রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

বইঃ "ভোলগা থেকে গঙ্গা"


বইঃ "ভোলগা থেকে গঙ্গা"
শেয়ার করেছেন প্রণব কুমার কুণ্ডু



























প্রণব কুমার কুণ্ডু







বইঃ "ভোলগা থেকে গঙ্গা"
লেখকঃ "রাহুল সাংকৃত্যায়ন"
পৃষ্ঠাঃ ৩১৮; মূল্যঃ ৪০০ টাকা।
ভারতীয় লেখক ও দার্শনিক রাহুল সাংকৃত্যায়ন-এর ভোলগা থেকে গঙ্গা বইটি তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের একটি। লেখক প্রাচীন আমল থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত আর্যদের সমাজ বিকাশ এবং পথপরিক্রমার ইতিহাস লিখেছেন গল্পের মাধ্যমে। ৬০০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে ভলগা নদীর তীরে যে মানবগোষ্ঠী পরিবার স্থাপন করেছিলো, তাদেরই আবাস ও জীবন নিয়ে রচিত হয়েছে প্রথম গল্পটির দৃশ্যপট। ক্রমে সেই মানুষ অগ্রসর হয়ে মধ্য এশিয়া অতিক্রম করে তাজিকিস্তান পেরিয়ে একসময় সমগ্র প্রাচীন ভারতে এসে বসতি স্থাপন করেছিলো এই আর্যরা।
ভোলগা থেকে গঙ্গার কাহিনীগুলো নিছক কল্পনাপ্রসূত নয়। সমাজ বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ের দিকে লক্ষ্য রেখে গল্পগুলো ধারাবাহিকভাবে রচিত হয়েছে। ভারতীয় সমাজ বিকাশের বিভিন্ন পর্যায় গল্পচ্ছলে অনুধাবন করার পক্ষে ভোলগা থেকে গঙ্গার কানিহীগুলো অত্যান্ত সুবিধাজনক, তাই এ গ্রন্থের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
ভোলগা থেকে গঙ্গা বইটা ছোট ছোট গল্পের ভঙ্গিতে রচিত। প্রায় ছয় হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দককালে ভারতবর্ষের সুদূর উত্তর পশ্চিমে দক্ষিন বাহিনী ভোলগার তীরে অরণ্য তুষারে আচ্ছন্ন পরিবেশে যে মানবগোষ্ঠীর পদপাত শোনা গিয়েছিল তাদেরই আবাস জীবন প্রেম ও ভালবাসা নিয়ে এ মহা গ্রন্থের প্রথম দৃশ্যপট উত্তোলিত হয়েছে। তারপর সেই মানুষ ক্রমে মধ্য ভোলগা তীর ছেড়ে অগ্রসর হয়ে এলো। ক্রমে এই লোকেরা আরো অগ্রসর হয়ে মধ্য এশিয়া ছাড়িয়ে গেল, পামীর, উত্তর কুরুতে তাদের বসতি স্থাপিত হলো- জন্ম হলো হিন্দি-ইরানিয় ভাষার। আস্তে আস্তে তারা পৌঁছে গেল স্বাত উপত্যকায়। সমগ্র গান্ধার জুড়ে তাদের আবাস গড়ে উঠলো। সময়ে জন্ম নিয়েছে হিন্দু আর্যভাষা। সেখানেই ঋগ্বেদ রচিত হঢেছিল বলে অনুমান করা হয়।
ছোট গল্প সমূহের তালিকা
১।নিশাঃ স্থান- ভোলগা নদীর তীর কাল-৬০০০ খৃষ্টপূর্ব
২।দিবাঃ স্থান- মধ্য ভোলগা তট কাল-৩৫০০ খৃষ্টপূর্ব
৩।অমৃতাশ্বঃ স্থান- মধ্য এশিয়া, পামীর (উত্তর কুরু) কাল-৩০০০খৃষ্টপূর্ব
৪।পুরুহুতঃ স্থান- বক্ষু উপত্যকা (তাজিকিস্তান) কাল- ২৫০০খৃষ্টপূর্ব
৫। পুরুধানঃ স্থান- উপরিস্বাত কাল- ২০০০খৃষ্টপূর্ব
৬। অঙ্গিরাঃ স্থান- গান্ধার (তক্ষশীলা) কাল- ১৮০০খৃষ্টপূর্ব
৭। সুদাসঃ স্থান- কুরু-পাঞ্চাল (উত্তরপ্রদেশের পশ্চিম) কাল- ১৫০০খৃষ্টপূর্ব
৮। প্রবাহণঃ স্থান- পাঞ্চাল (উত্তরপ্রদেশ) কাল- ৭০০খৃষ্টপূর্ব
৯। বন্ধুল মল্লঃ কাল- ৪৯০ খৃষ্টপূর্ব।
১০। নাগদত্তঃ কাল- ৩৩৫ খৃষ্টপূর্ব।
১১। প্রভাঃ কাল- ৫০ খৃষ্টপূর্ব।
১২। সুপর্ণ যৌধেয়ঃ কাল-৪২০ খৃষ্টাব্দ।
১৩। দুর্মুখঃ কাল-৩৬০ খৃষ্টাব্দ।
১৪। চক্রপাণিঃ কাল- ১২০০ খৃষ্টাব্দ।
১৫। বাবা নুরদীনঃ কাল-১৩০০খৃষ্টাব্দ।
১৬। সুরৈয়াঃ কাল-১৬০০খৃষ্টাব্দ।
১৭। রেখা ভগৎঃ কাল-১৮০০খৃষ্টাব্দ।
১৮। মঙ্গল সিংহঃ কাল-১৮৫৭খৃষ্টাব্দ।
১৯। সফদরঃ কাল-১৯২২খৃষ্টাব্দ।
২০। সুমেরঃ কাল-১৯৪২খৃষ্টাব্দ।

এসব কাহিনীতে আছে ছয় হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ইতিহাসের স্বাক্ষর। এভাবে ইতিহাসের ধারা অনুসরণ করে কাহিনীর পর কাহিনীতে বিংশ শতকে এসে শেষ হয়েছে " ভোলগা থেকে গঙ্গা"র কাঠামো।
ভোলগা থেকে গঙ্গা অসংখ্য ইতিহাস ও পুরাণ গ্রন্থের সহায়তায় লেখা। ভাল লাগার মূল জায়গাটা হল এঁর একেবারে নৈর্ব্যাক্তিক ভাবে বলা খুবই আবেগবহুল কাহিনী। বইয়ের একটা কথা মনে দাগ কাটেঃ "এই পৃথিবী যদি তার বুকে ঘটে যাওয়া সব কথা বলতে পারত তবে ইতিহাস অন্য রকম হত।- হুবহু এমন ছিলো না , স্মৃতি থেকে লিখছি। কিন্তু কথাটার ভাবটা এইরকমই ছিল"।
আপাত দৃষ্টিতে সরাসরি অধ্যায়গুলি গল্পগুলির যোগাযোগ না থাকলেও আবার কোথায় যেন তারা ধারাবাহিক একটাই গল্প। প্রাচীন রাশিয়ান ঊনমানুষদের ধীরে ধীরে ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ার গল্প, আর্য জাতির উত্থানের গল্প, বৈদিক যুগের গল্প। সবার উপরে- মানুষের গল্প।
ইতিহাস নৃতত্ত্ব ও বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমনবৃত্তান্ত থেকে তথ্য উপাত্ত নিয়ে লেখক তার নিজস্ব ভঙ্গিতে গড়ে তুলেছেন ভোলগা থেকে গঙ্গা। এর শেষ রচনাটি শেষ হয়েছে এভাবে- " এখনও উঁচু নিচু জগতের মধ্যে যে বিভেদটুকু বজায় আছে আশা করি অদূর ভবিষ্যতে সে বিভেদও থাকবে না। সকলে মিলে সমান হয়ে যাবে সকলের পরিশ্রমলব্ধ ফসলের অন্ন সকলে গ্রহণ করবে মিলেমিশে হাঁসিমুখে।
যারা প্রাচীন ইতিহাস, সমাজ ও নৃতত্ত্ব ভালোবাসেন তাদের জন্যে সবসময় সাথে রাখার মত একটা বই এই ভোলগা থেকে গঙ্গা।
হ্যাপি রিডিং 

পৃথিবী হোক বইময় 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন