‘সদগুরু’’—নিত্য সত্‌ স্বরূত্‌। ভাতি পর্বে তিনিই প্রেম গুরু, প্রেমিক-গুরু। প্রেমই সদ্‌গুরুর স্বরূপ—পূর্ণ মহাজ্ঞানের দিব্য দ্যুতিই প্রেম, আর পূর্ণ ত্যাগের ভূমা-বিস্তারই আনন্দ। তাই তিনি একাধারে ‘‘সচ্চিদানন্দ ঘন বিগ্রহ।’’
বিগ্রহ রূপে না এলে তো মানব তাঁকে বিশেষভাবে গ্রহণ করতে পারবে না। নরের কাছে গ্রাহ্য হতে ও নরকে নারায়ণে অর্থাত্‌ স্বস্বরূপে ফিরিয়ে নিতে যেতেই তো তিনি নরাকার হয়েছেন। কিন্তু তিনিই ‘‘নিরাকার পরব্রহ্ম’’। যে জীবত্বের তথা বুদ্ধি ও অহংকারের তথা দ্বিবিংশতি ও ত্রিবিংশতি তত্ত্বের আবরণ নারায়ণকে করে বন্দী করেছে, সে মোহাবরণের অজ্ঞানতা বিনাশ করতে ‘‘অজ্ঞান হারিণ্য’’ নিরাকার গুরুর নরাকারে আবির্ভাব। তবু নরাকার গুরুই ধ্যানমূলং। ‘‘ধ্যানমূলং গুরোর্মূর্তি পূজামূলং গুরোর্পদম্‌ মন্ত্রমূলং গুরোর্বাক্য এবং মোক্ষমূলং গুরোর্কৃপা।’’

সেই ‘‘গুরুঃ ব্রহ্ম’’ হতেই অব্যক্ত, ব্যক্ত, অরূপ, স্বরূপ, অপরূপ, রূপ, ব্রহ্মাণ্ড, জগত্‌, জীব, অজীব—সব কিছুর প্রকাশ, লীলা ও পুনরায় তাঁতেই বিলীন। যিনি এই মহাতত্ত্ব উপলব্ধি করেন গুরুকৃপায়, তিনিই সার্থক সৃষ্টি, তিনিই পরম সিদ্ধ সাধক। চতুর্বিংশতি তত্ত্বাতীত নিত্য নিরঞ্জন গুরুই ‘‘আদির নাদিশ্চ’’ ‘‘গুরু পরম দৈবতম্‌’’ ‘‘গুরু পরংনাস্তি কিঞ্চিত্‌’’—গুরোর্ব্রহ্ম নামাম্যহম্‌। ঩সেই—‘‘অব্যক্তাচ্চ ভবেত্ সৃষ্টিরব্যক্তাচ্চ বিনশ্যতি।
অব্যক্তং ব্রহ্মণোজ্ঞানং সৃষ্টি সংহার বর্জিতম’’
এবং ‘‘কিঞ্চিত্‌ গুরুং, বিনা নান্যত্‌—।’’
—অর্থাৎ,  গুরু ছাড়া কিছু নাই।
আবার নরাকারেই সেই নিরাকারের পরম প্রকাশ। তাই তো গুরু ‘‘নরাকার পরব্রহ্ম রূপায় অজ্ঞান হারিণ্যে।’’ জীবের অজ্ঞান তামশ নাশ করতেই তিনি জ্ঞানাঞ্জন শলাকাসহ জগতে আসেন নরের কাছে। নরাকারের নারায়ণকে নীড়ে সঙ্গে নিয়ে যেতে বারেবারে জগতে সদগুরু, নরাকার গুরু রূপে আবির্ভূত হয়েছেন।**

* জ্ঞানেশ্বর আশ্রমের ‘মৃত্যোর্মামৃতং গময়’ থেকে

* বর্তমান থেকে শেয়ার করা হয়েছে !



** কলিযুগে কিছুকিছু সদগুরুরা, আবার অনেক 'কুলগুরুরা', নরাকার গুরু রূপে, সুব্রানিয়াম স্বামির,  মার্কেট ইকোনমির সুবিধা নিয়ে, বেশ ব্যবসা শুরু করেছেন !



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন