বুধবার, ৮ জুলাই, ২০২০

জঙ্গিপুরের বৃন্দাবন বিহারীজী মন্দির ও জমিদার কীর্তিচন্দ্র দত্তের কথা


জঙ্গিপুরের বৃন্দাবন বিহারীজী মন্দির ও জমিদার কীর্তিচন্দ্র দত্তের কথা

Share your experience
  • 1.3K










  • 1.3K
    Shares

জঙ্গিপুরের বৃন্দাবন বিহারীজী
জঙ্গিপুরের বৃন্দাবন বিহারীজী
আশুতোষ মিস্ত্রী–পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস প্রসিদ্ধ মুর্শিদাবাদ জেলার এক মহকুমা শহর হলো জঙ্গিপুর। এই জঙ্গিপুরের বৃন্দাবন বিহারীজী মন্দির অন্যতম দেখার জিনিষ।এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জমিদার কীর্তিচন্দ্র দত্তের কথা ও কীর্তি গাথা।কাজের সুবাদে এই অঞ্চলে থাকাকালীন একটু সময় পেলেই বাইরে বেরিয়ে পড়ি অনুসন্ধানের খোঁজে।  পুণ্যতোয়া ভাগীরথী নদীর পূর্ব ও পশ্চিম উভয় তীরে বিস্তৃত জঙ্গিপুর শহর। জঙ্গিপুর অঞ্চলের উপর কোনো সুস্পষ্ট ইতিহাস আজ অবধি তেমন লিখিত হয়নি। তাই কোনো প্রামাণ্য ইতিহাস না থাকার জন্য লোক মুখের স্মৃতিচারণ অথবা কিংবদন্তি লোককথার সাহায্য নিতে হয়।

 জঙ্গিপুর  রঘুনাথগঞ্জঃ স্থাননামের নানা ব্যাখ্যা

জঙ্গিপুর নাম শুনলেই মনে হয় এখানে একসময় জঙ্গিদের ঘাঁটি ছিল। জঙ্গি শব্দটা ফারসি যার অর্থ হলো সামরিক বা লড়াকু। তাতেই অনুমান , জঙ্গি শিবির বা সেনা ছাউনি থাকার সুবাদে নাম হয় জঙ্গিপুর। জঙ্গিপুর নাম নিয়ে আরো একটি মত আছে , দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় রাজ মহলে তখন বাংলার সুবাদার ছিলেন মানসিংহ। মানসিংহের সময় এই অঞ্চলের নাম হয় জাহাঙ্গীরপুর এবং পরে তা জঙ্গিপুর নামে পরিবর্তিত হয়েছে। অপরদিকে রঘুনাথ গঞ্জের  নামকরণ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে ,- নাটোরের রানি ভবানী ছিলেন এই অঞ্চলের জমিদার। পলাশীর যুদ্ধের পর রাজস্বের ক্ষমতা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে চলে যায়। নবাবী আমলের বকেয়া রাজস্ব শোধ করতে বাধ্য করা হয়  রানী ভবানীকে । তখন তিনি তার অনেক মহাল বিক্রি করে দেন এবং সেই টাকায় রাজস্ব শোধ করেন।
রঘুনাথগঞ্জ ইলিয়ট কোম্পানির দেওয়ান খোঁসাল সিং তাঁর গৃহ দেবতা রঘুনাথজীর নামে কেনেন। পরবর্তীতে শহর তৈরি হলে নাম হয় রঘুনাথগঞ্জ। নবাবী আমলে এই জঙ্গিপুর মহকুমায় দুটি যুদ্ধ হয় – ১৭৪০ এবং ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে। ঐতিহাসিক মতে গিরিয়া মুর্শিদাবাদের পানিপথ নামে পরিচিত।
জঙ্গিপুরের বৃন্দাবন বিহারীজী মন্দির
জঙ্গিপুরের বৃন্দাবন বিহারীজী মন্দির

 জঙ্গিপুরের বৃন্দাবন বিহারীজী মন্দির

এবার আসি  জঙ্গিপুর শহরের বাবু বাজারের অবস্থিত বৃন্দাবন বিহারীজী মন্দির প্রসঙ্গে। প্রায় ২৫৭ বছর আগে জমিদার কীর্তিচন্দ্র দত্ত এই অঞ্চলে বসবাস করতেন। অত্যন্ত গরীব ঘরের ছেলে হয়েও তার উপাস্য গৃহ বিগ্রহ শ্রী শ্রী বৃন্দাবন বিহারী ঠাকুরের কৃপায় বিপুল ধনসম্পদের মালিক হন। জমিদার কীর্তিচন্দ্র দত্তের এই গৃহ বিগ্রহ ও ধনবান হয়ে ওঠা নিয়ে নানান গল্প আছে। যদিও উক্ত মন্দিরে গিয়েও তেমন কোনো গল্পঃ কথা শোনা যায়নি। তাই মহার্ণব পত্রিকার চতুর্থ সংখ্যার কিছু তথ্য তুলে ধরছি যেহেতু আর কোথাও এসব তথ্য  লিখিত ভাবে পাওয়া যায়নি।

 জঙ্গিপুরের বৃন্দবন বিহারীজী–লোক-আলেখ্য

মহার্ণব সংখ্যার ” শ্রী শ্রী বৃন্দাবন বিহারীজীর তুলসী বিহার মেলা ”  আশিস কুমার রুদ্র মহাশয়ের প্রবন্ধ থেকে জানা যায় – বংশানুক্রমিক জঙ্গিপুরের রঘুনাথজী মন্দিরের পূজারী সম্প্রতি প্রয়াত শ্রদ্ধেয় শিবনারায়ণ সুকুল মহাশয়ের কথা মত কীর্তি চন্দ্রের পিতা কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত রঘুনাথগঞ্জের দক্ষিণ প্রান্তের চড়কা গ্রামের ভাগীরথী তীরে বসবাস করতেন। কীর্তি বা কেতু তার একমাত্র পুত্র সন্তান ছিলেন। দরিদ্র ঘরের সন্তান কেতু একদিন অপরাহ্নে  একপ্রান্তে রাস্তার ধারে গরু চড়াচ্ছিলেন। ঐ সময়ে ঐ পথে নাটোরের রাণী ভবানীর সশস্ত্র পাইক বরকন্দাজ বাহিনী ঘোড়ার পিঠে করে বিভিন্ন মহল থেকে সংগৃহীত টাকার থলি নিয়ে নাটোরের দিকে যাচ্ছিল।

টাকার থলি!

অসাবধানতা বশত একটি টাকা ভর্তি থলি ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যায়। রক্ষী বাহিনী চলে যাবার পর যুবক কীর্তির চোখে পড়ে এবং সে গোপনে সেই থলি  বাড়ি নিয়ে এসে পিতার হাতে তুলে দেন। এদিকে নাটোর পৌঁছে রক্ষী বাহিনীর নজরে পরে একটি টাকার  থলি কম আছে। রাণী মায়ের নির্দেশে একদল রক্ষী বাহিনী সেই থলির খোঁজে বেরিয়ে পরে। খোঁজার খবর শোনা মাত্র কৃষ্ণচন্দ্র সেই টাকা ভর্তি থলিটি বাহিনীদের হাতে তুলে দেন। মহীয়সী রাণী এইখবরে তুষ্ট হয়ে যুবক কীর্তিকে তাঁর রাজবাড়ির কাছাড়ীর কাজে নিযুক্ত করেন। কাজের পারদর্শিতায় সামান্য পদ থেকে দেওয়ান পদমর্যাদা লাভ করেন।
  জঙ্গিপুরের বৃন্দাবন বিহারীজী মন্দির
জঙ্গিপুরের বৃন্দাবন বিহারীজী মন্দির

 জঙ্গিপুরের বৃন্দাবন বিহারীজী ও কীর্তিচন্দ্র দত্ত

কীর্তিচন্দ্র দত্তের বিত্তবান জমিদার হবার পেছনে আরো একটা গল্প কথা শোনা যায়। দরিদ্র পিতা কৃষ্ণ চন্দ্র দত্তের বসবাস ছিল জঙ্গিপুরে সে কথা আগেই বলা হয়েছে। বালক কীর্তি বা কেতু প্রতিবেশী এক বালিকার সাথে ভাগীরথী নদীর তীরে বালির মন্দির তৈরির খেলায় রত ছিলেন। সেই সময় এক সুদর্শন দীর্ঘদেহী সন্ন্যাসী খেলা দেখে বালক বালিকার সাথে কথায় কথায় তাদের পরিচয় নেয়। সন্ন্যাসীর সাথে বালক কীর্তির এরূপ ঘনিষ্ট ভাবে আলোচনা করা দেখতে পেয়ে স্থানীয় একজন ব্যক্তি তার পিতাকে জানান। তার পিতা এসব কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

সন্ন্যাসীরাজা

তিনি মনে মনে ভাবেন তার সন্তান আবার সন্ন্যাসী হয়ে যাবে না তো। তিনি তাড়াতাড়ি ছুটে যান সেই স্থানে এবং সন্ন্যাসীকে হাত জোড় করে জানান যেনো তার ছেলেকে না নিয়ে চলে যান। কৃষ্ণচন্দ্র অনেক কাকুতি মিনতি করে সন্ন্যাসীকে তুষ্ট করেন। সন্ন্যাসী খুশি হয়ে অভয় দেন এবং ভবিষ্যত বাণী করেন যে কীর্তি একদিন প্রভূত যশ ও ঐশ্বর্য্যের অধিকারী হবে। সন্ন্যাসী বালকের সাথে খেলায় রত বালিকাকে দেখে বলেন যে,  এই কন্যা খুব সু লক্ষণা এর সাথেই যেন কীর্তির বিবাহ দেন।
সন্ন্যাসীর কথা মত ১৫ বছর বয়সে কীর্তির বিবাহ দেন সেই কন্যার সাথে। এরপর কীর্তিচন্দ্র দত্ত ইলিয়ট সাহেবের রেশমকুঠিতে হাজিরানবীশের কাজে যোগ দেন। তার কাজের নিষ্ঠা ও সততা দেখে সাহেব তুষ্ট হয়ে কুঠির সমস্ত ক্ষমতা কীর্তির উপর দায়িত্ব দেন। তখন থেকেই কীর্তিচন্দ্র দত্ত বিপুল ধনসম্পত্তির মালিক হতে থাকেন। হটাৎ সংসার ত্যাগ করে সস্ত্রীক গৃহ ত্যাগী হন। পরে ফিরে আসলে ইলিয়ট সাহেবের উদ্যোগে আবার প্রচুর ধনসম্পত্তি লাভ করতে থাকেন। 
ইতিমধ্যে পূর্বের সেই সন্ন্যাসী আবার ফিরে আসলে কীর্তিচন্দ্র সস্ত্রীক তাকে সাদরে বরণ করে নেন। সন্ন্যাসী প্রসন্ন হয়ে তার সঙ্গে থাকা শালগ্রাম শিলাটি কীর্তিচন্দ্রের স্ত্রীর হাতে তুলে দেন এবং ভক্তি ভাবে নিত্য পূজার নির্দেশ দিয়ে আবার পরিব্রাজনে বেরিয়ে পড়েন। ধনবান কীর্তিচন্দ্র ধর্মপ্রাণ , উদারচেতা ও পরোপকারী ব্যক্তি হিসেবে সকলের শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে পরিচিত হন। 

 জঙ্গিপুরের বৃন্দাবন বিহারিজী মন্দির

তিনি ১১৭০ বঙ্গাব্দে( ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দ) জঙ্গিপুর শহরের বাবু বাজারে একটি বিশাল ইউরোপিয় স্থাপত্যে রীতিতে জঙ্গীপুরের বৃন্দাবন বিহারীজী  মন্দিরটি তৈরি করেন , এবং  বহু ধুমধাম করে শ্রী শ্রী বৃন্দাবন বিহারীদেব ঠাকুরের মূর্তিটি প্রতিষ্ঠিত করেন। ঠাকুরের কৃপায় কীর্তিচন্দ্র দত্ত নাটোর জমিদারীর ৭০ নম্বর তৌজির ৭৬ টি মৌজার জমিদারী লাভ করেন। জমিদারী লাভের পর থেকে তিনি প্রজাদের প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন। জমিদার কীর্তিচন্দ্র দত্ত শ্রী শ্রী বৃন্দাবনবিহারীজীর মন্দিরে আগত দর্শনার্থী ও গরীব মানুষদের নিয়মিত প্রসাদ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

ইজলনামা

এছাড়া উৎসবের সময় ও দান ধ্যানের অন্যান্য খরচ মেটানোর জন্য একটি ‘ ইজলনামা ‘ (আইনি ঘোষণাপত্র) তৈরি করে দেন। তিনি সেবাইতদের মন্দির পরিচালনা ও খরচাদি করার জন্য প্রচুর ভূসম্পত্তি দেবোত্তর হিসেবে দান করে দেন। একদিন জমিদার কীর্তিচন্দ্র দত্ত রাতে স্বপ্নাদেশ পান। বৃন্দাবনবিহারীজী স্বপ্নে বলেন যে শহরের অন্যান্য মন্দিরে থাকা বিগ্রহদের সাথে কয়েকদিন একত্রে থাকতে চান। তখন কীর্তিচন্দ্র দত্ত জঙ্গিপুর শহরের ওপর পাড়ে রঘুনাথগঞ্জের কেন্দ্রস্থলে প্রায় সাড়ে তিন বিঘে বর্গাকার জমির উপর তুলসী বিহার মন্দির নির্মাণ করে দেন।

তুলসী বিহার মন্দিরে

প্রতি বৈশাখ মাসের সংক্রান্তির আগের রাতে শ্রী বৃন্দাবন বিহারীজী সকলের চোখের আড়ালে বাবু বাজারের মূল মন্দির থেকে পূজারী পালকি করে নৌকায় গঙ্গা পাড় হয়ে রঘুনাথগঞ্জের তুলসী বিহার মন্দিরে অবস্থান করেন। এছাড়া এই মন্দিরে রঘুনাথজী , গোপীনাথজী, মদনমোহনজী, রাধারাণী ঠাকুরাণী সহ রঘুনাথগঞ্জের বালিঘাটা মন্দিরের শ্যামরায়জী অবস্থান করেন। মন্দিরের মূল গর্ভ গৃহের সুদৃশ্য চারকোনা সিংহাসনের পূর্বদিকে একা  শ্রী শ্রী বৃন্দাবনবিহারীজী অবস্থান করেন। অন্য সিংহাসনে বাকি বিগ্রহদের বসানো হয়। বৃন্দাবন বিহারীজী একা গোপনে মন্দিরে এলেও বাকি বিগ্রহ গুলি নিয়ে আসার সময় সংকীর্তন সহ যোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে নিয়ে আসা হয়।

 রঘুনাথগঞ্জে বৃন্দাবন বিহারিজী

রাস্তার দু ধারে রঘুনাথগঞ্জের মানুষ দাড়িয়ে বিগ্রহ দর্শন করে আনন্দ উপভোগ করেন। এই সময় এক মাস ব্যাপী বিশাল মেলা অনুষ্ঠিত হয় তুলসী বিহার মন্দিরে। মেলা একমাস থাকলেও বিগ্রহ গুলি থাকে তিন দিন মাত্র। এই তিন দিন আগত সমস্ত ভক্তদের প্রসাদ পাওয়ার ব্যবস্থাও কীর্তি বাবু সেই আমল থেকে করে গেছেন। বিগ্রহদের দুপুরে ভোগরাগে পঞ্চব্যঞ্জন সহ সুগন্ধি চালের অন্ন, পোলাও , পায়েস সহ নানা রকমের মিষ্টি, আম, লিচু , পেয়ারা, পেঁপে সহ নানান ফলের ভোগ নিবেদন করা হয়। রাতে আবার শীতল ভোগে বিশেষভাবে দেওয়া হয় মিছরির মুড়কি। ভোগরাগের ব্যবস্থা নিয়মরক্ষার খ্যাতিরে আজও চলে আসছে। ভক্ত যাত্রীদের জন্য প্রসাদ পাওয়ার ব্যবস্থা অনেক পরে বন্ধ হয়ে গেলেও আগ্রহী ভক্তরা প্রণামী মূল্যের বিনিময়ে প্রসাদ পেয়ে থাকেন। জৈষ্ঠ্য মাসের তিন তারিখ অতি সকালে প্রত্যেক বিগ্রহ গুলি নিজ নিজ মন্দিরে ফিরে যান। 

গিরিগোবর্ধনের মেলা

এছাড়া বৃন্দাবন বিহারীজী মন্দিরের উত্তর পূর্ব কোণে জঙ্গিপুরের বাবু বাজার পেরিয়ে গিরি গোবর্ধনের মেলা বসে গুলঞ্চ বাড়িতে। প্রতি বছর কালি পূজার পর কার্তিক মাসের শুক্লা প্রতিপদের দিন এই মেলা শুরু হয়। দেওয়ান কার্তিক চন্দ্র দত্ত এই মেলার প্রবর্তক বলে জানা যায় । বৃন্দাবন বিহারীজী মন্দির থেকে বৃন্দাবন বিহারীজী ও খোঁসাল সিংহ প্রতিষ্ঠিত রঘুনাথজী বিগ্রহকেও আনা হয় গুলঞ্চ বাড়িতে । সেই সঙ্গে শুরু হয় গিরি গোবর্ধন মেলা । মন্দির চত্বরের পাশে নানা রকমের দোকান সাজিয়ে  বসে।  এই মেলা পূর্বে অন্নকূট মেলা নামে পরিচিত ছিল ।

 বাহান্ন ভোগে মিস্টি

সেই সময় এখানে বাহান্ন রকমের মিষ্টির ভোগ নিবেদন করা হত এবং অন্নভোগের নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ ছিল না । মেলায় যারা আসতেন সকলেই সম পরিমাণ ভোগ পেতেন  এবং মেলা দেখে সন্তুষ্ট মনে বাড়ি ফিরতেন সকল ভক্ত গণ । এখন এই মেলা আগের মত আর হয়না। আগের মত মেলা বসার আর জায়গা নেই । বর্তমানে উক্ত স্থানে চার কোণে চারটি আটকোণা শিব  মন্দির দেখা যায়। নতুন একটি মন্দির নির্মাণ হয়েছে যেখানে বৃন্দাবন বিহারীজী ও রঘুনাথজীকে মেলার সময় বসানো হয় । এখন আর সে সব নেই । নিয়ম মাফিক প্রতি বছর পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসে
পুরনো বৃন্দাবন বিহারিজীর মন্দিরটি সংস্কারের প্রয়োজন হলে কীর্তি চন্দ্র দত্তের দৌহিত্র বংশীয় রাখাল দাস বড়াল মহাশয় ১৮৭৫ – ৭৬ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপিয় প্রাসাদের অনুরূপ এক বিশাল দালান মন্দির তৈরি করে দেন। অবশ্য নতুন মন্দিরটি পূর্বের মন্দিরের আদলে নির্মিত বলে জানা যায়। সুতরাং আগের মন্দিরের মত নতুন মন্দির ও একই স্থাপত্যে নির্মিত। মূল মন্দির , নাট মন্দির , ভোগ ঘর, অতিথি শালা সহ মন্দিরটি বিস্তৃত স্থান জুড়ে আছে। তবে সেগুলি বর্তমানে সব ভগ্ন দশায় পড়ে আছে।
জঙ্গিপুরের বৃন্দাবন বিহারীজী মন্দিরে বিগ্রহ
জঙ্গিপুরের বৃন্দাবন বিহারীজী মন্দিরে বিগ্রহ

 জঙ্গিপুরের বৃন্দাবন বিহারীজী মন্দিরে বিগ্রহ

মন্দিরের সংস্কার খুব প্রয়োজন। মন্দিরের সিঁড়ি বেয়ে থাম বিশিষ্ট নাট মন্দিরের মধ্যে জানালা আকৃতির মত দ্বারের ভেতরে মূল বিগ্রহ গুলি দেখা যায়। বৃন্দাবন বিহারীজী একটি বৃহৎ শালগ্রাম শিলা রূপে পূজিত হন , যে শিলা সেই সন্ন্যাসী দান করেছিলেন কীর্তি চন্দ্র দত্তকে। শিলাটি সব বিগ্রহের মধ্যে স্থানে  অবস্থিত। এবার আসি অন্যান্য  বিগ্রহদের কথায় – ঠিক বাম পাশে আছে কৃষ্ণ বর্ণের কষ্ঠি পাথরের গোপীনাথজী, মধ্যে আছে অষ্ট ধাতু নির্মিত নীল বর্ণের গোবিন্দ ও ধূসর নীল বর্ণের রাধারানীর মূর্তি। এছাড়া সমগ্র বিগ্রহ গুলির নিচের দুই পাশে দুটি কৃষ্ণ বর্ণের গোপালের মূর্তি ও পূজিত হন।
আরও পড়ুন–সূত্রধর বা ছুতোর জন-জাতির উদ্ভব ও পেশার কথা ইতিহাসের প্রেক্ষিতে
এখনো মন্দিরে নিত্য এক হাজার টাকা মূল্যের  ফল,ফুল ও ভোগ রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছিলেন বর্তমান পুরোহিত শ্রী অরুণ চক্রবর্তী মহাশয়। তবু  এত সুন্দর একটি মন্দির সংস্কারের অভাবে আজ জীর্ণদশায় পরিণত হয়েছে।  
২৫০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যময় তুলসী বিহার মেলা এ বছর করোনা ভাইরাসের প্রভাবের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। জঙ্গিপুর ও অন্যান্য স্থান  থেকে বিগ্রহ গুলি এপার রঘুনাথ গঞ্জ তুলসী বিহার মন্দিরে রীতি অনুযায়ী আনা হয় নি। প্রত্যেক বিগ্রহ এখন  নিজ নিজ  মন্দিরে নিত্য পূজিত হচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি। মহামারী থেকে সমগ্র বিশ্ব রোগ মুক্ত হলে আগামী বছর থেকে রীতি অনুযায়ী তুলসী বিহার মেলা আবার অনুষ্ঠিত হবে।
তথ্যঋণ : 
শ্রী শ্রী বৃন্দাবন বিহারীজীর তুলসীবিহার মেলা – আশিস কুমার রুদ্র (মহার্ণব: মুর্শিদাবাদের দর্শনীয় স্থান,  চতুর্থ সংখ্যা)
মুর্শিদাবাদের মন্দির – শ্রী বিজয় কুমার বন্দোপাধ্যায়, 
ঝড় সাহিত্য পত্র : বিষয় মুর্শিদাবাদ (প্রথম সংকলন) 
ও নিজ ক্ষেত্রসমীক্ষা।

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন