মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ঋষি অরবিন্দ ও তাঁর চোদ্দ বছরের ছোট পত্নী মৃণালিনী

ঋষি অরবিন্দ ও তাঁর চোদ্দ বছরের ছোট পত্নী মৃণালিনী


" তুমি বোধহয় এর মধ্যে টের পেয়েছ, যাহার ভাগ্যের সঙ্গে তোমার ভাগ্য জড়িত, সে বড় বিচিত্র ধরনের লোক। এই দেশে আজকালকার লোকের যেমন মনের ভাব, জীবনের উদ্দেশ্য, কর্ম্মের ক্ষেত্র, আমার কিন্তু তেমন নয়, সব বিষয়েই ভিন্ন, অসাধারণ ।" 
 
স্ত্রীকে লিখেছিলেন শ্রীঅরবিন্দ। 
 
আঠাশ বছরের শ্রীঅরবিন্দ যখন চোদ্দ বছরের মৃণালিনীকে বিবাহ করেন, তখন তিনি বরোদায় উচ্চপদে চাকরী করেন।
ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের চরম শত্রু অরবিন্দ ঘোষ বিলেতে আই. সি.এস. পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন। তবে ঘোড়ায় চড়ার পরীক্ষা না দিয়ে অবলীলায় ইংরেজের হেকিমের চাকরী অবলীলায় ছেড়ে দিয়ে বরোদায় চাকরী নিয়েছিলেন।
লাতিন গ্ৰীকসহ সাতটি ভাষায় পারদর্শী অরবিন্দ ঘোষ ছিলেন বাংলায় বড় কাঁচা।
দোর্দন্ডপ্রতাপ ডাক্তার কৃষ্ণধন ঘোষ তাঁর তিন ছেলে মনোমোহন, অরবিন্দ ও বারীনকে ইংরেজ গভর্ণেস রেখে মানুষ করতে চেয়েছিলেন। অরবিন্দ দীর্ঘদিন বিলেতে পড়াশোনা করেছেন।
অরবিন্দ ' তুমি ' বলতে পারতেন না তখন। বলতেন ' টুমি '। জামাইবাবাজীর সেই সাহেবী বাংলা শুনে শ্বশুরবাড়িতে মেয়েরা হেসেই কুটিপাটি !
তবে মৃণালিনীর সাথে তাঁর দাম্পত্যের মধ্যে বিরহের সুরটিই প্রধান। শ্রীঅরবিন্দের বিচিত্র, কর্মমুখর ও বিপদসঙ্কুল জীবনের ঢেউ বিপর্যস্ত করে রেখেছিল স্বামীর ঘর করতে চাওয়া অল্পবয়সী মেয়েটিকে।
শ্রীঅরবিন্দ অতিকষ্টে ছুটি নিয়ে বাংলায় এলে কখনও গ্ৰে স্ট্রীটের বাড়িতে, কখনও স্কটস লেনে শ্বশুরবাড়িতে, কখনও দেওঘরে মাতামহ রাজনারায়ণ বসুর বাড়িতে নবদম্পতির একসাথে থাকার সুযোগ হত।
মাঝে মাঝে অরবিন্দ ওয়েলিংটন স্কোয়ারে বন্ধুবর রাজা সুবোধ মল্লিকের বাড়িতে কিছুদিন থাকতেন।
শ্রীঅরবিন্দ নিয়ম করে স্ত্রীকে চিঠি লিখতেন।
একটি চিঠিতে লিখছেন,
' ..... অন্য লোকে স্বদেশকে একটা জড় পদার্থ, অতোগুলো মাঠ ক্ষেত্র বন পর্ব্বত নদী বলিয়া জানে, আমি স্বদেশকে মা বলিয়া জানি, ভক্তি করি, পূজা করি। মা’র বুকের উপর বসিয়া যদি একটা রাক্ষস রক্ত পানে উদ্যত, তাহা হইলে ছেলে কি করে? নিশ্চিন্তভাবে আহার করিতে বসে স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে আমোদ করিতে বসে, না মাকে উদ্ধার করিতে দৌড়াইয়া যায়? আমি জানি, এই পতিত জাতিকে উদ্ধার করি এমন বল আমার গায়ে আছে।
শারীরিক বল নাই, তরবারি বা বন্দুক নিয়া আমি যুদ্ধ করতে যাইতেছি না, জ্ঞানের বল। ক্ষত্রতেজ একমাত্র তেজ নহে --ব্রহ্মতেজও আছে, সেই তেজ জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত।
এই ভাব নূতন নহে, আজকালকার নহে, এই ভাব নিয়ে আমি জন্মিয়াছিলাম, এই ভাব আমার মজ্জাগত। ভগবানের এই মহাব্রত সাধন করিতে আমাকে পৃথিবীতে পাঠাইয়াছিলেন। চৌদ্দ বৎসর বয়সে বীজটি অঙ্কুরিত হইতে লাগিল, আঠার বৎসর বয়সে প্রতিজ্ঞা দূঢ় ও অচল হইয়াছিল।'
শ্রীঅরবিন্দের বিপ্লবপ্রচেষ্টার সহচর ও পরবর্তী কালে পন্ডিচেরী আশ্রমে তাঁর সাধনজীবনের অনুগামী প্রাক্তন আই.সি. এস. চারুচন্দ্র দত্ত
( ১৮৭৭ -১৯৫২) তাঁর " পুরানো কথা " বইটিতে
এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।
তিনি রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিকের শ্যালক ছিলেন।
" মৃণালিনীর বিখ্যাত পত্রাবলীতে অরবিন্দ বেশ পরিষ্কার করেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কি সম্বন্ধ ছিল। এ চিঠিগুলি পত্রিকাতে প্রকাশিত হওয়ার আগে আমি কিছুই জানতাম না এদের সম্বন্ধে। একদিন কথাবার্তা কইতে কইতে আমি ওঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “আচ্ছা, কর্তা, তুমি ত জানতে যে একদিন রাষ্ট্রীয় বিপ্লবের ঘূর্ণিপাকের মধ্যে তুমি ঝাঁপিয়ে পড়বে। তবে বিয়ে করলে কেন! আমার কথার জবাব দিতে না ইচ্ছে থাকে ত দিও না।”
অরবিন্দ এক মিনিট একটু ভেবে ধীরে ধীরে বললেন, “ দেখো চারু, ব্যাপারটি হল এই; ঠিক সেই সময় আমি বড় নিরাশ হয়ে পড়েছিলাম। ভাবতাম যে আমাকে মাষ্টারী করে জীবন কাটাতে হবে। তাহলে বিয়ে না করব কেন?” একটা কথা পাঠকের স্মরণ রাখা আবশ্যক যে শ্রী অরবিন্দ বিবাহ করেছিলেন ১৯০১ সালের এপ্রিল মাসে, আর ১৯০৩ সালে তিনি তাঁর ভবানী মন্দির স্থাপনের কাজ পরম উৎসাহে আরম্ভ করে দিয়েছিলেন। তা হলে দেখা যাচ্ছে যে দেশের কাজ সম্বন্ধে তাঁর যে নৈরাশ্য এসেছিল, সেটা দু বছরের বেশী টেকে নেই।
রবীন্দ্রনাথ অরবিন্দ কে দেখতে আসার পর একদিন বিকেল বেলায় ভূপাল বাবু অরবিন্দের শ্বশুরমশায়, আমাদের কাছে এলেন, ওয়েলিংটন স্কোয়ার বাড়ীতে। কর্তা তখন কলেজ হতে ফেরেন নেই। ভূপালবাবু আমাদিগকে বললেন, “চারু, সুবোধ, আমি অরবিন্দ কে নিমন্ত্রণ করতে এসেছি আজ সন্ধ্যাবেলায় আমার ওখানে খাবে।আমার মেয়ে কলকাতায় এসেছে ওর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ার আশাতে, যদি সেটা সম্ভব হয়। অরবিন্দ রাত্রিাটা আমাদের বাড়িতে কাটিয়ে সকালে তোমাদের কাছে ফিরে আসবে।তাকে নিশ্চয়ই পাঠিয়ে দিও বাবা।” ভদ্রলোক চলে গেলে মেয়েদিকে ডেকে কথাটা বললাম। সবাই মিলে খুব হৈ হৈ করতে লাগলাম।পাঁচটার সময় অরবিন্দ যখন বাড়ী ফিরলেন, আমাদিকে দেখেই বুঝলেন যে একটা অসাধারন কিছু ঘটেছে। আমরা একটা সমবেত চিৎকারধ্বনি করে সবাই একসঙ্গে কথা কইতে আরম্ভ করলাম।কর্তা হাসতে হাসতে বললেন, “একজন একজন করে বল দেখিনি।”
আমি উত্তর দিলাম, “ভাই, এরকম আহ্লাদের দিন কালে ভদ্রে একবার আসে। অরবিন্দ যে আজ সাঁঝের বেলায় পত্নীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন।” কর্তা হাসি চেপে বললেন,“হ্যাঁ, বলে যাও।” এইবার সুবোধের পালা কথা কইবার।সে গম্ভীরভাবে বললে,“ভূপালবাবু এসেছিলেন বিকেলবেলায় তোমাকে নিমন্ত্রণ করতে।তুমি তাঁর বাড়ীতে সন্ধ্যার সময় খাবে আর রাতটাও সেখানেই কাটাবে। মিসেস ঘোষ কলকাতা এসেছেন তোমার সঙ্গে দেখা করতে, তুমি ছাড়া পেয়েছে বলে আনন্দ প্রকাশ করতে, এই তো আমরা শুনলাম।” অরবিন্দ বললেন শুধু, “হ্যাঁ, তা তো বুঝেছি।” এবার আমার স্ত্রীর পালা, তিনি বললেন,“ এতে বোঝবার এমন কি আছে? একটু তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিন, যে কাপড় গুলো বার করে দিয়েছে সেগুলো পড়তে হবে। দাদার বেয়ারা সব কুঁচিয়ে গিলে করে রেখেছে।” কর্তা কিছু বললেন না, একটু চোখ মিটমিট করলেন। আমার সাহস বেড়ে গেল, তিনি বলে উঠলেন, “আর দেখুন ঘোষ সাহেব, আমার ভাজ আর আমি দুগাছা বেলফুলের গড়ে মালা গাঁথছি।একগাছা আপনার অন্যগাছা দিদির। আমি পরে বলে দেব কি করতে হবে।” চা খেয়ে সুভদের চাকরের সঙ্গে লক্ষ্মীটীর মত কাপড় পরবার ঘরে ঢুকলেন। কিছু আপত্তি করলেন না।করলেই বা শুনত কে।
যখন কামরা থেকে বেরিয়ে এলেন, তখন সাজগোজ করে ভারী সুন্দর দেখাচ্ছিল ওঁকে সবচেয়ে সুন্দর ঠোঁটের কোণে একটা সলজ্জ হাসি।আমরা তো সব দোরগোড়াতেই অপেক্ষা করছিলাম, ওঁকে জামাই বেশে দেখবার জন্য। লীলাবতী এগিয়ে গিয়ে মালাদুটী হাতে দিলে, বললে, “একটী আপনি পরাবেন দিদির গলায়, অন্যটী দিদি পরাবেন আপনার গলায়। ভুলবেন না যেন।” অরবিন্দ মিষ্টি হেসে জবাব দিলেন, “ তুমি যেমন বলছো তেমনই আমি করব, লীলাবতী।” যখন গাড়ীতে উঠছেন, সুবোধ বলে উঠল, “দয়া করে আর সূর্যোদয়ের আগে ফিরো না যেন।” তারপর দারোয়ানদিকে হুকুম দিলে, “দশটার সময় ফটকে তালা লাগিয়ে দিবি। ঘোষসাহেব রাত্রে ফিরবেন না।”
পরদিন প্রত্যুষেই একজন চাকর উপরে এসে সুবোধকে বললে, “হুজুর, ঘোষসাহেব জিজ্ঞেস করতে বললেন যে আপনারা কি চা খেতে নিচে আসছেন? সুবোধ জিজ্ঞাসা করলে, “ঘোষসাহেব।তিনি এত ভোরেই এসেছেন?” চাকরটা বললে,“তিনি তো রাত্তিরেই ফিরেছেন।” হুড়মুড় করে সবাই নিচে গেলাম। দেখি, কর্তা আরামচৌকিতে বসে আপন মনে খুব হাসছেন।
আমরা রাশি রাশি প্রশ্ন বর্ষণ করতে লাগলাম, উনি চোখ বুজে শুনতে লাগলেন। তারপর ধীরভাবে জবাব দিলেন, “এইবার শোন।চর্ব্য চ্যাষ্য ভোজনের পর রাত্রি এগারোটার সময় আমি ফিরে এসেছি।লীলাবতী, তোমার মালাদুটী সম্বন্ধে তোমার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি।” লীলাবতী তবু ছাড়েন না, করুণ স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, “তা আপনি মাঝ রাত্তিরে পালিয়ে এলেন কেন?” উনি শান্ত হাসি হেসে উত্তর দিলেন, “আমি তাকে সব বুঝিয়ে বলেছি, সে আমাকে আসতে অনুমতি দিলে পরে তবে আমি এসেছি।” কি বুঝিয়ে বলেছিলেন, তা ছাপা পত্রাবলীর থেকে আন্দাজ করা যায়। অনেকে মৃণালিনী দেবীর আধ্যাত্বিক ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে।মিথ্যে কথা প্রচারও নানা রকম ঘটেছে।১৯৪৪ সালে ডিসেম্বরে শ্রী অরবিন্দ আমাকে যে পত্র লিখেছিলেন, তার থেকে দুচার ছত্র উদ্ধৃত করছি।
“আমি আমার স্ত্রীকে শ্রীসারদেশ্বরী দেবীর কাছে দীক্ষার জন্য নিয়ে যাই নেই। অনেককাল পরে আমি পন্ডিচেরীতে শুনলাম যে দেবব্রতের ভগ্নী সুধীরা বসু তাকে শ্রীসারদেশ্বরীর কাছে নিয়ে গেছল। আমি জেনে সুখী হলাম, যে আমার স্ত্রী সাধনাতে এমন মহৎ আশ্রয় লাভ করেছে। কিন্তু সে ব্যাপারে আমার কোন হাতই ছিল না।”
মৃণালিনীর জীবনে চরম বিপর্যয় আসে যখন ১৯০৮ সালে শ্রী অরবিন্দ গ্ৰেপ্তার হন। আলিপুর বোমা মামলার আসামী হিসাবে তাঁকে প্রায় একবছর কারাগারে অন্তরীণ থাকতে হয়।
এই সময় বিপ্লবী দেবব্রত বসুর ( পরবর্তীকালে রামকৃষ্ণ মিশনের সাধক প্রজ্ঞানন্দ ) বোন সুধীরা বসু তাঁকে নিয়ে গেলেন বাগবাজারে শ্রী সারদা মায়ের কাছে। এই সুধীরা বসু ছিলেন ভগিনী নিবেদিতার স্কুলের অন্যতম চালিকাশক্তি।
সারদা মা মৃণালিনীকে সস্নেহে বললেন, " তোমার স্বামী ভগবানের আশ্রিত পুরুষ। ঠাকুরের আশীর্বাদে তিনি অতি সত্ত্বর নিষ্পাপ প্রমাণে মুক্ত হইয়া আসিবেন, তবে তিনি সংসার করিবেন না, ক্ষুদ্র আমিত্বের সংসার তাঁহার জন্য নহে। "
উপদেশ দিলেন মন শান্ত করার জন্য শ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত পড়ার, আর মাঝে মাঝে তাঁর কাছে আসার।
চুয়াল্লিশ ডিগ্ৰির ঐ অপরিসর প্রকোষ্ঠে শ্রীঅরবিন্দের "বাসুদেব - দর্শন" হয়।
তাঁর কারাকাহিনীতে স্পষ্টই বলে গেছেন, কিভাবে জেলের ভিতরেই তিনি " মঙ্গলময় শ্রীহরির অনন্ত মঙ্গল স্বরূপত্ব" উপলব্ধি করেছেন।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের প্রচেষ্টার ফলে বেকসুর খালাস পেয়ে শ্রীঅরবিন্দ প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে সরে এসে 'কর্মযোগীন' ও 'ধর্ম' পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নেন।
কিন্তু ক্রমাগত পুলিশি হেনস্থার শিকার শ্রীঅরবিন্দ
কৃষ্ণের আদেশে ফরাসী অধিকৃত পন্ডিচেরী চলে যান গোপনে।
মৃণালিনীর সাথে তাঁর যোগাযোগ অব্যাহত থাকে চিঠিপত্রের মাধ্যমে।
" আমি আর নিজের ইচ্ছাধীন নই, যেইখানে ভগবান আমাকে নিয়া যাইবেন সেইখানে পুতুলের মতো যাইতে হইবে, যাহা করাইবেন তাহা পুতুলের মত করিতে হইবে।
....... এই পর্য্যন্ত আমি তোমার বিরুদ্ধে অনেক দোষ করিয়াছি, তুমি যে তাহাতে অসন্তুষ্ট হইয়াছিলে, সে স্বাভাবিক, কিন্তু এখন আমার আর স্বাধীনতা নাই, এর পরে তোমাকে বুঝিতে হইবে যে আমার সব কাজ আমার ইচ্ছার উপর নির্ভর না করিয়া ভগবানের আদেশেই হইল। তুমি যখন আসিবে, তখন আমার কথার তাৎপর্য্য হৃদয়ঙ্গম করিবে। আশা করি ভগবান আমাকে তাঁহার অপার করুণার যে আলোক দেখাইয়াছেন, তোমাকেও দেখাইবেন, কিন্তু সে তাঁহারই ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তুমি যদি আমার সহধর্মিনী হইতে চাও তাহা হইলে প্রাণপণে চেষ্টা করিবে যাহাতে তিনি তোমার একান্ত ইচ্ছার বলে তোমাকেও করুণা করিয়া পথ দেখাইবেন। "
এক পর্যায়ে তিনি মৃণালিনীকে লিখলেন যে তাঁর সাধনা শেষ হয়েছে। তিনি সিদ্ধিলাভ করেছেন। মৃণালিনী এখন পন্ডিচেরী আসতে পারেন, এবং তাঁর ধর্মজীবনের সঙ্গিনী হতে পারেন।
মৃণালিনীর বাবা আবেদন করে পন্ডিচেরী যাবার অনুমতি পেলেন।
উচ্ছ্বসিত মৃণালিনী পিত্রালয় রাঁচী থেকে কলকাতায় এলেন।
কলকাতায় তখন স্প্যানিশ ফ্লুর মহামারী চলছে।
১৯১৮ সালে ১৭ই ডিসেম্বর যখন ঐ কুখ্যাত ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে মৃণালিনীর মৃত্যু হল, তখন তাঁর বয়স ৩২।
মৃণালিনীর মৃত্যুর পরের সন্ধ্যায় তাঁর শোকাতুরা মা যখন বাগবাজারে মায়ের বাড়ি ছুটে গেলেন , তখন শ্রী সারদাদেবী ধ্যানস্থ।
্যান ভাঙলে তিনি সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, মৃণালিনী একটি উচ্চতর লোকের বাসিন্দা। কোন কারণে তাঁকে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করতে হয়েছিল।
তাঁর কর্মফল ক্ষয় হয়েছে, তাই এই অল্পবয়সেই দেহকারাবাস থেকে মুক্তি পেয়ে নিজস্ব আলয়ে ফিরে গেছেন।
মৃণালিনীর ভাই সৌরিন বসু তখন পন্ডিচেরীতে।
তিনি দেখেছিলেন, সর্বদা স্থিতধী শ্রীঅরবিন্দের দুচোখ জলে ভরে উঠেছে। বিশ্ববিশ্রুত সাধকের হাতে তখন মৃত্যুসংবাদের টেলিগ্ৰামটি ধরা।
শ্রীঅরবিন্দ উল্লেখ করেছেন , মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই সূক্ষ্ম দেহে মৃণালিনী তাঁর সাথে এসে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
এরপর প্রায় চল্লিশ বছর তিনি পন্ডিচেরীতে নিজের আধ্যাত্মিক সাধনায় নিয়োজিত থাকেন।
শ্বশুর মশাইকে একখানি চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, যাঁদের তিনি একবার সর্বান্তকরণে ভালবেসেছেন, তাঁদের প্রতি তাঁর ভালবাসা চির জাগরূক থাকবে।
তথ্যসূত্র ;
শ্রীঅরবিন্দের সহধর্মিনী মৃণালিনী দেবীর স্মৃতিকথা ; শৈলেন্দ্রনাথ বসু
সর্বকালের সার্বজনীন শ্রীঅরবিন্দ ; নীরদবরণ
শ্রীঅরবিন্দ আশ্রম, পন্ডিচেরী
পুরানো কথা ; চারুচন্দ্র দত্ত ; সাগ্নিক বুকস
পোস্ট ; ঋতুপর্ণ বসু
 

শেয়ার করেছেন : - প্রণব কুমার কুণ্ডু





প্রণব কুমার কুণ্ডু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন