রাম কোঠারি ও শরৎ কোঠারি দুই ভাই , দুই জনই স্বয়ংসেবক
এই দিনে
3 বছর আগে
শহীদ স্বয়ং সেবক দের জন্য জোরসে বলো #জয়_শ্রী_রাম
পুরো লেখাটি পড়বেন বুঝতে পারবেন স্বয়ংসেবক কারা।
লেখক শ্রী নারায়ণ নায়ক (অখিল ভারতীয় সাহিত্য পরিষদ)
রাম কোঠারি ও শরৎ কোঠারি ( দুই ভাই ) (দুই জনই স্বয়ংসেবক)
প্রথমবার, করসেবকরা অযোধ্যায় জন্মভূমিকে মুক্ত করতে অযোধ্যায় যাচ্ছিল। সংঘের কার্যকর্তা করসেবকদের যাওয়ার জন্য সহায়তা করছিলেন। আমি সেখানে যেতে পারিনি কারণ, সংঘের অনুমতি পাই নি।
সম্ভবত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে করসেবার জন্য গোটা দেশের করসেবকরা অযোধ্যা যাচ্ছিল।
সেই ক্রমে কলকাতার বড়বাজারে এক শাখার দুই ভাই সেইদিন করসেবকরুপে অযোধ্যায় যাবার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। সেইদিন দক্ষিণবঙ্গের প্রান্ত প্রচারক শ্রী সুনীল পদ গোস্বামী রেলস্টেশনে বিদায় জানাতে আসেন। বড়বাজারের ওই দুই ভাই কে দেখামাত্র তিনি তাদের বাবার কাছে জানতে চান, 'আপনি কি ওদের দুজনকে যাবার অনুমতি দিয়েছেন?' তিনি বললেন, 'আমি বড় কে অনুমতি দিয়েছি কিন্তু ছোটও যেতে চায় এবং আমার দাদার দুই পুত্র এসেছে, যেতে দিন।'......
সেই সময় দু একটা টিভি ছিল, প্রায় না থাকারই মতো, খবর জানার একমাত্র মাধ্যম ছিল রেডিও। অন্যথায় দুরভাষ এর মাধ্যমেই ঘটনার খবর নেয়া সম্ভব ছিল। যেদিন করসেবকদের উপর গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করা হয়, সেদিন ওই দুই ভাই রাম কোঠারি ও শরৎ কোঠারি সবার আগে ছিল। কারণ, এই দুজন পবিত্র গেরুয়া ধ্বজ তুলেছিল।
এই খবর কলকাতার কার্যালয়ে পৌঁছায়। প্রথমে আধো আধো খবর শোনা যেতে থাকে। পরে তাঁদের মৃত্যুর খবর আসে।
এবার তাঁদের পরিবারে খবর পাঠাতে হবে। কে যাবে? কে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে পিতামাতার কানে দুই পুত্রের মৃত্যুসংবাদ শোনাবে? কারণ, এই হৃদয়বিদারক কথা বলাটা এত সহজ ছিল না।
সুনীল দাই সেই দায়িত্ব কাঁধে নিলেন। বড়বাজারে বিনয় রাস্তগী জির বাড়িতে সঙ্ঘ কার্যালয় ছিল। সুনীল দা সরাসরি কোঠারি পরিবারে না গিয়ে তার সংলগ্ন একটি কার্যালয়ে হীরালাল বাবুকে ডেকে পাঠান। সাথে শুধুমাত্র কয়েকজন স্বয়ংসেবক ছিলেন। সুনীল দা ডাকছেন শুনেই হীরালাল বাবু সেখানে হাজির হন। এসে তিনি ছেলেদের খবর জানতে চান। অযোধ্যার কোনো নতুন খবর আছে? সব ঠিকঠাক আছে?
হীরালাল বাবু সবকিছু জানার জন্য ভীষণ উৎসুক ছিলেন। কিন্তু উনি লক্ষ্য করলেন ঘরের মধ্যে সবাই খুব গম্ভীর হয়ে বসে আছে। সুনীল দাও বিমূঢ় হয়ে গেলেন।
তারপর নিজেই বললেন, "মুলায়ম সিং যাদব সরকার করসেবকদের ওপর গুলি চালিয়েছে। আমি শুনেছি রাম আর শরৎ এর গুলি লেগেছে। দুজনেই আহত হয়েছে। একথা শুনেই হীরালালজী উঠে সুনীল দের কাছে এসে, তাঁর হাত জাপটে ধরে কেঁদে ফেললেন। কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন-"সুনীলদা আমার দুই ছেলে চলে গেল....।"
এই দুঃখজনক প্রসঙ্গ আজও সুনীলদা কে নাড়িয়ে দেয়।
তখন কাঁদতে কাঁদতে হীরালালজী বললেন-"সুনীলদা আমার দুই পুত্রের বলিদান হয়ে গেল। রাম মন্দির নির্মাণ হবে তো?" অন্যথায় এই বলিদান ব্যর্থ হয়ে যাবে।
এই প্রসঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ নয়।
মাকে কি করে বলা হবে.....
তাঁদের একমাত্র বোনের বিয়ের তিথি নির্ধারিত হয়েছিল ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে।(এখন মা বাবা দুজনেই গত হয়েছেন। তাদের একমাত্র বোন পূর্ণিমা জীবিত আছে। রাম শরৎ এর ছবি হাতে মহিলাই পূর্ণিমা।)
একটি বিষয় চর্চা করে আমি আমার কথা শেষ করব। ঠিক দু'বছর পরে অযোধ্যা দ্বিতীয়বার কারসেবক হয়। বিবাদাস্পদ ধাঁচা কারসেবকরা ভেঙে দেয়। সংঘের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। নিষেধাজ্ঞা ওঠার পরে উত্তর প্রদেশে প্রান্ত প্রচারকদের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকের পর প্রান্ত প্রচারকেরা রাম জন্মভূমি দেখতে যান। গাইড তাদের কাছে বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছিলেন। উনি যখন বললেন, রাম কোঠারি শরৎ কোঠারিকে এখানে গুলি করে মারা হয়। তখন হরিহর দা সেখানকার মাটি স্পর্শ করে বসে পড়লেন আর বিহ্বল হয়ে বাচ্চার মত কাঁদতে লাগলেন। তাঁকে দেখে অন্য সমস্ত প্রান্ত প্রচারকদের চোখও অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠল। এটাই স্বাভাবিক।
কেননা রাম শরৎ কেবলমাত্র হীরালালজীর নয়, সংঘের জন্য তারা নিজেদের পুত্রের থেকেও মূল্যবান।
@দক্ষিণবঙ্গ আহ্বান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন