শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০২০

নোয়াখালী দাঙ্গা

 

নোয়াখালী দাঙ্গা
শেয়ার করেছেন : প্রণব কুমার কুণ্ডূ










Avijit Sengupta

 ----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
নোয়াখালী দাঙ্গা নোয়াখালী রায়ট(riot)বা নোয়াখালী গনহত্যা বা নোয়াখালী হত্যাযজ্ঞ নামেও পরিচিত।এটি ছিল স্থানীয় মুসলিমদের দ্বারা সংঘটিত এক ধারাবাহিক হত্যাযজ্ঞ,হিন্দু নারী ধর্ষণ,নারী ও অল্প বয়স্ক মেয়েদের অপহরণ,হিন্দুদেরকে জোরপূর্বক মুসলিমকরন,হিন্দু সম্পদ লুট-ধ্বংস-অগ্নিসংযোগ।এটি ঘটেছিল ১৯৪৬ সালের অক্টোবর-নভেম্বর এ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বঙ্গে আর বর্তমানে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলায়।এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয় ব্রিটিশদের কবল থেকে ভারতবর্ষের মুক্তির ঠিক এক বছর আগে।আক্রান্ত এলাকা ছিল প্রায় ২০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে।এই এলাকার মধ্যে রামগঞ্জ,বেগমগঞ্জ,রাইপুর,লক্ষীপুর,ছাগলনাইয়া,নোয়াখালী জেলার সন্দ্বীপ পুলিশ স্টেশন এবং হাজিগঞ্জ,ফরিদ্গঞ্জ,ত্রিপুরা জেলার চাঁদপুর,লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম পুলিশ স্টেশন এবং আরও অন্যান্য এলাকা।
(তৎকালীন নোয়াখালী ছিল বর্তমান বাংলাদেশের নোয়াখালী,লক্ষ্মীপুর,ফেনী নিয়ে এবং ত্রিপুরা জেলা ছিল কুমিল্লা,চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে)
১. এলাকার হিন্দুদের উপর এই ম্যাসাকার শুরু হয় ১০ অক্টোবর ১৯৪৬ সালে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিনে এবং সমান তীব্রতায় তা চলতে থাকে প্রায় চার সপ্তাহ ধরে।হিসেব করে দেখা যায় প্রায় ৫০০০ এর উপর হিন্দু নরনারীকে হত্যা করা হয়,শত শত হিন্দু নারী,অল্প বয়স্ক মেয়েদের জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয় এবং হাজার হাজার নারী পুরুষদের কে জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধরমান্তরিত করা হয়
২. সেখানে হিন্দু মহিলাদের মাটিতে চিৎ করে শুইয়ে মুসলিম লীগের গুণ্ডারা পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে সিঁথির সিঁদুর মুছে দিয়ে হাতের শাঁখা ভেঙ্গে তাদের স্বামী ও পুত্র ও শিশু কন্যাদের হত্যা করে ওই হিন্দু মহিলাদের জোর করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে লীগ গুণ্ডারা বিয়ে করত।
৩. প্রায় ৫০,০০০ থেকে ৭৫,০০০ বেঁচে থাকা হতভাগ্যকে কুমিল্লা,চাঁদপুর,আগরতলা ও অন্যান্য জায়গার অস্থায়ী আশ্রয় শিবির গুলোতে আশ্রয় দেয়া হয়।এছাড়া প্রায় ৫০,০০০ হিন্দু আক্রান্ত এলাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে। কিছু এলাকায় হিন্দুদের কে স্থানীয় মুসলিম নেতাদের অনুমতি নিয়ে চলা ফেরা করতে হত, হিন্দুদেরকে ওই সময় মুসলিম লীগকে চাঁদা দেয়া লাগত যাকে বলা হত জিজিয়া (যা একসময় ভারতবর্ষে প্রচলিত ছিল।মুসলিম শাসন আমলে হিন্দুরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বাড়তি কর দিত শাসকদের)।
৪. বঙ্গীয় আইন সভার নোয়াখালী থেকে একমাত্র হিন্দু প্রতিনিধি হারান চন্দ্র ঘোষ চৌধুরী এই দাঙ্গাকে হিন্দুদের প্রতি মুসলিমদের প্রচণ্ড আক্রোশের প্রকাশ বলে বর্ণনা করেন। বাংলার সাবেক অর্থ মন্ত্রী ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নোয়াখালী দাঙ্গাকে একটি সাধারণ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবে দেখানোর বিতর্ককে প্রত্যাখান করেন।তিনি এ ঘটনাকে একটি সংখ্যা লঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সংখ্যাগুরু মুসলিমদের সুপরিকল্পিত এবং সুসংঘটিত আক্রমন বলে বর্ণনা করেন।
৫. অক্টোবর মাসের ১১ তারিখে গোলাম সরোয়ারের ব্যক্তিগত বাহিনী যা ‘মিঞার ফৌজ’ নামে পরিচিত ছিল নোয়াখালী বার এ্যাসোসিয়েশন ও জেলা হিন্দু মহাসভার সভাপতি রাজেন্দ্রলাল রায়চৌধুরীর বসতবাড়িতে আক্রমন করে। সে সময়ে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের স্বামী ত্রেম্বকানন্দ তাঁর বাড়িতে অতিথি হিসেবে ছিলেন। রাজেন্দ্রলাল পুরোটা দিন তাঁর বাড়ির ছাদ থেকে রাইফেল নিয়ে আক্রমন প্রতিহত করেন। রাত নেমে আসার পর যখন দাঙ্গাবাজেরা ফিরে গেল তখন রাজেন্দ্রলাল স্বামী ত্রম্বকানন্দ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেন। পরের দিন আবার মুসলিম দাঙ্গাকারীরা সংগঠিত হয়ে রাজেন্দ্রলালের বাড়িতে আক্রমণ করে। তারা বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে।
৬. দাঙ্গা কবলিত গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে হিন্দুদেরকে জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার মত ঘৃণ্য পাশবিকতায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে মুসলিমরা।হিন্দু পুরুষদেরকে মাথায় টুপি এবং মুখে দাঁড়ি রাখা বাধ্যতামুলক করা হয়। মহিলাদের হাতের শাঁখা ভেঙ্গে ফেলে এবং কপালের সিঁদুর মুছে দেয় মুসলিমরা। তাদেরকে কলেমা পড়ে ইসলামে ধর্মান্তকরন করা হয়। সেখানে হিন্দু মহিলাদের মাটিতে চিৎ করে শুইয়ে মুসলিম লীগের গুণ্ডারা পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে সিঁথির সিঁদুর মুছে দিয়ে হাতের শাঁখা ভেঙ্গে তাদের স্বামী ও পুত্র ও শিশু কন্যাদের হত্যা করে ওই হিন্দু মহিলাদের জোর করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে লীগ গুণ্ডারা বিয়ে করত। মুসলিমরা তাদের বাড়ি টহল দেয়া শুরু করে এবং গ্রামের মৌলবিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইসলামিক শিক্ষা নিতে বাধ্য করতে থাকে।হিন্দু পুরুষদেরকে মুসলিমরা জোর করে মসজিদে নিয়ে নামাজ পড়াত।হিন্দুদেরকে জোর করে গরুর মাংস খেতে বাধ্য করা হয় কারণ হিন্দুধর্মানুসারে গরু তাদের কাছে পবিত্র প্রাণী বিধায় এর মাংস তারা খায় না ।হিন্দু মেয়ে এবং মহিলাদের মুসলিমরা জোর করে বিয়ে করে।ধর্মান্তরিত হিন্দুদের আরবী নামে নতুন নামকরণ করা হয়।মুসলিম নেতারা উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের নামের টাইটেল যেমন চৌধুরী,ঠাকুর প্রভৃতি নামের শেষে যুক্ত করতে অনুমতি দেয়।
ছবিতে থাকতে পারে: 3 জন ব্যক্তি, টেক্সট
কমেন্ট

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন