মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

বাংলাদেশে হিন্দুরা

বাংলাদেশে হিন্দুরা

 WhatsApp

১৬ ই ডিসেম্বরে racecourse এ “বিজয়” এর photo session র পর বাংলাদেশের জনসংখ্যার একাংশ সত্যিকার অর্থেই ইতিবাচক স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল একটা উদার গণতান্ত্রিক জাতিরাষ্ট্রের। সেই স্বপ্নকে আরও বিস্তারিত করেছিল ১৯৭২ এ সংকলিত সংবিধান। স্বপ্ন দেখতে থাকা জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ স্বাভাবিকভাবেই ছিল হিন্দু। স্বাভাবিক এই কারণে, দ্বিজাতিতত্ত্বের ঘৃণার বিষ যাঁদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে সর্বাংশে নীল করেছিল, তাঁরা ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের হতভাগ্য হিন্দু সম্প্রদায়। ‘৪৭ ও ‘৬৫ র প্রত্যক্ষ গণহত্যা, শত্রু সম্পত্তির পরোক্ষ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও নীরব গণহত্যার করাল আঁচে দগ্ধ হতে হতে নিঃশেষিত হতে থাকা জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সাম্প্রদায়িক আততায়ী ও তার প্রতি পক্ষপাতবিহীন একটা রাষ্ট্রব্যবস্থার একান্ত প্রয়োজন ছিল। একমাত্র উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাই এই নিশ্চয়তা দিতে পারে বলেই মনে করেছিল তৎকালীন হিন্দু সম্প্রদায়।

কিন্তু, আজকে ২০১৮ সালে অর্থাৎ সেই “বিজয়” এর ৪৭ বছর পরে এসে দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশ একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়া দূরে থাক, এই লক্ষ্যে স্বপ্ন দেখাটাও হিন্দুদের জন্য একটা সাংঘাতিক রকমের বেহিসেবী ভুল ছিল, যার পরিণাম হয়েছে মর্মন্তুদ এবং এখনও পর্যন্ত যা থেকে মুক্তির কোন পথ দৃষ্টিগোচর তো হচ্ছেই না, বরং মনে হচ্ছে পুরো বাংলাদেশী হিন্দু সম্প্রদায় কোন এক অজানা আচ্ছন্নে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে ভুলে গেছেন। যা আদতে নেতৃত্ব সংকটও নয় বরং বলা যেতে পারে নেতৃত্বের আদ্যন্ত শুন্যতা!

পরিস্থিতি এমন হল কেন?  দুটো বিষয়ে আলোকপাত করা যায়।

এক) পুরনো  ভুলটা আসলে কোথায় হল?

দুই) বর্তমানের রাজনৈতিক শুন্যতার বাস্তবতা কেমন?

প্রথম প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজা যাক।

একটি রাষ্ট্রের চরিত্র কি হবে তা বাস্তবিকভাবে নির্ভর করে ঐ রাষ্ট্রব্যবস্থার ক্ষমতাবলয়ের stakeholder দের composition এবং এর চরিত্রের উপরে। তাহলে ‘৭১ র প্রেক্ষিতে দেখতে পাচ্ছি, অধুনা জন্ম হওয়া রাষ্ট্রটির মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশের বেশীই বিশ্বাসে মুসলমান এবং তাঁরা মাত্র আড়াই দশক আগেই দ্বিজাতিতত্বের সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ভিত্তিতে যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্বপ্নটিকে আঁকড়ে ধরেছিল, “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” slogan দিয়েছিল, নোয়াখালী, বরিশালের মত বীভৎস সন্ত্রাসে যে রাষ্ট্রের (পাকিস্তান) প্রতিনিধিগণ মদত দিয়েছিল, তাঁরা হঠাৎ চব্বিশ বছরের মধ্যে একটা নতুন রাষ্ট্র গঠনের পাশাপাশি পুরনো বিচারধারা থেকে সরে আসবে, এমন চিন্তাধারণা কতটা বাস্তব সঙ্গত?  এই প্রসঙ্গে আরও কয়েকটা প্রশ্ন তোলা যেতে পারে।

ক) “পাকিস্তান” রাষ্ট্রব্যবস্থা হতে বিচ্ছিন্ন হলেও বাংলাদেশ ও বাংলাদেশী নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানী মনোভাব (দ্বিজাতিতত্ত্ব) হতে কতটা দূরত্ব বজায় রাখতে সক্ষম? বাংলাদেশ কি শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের by-product নয়? ভারত ভাগ তো হয়েছিল পাকিস্তানের নামে। পাকিস্তান ও তার নৈতিক ভিত্তি “দ্বিজাতিতত্ত্ব” কি বাংলাদেশেরও নৈতিক ভিত্তি নয়?

খ) দ্বিজাতিতত্ত্ব দাঁড়িয়ে আছে  ইসলামী উম্মাহ্‌র বিচারাধারার উপর, দারুল ইসলাম বনাম দারুল হারাবের উপর, মুসলিম বনাম কুফরের উপর। এখন, দ্বিজাতিতত্ত্ব কে অস্বীকার করতে গিয়ে বাংলাদেশ শেষপর্যন্ত ইসলাম বা ইসলামী উম্মাহ্‌ কে কতটুকু অস্বীকার করতে সক্ষম, যেখানে ‘৭১ সালের পরেই ৮০ শতাংশের বেশী জনগণ ইসলামে বিশ্বাসী (মুক্তিযুদ্ধে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হওয়া প্রায় ১ কোটি জনগনের সিংহভাগই হিন্দু, যাঁদের বেশীর ভাগ ফেরেনি)?

গ) বাংলাদেশ কি ‘৪৭ ও পরবর্তীকালে পাকিস্তানী শাসনের সময়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হওয়া বিপুল পরিমাণ হিন্দুকে ফিরিয়ে আনবে? ফিরিয়ে আনলে তাঁরা চাকরি, ব্যবসা হতে শুরু করে ক্ষমতার অলিন্দ পর্যন্ত সব জায়গায় সংখ্যাগুরু মুসলমানদের সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হবে, কারণ এঁদের মধ্যে বেশ ভাল একটা অংশ শিক্ষিত বা উচ্চশিক্ষিত। সংখ্যাগুরু মুসলমানরা কি সেটা মেনে নেবে?

ঘ) শেষ কথা হল, বাংলাদেশ কেন দ্বিজাতিতত্ত্বের বিরোধিতা করবে? পাকিস্তানীদের চেয়ে ও পাকিস্তানকে বেশী চেয়েছিল বাংলা-ভাষী মুসলমানরা, এটা কি আমরা ভুলে গেছি? মুসলিম লীগ সিন্ধু ও পাঞ্জাবে জোট করে কোনমতে নির্বাচনে জিতেছিল, খাইবার পাখতুনখাওয়াতে হেরেছিল। কিন্তু, প্রবলভাবে জিতেছিল বাংলায়। বাংলার মুসলমানদের ভোটেই পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল, অর্থাৎ পাকিস্তান আন্দোলনের মূল motivator ও চালিকাশক্তি ছিল বাংলার মুসলমানেরা। যেখানে বাংলাদেশী মুসলমান নেতৃবৃন্দ নিজেদের অধুনা রাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন হতে যাচ্ছে, মাত্র আড়াই দশক আগে পাকিস্তানের জন্য আন্দোলন করা নেতৃত্ব কি হিন্দুদের ক্ষমতায়ন এর ব্যাপারে খুব উৎসাহী হবে?

একটি জনগোষ্ঠী যারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও তাঁদের দোসর মুসলিম লীগের ক্ষমতার রাজনীতির সবচেয়ে বড় শিকারে পরিণত হয়েছিল, পরিবর্তিত এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকা কিংবা সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে এই প্রশ্নগুলোর বাস্তবিক পর্যালোচনার কোন বিকল্প নেয়। কিন্তু তেমন কোন প্রচেষ্টা আমরা ইতিহাসে দেখিনা দুর্ভাগ্যবশত! বরং আজ পর্যন্ত বর্ষীয়ান হিন্দু যারা সেই সময়টা প্রত্যক্ষ করেছিলেন, শেখ মুজিবের প্রতি তাঁদের মুগ্ধতা দেখে আওয়ামী লীগ ও ৭১ এ সদ্য জন্ম নেয়া বাংলাদেশের প্রতি অন্ধ আশা ভরসাটাই প্রতিভাত হয়। হ্যাঁ, ব্যক্তিগত স্তরে ব্যতিক্রম অনেকেই ছিলেন, কিন্তু তাঁদের কর্মোদ্যোগ পুরো সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছানর মত যথেষ্ট ছিল না। বিশেষ করে ‘৭২ সনে ফিরে এসে শেখ মুজিবর রহমান যখন শত্রু সম্পত্তি আইন বেনামে বহাল রাখলেন, রমনার কালী মন্দির পুনর্গঠনে বাধা দিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়দের প্রতি “তোরা সব বাঙ্গালী হইয়া যা” র মত ন্যাক্কারজনক সাম্প্রদায়িক বর্ণবাদী আচরণ করলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রবল বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক চাইছিলেন নিজ উদ্যোগে, এমনকি পাকিস্তানের সাথেও (সব ভুলে ক্ষমা করার মহানতা নিয়ে) সম্পর্ক উন্নয়ন চাইছিলেন, রাজাকার ঘাতকদের সাধারণ ক্ষমা করে দিলেন,  তখনই বাংলাদেশের হিন্দুদের রাজনৈতিক কালগণনায় বসে যাওয়া দরকার ছিল। দরকার ছিল সেই সময় থেকেই একেবারে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়কে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক network বিস্তার করা। অথচ হিন্দুদের দিক থেকে এরকম কোন উদ্যোগই চোখে পড়ে না, বরং আজ পর্যন্ত এক আত্মঘাতী মুজিব ও আওয়ামী বন্দনায় সরব হতে দেখি তথাকথিত হিন্দু নেতৃবৃন্দকে!

এই উদ্ভট আচরণই দেখিয়ে দেয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অসহায় নেতৃত্বশূন্যতাকে।  আর এই শূন্যতার প্রকটতা কেমন?

এক)  ‘৭১ এর ঠিক পরবর্তী অবস্থার সাথে যদি এই মুহূর্তে বাংলাদেশী হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি উপাত্তগত তুলনা টানা হয়, তাহলে আশার থেকে হতাশাই আসবে অনেক বেশী। এই সময়ের মধ্যে হিন্দু জনসংখ্যা ২৩ শতাংশ হতে নেমে ৮ শতাংশের নীচে এসে পড়েছে, যা সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশী হিন্দুদের সময়ের বিরুদ্ধ স্রোতে এনে ফেলেছে। সোজা কথায় বেশী জনসংখ্যা মানেই বেশী ভোট (গণতন্ত্রে) এবং বেশী প্রভাব (ক্ষমতার অংশীদারিত্ব দাবীতে)। সংখ্যালঘুদের মিলিত সংখ্যা যেখানে মোটের উপর ৯ শতাংশের কম আর বিপরীতে সংখ্যাগুরুর এক বিরাট অংশ নব্য ইসলামী জোশে আক্রান্ত, সকাল বিকাল জুম্মাহ, ওয়াজ মাহফিলে যেখানে প্রচন্ড বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় কিংবা ছত্রছায়ায়, নাগরিক সমাজের প্রভাবশালী অংশ যেভাবে প্যান ইসলামিজমে আক্রান্ত সেখানে হিন্দুদের তৃণমুল পর্যায়ের হিন্দুত্ববাদীদের রাজনৈতিক সচেতনতা অনেকটা ধর্মীয় উৎসবের ভিড় বাড়ানোর সমার্থক হয়ে আছে!

দুই)  প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের মাধ্যমে (জোরপূর্বক জবরদখল, অগ্নি সংযোগ, জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণ, নারী নিগ্রহ, ধর্ষণ, খুন)  একের পর এক হিন্দু গ্রাম্য জনপদ হাতছাড়া হয়ে অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড হারিয়ে শহুরে ভাসমান প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে পরিণত হওয়া। বাংলাদেশে সম্ভবত এমন কোন পরিবার পাওয়া যাবে না যাঁদের চোখে পড়ার মত জমিজমা ছিল আর তাঁরা উপরিউক্ত সন্ত্রাসের শিকারহননি। ‘৭১ পরবর্তী সময় হতে আজ পর্যন্ত, এই প্রক্রিয়ায় হিন্দুদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভাঙ্গার পাশাপাশি তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পথকেই রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে দীর্ঘমেয়াদে।

তিন) দুই নং পয়েন্টের কারণে শহুরে ভাসমান হয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এমনই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যে, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রচেষ্টা দূরে থাক, কোনমতে চাকরি/ব্যবসা বাঁচিয়ে জীবন কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টাতেই এঁদের অনেকে নিজেদের সম্প্রদায় কে পর্যন্ত publicly অস্বীকার করতে শুরু করে। এতটাই হীনমন্য হয়ে পড়ে যে, নিজের পরিচয় লুকিয়ে বৃহত্তর ভিড়ে মিশে যাওয়ার এক ঐকান্তিক চেষ্টা দেখা যায় এঁদের কর্মকাণ্ডে।

চার) প্রথম তিনটি point যদি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে, তাহলে প্রবলতম সমস্যা ও সমস্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে হিন্দুধর্মীয় গুরুসম্প্রদায়গুলোকে। গত ১০০ বছরে হিন্দুদের রাজনৈতিক পশ্চাতপদতায় এরা সবচেয়ে কম আলোচিত হলেও, এরাই সম্ভবত হিন্দুদের রাজনৈতিক ও মানসিক দৈন্যতার মুল আঁতুড়ঘর। কিভাবে? সে আলোচনা অন্যসময় বিশদভাবে করার ইচ্ছা রেখে শুধু এঁদের কার্যক্রমের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরছি।

  • বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর প্রতিদিন ডজনের উপরে হামলা হলেও (বিশেষ করে ২০১৩ সাল হতে) এইসকল গুরুসম্প্রদায় ও তাঁদের সংগঠনকে কোনোদিন ও এর প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না। শুধু তাই নয়, প্রতিবাদ কার্যক্রমগুলোতে এরা রীতিমত নিরুৎসাহিত করে, বাধা দেয়। রামকৃষ্ণ মিশন এক্ষেত্রে সবচেয়ে কুখ্যাত। বাংলাদেশে যখনই হিন্দুদের উপর বড় ধরনের হামলার বিরুদ্ধে হিন্দুরা গর্জে উঠতে চেয়েছে, প্রতিবারই সেই ঘটনাকে অস্বীকার করে বাংলাদেশ সরকার ও ব্যর্থ প্রশাসনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন! ২০০১ সালের ভয়াল পরিস্থিতি বোঝাতে যখন প্রফেসর হুমায়ুন আজাদ “দেশজুড়ে হিন্দু নারীদের উপর ধর্ষণের ঝড় বয়ে গেছে” বলে প্রতিবাদ করেছিলেন, সেই সময় ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের তৎকালীন মহারাজ ও অধ্যক্ষ স্বামী অক্ষরানন্দ বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পাশে বসে ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশে হিন্দুরা ভাল আছে বলে!
  • এঁদের আশ্রম ও মঠ মন্দিরে যেকোনো রাজনৈতিক আলোচনা নিষিদ্ধ। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুরবস্থার বাস্তব বর্ণনা নৈব নৈব চ! এঁদের দাবী ধর্মস্থান কেবল ধর্মালোচনার জন্যই! (অবাক হবেন হয়ত, কিন্তু এঁদের কার্যকলাপ মতে হিন্দুদের অস্তিত্ব এবং দুর্দশা ধর্মালোচনার মধ্যে পড়ে না!) অথচ, অনেক মঠ মন্দিরই এলাকা ভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ দেয় হিন্দুদের ধর্মানুষ্ঠানে! এবং অতি অবশ্যই তা মন্দির কমিটির প্রত্যক্ষ সমর্থন ও আয়োজনে! মনে হবে, হিন্দুদের টাকায়/চাঁদায় ও সমর্থনে চলা ধর্মস্থানগুলোর প্রধান কার্যক্রমই হল হিন্দু বাদে বাকীদের স্বার্থরক্ষা করা, হোক সে অহিন্দু রাজনীতিবিদ/লোক্যাল ক্যাডার কিংবা প্রভাবশালী/বিত্তশালী কেউ, যাঁদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে কেবল নিজেদের স্বার্থরক্ষা করে যায় মন্দির কর্তৃপক্ষ।
  • কোন সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নের শুরু তখনই হয়, যখন সেই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রদায়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বাস্তব সচেতনতা তৈরি হয়। কিন্তু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সংগঠনগুলোই যখন তাঁদের কাজেকর্মে এই সচেতনতা সৃষ্টির দিকটিকে অনুৎসাহিত করতে শুরু করে, রাজনীতি হতে ধর্মকে দূরে রাখার নামে, অসাম্প্রদায়িকতার নামে হিন্দুদের বাস্তব সমস্যাগুলোকে অগ্রাহ্য করে এড়িয়ে যেতে চায়, তখন একই নেতিবাচক অদৃষ্টবাদী মানসিকতা সম্প্রদায়ের এক বিরাট সাধারণ জনসমাজকে আচ্ছন্ন করে। এটি সম্প্রদায়ের স্বার্থবিরুদ্ধ বৈকি।
  • সর্বোপরি গুরুবাদ হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্বনাশ করছে দুইভাবে। প্রথমত, কোন এক নির্দিষ্ট ধর্মমতকে প্রাধান্য না দিয়ে এঁরা প্রাধান্য দেন নিজ নিজ গুরু পরম্পরাকে। এতে শত শত পরম্পরা সৃষ্টি হয়, শত শত বিক্ষিপ্ত ধর্মসংস্কার সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে সম্প্রদায় কোন নির্দিষ্ট কেন্দ্রমুখী না হয়ে, সাম্প্রদায়িক চেতনার বিকেন্দ্রীকরণ হয়। সম্প্রদায় বিক্ষিপ্ত হয়, স্বার্থ নিশ্চিতকরণ অসম্ভব হয়ে ওঠে, ভিন্ন ভিন্ন সুবিধাভোগী দল ও উপদলের সৃষ্টি হয়। খোদ রামকৃষ্ণ মিশনই বেদান্ত ছেড়ে রামকৃষ্ণ লোকের স্বপ্ন দেখায়! দ্বিতীয়ত, প্রথমোক্ত কার্যকলাপের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সম্প্রদায়ের চিন্তাশীল সৎ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে হতাশা ও বিরূপতা দেখা দেয়, তাঁদের একাংশ অনেক সময়ই নিজ ধর্মের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে বিজাতীয় প্রতিক্রিয়াশীল মতবাদে আকৃষ্ট হয়ে নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি তীব্র নেতিবাচকতা লালন করতে শুরু করে। অর্থাৎ, উভয় যাত্রাতেই সম্প্রদায়ের শক্তি ক্ষয় হয়। এই পরিস্থিতিতে সমাজে যেরূপ মনস্তাত্ত্বিক ভাঙ্গন ধরে তাতে নতুন শক্তিশালী ইতিবাচক রাজনৈতিক ভাবধারার সৃষ্টি হওয়ার রাস্তা ক্রমে কঠিন হয়ে যায়। এক বিরাট অংশ হয়ে ওঠে অদৃষ্টবাদী, মধ্যম অংশ সুবিধাভোগী এবং এর সৎ, সৃষ্টিশীল অংশটি হয়ে পড়ে আত্মঘাতী রকমের নির্লিপ্ত! পরিণামে ক্রমে বিক্ষিপ্ত ও সংক্ষিপ্ত হতে থাকে সম্প্রদায়।

 

বঙ্গদেশ মেইনষ্ট্রীম সংবাদমাধ্যমে অনুল্লিখিত খবরগুলিকে তুলে ধরতে প্রয়াসী। এ লক্ষ্যে আমরা আপনাদের সাহায্যপ্রার্থী। কোন সাহায্যই কম বা বেশী নয়।

Donate Now
Secured by Razorpay

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন