রূপক রায়ের কলাম ( আট )
ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছেন প্রণব কুমার কুণ্ডু
প্রণব কুমার কুণ্ডু
Rupok Roy
সময়, শক্তি ও স্থান কখন এবং কে সৃষ্টি করেছিলো ?
এই ধরণের প্রশ্ন খুব সাধারণ মানুষ করতে পারে না, যিনি এই ধরণের কথা ভাবতে পারেন এবং এই ধরণের প্রশ্ন করতে পারেন তার ভাবনার বা জ্ঞানের সীমা যে কম নয, সেটাও খুব সহজেই অনুমেয়; আর এই ধরণের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সাহস করাটাও যে খুব সাধারণ ব্যাপার নয়, সেটা এই প্রবন্ধটা পড়া শেষ করলে বুঝতে পারবেন।
যা হোক, শিরোনামের এই প্রশ্ন সহ, পবিত্র রয় নামের আমার একজন পাঠক বন্ধু আমাকে বেশ কিছু প্রশ্ন করেছেন, যার ফটো পোস্ট আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। ঈশ্বরকে স্মরণ করে আমি চেষ্টা করেছি সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবার, জানি না, সেগুলো শ্রী রয়ের মনের মতো হবে কি না, তবে আমার দিক থেকে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।
যা হোক, শ্রী রয়ের প্রথম প্রশ্ন হলো- ব্রহ্ম কি ও মানবদেহে অবস্থান কোথায় ? দেহে আগমন ও নির্গমন হয় কিভাবে ?
- ব্রহ্মের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ছান্দোগ্য উপনিষদের ৩/১৪/১ এ বলা হয়েছে, "সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম", এর অর্থ হচ্ছে সবকিছুই ব্রহ্ম বা ব্রহ্মময়, ঠিক এই ধরণের কথা বলা আছে গীতার ৪র্থ অধ্যায়ের ২৪ নং শ্লোকে, সেখানে বলা আছে- যজ্ঞপাত্র, ঘৃত, অগ্নি, হোম এবং যিনি যজ্ঞ করেন সবই ব্রহ্ম; এই সবই বা সবকিছুই যে আসলে কী এবং এর অর্থ যে কতটা ব্যাপক, সে ব্যাপারে এবার কিছু ধারণা দিচ্ছি-
বিজ্ঞানের ব্যাখ্যায় আমরা জানি যে, প্রকৃতিতে প্রাপ্ত মৌলিক পদার্থের সংখ্যা ৯৪ টি (উইকিপিডিয়া মতে), অর্থাৎ পৃথিবী সৃষ্টির সময় পৃথিবীর মূল সম্পদ ছিলো এই ৯৪টি মৌলিক পদার্থ, মৌলিক পদার্থ সেগুলোই যেগুলো ভাঙলে ঐ পদার্থ ছাড়া অন্য কোনো পদার্থ পাওয়া যায় না, এই মৌলিক পদার্থ একটি অনু এবং এতে এক বা একাধিক একই জাতীয় পরমানু থাকতে পারে। বাংলা ভাষায় লিখা একটি বই বিশ্লেষণ করলে যেমন ৫০টি বর্ণ এবং ০ ও ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা ছাড়া অন্য কিছূ পাওয়া যাবে না, তেমনি পৃথিবীর যাবতীয় জীব ও জড় পদার্থকে বিশ্লেষণ করলেও ঐ ৯৪টি মৌলিক পদার্থের বাইরে কিছু পাওয়া যাবে না।
যা হোক, এই একই জাতীয় পরমানু দ্বারা গঠিত মৌলিক পদার্থগুলো জলে ভাসমান অবস্থায় কোটি কোটি বছর ধরে একে অপরের সাথে মিশ্রিত হতে হতে জন্ম দেয় প্রথম এককোষী প্রাণী এ্যামিবার, আর এই এক কোষী প্রাণীগুলো বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার জন্য একে অপরের সাথে যুক্ত হতে হতে জন্ম দেয় বহুকোষী প্রাণীর, যার চরম বুদ্ধিমান রূপ হচ্ছে মানুষ নামের প্রাণী।
হিন্দু শাস্ত্র বলছে, জগতের পালনকর্তা বিষ্ণু, যিনি ব্রহ্মেরই একটি রূপ, তিনি সৃষ্টির শুরুতে জলে শায়িত অবস্থায় ছিলেন এবং তার থেকেই বিভিন্ন ঘটনাক্রমে বিভিন্ন প্রাণীর সৃষ্টি; এই বিষয়টিকে এবার বিজ্ঞানের সৃষ্টিতত্ত্বের সাথে মেলান, বিষ্ণুর জলে শায়িত থাকার ব্যাপারটা রূপক; বিষ্ণু, জলে শায়িত ছিলেন মানে জলের মধ্যে প্রাণ সৃষ্টির উপাদানগুলো নিহিত ছিলো।
যা হোক, ফিরে যাই মূল আলোচনায়, সবকিছু্ই ব্রহ্ম মানে পদার্থের ক্ষুদ্রতম রূপ পরমানুও ব্রহ্ম, এই পরমাণু দ্বারা গঠিত যে মৌলিক পদার্থ সেটাও ব্রহ্ম, আর মৌলিক পদার্থ দ্বারা গঠিত যে পৃথিবীর যাবতীয় জীব ও জড় পদার্থ তারা সকলেই ব্রহ্ম। সুতরাং মানবদেহ আলাদা কিছু নয়, মানবদেহ ব্রহ্মেরই সমষ্টি এবং মানুষ মাত্রই ব্রহ্মময়, যে কথা বলা আছে গীতার ৪/২৪ নং শ্লোকে; তাই মানবদেহে ব্রহ্মের আসা বা যাওয়ার কোনো ব্যাপার নেই, তবে ব্রহ্মকে যেহেতু হিন্দুরা ঈশ্বর ভাবে এবং ঈশ্বরের রয়েছে একটি সর্বোচ্চ ও সম্মানিত স্থান, তাই মানবদেহে, সেই সর্বোচ্চ সম্মানিত ঈশ্বরের একটি স্থান কল্পনা করা হয়েছে, সেই স্থান হচ্ছে, মানুষের মাথার যে সর্বোচ্চ বিন্দুটি রয়েছে, সেটা; যাকে মানুষ নাম দিয়েছে ব্রহ্মতালু, যাকে খাস বাংলায় বলে মাথার চাঁদি।
আশা করছি, মাননীয় পবিত্র রয়ের প্রথম প্রশ্নটা ক্লিয়ার করতে পেরেছি।
এবার নজর দিই দ্বিতীয় প্রশ্নের দিকে।
দ্বিতীয় প্রশ্নে শ্রী রয় জানতে চেয়েছেন, "ইন্দ্রিয় কি ? বিভিন্ন মত অনুসারে ইন্দ্রিয় কত প্রকার ? আত্মার নির্গমনের সময় এদের হাল কি হয় ?
এই প্রশ্নের উত্তরের শুরুতেই একটি ব্যাকরণগত ভুল ঠিক করে দিই, যে ভুলটা প্রথম প্রশ্নেও ছিলো। বাংলায় দুই ধরণের কি/কী এর ব্যবহার আছে। এই 'কি' দ্বারা প্রশ্ন করলে উত্তর হবে শুধু হ্যাঁ বা না এবং এই 'কী' দ্বারা প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যাবে হ্যাঁ বা না এর বাইরে অন্য কিছু। প্রশ্নে যে বলা হয়েছে, "ইন্দ্রিয় কি ?", এর দ্বারা আসলে কোনো প্রশ্নই করা হয় নি, এটি হবে এমন, " ইন্দ্রিয় কী ?" একইভাবে এই প্রশ্নের শেষ অংশ, "আত্মার নির্গমনের সময় এদের হাল কি হয় ?" এর পরবর্তে প্রশ্নটি হবে, "আত্মার নির্গমনের সময় এদের হাল কী হয়?" এমন।
যা হোক, এবার 'ইন্দ্রিয় কী ?', এর ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করছি-
যে সমস্ত দেহযন্ত্র বা শক্তির সাহায্যে প্রাণীরা বাহ্য বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করতে পারে, প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে এবং বিভিন্ন ক্রিয়া সম্পাদন করতে পারে, তাদেরকে বলে ইন্দ্রিয়। শাস্ত্রে ইন্দ্রিয় সর্বমোট ১৪টি বলা হলেও, আমার বিচারে ইন্দ্রিয় ১১টি; কারণ অন্তরিন্দ্রিয় বলতে যে চারটিকে বোঝানো হয়েছে, অর্থাৎ- মন, বুদ্ধি, অহঙ্কার ও চিত্ত, তারা মূলত একই ইন্দ্রিয় মন এবং মনের বিভিন্ন রূপ; যেমন মন এবং চিত্ত একই ব্যাপার; অহঙ্কার, মানুষের মন মানসিকতারই একটি দাম্ভিক প্রকাশ এবং বুদ্ধি. মনেরই কৌশল বৃত্তি;সুতরাং অন্তরিন্দ্রিয় একটি এবং সেটা মন। বাকি ইন্দ্রিয়গুলোর মধ্যে কর্মেন্দ্রিয় ৫টি। যেমন-
১. বাক (মুখ), ২.পাণি (হাত), ৩.পাদ (পা), ৪. পায়ু (মলদ্বার) এবং ৫. উপস্হ (লিঙ্গ); এগুলোর দ্বারা প্রাণীরা কোনো না কোনো কর্ম সম্পাদন করে বলে এদেরকে বলে কর্মেন্দ্রিয়।
এরপর জ্ঞানেন্দ্রিয় রয়েছে ৫টি। যেমন-
১. চক্ষু, ২. কর্ণ, ৩. নাসিকা, ৪. জিহ্বা, ৫. ত্বক; এগুলোর দ্বারা প্রাণীরা- দর্শণ, শ্রবণ, স্পর্শ ও উপলব্ধির দ্বারা কোনো বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে থাকে।
সুতরাং আমার বিবেচনায় ইন্দ্রিয় মোট ১১ টি।
এই প্রশ্নের শেষ অংশ- "আত্মার নির্গমনের সময় এদের হাল কী হয়?", এর উত্তর পাবেন আপনার করা তিন নং প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে।
৩ নং প্রশ্নে শ্রী রয় জানতে চেয়েছেন, "প্রাণ কি ? প্রাণের সাথে মনের সম্পর্ক কি ? আত্মার নির্গমনের সাথে সাথে প্রাণের মৃত্যু হয় কি ? হলে কেন এবং কেমন ভাবে হয়, নাহলেই বা কেন হয় না ?
- কি এবং কী নিয়ে আগেই আলোচনা করেছি, তাই এই প্রশ্নগুলো লিখার সময় আমি আমার মতো করে বানানগুলো ঠিক করে নেবো। এখানে প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, "প্রাণ কী ?"।
প্রাণ একটি অদৃশ্য শক্তি, যা কোনো জড় পদার্থের মধ্যে চালিত হয়ে জড়কে জীবে পরিণত করে; এই প্রাণশক্তিকে দেখা যায় না, শুধু অনুভব করা যায়। প্রাণকে বিদ্যুৎ শক্তির সাথে তুলনা করা যায়, কেননা বিদ্যুত শক্তিকেও দেখা যায় না, শুধু অনুভব করা যায় এবং বিদ্যুৎ শক্তিও জড় বা অচল পদার্থকে সচলে পরিণত করে, যেকোনো ইলেক্ট্রিক এবং ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীই এ্রর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। হাজার হাজার সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতির সংযোগে তৈরি হয় একটি টিভি বা কম্পিউটার, কিন্তু তার মধ্যে বিদ্যুত শক্তি না থাকলেই সেটা হয়ে পড়ে একদম অচল, মৃত; কিন্তু যেই তার মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়, অমনি সেটা সচল হয় এবং টিভি কম্পিউটার ছাড়াও অনেক ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস একদম জীবের মতো কাজ করে, যেমন- উন্নত মানের রোবট।
এর পরের প্রশ্ন হচ্ছে, প্রাণের সাথে মনের সম্পর্ক কী ?
উপরে প্রাণের সংজ্ঞা দিয়েছি, এবার মনের সংজ্ঞা দিই, তারপর দুটোর সম্পর্ককে নির্ণয় করার চেষ্টা করবো।
মন হচ্ছে মানুষের চিন্তা চেতনা বা ভাবনার সমষ্টি।
প্রাণ, মনের উপর নির্ভরশীল নয়, কিন্তু মন প্রাণের উপর নির্ভরশীল। কারণ, দেহে প্রাণ না থাকলে মন থাকে না, কিন্তু মন না থাকলেও মানুষের দেহে প্রাণ থাকে; যেমন- কোনো কারণে মানুষ অজ্ঞান হয়ে গেলে, মানুষের চেতনা বা চিন্তা ভাবনা করা ক্ষমতা থাকে না, কিন্তু দেহে প্রাণ থাকে। অপরদিকে প্রাণ না থাকলে মানুষের দেহে শুধু যে মন ই থাকে না, তাই নয়, কোনো ইন্দ্রিয়ও কাজ করতে পারে না; কারণ, আগেই বলেছি প্রাণশক্তি হলো বিদ্যুত শক্তির মতো, কোনো ইলেকট্রিক য্ন্ত্র থেকে যদি বিদ্যুত শক্তিকে সরিয়ে নেওয়া হয়, সেই যন্ত্রের যেমন কোনো ক্ষমতা থাকে না, তেমনি দেহে প্রাণ না থাকলেও সকল ইন্দ্রিয় অকার্যকর হয়ে পড়ে।
এই প্রশ্নের পরের অংশ হচ্ছে- আত্মার নির্গমনের সাথে সাথে প্রাণের মৃত্যু হয় কি ?
এখানে "কি" এর ব্যবহারটা ঠিক আছে।
এই প্রশ্নের এক কথায় জবাব হচ্ছে- না। আত্মার নির্গমনের সাথে সাথে প্রাণের মৃত্যু হয় না। তবে এটা শুধু বহুকোষী প্রাণীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এক কোষী প্রাণীর ক্ষেত্রে আত্মার নির্গমনের সাথে সাথেই সেই প্রাণীর মৃত্যু হবে। তবে যেহেতু এক কোষী প্রাণীকে আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না, সেহেতু এক কোষী প্রাণীর মৃত্যু আমাদের বিচার্য বিষয় নয়, আমরা নিজেরা যেহেতু বহকোষী প্রাণী এবং আমাদের চারপাশে যেসব প্রাণী দেখতে পাই, সেগুলোও বহুকোষী, তাই বহুকোষী প্রাণী সম্পর্কেই বলছি, আত্মার নির্গমনের সাথে সাথেই বহুকোষী প্রাণীর প্রাণের মৃত্যু হয় না; কারণ, বহুকোষী প্রাণীর দেহে যে প্রাণ থাকে, সেটা একক কোনো প্রাণ নয়, সেটা বহু প্রাণের সমষ্টি একটা মহাপ্রাণ।
এই বিষয়টা পরিষ্কারভাবে বুঝতে হলে এককোষী ও বহুকোষী প্রাণী সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে, এখন সে বিষয়ে কিছু ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি-
উপরেই বলেছি পৃথিবীর সম্পদ ৯৪টি মৌলিক পদার্থ জলের মধ্যে একে অপরের সাথে মিশতে মিশতে সৃষ্টি করে পৃথিবীর প্রথম এককোষী প্রাণী এ্যামিবা, এই এ্যামিবা জলের মধ্যে একটা দু্ইটা সৃষ্টি হয় নি, এক সাথে সৃষ্টি হয়েছিলো কোটি কোটি। এ্যামিবা ছিলো এক অদ্ভূত প্রাণী; কারণ, এদের কোনো নির্দিষ্ট অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ছিলো না; সাঁতরানোর সময় এরা যেমন হাত পা সৃষ্টি করে নিতো, তেমনি আবার খাবারের সময় হাত-পাকে বিলুপ্ত করে সৃষ্টি করে নিতো মুখ এবং মল ত্যাগের সময় পায়ু। একটি এ্যামিবা অন্য এ্যামিবাকে ভক্ষণ করে নিজদের পুষ্টিসাধন করতো এবং একসময় খেয়ে দেয়ে দেহের আয়তন বিশাল হয়ে গেলে নিজেকে দুভাগ করে বংশবৃদ্ধি করতো; যেমন ভাবে প্রাণীদেহে কোষ বিভাজন ঘটে, এ্যামিবার বিভাজন ঠিক সেরকম। আমি যে এ্যামিবার কথা বলছি, সেই এ্যামিবা এবং প্রাণীদেহের কোষ আসলে একই জিনিস। জলে ভাসমান এ্যামিবা এবং প্রাণীদেহের কোষের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো- এ্যামিবা স্বাধীন, কিন্তু প্রাণীদেহের কোনো কোষ স্বাধীন নয়।
কোনো ব্যক্তি যখন একা জীবন যাপন করে, তখন তাকে টাকা আয়ের জন্য পরিশ্রম করতে হয়, খাওয়ার জন্য রান্না করতে হয়, কাপড় চোপড় ধুতে হয়, এককথায় তার প্রাত্যাহিক জীবন যাপনের সকল কাজ একাই করতে হয়। কিন্তু যখন সে বিবাহ করে তখন তার কিছু কাজ তার জীবন সঙ্গী ভাগ করে নেয়, এভাবে তারা একে অপরকে হেল্প করে এবং একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এ্যামিবাগুলো এই সুবিধা চেয়েছিলো বলেই আমাদের মতো বহুকোষী প্রাণীর উদ্ভব হয়েছে। কারণ, দুটো এ্যামিবা যখন পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে থাকতে শুরু করেছে, তখন একজন হয়তো সাঁতরানোর দায়িত্ব নিয়েছে, অন্যজন নিয়েছে খাওয়ার দায়িত্ব, এদের সাথে আরেকটি এ্যামিবা যুক্ত হলে সে হয়তো নিয়েছে মলত্যাগ করার দায়িত্ব, এভাবে একটি এ্যামিবার সাথে যত এ্যামিবা যুক্ত হয়েছে, ততই তারা কাজ ভাগ করে নিয়েছে এবং এ্যামিবার সংখ্য বেশি হয়ে গেলে একাধিক এ্যামিবা মিলে হয়তো কোনো একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করেছে, এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে প্রাণী দেহে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের, যেগুলো নির্দিষ্ট কাজই শুধু সম্পন্ন করে থাকে।
এই প্রসঙ্গে আমাদেরকে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, কোষ মানেই হলো প্রাণ। একটি এ্যামিবার সাথে আরকেকটি এ্যামিবা যুক্ত হয়ে বহুকোষী প্রাণীর সৃষ্টি হচ্ছে মানে বহু প্রাণ একত্রিত হচ্ছে, এই বহু প্রাণ একত্রিত হয়েই পৃথিবীর বিশাল বিশাল প্রাণীর জন্ম হয়েছে, এজন্যই উপরে বলেছি-বহুকোষী প্রাণীর দেহে যে প্রাণ থাকে, সেটা একক কোনো প্রাণ নয়, সেটা আসলে বহু প্রাণের সমষ্টি একটা মহাপ্রাণ।, কিন্তু এই প্রাণগুলো আর স্বাধীন প্রাণ নয়, কোটি কোটি বছরের পরনির্ভরশীলতায় এই প্রাণগুলো এখন পরাধীন, এরা স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
ধরে নিন এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার সারা দেশে অসংখ্য শাখা আছে, এর নিশ্চয় কিন্ত কোনো একটি হেডকোয়ার্টার থাকবে; কোনো কারণে সেই হেডকোয়ার্টার যদি ফল (Fall) করে, তাহলে সারাদেশের শাখা প্রতিষ্ঠানগুলোও কিন্তু আস্তে আস্তে ফল করবে। বহুকোষী প্রাণীর ক্ষেত্রেও এই ঘটনা ঘটে, যদি কোনো কারণে বহু কোষী প্রাণীর হেডকোয়ার্টার (মাথা) কেটে ফেলা হয়, তাহলে হেড হেডকোয়ার্টারের সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওযায খুব দ্রুত দেহের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কোষও মরতে থাকে এবং এভাবে দেহের সমস্ত কোষ মরতে থাকলে আস্তে আস্তে সমগ্র দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়ে, যাকে আমরা বলি মৃত্যু। বহুকোষী প্রাণীর দেহে কোষ বা প্রাণ এভাবে মরে বলেই, জবাই করে ছেড়ে দেওয়ার পরও হাঁস-মুরগী-ছাগল জাতীয় প্রাণীরা বেশ কিছু সময় ধরে ছটফট করতে থাকে বা দেহকে টুকরো টুকরো করে ফেলার পরও কোনো কোনো প্রাণীর মাংস একটু আধটু নড়া চড়া করে।*********************************
সুতরাং আত্মার নির্গমন হলেই যে সঙ্গে সঙ্গে প্রাণের মৃত্যু হয় না, এই বিষয়টি আশা করছি ক্লিয়ার করতে পেরেছি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- আত্মা কী ?
আত্মা কোনো অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গ নয়, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় আত্মা হলো প্রাণীদেহের একটি সামষ্টিক চেতনা; অর্থাৎ প্রাণীদেহে অবস্থিত সকল কোষ বা প্রাণের একটি সংঘবদ্ধ শক্তির নাম আত্মা। কোনো প্রাণীদেহের সকল কোষ যখন সুস্থ থাকে, তখন সেই সকল কোষের সংঘবদ্ধ শক্তির মাধ্যমে কোনো প্রাণী বেঁচে থাকে, যাকে আমরা বলি বা ভাবি আত্মার উপস্থিতি। কিন্তু যখন প্রাণীদেহের বেশির ভাগ কোষ অসু্স্থ হয় বা কোষগুলো দ্বারা গঠিত দেহের এক বা একাধিক অঙ্গ তার কার্যকারিতা হারায় বা বয়স বেশী হয়ে যাওয়ায় আর কাজ করতে পারে না, তখন সেই অঙ্গগুলো তার জন্য নির্দিষ্ট কাজ করতে পারে না এবং ঐ একটা অঙ্গের জন্য দেহের অন্যান্য অঙ্গও বিকল হতে শুরু করে, এভাবে যদি দেহের কোনো মূখ্য অঙ্গ, যেমন- হার্ট যদি তার কার্যকারিতা হারায় তাহলে সাথে সাথে মানুষের মৃত্যু ঘটে, কিন্তু দেহের অপ্রধান অঙ্গগুলো যদি তাদের কার্যকারিতা হারায়, তাহলে ধীরে ধীরে মানুষের মৃত্যু ঘটে।
এই মৃত্যু আসলে কিছুই নয়, একটি প্রাণীদেহকে টিকিয়ে রাখার জন্য যে পরিমান শক্তি প্রয়োজন, সেই শক্তির অপ্রতুলতা। দেহকে টিকিয়ে রাখার জন্য যে পরিমান শক্তির প্রয়োজন, সেই পরিমান শক্তি যদি দেহস্থ কোষগুলো সরবরাহ করতে না পারে, তাহলেই দেহ প্রথমে অসুস্থ হবে এবং তারপর আস্তে আস্তে শক্তি নিঃশেষ হয়ে সেই প্রাণীর মৃত্যু হবে, যাকে আমরা বলি আত্মার বেরিয়ে যাওয়া। অন্যভাবেও প্রাণীর মৃত্যু হয়, যেমন কোনো দুর্ঘটনায় প্রাণীদেহে এমনভাবে আঘাত লাগলো যে দেহের কোনো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ একেবারে ড্যামেজ হয়ে গেলো, গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ অকস্মাৎ ড্যামেজ হয়ে যাওয়া মানে প্রাণীদেহে শক্তি সরবরাহে অকস্মাৎ বিঘ্ন হওয়া, এতে হার্ট তার কাজ করতে গিয়ে ফেইল করে, ফলে প্রাণীর মৃত্যু হয়। আবার কোনো প্রাণীর গলা টিপে ধরলেও তার মৃত্যু হয়; কারণ, গলা টিপে ধরার ফলে সেই প্রাণীর দেহে শ্বাস প্রশ্বাস প্রবাহিত হতে পারে না এবং প্রাণীদেহের একটি প্রধান অঙ্গ ফুসফুস তার কাজ ঠিক মতো করতে পারে না, ফলে সেই প্রাণী মারা যায়।
কোনো প্রাণী যখন মারা যায়, তখন আমরা কল্পনা করি যে, তার মধ্যে যে আত্মা ছিলো তা বেরিয়ে যায়। এই আত্মা যদিও অধরা বস্তু, তবুও আমরা পুনর্জন্মের থিয়োরিকে মেলানোর জন্য অঙ্কের হিসাব সমাধানের মতো করে একটি 'এক্স' কে ধরে নিয়েছি এবং এই 'এক্স' এর যে মান পেয়েছি, সেটাই আসলে আত্মা। পাটিগণিতের মধ্যে 'এক্স' না থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে এক্সকে ধরে নিয়ে যেমন সেই অঙ্কের সমাধান করতে হয় এবং সমাধান শেষে এক্স এর একটি মান পাওয়া যায়, যা ঐ এক্স এর শক্তি, তেমনি পুনর্জন্ম নামক থিয়োরির ক্ষেত্রে আত্মাও এক্স এর মতো একটি অজানা রাশি এবং যার শক্তি আছে; আর থিয়োরি মোতাবেক, যার শক্তি আছে, তার অস্তিত্বও আছে, সুতরাং আত্মাও আছে।
এই আত্মা সম্পর্কিত যে জ্ঞান তাকে বলে আধ্যাত্ম বিদ্যা, এই আধ্যাত্ম বিদ্যাকে এক কথায় আধ্যাত্মিকও বলা হয়। এই আধ্যাত্ম বিদ্যা বলে, প্রাণী দেহ যেহেতু, ক্ষিতি-অপ-তেজ-মরুৎ-ব্যোম, এই পঞ্চভূতে তৈরি, সেহেতু প্রাণীদেহ থেকে আত্মা বেরিয়ে গেলে অর্থাৎ প্রাণীদেহ শক্তিহীন হয়ে পড়লে, প্রাণীদেহ আবার পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যাবে, কিন্তু জীবের কর্মফল সেই প্রাণীর আত্মাকে বহন করতে হবে এবং সেই কর্মফল নিয়ে তাকে আবার নতুন কোনো একটি দেহকে অবলম্বন করে পৃথিবীতে জন্ম নিতে হবে।
শ্রী রয়ের ৪র্থ প্রশ্ন হচ্ছে- মন কি ? তার আচরণই বা কি ? দেহান্তরের পর মনেরও কি সমাপ্ত হয়ে যায় ?
- আমি উপরেই বলেছি, মন হচ্ছে মানুষের চিন্তা চেতনা বা ভাবনার সমষ্টি। সুতরাং মন যেহেতু স্বতন্ত্র কোনো সত্ত্বা নয়, তাই তার নিজস্ব কোনো আচরণও নেই, মানুষের আচরণই আসলে মনের আচরণ বা বলা যায় মানুষের চিন্তা ভাবনা বা ভাবনাই হলো মনের আচরণ। আমি উপরে এটাও বলেছি যে- মন, প্রাণের উপর নির্ভরশীল, সুতরাং দেহে প্রাণ না থাকলে মনও থাকবে না; তাই দেহান্তরের পর নয়, দেহান্তরের সাথে সাথেই মনের বিলুপ্তি ঘটে।
শ্রী রয়ের ৫ম প্রশ্ন হলো- সময়, শক্তি ও স্থান কখন এবং কে সৃষ্টি করেছিলো ? সৃষ্টি লয় হলে এদেরও সমাপ্তি ঘটবে ?
- হিন্দু শাস্ত্রে বলা হয়েছে- সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম, অর্থাৎ সব কিছুই ব্রহ্ম। আর আমি উপরে এও প্রমান করে দিয়েছি যে, পৃথিবীর অনু পরমানুও ব্রহ্ম এবং অনু পরমানু দ্বারা গঠিত পৃথিবীর সমস্ত জড় ও জীব, সকলেই ব্রহ্ম। আমাদের পৃথিবী সৌরজগতের একটি সদস্য এবং সৌরজগত মহাবিশ্বের সদস্য এবং আমাদের পৃথিবীর ন্যায় সৌরজগতের অন্যান্য সদস্য গ্রহসহ মহাবিশ্বের সমস্ত গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, উল্কাপিণ্ড সবই অনু পরমানু দ্বারা গঠিত, তার মানে মহাবিশ্বের সব কিছুই ব্রহ্ম এবং সমগ্র মহাবিশ্ব ব্রহ্মময়।
আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, এই সমগ্র মহাবিশ্ব এক সময় পূঞ্জীভূত অবস্থায় একটি গোলাকার পিণ্ড ছিলো এবং এই পিণ্ডের ভেতরে সঞ্চিত শক্তির প্রভাবে সেটার বিস্ফোরণ ঘটে এবং কোটি কোটি কোটি আলোকবর্ষ এলাকা জুড়ে মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং কোটি কোট কোটি গ্রহ নক্ষত্রের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে হিন্দু শাস্ত্র বলেছে, ব্রহ্মের অণ্ড (ডিম) এর বিস্ফোরণে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়, এই কারণেই এর নাম ব্রহ্মাণ্ড= ব্রহ্ম+অণ্ড; বিজ্ঞানীদের বলা বিগ ব্যাং থিয়োরি এই সেদিনের আবিষ্কার, কিন্তু হিন্দু শাস্ত্রে এই কথা সেই প্রাচীনকালে কিভাবে বলা হয়েছে, সেটা একবার চিন্তা করুন, আর আমাদের মুনি ঋষিদের অসীম জ্ঞানের ব্যাপারটা একবার ভাবুন, শ্রদ্ধায় আপনার মাথা নত হতে বাধ্য।
প্রশ্ন হচ্ছে- সময়, শক্তি ও স্থান কখন এবং কে সৃষ্টি করেছিলো ?
সময়, শক্তি ও স্থান কেউ সৃষ্টি করে নি, ব্রহ্ম বা ঈশ্বর যেমন- অনাদি, অনন্ত, অসীম ও নিরাকার; তেমনি সময়, শক্তি ও স্থানও অনাদি, অনন্ত, অসীম ও নিরাকার; তার মানে সময়, শক্তি এবং স্থানই ঈশ্বর। নিচে এর ব্যাখ্যা দিচ্ছি-
সময বা কালকে আমরা দেখতে পাই না, দেখতে পাই শুধু ঘটনাকে। যদি বলা হয়, ঈশ্বর জগত সৃষ্টি করেছেন কোনো এক সময়ে, তাহলে প্রশ্ন উঠবে, ঈশ্বর সময়কে সৃষ্টি করেছেন কোন সময়ে ? তাই এই ধরণের কথা বলা যাবে না। ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আগে থেকেই 'সময়' আছে, তাই সময় অনাদি; ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হলেও সময় থাকবে, তাই সময় অনন্ত; সময়ের কোনো সীমা নেই, তাই সময় অসীম এবং সময়ের কোনো আকার নেই, তাই সময় নিরাকার। সুতরাং বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সময়ই যে ব্রহ্ম বা ঈশ্বর তা প্রমাণিত।
এবার নজর দিই শক্তির দিকে।
শক্তি হলো কাজ করার ক্ষমতা, কোনো কাজ করতে গেলে আগে চাই সেই কাজ করার শক্তি, অর্থাৎ আগে শক্তি, পরে কাজ। ঈশ্বর এই জগত সৃষ্টি করেছেন এবং এই সৃষ্টির কাজে তার দরকার হয়েছিলো শক্তির। তার মানে যখন থেকে ঈশ্বর আছেন, তখন থেকে তার শক্তিও আছে। আর ঈশ্বর- কখন থেকে, কিভাবে এবং কার মধ্যে আছে, সেটা তো "সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম", এর মাধ্যমেই বলে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটা পরমানুর মধ্যে ঈশ্বর আছে এবং পরমানুর শক্তিই হলো ঈশ্বরের শক্তি, তার মানে পরমানুই ঈশ্বর এবং এই মহাবিশ্ব পরমানু দ্বারাই গঠিত, তার মানে মহাবিশ্ব ঈশ্বরময়। আমরা এমন একটি সময়কে কল্পনা করতে পারি না, যখন শক্তি ছিলো না, তাই শক্তি অনাদি; আবার এমন একটি সময়কে কল্পনা করতে পারি না যখন শক্তি থাকবে না, তার মানে শক্তি অনন্ত; শক্তি কত বড় হবে, তার কোনো সীমা নেই, তাই শক্তি অসীম; আমরা শক্তির কাজ দেখতে পাই, কিন্তু শক্তিকে দেখতে পাই না, তাই শক্তি নিরাকার। সুতরাং বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে শক্তিও যে ঈশ্বর তা প্রমানিত।
এবার নজর দিন স্থানের দিকে-
বিশ্বের দৃশ্যাদৃশ্য যাবতীয় পদার্থই কোনো না কোনো স্থানে অবস্থিত; স্থান পদার্থ পূর্ণ বা পদার্থশূন্য, দুই ই হতে পারে, কিন্তু স্থানকে থাকতেই হবে, যদি বলা হয় শূন্যস্থান তাতেও স্থান আছে। বিশ্বের যাবতীয় বস্তুই কোনো না কোনো সময়ে সৃষ্টি হয়েছে, কোনো কিছু বা সবকিছু সৃষ্টির পূর্বে পদার্থ শূন্য থাকলেও, স্থান ছিলো, তাই স্থান অনাদি; সবকিছু ধ্বংস হলেও স্থান থাকবে, তাই স্থান অনন্ত; বিশ্বের শেষ প্রান্ত বলে কিছু নেই তাই স্থান অসীম; আমরা দেখতে পাই শুধু পদার্থকে, স্থানকে নয়, স্থানের কোনো আকার নেই, তাই স্থান নিরাকার।
সুতরাং বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে স্থানও যে ঈশ্বর তা প্রমানিত।
শ্রী রয়ের শেষ প্রশ্ন হলো, সৃষ্টি লয় হলে এদের(সময়, শক্তি ও স্থান)ও সমাপ্তি ঘটবে ?
সময়, শক্তি ও স্থান যেহেতু অনাদি, অনন্ত, অসীম ও নিরাকার. তাই এদের কোনো ধ্বংস নেই, সুতরাং সৃষ্টি লয় হলেও এরা থাকবে।
শেষে শ্রী রয় লিখেছেন, "আমার এই জিজ্ঞাসা গুলির উত্তরের সাথে সূত্রগুলিও যদি জানান, তাহলে বাধিত থাকব।" তার মানে শ্রী রয় আমার কথার রেফারেন্স জানতে চেয়েছেন।
আমি শ্রী রয়কে সবিনয়ে প্রশ্ন করছি, আপনি যদি কোথাও বা কোনো গ্রন্থে আপনার এই প্রশ্নগুলির জবাব ঠিকঠাক পেতেন, তাহলে কি আমাকে প্রশ্ন করতেন ? করতেন না ? কারণ, এই প্রশ্নগুলোর ক্লিয়ার জবাব আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারে নি, তাই কোনো গ্রন্থেও তা নেই। বেদ রচয়িতা মুনি ঋষিদের কাছে বেদের বাণীর রেফারেন্স চাইলে যেমন পাওয়া যেতো না, তেমনি এই প্রবন্ধে যা লিখেছি, তারও কোনো রেফারেন্স আমার কাছে নেই, আমার সারা জীবনের অর্জিত জ্ঞানের সাথে বাস্তব উপলব্ধি এবং যুক্তি ও বিজ্ঞানকে মিশিয়ে এই প্রবন্ধ আমি লিখেছি। এই প্রবন্ধে শব্দ আছে প্রায় ৩ হাজার ২০০, কোনো জানা বিষয় বা অংশ বিশেষ কপি পেস্ট হলে এই প্রবন্ধ লিখতে আমার কোনোভাবেই ৩ ঘন্টার বেশি সময় লাগতো না, কিন্তু এই পোস্ট লিখতে আমার সময় লেগেছে ৭ দিনে প্রায় ২০/২২ ঘন্টা, একটা লাইন লিখার পর আরেকটা লাইন লিখতে আমাকে অনেকসময় ধরে ভাবতে হয়েছে এবং যখন সিরিয়াসভাবে কোথাও আটকে গিয়েছি, তখন মনে মনে এই প্রার্থনাও করেছি যে- হে প্রভু, আমাকে সাহায্য করো- ঈশ্বর আমাকে সাহায্য করেছে এবং আমি বিশ্বাস করি ঈশ্বরের অসীম কৃপা আমার উপর রয়েছে বলেই এই প্রবন্ধটা আমি লিখে শেষ করতে পেরেছি।
আশা করছি, শ্রী পবিত্র রয়ের সকল প্রশ্নের জবাব ঈশ্বর আমার দ্বারা প্রদান করেছেন।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
💜 জয় হোক সনাতনের 💜
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন