মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন

 

 সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন



" সেই সময়" উপন্যাসে সিপাহী বিদ্রোহের অংশ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, বুড়ো বাহাদুর শাহ লাঠি ঠুক ঠুক করতে করতে ধূলিমলিন ময়ূর সিংহাসনে এসে বসতেন বিগতগৌরব লালকেল্লায়।
তখন স্কুলে পড়ি।
স্কুলের ইতিহাস বইতে আছে বাহাদুর শাহের ঢের আগেই ঐ বস্তুটি নাদির শা নিয়ে গিয়েছিল পারস্যে।
তখন ভালো বুঝতাম না। আজ বুঝি।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আসলে ইতিহাসে খুব কাঁচা ছিলেন।
সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম ইত্যাদি উপন্যাস ও যা কিছু ঐতিহাসিক পটভূমিকায় লিখেছেন, সবেতেই বেসিক ভুল আছে।
নারায়ণ সান্যালের ' আবার সে এসেছে ফিরিয়া ' বইতে সুনীলের সেই সময় উপন্যাসের তথ্যগত সমস্ত ভুলগুলি সুন্দরভাবে চিহ্নিত করা আছে।
ভগিনী নিবেদিতা স্বামীজিকে প্রপোজ করছেন !!
ওকাকুরা নিবেদিতার কাঁধ ধরে হালকা করে নিজের দিকে টেনে নিলেন ?
তামাশা হচ্ছে ? কোথায় আছে রেফারেন্স ?
এক মহিলাকে কেন্দ্র করে বাঘা যতীন আর বারীন ঘোষের লাঠালাঠি !! হেমচন্দ্র কানুনগোর লেখায় রেফারেন্স আছে বটে, কিন্তু ঠিক ঐভাবে নয়।
ত্রিপুরার ভূগোল , নাম, লোকেশন নিয়েও বিতর্ক হয়েছে প্রথম আলো উপন্যাসে।
এই 'ইতিহাস আশ্রিত' লেখাগুলি উনি না লিখলেই বোধহয় ভাল করতেন। বেশ দুর্বল লেখা এগুলি। ইতিহাসের ভুল, অপব্যাখ্যা অনভিজ্ঞ পাঠকের ইতিহাস সচেতনতার দফারফা করে দেয়।
আসলে ওনার পড়াশোনা, হোমওয়ার্ক ছিল অত্যন্ত দুর্বল।
তাই ওনার লেখায় তথ্যের যাথার্থ্য প্রায় থাকত না বললেই চলে।
একটু খুঁটিয়ে ইতিহাস পড়লেই ঐসব লেখকদের ফাঁকিগুলো ধরা পড়ে যায়।
তা সে হার্মাদ উপদ্রব নিয়ে লেখা জলদস্যু হোক, বা বর্গী হাঙ্গামা নিয়ে লেখা অন্ধকারের বন্ধু।
বিদেশে কিন্তু ঐ জিনিস দেখা যায় না। একটি বই প্রকাশিত হবার পরেও তথ্য নিয়ে রিসার্চ চলে। পরিমার্জন হয়।
একসময় ওনার দিস্তে দিস্তে লেখা চিবিয়ে খেয়েছি বলা যায়। হাত খরচ জমিয়ে কিনতাম স্বপনকুমারের বইয়ের মত।
এখন আর পারি না। গলায় আটকে যায়।
ওর রাধাকৃষ্ণ উপন্যাস পড়ে বিস্মিত হতে হয়। বড়ু চন্ডীদাসের চেয়েও বিকৃত করেছেন আখ্যানটিকে। এর চেয়ে রঞ্জন ভালো।
আরেকটি উপন্যাস আছে ধূলিবসন। এক মধ্যবয়সী নারী কামকলার দীক্ষা দিচ্ছে তার একসময়ের তরুণ ধর্ষককে। তাদের ধর্ম, রুচি, ভাষা, জাতি, সংস্কৃতি ও সামাজিক অবস্থানে সামান্যতম মিল নেই।
আর নাই বা বললাম।
সুনীলের নিজের স্মৃতিচারণায় আছে, সকলের অগোচরে তিনি সরস্বতীর বুকে হাত রেখেছিলেন।
বাগদেবীর সাথে সম্পর্কের সমীকরণটা বোধহয় এখানেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
বাংলা ভাষাকে যিনি নিজের গোলাম বানিয়েছিলেন, তিনি এমন কিছুই লিখে যেতে পারেননি যাতে একটি জাতি সংঘবদ্ধ হয়, সঠিক ইতিহাসচেতনার আলোয় নিজেদের চিনতে শেখে।
কাকাবাবু সত্যিই হেরে যাচ্ছিলেন। নতুন যুগের পাঠকদের চাহিদার কাছে। শেষদিকে ঐ কিশোরপাঠ্য অভিযানগুলি জমত না।
বাংলাদেশে সুনীলের খুব চাহিদা ছিল। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ এসে হিসেবটা উল্টে দেন। ঐ ভদ্রলোক একাই এপারের লেখকদের পিষে দিয়েছিলেন।
সুনীলের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল মা কালীর বিরুদ্ধে নোংরা মন্তব্য করার। মামলা হয়েছিল ঐ নিয়ে।
ঐখানে বলব ওনার ততটা দোষ ছিল না। ঐ কথাগুলো ওনার নয়। শ্রীরামকৃষ্ণদেবের চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকারের। এর ঐতিহাসিক রেফারেন্স আছে। ঘটনাপ্রসঙ্গে ওনার উপন্যাসে এসেছিল মাত্র।
সবমিলিয়ে, সুনীল সম্পর্কে জাতীয়তাবাদীদের ফেনিল উচ্ছ্বাস না দেখানোই ভাল।
আমার নিজের সীমিত ক্ষমতায় যতটুকু পেরেছি অনেক বিদ্যালয়ের পুরস্কার বিতরণীতে সুনীলবাবুর বই বাতিল করে দিয়েছি। প্রধানশিক্ষকদের সম্মতির ভিত্তিতে।
আমার যুক্তি গ্ৰহণ করেছেন ওঁরা।
এটা গুরুত্বপূর্ণ, নাহলে কোমলমতি ছাত্ররা ভুল শিখবে।
নিবেদিতা, স্বামীজি, অরবিন্দ, বারীন ঘোষের সাথে আমাদের ভাবাবেগ জড়িয়ে।
তাই বিকৃতি সহ্য করব না।
পোস্ট ; ঋতুপর্ণ বসু।
 
শেয়ার করেছেন : - প্রণব কুমার কুণ্ডু










প্রণব কুমার কুণ্ডু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন