অন্ত্যেষ্টি পদ্ধতি জানুন।
নমস্কার,
দয়া করে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ূন সঠিক অন্ত্যেষ্টি পদ্ধতি জানুন।
বৈদিক অন্ত্যেষ্টি সংস্কার বা সৎকারঃ মানব শরীরের অন্তিম সংস্কারকে অন্তোষ্টি কর্ম বলে। এই সংস্কারের পরে মৃত শরীরের জন্য আর কোন অন্য কর্ম নেই। একেই সৎকার কর্ম বলা হয়। যজুর্বেদ বলে মানুষের মৃত্যুর পর শরীরকে শাস্ত্রসম্মতভাবে পবিত্র বেদমন্ত্রে দাহ করাই প্রধান ধর্ম। আবার মনুসংহিতা বলে মানব শরীরের আরম্ভে ঋতকর্ম এবং অন্তে শ্মশানে সৎকার, বা অন্ত্যেষ্টি, অর্থাৎ মৃতকর্ম হয়ে থাকে।
একজন মৃত মানুষকে সৎকার করতে যেসকল দ্রব্যাদি লাগে তা নিম্নরূপ। বেল, ডুমুর, তেতুল, শমী, পলাশ প্রভৃতি মোটা শুকনা কাঠ বা সমিধা মৃত ব্যক্তির ওজনের সাত গুণ যেমন ব্যক্তির ওজন ১ মণ হলে কাষ্ঠ প্রয়োজন ৭মণ। কমপক্ষে ২ কেজি ঘি এর প্রয়োজন হয়। হোম যজ্ঞ করার যাবতীয় পদার্থ। দুটি মাটির কলসি, একটি কোদাল, একটি কুঠার, একটি দা, একটি প্রদীপ, সৎকারে চিতায় অগ্নি প্রবেশ করানোর জন্য পলতে, কর্পূর এবং ৫ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত পর্যন্ত ধুপ বা ধুনা। পুরুষ লোক মারা গেলে নতুন ধুতি এবং গেঞ্জি স্নান করানোর পর পরাতে হবে। মহিলাকে স্নান করানোর পর শাড়ি, ছায়া এবং ব্লাউজ পরাতে হবে। স্নান করানোর পর শরীর মুছে দিয়ে সমগ্র শরীরে বিশুদ্ধ ঘি মাখাতে হবে। কপালে চন্দনের ফোটা দেওয়া যেতে পারে। দাহ চলার সময় চিতায় আঘাত করা যাবে না। যতক্ষণ মৃত ব্যক্তি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত না হয় ততক্ষণ বেদ মন্ত্রে আহুতি চলবে।
মানুষের মৃত্যুর সময় কর্মঃ কোন ব্যক্তির মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে ওই ব্যক্তি কে প্রাণ ত্যাগের স্থান হতে সরানো যাবে না। শান্ত ও স্থিরভাবে প্রাণ ত্যাগ করবে। মৃত্যুর সময় কানে কোন পৌরাণিক নাম প্রদান, টানা হেচড়া করা, বুকের উপরে কোন ধর্ম বই রাখা, চিৎকার করা, ঢোল করতাল বা বাদ্যযন্ত্র বাজানো, নোংরা বিছানায় রাখা, কপালে তিলক মাখানো কর্তব্য নহে। মানুষের মৃত্যুর পর মৃত শরীরকে আদরের সাথে যেকোনো একটি পবিত্র স্থানে উত্তর দিকে মাথা এবং দক্ষিণ দিকে পদদ্বয় রেখে শুদ্ধ বিছানায় চিত অবস্থায় শোয়াতে হবে। দুই চোখ, মুখ খোলা থাকলে বন্ধ করে দিতে হবে।দুই কান এবং দুই নাকের ছিদ্রে তুলার সঙ্গে কর্পূর মিশিয়ে গুঁজে দিতে হবে। মলমূত্র বের হলে পরিস্কার করতে হবে। মৃত ব্যক্তি কে এমন জায়গায় রাখতে হতে হবে যেখানে আলো-বাতাসের আধিক্য না থাকে। মৃত পুরুষকে পুরুষ গণ শুদ্ধ জলে স্নান করাবে এবং মৃত মহিলা কে মহিলাগণ স্নান করাবে। শুদ্ধ জলে নিম পাতা অথবা কুলপাতা মিশিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে সেই জল কুসুম গরম করে তা দ্বারা মৃতকে শরীরকে স্নান করাতে হবে। স্নান করাতে সাবান গামছা এর ব্যবহার করতে হবে। স্নান শেষ হলে নতুন বস্ত্র পড়াতে হবে। শ্মশানে নেওয়ার আগে পরিবারের সবাই এবং আত্মীয়-স্বজন মৃত ব্যক্তির নিকট দাঁড়াবে এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করবে শ্মশানে নেওয়ার সময় ঢোল বাজানো, কীর্তন, লম্ফ –ঝম্প, নিশান পোতা, খই বা পয়সা ছড়ানো, হরিবোল বলে চিৎকার, মোটেই করা যাবে না। শান্তভাবে পবিত্র বেদ গায়ত্রী মন্ত্র অর্থসহ পড়তে পড়তে নিরবে চিতা এলাকায় যেতে হবে। চিতা এলাকায় বিড়ি, সিগারেট, গাজা, ভাং, মদপান, মাদক গ্রহণ, চিৎকার, কোলাহল, কীর্তন, গান-বাজনা করা যাবে না।
চিতায় অগ্নি প্রদানঃ কার্পাস তুলা অথবা নতুন কাপড় দ্বারা পলতে তৈরি করে অথবা মশাল তৈরি করে ঘি এবং কর্পূর মিশিয়ে ঘিয়ের প্রদীপ হতে অগ্নি গ্রহণ করে মৃত ব্যক্তির মাথায় নিম্নভাগ হতে পদ্বদয়ের নিম্নভাগে আহুতি প্রদান করবে। সন্তান না থাকলে স্ত্রী, ভাই, বোন, নিজের বংশের লোক, শশুরের বংশের লোক অথবা অন্য আত্মীয় চিতায় অগ্নি প্রদান করতে পারবে যেকোনোভাবে মৃত ব্যক্তির (স্বাভাবিক মৃত্যু, আত্মহত্যা, জলে ডোবা, আগুনে পোড়া, দুর্ঘটনায় মৃত) অবশ্যেই দাহ কার্য বা সৎকার করতে হবে। একমাত্র গর্ভবতী সন্তান এবং তিন বছর বয়স পর্যন্ত সন্তানকে মাটিতে প্রোথিত করতে হবে।এরপর চিতায় অগ্নি প্রদান মন্ত্র উচ্চারণ করে অগ্নি প্রদান করতে হবে। এরপর বেদ মন্ত্র উচ্চারণ করে বিভিন্ন ধরনের আহুতি চলতে থাকবে যতক্ষণ যতক্ষণ পর্যন্ত দেহ সম্পূর্ণ ভস্মীভূত না হয়।
সৎকার বা মৃত ব্যক্তির দাহ শেষে কর্তব্যঃ সৎকার বা দাহকার্য অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিগণ স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরে প্রয়োজনে আচমন করে পবিত্রভাবে দাহকার্য কাজে অংশগ্রহণ করবেন। দাহকার্য শেষে যদি শরীরে দাহকার্যে থাকার সময় ময়লা লাগে তবে অবশ্যই স্নান করে শুদ্ধ হতে হবে। অশৌচ মনে করে স্নান করা যাবে না। শ্মশান এলাকায় গাজা, ভাং, মদ বা মাদকদ্রব্য গ্রহণ, ধূমপান,ঢোল, খোল, করতাল বাজানো, জোরে জোরে চিৎকার করা হতে বিরত থাকতে হবে। মৃত ব্যক্তির বাড়িতে অথবা শ্মশানে দাহ কার্যের সময় দাহকার্যে অংশগ্রহণকারীগণ কোন প্রকার খাদ্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেন।যে ব্যক্তির মৃত্যু হবে সেই ব্যক্তির ব্যবহার্য দ্রব্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে। প্রয়োজনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ব্যবহার্য দ্রব্য রোগ-জীবাণুর প্রকোপ থাকে। যে স্থানে বা ঘরে মৃত্যু হবে সেই স্থান মার্জন লেপন এবং জীবাণুনাশক পদার্থ দ্বারা ধৌত করতে হবে। এরপর প্রাণ ত্যাগের স্থানে স্বস্তিবাচন, শান্তিপ্রকরণ এবং হোম যজ্ঞ অবশ্যই করতে হবে। যেদিন মৃত্যু হয় সেদিন হতে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, এভাবে ২০ তারিখ পর্যন্ত ৩ থেকে ৫ টি হোম যজ্ঞ ধর্মানুষ্ঠান মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি বা অনির্বাণ কামনার উদ্দেশ্যে করা কর্তব্য। মুখে অগ্নি প্রদান, উলঙ্গ করে দাহ করা, মৃতের শরীর ভাঁজ করা, সাইকেলের টায়ার বা নোংরা কোন পদার্থ দ্বারা সৎকার।সন্তানেরা গলায় সাদা দড়ি বা ধরা বাঁধা, আতপ চালের ভাত খাওয়া, শ্রাদ্ধের নামে ব্রাহ্মণ বা পুরোহিত ডেকে ষোল প্রকার দানের ব্যবস্থা করা, মাথার চুল কামানো, দশ,এগারো,বার,তের,পনেরো, ষোল, এক মাসের নামে শ্রাদ্ধ নামক পাপাচার অনুষ্ঠান করা শাস্ত্রসম্মত নয়। এসকল পৌরাণিক মূর্খদের স্বার্থসিদ্ধির ব্যবসা ব্রাহ্মণ বা মূর্খদের পেট পূজা এবং মানব সমাজকে ধ্বংস করে শূদ্র এবং মহাশূদ্র তৈরির কাজে তারা শ্রাদ্ধ কে ব্যবহার করে। মৃত ব্যক্তির পরিবার সাধারণ খাদ্য গ্রহণ করবে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে। মৃত ব্যক্তির বাড়িতে কোনক্রমেই ভুরিভোজন এর নামে খাদ্য গ্রহণ করে বৈদিক সমাজের মৃত ব্যক্তির সন্তানদের ফতুর করা চলবে না। যদি সামর্থ্য না থাকে তবে গ্রামের সুধী ব্যক্তিরা সাহায্য করবেন। সামর্থ্য থাকলে শোকাবস্থা কেটে গেলে খাদ্য প্রদান করা যেতে পারে। আর সামর্থ্য না থাকলে মোটেই খাদ্য প্রদান করা চলবে না। সুধী ব্যক্তিদের মনে রাখতে হবে যে কোন ব্যক্তির মৃত্যু হলে অবশ্যই আমরা সকলে তার সৎকারে অংশগ্রহণ করব। কোন ব্যক্তি মহাশত্রু হলেও শ্রদ্ধার সাথে তার সৎকারে অংশগ্রহণ করতে হবে। খাদ্য প্রদান মৃত্যুর তিন মাস পর এক বছরের মধ্যে যে কোন দিনে করা যাবে বা পরবর্তী বছর মৃত্যুবার্ষিকীতে একটি হোম যজ্ঞ ধর্মানুষ্ঠান শেষে খাদ্য প্রদান করা যেতে পারে। যদি মৃত ব্যক্তির সন্তানেরা ধর্ম ও সমাজ গঠনে বেদবিদ্যা প্রচার, বৈদিক ধর্মের প্রসার, অনাথ পালন, বিদ্যালয় স্থাপন, ধর্ম চর্চা কেন্দ্র স্থাপন ,প্রভৃতিতে অর্থ-সম্পদ দান করেন তবে সেটাই উত্তম। কারণ এই দানে মানব সমাজের অশেষ কল্যাণ সাধিত হবে মানবসমাজ জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং সত্য ও সুন্দরের পথে এগিয়ে যাবে। এসকল দান ওই মৃত ব্যক্তির নামে উৎসর্গকৃত হলে সর্বাপেক্ষা উত্তম হবে।কেহ মৃত পিতা-মাতা বা কোন ব্যক্তির স্মৃতিকে ধরে রাখতে চাইলে সৎকারের পরে চিতাভস্ম নতুন কাপড় পাত্র কোন কিছুতে নিয়ে বাড়িতে সুবিধামতো স্থানে রেখে স্মৃতিস্তম্ভ করা যেতে পারে। কোন মৃত ব্যক্তির আবক্ষ মূর্তি বাড়ির সুবিধামতো স্থানে স্থাপন করা যেতে পারে।এই স্মৃতিস্তম্ভে সকালে প্রণাম করা এবং সন্ধ্যায় বাতি জ্বেলে প্রণাম করলে পরম শ্রদ্ধেয় আপনজনদের প্রতিদিন দুইবার শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হবে। তবে কোনক্রমেই ঈশ্বর জ্ঞানে প্রণাম করা যাবে না।
বাংলাদেশ অগ্নিবীর
শেয়ার করেছেন : - প্রণব কুমার কুণ্ডূ
প্রণব কুমার কুণ্ডূ
চিতা জ্বলছে
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট
কনট্যাক্ট
কনট্যাক্ট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন