১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পূর্ববঙ্গে হি°ন্দু গণহ°ত্যা শুরু হওয়ার পর, ক্ষমতাধর বাংলাভাষী মুস°লমানরা - হি°ন্দু বাড়িতে লু°টতরাজ করতে আরম্ভ করে l
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পূর্ববঙ্গে হি°ন্দু গণহ°ত্যা শুরু হওয়ার পর, ক্ষমতাধর বাংলাভাষী মুস°লমানরা - হি°ন্দু বাড়িতে লু°টতরাজ করতে আরম্ভ করে। অনেক জায়গায় এমন ঘটনাও ঘটেছে ― হি°ন্দু ঘরের মালামাল উঠানে নামিয়ে রেখে মুস°লমানরা বলেছে, "যদি মালের দাম দিয়ে দাও- তাহলে আর এগুলো নেবো না।" সহজ-সরল অসহায় হি°ন্দুরা তখন, লুকিয়ে রাখা টাকা-পয়সা বের করে লু°ন্ঠনকারী মুস°লমানদের হাতে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু হি°ন্দুদের মালও গেছে, টাকাও গেছে। লু°ন্ঠনকারী মুস°লমানদের ছ°লনা তারা আঁচ করতে পারেনি।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা আগেই অনুমান করতে পেরেছিল যে, ইন্দিরা গান্ধী পা°কিস্তান ভাঙার পরিকল্পনা করছেন। এজন্য আমেরিকার ইহুদি ধর্মালম্বী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার, পূর্ববঙ্গের হি°ন্দুদের নিরাপত্তার বিষয়টি- ইন্দিরা গান্ধীকে মাথায় রাখতে বলেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী সে কথায় কর্ণপাত করেননি। [তথ্যসূত্র : সিআইএ গোপন দলিল। উল্লেখ্য, মার্কিন সরকার ২৫ বছর পর পর গোপন নথি প্রকাশ করে থাকে]
পা°কিস্তানি সৈন্যরা, জাতীয়তাবাদী মুস°লমানদের সহায়তায়- পূর্ববঙ্গে ২৭ লক্ষ হি°ন্দু হ°ত্যা করেছিল। এত বড় হি°ন্দু হ°ত্যাকাণ্ড অতীতে আর কখনো ঘটেনি। কিন্তু ভারত সরকার এই হ°ত্যাকাণ্ডকে স্বীকৃতি দেয়নি। ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম, 'হি°ন্দু গণহ°ত্যা'-কে 'বাঙালি গণহ°ত্যা' বলে প্রচার করেছে। এবং সেটাই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অনুঘটক ডাঃ কালিদাস বৈদ্য লিখেছেন, "১৯৭১ সালে পূর্ববঙ্গে কালেভদ্রে যখন স্বাধীনতাপন্থী মুস°লমান খু°ন হয়েছে, আকাশবাণী তখন সেটা মুস°লমান হ°ত্যাকাণ্ড হিসেবেই তুলে ধরেছে।" দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের কোন হি°ন্দু সংগঠন,'হি°ন্দু হলোকাষ্ট'- এর স্বীকৃতির জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সামান্যতম তদবির করেনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, গণহ°ত্যা শেষে টিকে থাকা হি°ন্দুরা যখন তাদের লুন্ঠিত মালামাল প্রতিবেশী মুস°লমানদের কাছে ফেরত চায়, লুণ্ঠনকারীরা হি°ন্দুদের মালামাল ফেরত দিতে অস্বীকার করেছিল। প্রশাসন নীরব থাকলেও, কোন কোন এলাকায় মুক্তিবাহিনীর কিছু সদস্য- হি°ন্দুদের লুন্ঠিত মালামাল ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেছিলেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে, ৯৭% ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল সংখ্যালঘু হি°ন্দুদের। কিন্তু সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ― আইয়ুব খানের 'শত্রু সম্পত্তি আইন'টির নাম পরিবর্তন করে, 'অর্পিত সম্পত্তি আইন' নামে বহাল রেখেছিল। এই আইনটি ছিল বাংলাদেশ থেকে হি°ন্দু উচ্ছেদের প্রধান হাতিয়ার। অথচ বাংলাদেশের হি°ন্দুরা আওয়ামী লীগকে অন্ধের মতো সমর্থন করত।
অর্পিত সম্পত্তি আইন নিয়ে- আমি কিশোর বয়স থেকেই আওয়ামী লীগের সমালোচনা করতাম। এজন্য কট্টর আওয়ামী লীগ সমর্থক হি°ন্দুরা, আমাকে তেড়ে মা°রতে আসতো। আমার সঙ্গে শক্তিতে পারবে না বুঝে, শেষ পর্যন্ত তারা নিজেদের সংযত রাখতো এবং বলতো, "আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে তোরে পাইয়া লই, হেইয়ার পর বুঝামু হানে মজা ..."
ইস°লাম ধর্মাবলম্বী ছাত্রলীগ নেতারা আমাকে ঠাণ্ডা মাথায় বুঝাতো, "সমস্ত হি°ন্দুরা আওয়ামী লীগ সমর্থন করে - সেখানে তুমি একা যদি বিরোধিতা করো, সেটা কী কেউ বিশ্বাস করবে! বরং তুমি আমাদের দলে আসো, দেখি কোন পদ দেওয়া যায় কিনা ..."
সনাতন ধর্মাবলম্বী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং হি°ন্দু সমাজপতিরা আমাকে ধমক দিয়ে বলতো, "তুই উল্টাপাল্টা কথা বলিস কেন! আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের স্বার্থ জড়িত। আমাদের ভারতের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে।"
আমি বলতাম, "আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি! আমরা ভারতের ক্ষতি-উপকার কিছুই করতে পারবো না। ভারত আমাদের উপকার করা দূরে থাকুক, বাংলাদেশে হি°ন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটি পর্যন্ত করে না ... সুতরাং আপনাদের উচিত- ভারতের স্বার্থের চেয়ে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হি°ন্দুদের স্বার্থকে অধিক প্রাধান্য দেওয়া।" তারা আমার কথা কানে তুলত না, উত্তেজিত হয়ে উঠতো।
আমার আশপাশের এলিট হি°ন্দুদের বোঝানোর চেষ্টা করতাম, "ভারতের মুস°লমানরা যেভাবে টিকে আছে, সংখ্যাবৃদ্ধি করছে; বাংলাদেশের হি°ন্দুদেরও উচিত- সেই কৌশল নেওয়া।" আমি তাদের প্রভাবিত করতে পারিনি। সেই সময়কার এলিট হি°ন্দুরা বিশ্বাস করত : ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ, ধনী দেশ, উন্নত দেশ। এবং তারা বলে বেড়াতো, "ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গুলী-নির্দেশে বিশ্ব চলছে।" সেই এলিট হি°ন্দুদের অধিকাংশই এখন আর বাংলাদেশে নেই। তারা আপন ভাইয়ের কাছে সম্পত্তি বিক্রি করেনি; মুস°লমানের কাছে সম্পত্তি বিক্রি করে, রাতের অন্ধকারে ভারতে চলে গেছে।
পৈতৃক ভিটায় মুস°লমান উঠিয়ে রেখে, ভারতে চলে যাওয়া হি°ন্দু রাজাকা°রদের- আমি অন্তরের অন্তস্থল থেকে ঘৃ°ণা করি। এই গৃহশ°ত্রু বিভীষণরা ভারতে গিয়ে কংগ্রেস খেয়েছে, সিপিএম খেয়েছে, তৃণমূল খেয়ে এখন আবার বিজেপি ধরেছে। এই পয়জন যেখানে যাবে, সেখানকার পরিবেশই দূষিত হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন