প্রণব কুমার কুণ্ডু,  'তালাক'  বিষয়টি সকলের সাথে ভাগ করে নিতে চান !
তালাক
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
 
তালাক শব্দের অর্থ 'বিচ্ছিন্ন', ত্যাগ করা ইত্যাদি। 
ইসলাম ধর্মে আনুষ্ঠানিক 
বিবাহ বিচ্ছেদকে তালাক বলা হয়। 
স্বামী সর্বাবস্থায় তালাক দিতে পারেন। 
স্ত্রী শুধুমাত্র তখনই তালাক দিতে পারবেন, যদি বিয়ের সময় এর লিখিত অনুমতি দেওয়া হয়।
পরিভাষায় তালাক অর্থ "বিবাহের বাঁধন তুলিয়া ও খুলিয়া দেওয়া, বা বিবাহের শক্ত বাঁধন খুলিয়া দেওয়া "স্বামী তার স্ত্রীর সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে দেওয়া।
জীবনে চুড়ান্ত বিপর্যয় থেকে স্বামী স্ত্রী উভয়কে রক্ষার জন্য ইসলামে 
তালাকের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যখন চরমভাবে বিরোধ 
দেখা দেয়,পরস্পর মিলে মিশে স্বামী স্ত্রী হিসেবে শান্তিপূর্ণ ও মাধুর্য 
মন্ডিত জীবন যাপন যখন একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়,পারস্পারিক সম্পর্ক 
যখন হয়েপড়ে তিক্ত,বিষক্ত,একজনের মন যখন অপরজন থেকে এমন ভাবে বিমূখ হয়ে 
যায় যে,তাদের শুভ মিলনের আর কোন সম্ভাবনা থাকেনা; ঠিক তখনই এই চূড়ান্ত 
পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইসলামে। তালাক হচ্ছে নিরুপায়ের 
উপায়। স্বামী স্ত্রী পরস্পরকে বেঁধে রাখার শেষ চেষ্টাও যখন ব্যর্থতায় 
পর্যবসিত হয় তখন বিবাহ নামকছে, সেখানে তালাক ঘোষণার কোন পদ্ধতি বলা হয়নি।
 মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে- "কোন পুরুষ তাহার স্ত্রীকে তালাক দিতে 
চাহিলে তাহাকে মুসলিম আইনে অনুমোদিত যে কোন পদ্ধতিতে ঘোষণার পরই তিনি তাহার
 স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন এ মর্মে চেয়ারম্যানকে লিখিত ভাবে নোটিশ প্রদান 
করবেন এবং স্ত্রীকেও উহার নকল দিবেন" অর্থাৎ তালাক প্রদান বা ঘোষণার 
ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তের প্রবর্তিত পদ্ধতিই হচ্ছে মুসলিম পারিবারিক আইনের 
পদ্ধতি। তাই শরীয়ত প্রবর্তিত তালাক সংক্রান্ত বিধানাবলি ভালভাবে জানা ও 
বুঝা খুবই জরুরী। বিশেষ করে নিকাহ রেজিস্ট্রারদের এ সম্পর্কে পরিষ্কার 
ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরী। এদিকে লক্ষ রেখে নিম্নে তালাকের 
সংঙ্গা,প্রকারভেদ, আমাদের করণীয় ইত্যাদি বিষয় সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা 
হল।
 
তালাকের উদ্দেশ্য
তালাক
 প্রদানের উদ্দেশ্য হল অন্যায়,জুলুম ও নিদারুন কষ্ট,জ্বালাতন ও উৎপীড়ন 
ইত্যাদি অশান্তি হতে মুক্তি লাভ করা। প্রকৃতপক্ষে ইসলামে তালাক প্রদানের যে
 উদ্দেশ্য তা হল স্বামী স্ত্রী উভয়ের মধ্যে যে সকল অশান্তি সৃষ্টিকারী 
কারণ সমুহ রয়েছে তা হতে সংশোধনের চেষ্টা করা বা দুর করা।
তালাক সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
তালাক শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নবী (সাঃ) তালাক সম্পর্কে বলেছেন 
তালাক অপেক্ষা ঘৃনার জিনিস আল্লাহ তায়ালা আর সৃষ্টি করেন নি হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত নিম্নোক্ত বাণী হতে তালাকের ভয়াভহতা উপলদ্ধি করা যায়।
তোমরা বিয়ে কর কিন্তু তালাক দিয়োনা কেননা, তালাক দিলে তার দরুন আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠে।
তালাক প্রদানের পূর্বে করনীয়
দাম্পত্য
 জীবনে স্বামী স্ত্রী'র মধ্যে বিবাধ-বিরোধ মনোমালিন্য দেখা দিতেই পারে। 
স্বামী স্ত্রীর মাঝে এ ধরনের বিরোধ দেখা দিলে তাদের জন্য নসীহত রয়েছে যে 
আর
 তাহলে প্রত্যেকেই যেন অপরের ব্যাপারে নিজের মধ্যে ধৈর্য্য ও সহ্য শক্তি 
রক্ষা করে অপরের কোন কিছু অপছন্দনীয় হলে তা ঘৃনা হলেও সে যেন দাম্পত্য 
জীবন রক্ষার সার্থে তা অকপটে বরদাশত করতে চেষ্টা করে। এর পরেও যদি দাম্পত্য
 জীবন সংরক্ষন করতে ব্যার্থ হয় তবে সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন 
"তোমরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন বিরোধ মনোমালিন্য হয়েছে বলে ভয় কর তাহলে
 তোমরা স্বামীর পরিবারের থেকে একজন বিচারক এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন 
বিচারক পাঠাও। তারা দু'জন যদি বাস্তবিকই অবস্থার সংশোধন করতে চায় তাহলে 
আল্লাহ তাদের সেজন্য তওফীক দান করবেন এবং তার সংশোধন করে স্বমী-স্ত্রী 
উভয়ের মধ্যে মিল মিশ করার চেষ্টা করবেন। আর যদি মিলমিশ অসম্ভব বলে মনে 
করেন তবে তাদের মধ্যেবিচ্ছেদের ব্যাবস্থা করবেন।
মুসলিম পারিবারিক আইনে বিরোধ মিমাংসার জন্য এবং স্বামী স্ত্রীর মধ্যে 
আপোস করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চেয়ারম্যান বা সালিসী পরিষদের উপর। তিনি
 উভয় পক্ষকে নটিশের মাধ্যমে উপস্তিত করার জন্য বলবেন। কোন পক্ষ যদি হাজির 
না হয় তবে তাকে হাজির করার ক্ষমতা তার নেই। স্বামী-স্ত্রী উভয় পক্ষের 
মধ্যে আপোস মীমাংসা করার চেষ্টা করা ছাড়া চেয়ারম্যানের আর কোন দ্বায়িত্ব
 নেই। তালাক কার্যকর অথবা অকার্যকর কোনটাই করার এখতিয়ার চেয়ারম্যানের 
নেই।
প্রকার
পদ্ধতিগত দিক দিয়ে তালাক তিন প্রকারঃ-
(ক) আহসান বা সর্বোত্তম তালাক ; (খ) হাসান বা উত্তম তালাক এবং (গ) বিদ'ই বা শরিয়া বিরূদ্ধ তালাক।
ক্ষমতা বা এখতিয়ার গত দিক দিয়ে তালাক পাঁচ প্রকারঃ- (১)তালাকে সুন্নাত (২) তালাকে বাদী (৩)তালাকে তাফবীজ (৪)তালাকে মোবারত ও (৫)খোলা তালাক।
কার্যকর হওয়ার দিক দিয়ে তালাক প্রধানত দুই প্রকারঃ- (১) তালাকে রেজী ও (২)তালাকে বাইন
তালাকে বাইন আবার দুই প্রকারঃ- (১)বাইনে সগির ও (২) বাইনে কবির।
মর্যাদা ও অবস্থানের দিক থেকে তালাক চার প্রকারঃ- (১)হারাম (২)মাকরুহ (৩)মুস্তাহাব ও (৪)ওয়াজিব
(ক)তালাকে হাসানঃ- তালাকে হাসানা তাকে বলে,যে তুহুরে স্বামী 
স্ত্রীর মধ্যে সহবাস,যায়েজ অবস্থা কিংবা গর্ভাবস্থা নেই। উলালেখিত অবস্থা 
সমুহ নেই এমন তুহুর অবস্থায় শুধু মাত্র এক তালাক দিয়ে ইদ্দত পূর্ণ হতে 
দেওয়া। অর্থাৎ তিন তুহুর অতিক্রম করলে তালাকটি কার্যকর হয়ে যায়। 
এমতাবস্থায় স্ত্রী ইচ্ছা করলে অন্য যে কোন পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে 
আবদ্ধ হতে পারে কিংবা তালাক প্রপ্তা স্ত্রী ইচ্ছা করলে এবং স্বামী চাইলে 
তারা পুনঃ বিবাহে আবদ্ধ হতে পারে। এই ধরনের তালককে বলা হয় তালাকে আহসান।
"(খ) তালাকে হাসানঃ-" হাসান তালাক হলো প্রত্যেক তুহুরে একটি করে তালাক 
দিবে। এই নিয়মে তিন তুহুরে তিন তালাক দেওয়ার নিয়ম কে তালাকে হাসান বলে। 
তালাকে হাসান দিলে অর্থাৎ তিন তুহুরে তিন তালেক দিলে সেই স্ত্রী তার 
স্বামীর জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। সে তার স্বামীর নিকট রেজাত বা পূন 
বিবাহে আসতে পারবেনা। তবে স্ত্রীর যদি অন্য কোন পুরুষের সাথে বিবাহ হয় এবং
 দ্বিতীয় স্বামী যদি কোন দৈবাত কারণে তালাক দেয় অধবা মৃত্যু বরণ করে তবে 
ইচ্ছা করলে পূর্বের স্বামীর সহিত বিবাহ বন্দনে আবদ্ধ হতে পারবে।
"(গ) তালােক েবদীঃ-" বিদায়াত তালাক হলো কোন ব্যক্তি একসাথে তিন তালাক 
দিয়ে দেওয়া বা হায়েয অবস্থায় তিন তালাক দেওয়া অথবা যে তুহুরে সহবাস 
করেছে সেই তুহুরে তিন তালাক দেওয়া। উল্লেখিত যে কোন প্রকারে তালাক দেওয়া 
হউক না কেন তালাক দাতা গুনাহগার হবে গর্ভাবস্থা প্রকাশ পাইনি এমন সন্দেহ 
জনক অবস্থায় তিন তালাক প্রদান করাও বিদায়াত বা হারাম। বর্তমান সময়ে 
অধিকাংশ তালাক অনুষ্টিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইন অথবা
 শরীয়ত প্রবর্তিত পদ্ধতি কোনটাই অনুসরণ করা হচ্ছেনা। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে
 বিরোধ দেখা দিলে চেয়ারম্যান,মেম্বার বা কোন গণ্য মান্য ব্যক্তি তালাকের 
নোটিশ সহি বা স্বাক্ষর করলেই তালাক হয়ে গেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তারা 
তালাকের ঘোষণা দেন না, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় তালাকের নোটিশে 
লিখা হয় এক তালাক,দুই তালাক, তিন তালাক ও বাইন তালাক। এমন ধরনের তালাক 
প্রকাশ্য তালাকে বিদয়ীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং যারা এধরনের তালাক 
অনুষ্ঠিত করিয়া থাকেন তারা সবাই গুনাহ্গার হবেন।
ক্ষমতা বা এখতিয়ার গত দিক দিয়ে তালাক পাঁচ প্রকারঃ-
ইদ্দত কাল
ইসলামে
 তালাকের পর একজন মহিলাকে ইদ্দত পালন করতে হয়।সেই (ইদ্দত কালীন) সময়ের 
মধ্যে একজন মুসলীম নারীর পুন:বিবাহ ইসলামে নিষিদ্ধ। একজন মুসলীম নারীর জন্য
 ইদ্দত দুই প্রকার বা ভাগে ভাগ করা সম্ভব।
১)তালাকের পর ২)স্বামীর মৃত্যুর পর
প্রথমত তালাকের পর, একজন মুসলীম নারীকে তার তালাকের পর ৯০ দিন বা তিন চন্দ্রমাস অপেক্ষা করতে হবে ।এই ৯০ দিন হচ্ছে ইদ্দত কালীন সময়।
তালাকের পর পুনর্বিবাহ
তালাকের
 পর স্বামী ও স্ত্র্রী পুনর্বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে তবে তা 
শর্তসাপেক্ষ। শর্তটি এই যে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে অন্য কারো সঙ্গে শরিয়া 
অনুসরণপূর্বক যথাযথভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে এবং নতুন স্বামী তালাক 
প্রদানের পর আগের স্বামীর সঙ্গে পুনর্বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। এই 
শর্তটি কঠিন কারণ ইসলাম সামান্য অজুহাতে বা রাগের মাথায় উত্তেজনাবশতঃ 
তালাক দেয়ার বিপক্ষে।
তালাকের প্রবণতা
২০০৮ খ্রিস্টাব্দের হিসাবে দেখা যায় বাংলাদেশে পুরুষদের চেয়ে নারীদের মধ্যেই তালাক প্রবণতা বেশী।
[১]
তথ্যসূত্র