শনিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৯

কৃষ্ণকথা


 কৃষ্ণকথা


প্রণব কুমার কুণ্ডু
প্রণব কুমার কুণ্ডু



 ফেসবুক থেকে      শেয়ার করেছেন        প্রণব কুমার কুণ্ডু



~শ্রীকৃষ্ণ চার প্রকার ~

দেশের অধিকাংশ কালো বা কৃষ্ণবর্নের মানুষকে বোকা বানানোর জন্য কালো কৃষ্ণকে বিশেষ উদ্দেশ্যে দেবতা বানিয়েছে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা ।
(1)..বেদের কৃষ্ণ= বেদে যে কৃষ্ণের উল্লেখ আছে তিনি অনার্য অসুর সম্প্রায়ের মানুষ।যিনি একজন অনার্য বীর,অনেক যুদ্ধের নেতা।আর্য বীর ইন্দ্রের মাথা ব্যাথার কারন ছিলেন অনার্য কৃষ্ণ।অর্থাৎ অনার্য কৃষ্ণের বীরত্ব উল্লেখ যোগ্য।শেষে ইন্দ্র কৃষ্ণের গর্ভবতী স্ত্রীদের সাথে প্রচুর সৈন্যকে হত্যা করেন।সব শেষে ইন্দ্র কৃষ্ণের কৃষ্ণত্ব উন্মোচন করে তাকে অগ্নিতে দগ্ধকরে হত্যা করে।বেদের কৃষ্ণ এবং তাঁর নিহত হওয়ার প্রমান দেখুন.............
ঋগ্বেদের অষ্টম মন্ডলের ৮৫,৮৬,৮৭ সুক্ত এবং দশম মন্ডলের ৪২,৪৩,৪৪ নং সুক্তের লেখক ঋষির নাম কৃষ্ণ।
ঋগ্বেদের প্রথম মন্ডলের ১১৬ সুক্তের ২৩ নং ঋকে (১/১১৬/২৩) এবং ১১৭ নং সুক্তের ৭ নং ঋকে বা (১/১১৭/৭) তে কৃষ্ণ শব্দ আছে।
ঋগ্বেদের প্রথম মন্ডলের ১৩০ সুক্তের ৮নং ঋকে বা (১/১৩০/৮) তে-ইন্দ্র “কৃষ্ণের কৃষ্ণত্ব উন্মোচন করে তাঁকে অগ্নিতে ভষ্মীভূত করে হত্যা করেন”।
ঋগ্বেদের প্রথম মন্ডলের ১০১ সুক্তের ১ম ঋকে বা (১/১০১/১) তে-ইন্দ্র “ঋজশ্বিন রাজার সঙ্গে কৃষ্ণের গর্ভবতী স্ত্রীগনকে হত্যা করেন”।
ঋগ্বেরদের অষ্টম মন্ডলের ৯৬ সুক্তের ১৩ এবং ১৪ নং ঋকে বা (৮/৯৬/১৩-১৪) তে আছে-“দশ সহস্র সৈনের সাথে দ্রুত গমনশীল কৃষ্ণ অংশুমতী নদীর তীরে অবস্হান করছেন।শব্দাদি শ্রবন করে কৃষ্ণের গোপন অবস্হান জানতে পারছি।ইন্দ্র,কৃষ্ণকে অংশুমতী নদীর বিস্তীর্ন এবং গোপন স্হানে বিচরন করতে দেখেছেন।হে অভিলাসপ্রদ মরুতগন তোমরা যুদ্ধ কর ও যুদ্ধে তাকে বা কৃষ্ণকে পরাস্ত কর”।
ঋগ্বেদের অষ্টম মন্ডলের ১৪ নং সুক্তের ১৫ নং ঋকে আছে-“হে ইন্দ্র তুমি সোম পান করে উৎকৃষ্টতর হয়ে সোমাভিষেকহীন জনসংঘদের পরস্পর বিরোধি(Devide and rule) করে বিনাশ কর”।
আর্থাৎ বেদের কৃষ্ণ ছিলেন অনার্য বীর অসুর যিনি স্বজাতির রক্ষ্যার জন্য জীবন দেন।বেদের কৃষ্ণের এই নৃশংস মৃত্যূ কাহিনী কিন্তু বেদ পরবর্তী কোনো ধর্মগ্রন্থে বর্নিত হয় নি।


(2)..মহাভারতের কৃষ্ণ= মহাভারতের কৃষ্ণ ছলচাতুরীতে দক্ষ চতুর যুদ্ধবাজ কৃষ্ণ।পান্ডবদের সখা।মহাভারতে কৃষ্ণকে দক্ষবীর,বুদ্ধিমান এবং ক্ষমতাবান করে দেখালেও কৃষ্ণকে এখানে ভগবান বানানো হয় নি।কারন মহাভারতে কৃষ্ণকে অনেক ক্ষেত্রে সাধারন মানুষের মত অসহায় দেখিয়েছে।যেমন উদ্যোগপর্বের ৭৮ অধ্যায় এ কৃষ্ণের উক্তি..........
“অহং হি তত্ করিষ্যমি,পরং পুরুষ কারতঃ।দৈবং তু ন ময়া শকং কর্ম কুর্ত্তং কথঞ্চন”।
অর্থাৎ আমি পুরুষকার(শারীরিক শক্তি)প্রকাশ করতে পারি,কিন্তু দৈবের অনুষ্ঠানে আমার কিছুমাত্র ক্ষমতা নাই”।
মহাভারতের কৃষ্ণ যদুবংশীয় এবং মহাভারতের শেষে মুষলপর্বে কৃষ্ণের মৃত্যূ ও যদুবংশ ধ্বংস।অর্থাৎ মহাভারতের কৃষ্ণ দেবতা নয় মৃত্যূশীল সাধারন মানুষ।


(3)..গীতার কৃষ্ণ= গীতার কৃষ্ণ আবার সর্বশক্তিমান।গীতায় কৃষ্ণকে একেশ্বরবাদী সর্বশক্তিমান করে বানানো হয়েছে।সব দেবদেবীকে নস্যাৎ করে একমাত্র কৃষ্ণকে প্রধান দেবতা বানানো হয়েছে।অর্থাৎ বেদ এবং মহাভারতের কৃষ্ণের সঙ্গে গীতার কৃষ্ণের কোন মিল নেই।বুদ্ধদেবের মানবতাবাদী অহিংস ধর্মের হাত থেকে জঘণ্য জাতপাত-বর্নপ্রথা সহ ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মকে বাঁচাতেই কৃষ্ণকে দেবতা বানানো হয়েছে।জঘণ্য জাতিভেদ বা বর্নপ্রথা রক্ষ্যা এই কৃষ্ণের প্রধান কাজ।


(4)..পুরানের কৃষ্ণ= পুরানের কৃষ্ণ আবার ব্যাভিচারী।শ্রীকৃষ্ণের জীবনে সস্তা নারীভোগের যে অভাব ছিলো না পুরাগুলি তার প্রমান দেয়।যেমন ব্রহ্মবৈর্রতপুরান ও ভাগবতপুরান।পুরানে আবার কৃষ্ণের লীলা সঙ্গিনী শ্রীরাধারানীর আমদানী ঘটানো হয়েছে।তবে অন্য কোথাও রাধার অস্তিত্ব নেই কেবল মুসলীম যুগের শেষে রচিত ব্রহ্মবৈর্বতপুরানে রাধার আবির্ভাব।ভাগবত পুরানে-(১০/৬১/৭)..........এখানে কৃষ্ণের ষোল হাজার পত্নী এবং প্রত্যেকের ১০টি করে পুত্র।অর্থাৎ এক লক্ষ ষাট হাজার পুত্র।হাজার হাজার যুদ্ধবিগ্রোহ অলৌকিক কল্প কাহিনীর দ্বারা পুরানগুলি পূর্ন।
১৮পুরানের মধ্যে কেবল ব্রহ্মপুরান,পদ্মপুরা্‌ন,বিষ্ণুপুরা্‌ন,বায়ুপুরা্‌ন,শ্রীমদ্ভাগবতপুরা্‌ন ব্রহ্মবৈর্বরতপুরান,স্কন্দপুরা্‌ন,বামনপুরান ও কর্ম্মপুরানে কৃষ্ণবৃতান্ত আছে।বাকী পুরানগুলিতে গুলিতে কৃষ্ণের কথা নেই।
অর্থাৎ বেদ,মহাভারত,গীতা এবং পুরানের কৃষ্ণের জীবন,জীবিকা ও চরিত্রের কোনোও মিল নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন