মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩

পশুবলি প্রথা

 পশুবলি প্রথা


সমাজে মূর্খের সংখ্যা বেড়ে গেছে, যে কারণে তারা নিজেদের ভ্রান্ত বিশ্বাসকে ধর্ম মনে করে এবং শাস্ত্রের নির্দেশ নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, ঐ সব মূর্খের জন্য নিচের প্রবন্ধে দিলাম পশুবলির শাস্ত্রীয় রেফারেন্স
পশুবলি শাস্ত্রসম্মত :
বলি প্রথা নিয়ে বর্তমান হিন্দু সমাজ দ্বিধা বিভক্ত। কেউ মনে করে বলির নামে পশু হত্যা উচিত নয়, এটি একটি নিষ্ঠুর প্রথা। কেউ মনে করে বলিপ্রথা হিন্দু সমাজে থাকা উচিত; কারণ, এটা হিন্দুদের ক্ষাত্রশক্তিকে বাড়ায়, যা সমাজ রক্ষা করতে সহায়ক। যারা মনে করে যে বলিপ্রথা একটি নিষ্ঠুর পশু হত্যার প্রথা, তারা মনে করে যে শাস্ত্রে এই ধরণের বিধান থাকাই সম্ভব নয়। আর থাকলেও মানবিক দিক বিবেচনা করে এই প্রথা তুলে দেওয়া উচিত। এই পক্ষের লোকেরা একটু ভণ্ড টাইপের হয়। কারণ, এরা বলিপথার বিরুদ্ধে কথা বলে, কিন্তু প্রতিবছর কুরবাণীর নামে যে কোটি কোটি পশু নির্মমতার শিকার হয়, সে প্রসঙ্গে কোনো কথা বলে না। কিন্তু বাস্তবে সারা পৃথিবীতে কুরবানীর তুলনায় বলি হয় মাত্র ১% বা তারও কম। আর যারা মনে করে যে বলিপ্রথা সমাজে থাকা উচিত, তারা তাদের যুক্তির পক্ষে বিভিন্ন শাস্ত্র থেকে নানা রেফারেন্স তুলে ধরে। এই পোস্টে আমি নিরপেক্ষভাবে শুধু এটাই দেখাবো যে হিন্দু শাস্ত্রে বলি প্রথার পক্ষে কোনো কথা বলা আছে কি না ?
বলিপ্রথার পক্ষের রেফারেন্স পাওয়া যায়- বেদ, শ্রীশ্রীচণ্ডী, দেবীপুরাণ, ভাগবত পুরাণ, বিষ্ণুসংহিতা এবং ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে। কিন্তু যেহেতু আমি বিভিন্ন কারণে ভাগবত পুরাণ এবং ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণকে সনাতন ধর্মের কোনো প্রামাণ্য গ্রন্থ মনে করি না, সেহেতু এই দুটি পুরাণ থেকে কোনো রেফারেন্স উল্লেখ করবো না। অন্য শাস্ত্রগ্রন্থগুলোতে বলি সম্পর্কে কী বলা আছে, আমি শুধু সেগুলোই উল্লেখ করবো।
যা হোক, প্রথমেই দেখা যাক বলি সম্পর্কে বেদে কী বলা আছে, যেহেতু বেদ হচ্ছে সনাতন ধর্মের ভিত্তি গ্রন্থ।
ঋগ্বেদের ১/১৬২/২,৩ নং মন্ত্রে বলা আছে-
সুন্দর স্বর্ণাভরণে বিভূষিত অশ্বের সম্মুখে (ঋত্বিকগণ) উৎসর্গার্থে ছাগ ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। বিবিধ বর্ণ ছাগ তদভিমুখে গমন করছে, এ ইন্দ্র ও পূষার প্রিয় অন্ন হোক। সকল দেবতার উপযুক্ত ছাগ পূষারই ভাগে পড়ে, একে দ্রুতগতি অশ্বের সাথে সম্মুখে আনা হচ্ছে। অতএব ত্বষ্টা দেবতাগণের সুভোজনের নিমিত্ত অশ্বের সাথে ঐ অজ হতে সুখাদ্য পুরোডাশ প্রস্তুত করুন।
এরপর ঋগ্বেদের ১/১৬২/২০ নং মন্ত্রে বলা আছে,
" হে অশ্ব, তুমি যখন দেবতাদের নিকটে গমন করো, তখন তোমার প্রিয় দেহ যেন তোমাকে ক্লেশ প্রদান না করে, খড়্গ যেন তোমার অঙ্গে অধিকক্ষণ না থাকে। কোনো মাংসলোলুপও ছেদনে অদক্ষ ছেদক অস্ত্রের দ্বারা ব্যর্থভাবে যেন তোমার অবয়ব ছিন্ন না হয়।“
এরপর ১/১৬২/২১ নং ঋকে বলা হয়েছে-
"তুমি মরিতেছো না এবং আমরাও তোমার অনিষ্ট করিতেছি না, বরঞ্চ তুমি এই কার্য্য দ্বারা সৎপথে গমন করিতেছো।"
এরপর ঋগ্বেদের ১/১৬৩/১২ নং মন্ত্রে বলা আছে-
“এই দ্রুতগামী অশ্ব একমনে দেবগণকে ধ্যান করতে করতে বধ্যস্থানে গমন করিতেছে। উহার বন্ধুতুল্য ছাগলকেও বলির জন্য অগ্রে লইয়া যাওয়া হইতেছে এবং স্তোত্রপাঠক কবিগণ উহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিতেছে।“
এরপর শুক্লযজুর্বেদের ২৩/১৬ নং মন্ত্রে আমরা পাই,
"হে অশ্ব ! এই যে তুমি আমাদের দ্বারা কর্তিত হ'তে যাচ্ছ, তবে তোমার মরণ হবে না ও তুমিও বিনষ্ট হবে না। বলি পরবর্তী তুমি সুগম দেবযান পথে দেবতাদের নিকটে গমন করবে। যে স্থানে পুণ্যবানগণ নিবাস করেন এবং যে স্থানে তাঁরা গমন করেন, সেই পুণ্যবানদের জ্যোতির্ময়লোকে তোমাকে সবিতাদেব স্থাপন করুক ৷"
এখন দেখুন বিষ্ণু পুরাণের ৫.১.৮৬ নং শ্লোকে বলা আছে,
"হে দেবী! সুরা ও মাংস, ভক্ষ্য ও ভোজ্য দ্বারা তোমায় পূজা করলে তুমি প্রসন্ন হয়ে মনুষ্যগণের সর্ব প্রার্থিত বিষয় প্রদান করবে।"
মহাভারতে ভীষ্মপর্বের (২৩.৮) অন্তর্গত শ্রীমদ্ভগবদগীতা অধ্যায়ে রয়েছে- শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুনকে তাঁর যুদ্ধজয়সহ কল্যাণের জন্য বলেন, হে মহাবাহু অর্জুন, তুমি পবিত্রচিত্ত হয়ে যুদ্ধের অভিমুখে থেকে শত্রুগণের পরাজয়ের জন্য 'দুর্গাস্তব' পাঠ কর। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে অর্জুন রথ থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে কৃতাঞ্জলি হয়ে দুর্গাস্তব পাঠ করতে গিয়ে বলেন-
"সর্বদা মহিষরক্তপ্রিয়ে! কৌশিকি! পীতবসনে!
অট্টহাসে! কাকবদনে! রণপ্রিয়ে! তোমায় নমস্কার।।"
মানববৎসলা দুর্গা অর্জুনের ভক্তি এবং স্তোত্রে সন্তুষ্ট হয়ে শ্রীকৃষ্ণের সম্মুখে আকাশে আবির্ভূত হলেন। দেবী দুৰ্গা বললেন— "হে দুৰ্দ্ধৰ্ষ পাণ্ডু নন্দন ! তুমি অল্পকালের মধ্যেই সকল শত্রুগণকে জয় করবে। কারণ, স্বয়ং নারায়ণ তোমার সহায় এবং তুমিও মহর্ষি নরের অবতার ; সুতরাং তুমি শত্রুগণের কেন—স্বয়ং ইন্দ্রেরও অজেয়।"
এখানে খেয়াল করুন অর্জুন কিন্তু দুর্গাকে সম্বোধন করেছে- “মহিষরক্তপ্রিয়ে” বলে। আর সেই দুর্গা বা কালী সম্পর্কে দিব্যজ্ঞানীরা বলে- মা কি সন্তানের রক্ত চায় ?
এরপর দেখুন গরুড় পুরাণের পূর্ব খণ্ড, ৩৮.১৮ নং শ্লোকে বলা হয়েছে-
জয় ত্বং কামভূতেশ সর্ব্বভূতসমাবৃতে ।
রক্ষ মাং নিজভূতেভ্যো বলিং গৃহ্ন নমোঽস্তু তে ।।
অর্থাৎ সিংহবাহিনী মহিষমর্দিনী দেবীকে বলিপ্রদানপূর্বক পূজা সমাপন করবে।"
বৃহর্দ্ধমপুরাণের পূর্বখণ্ডে মহাষ্টমীতে উপবাস অবলম্বন করে এবং নবমীতে বলিদান দ্বারা মহাভক্তিসহকারে দেবীর দুর্গার পূজা করতে দেবী স্বয়ং আদেশ করেছেন। প্রমাণ দেখুন নিচে-
সপ্তম্যাং গৃহমানীয় পূজয়েন্মাং দিনদ্বয়ম্।
নানাবিধৈশ্চ বলিভিঃ পূজাজাগরণাদিভিঃ।।
অষ্টম্যামুপবাসেন নবম্যা বলিদানতঃ।
অর্চ্চয়েন্মাৎ মহাভক্ত্যা যোগিনীশ্চাপি কোটিশঃ ॥
অষ্টমীনবমীসন্ধিকালোঽয়ং বৎসরাত্মকঃ।
তত্রৈব নবমীভাগঃ কালঃ কল্পাত্মকো মম ॥
(বৃহর্দ্ধমপুরাণ: পূর্বখণ্ড,২২.২৭-২৯)
এর অর্থ- "সপ্তমিতে গৃহে এসে পূজা করবে। এরপরে দুইদিন নানাবিধ বলি, পূজা, ও জাগরণাদি দ্বারা আমার পূজা করবে। মহাষ্টমীতে উপবাস অবলম্বন করবে এবং নবমীতে বলিদান দ্বারা মহাভক্তিসহকারে আমার পূজা করবে। ঐ দুইদিন কোটীযোগিনীরও পূজা অবশ্য কর্তব্য। অষ্টমী নবমীর সন্ধিক্ষণে আমার পূজার বৎসর তুল্য কাল। এরমধ্যে আবার নবমীক্ষণ কল্পস্বরূপ কাল। অর্থাৎ অষ্টমীক্ষণে একবার পূজা করলে দেবীর বৎসরব্যাপী পূজার ফল লাভ হয়। নবমীক্ষণে পূজা করলে কল্পব্যাপী পূজার ফল লাভ হয়।"
সবচেয়ে বেশি পশুবলি হয় কালীপূজায়, আর কালীপূজা সম্পর্কিত শাস্ত্র হলো "শ্রীশ্রীচণ্ডী", এবার দেখা যাক শ্রীশ্রীচণ্ডীতে পশুবলি সম্পর্কে কী বলা হয়েছে-
শ্রীশ্রীচণ্ডীর দ্বাদশ অধ্যায়, যার নাম দেবীস্তব মাহাত্ম্য, তার ১০, ১১ এবং ২১, ২২ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে-
"বলিদান, পূজা, যজ্ঞ, ইত্যাদি ও বিবাহ মহোৎসবে আমার এই সমগ্র চরিত্র পাঠ করিবে এবং শুনিবে। কেহ জ্ঞানে বা অজ্ঞানে আমার উদ্দেশ্যে বলিদান, পূজা এবং বহ্নিহোম করিলে তাহা আমি প্রীতির সহিত গ্রহন করিয়া থাকি। সারা বছর দিন রাত পশুবলি, পুষ্প, অর্ঘ্য, ধূপ, দীপ, ব্রাহ্মণভোজন, যজ্ঞ, নানাপ্রকার ভোগ ও সোনা রূপা উৎসর্গে আমার যে প্রীতি লাভ হয়, এই মাহাত্ম্য একবার শুনিলে আমি সেই প্রীতি লাভ করি।"
অর্থাৎ কালী পূজায় বলিপ্রদান করলে মা কালী খুশি হোন এবং তার কাছে বলি একটি সাধারণ বিষয়। আর বেদের রেফারেন্স দিয়ে আগেই তো বলেছি যে, দেবতার উদ্দেশ্যে বলিপ্রদান করলে কোনো পশুর হত্যা হয় না, বরং সেই পশুর মঙ্গল করা হয়। জীবন হলো আত্মার ভ্রমণ, এই ভ্রমণে আত্মা এক দেহ ছেড়ে অন্য দেহ ধারণ করে। কোনো পশুরদেহ যখন কোনো দেবতার উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়, তখন সেই পশুর আত্মার সদগতি হয় এবং পরের জন্মে সে আরো উন্নততর জন্মলাভ করে। এজন্যই বেদে বলা হয়েছে- দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করা বলি, পশুহত্যা নয়।
আমি একটা কথা প্রায় বলি যে, কোনো দেব-দেবীর মূর্তির মধ্যে কোনো শক্তি নেই, শক্তি আছে সেই দেব-দেবীর আদর্শের মধ্যে। কালী পূজা করে কেউ যদি তার নিজের মধ্যে কালীর হিংস্রতাকে ধারণ করতে পারে, তাহলেই কালী কেবল তাকে রক্ষা করতে পারে।
সরাসরি কালী নয়, কালীর হাতের অস্ত্রই যে আমাদেরকে রক্ষা করবে, সে কথা বলা আছে শ্রীশ্রীচণ্ডীর একাদশ অধ্যায়ের ২৬ ও ২৮ নং মন্ত্রে, এই ভাবে-
"সমস্ত অসুর বিনাশকারী, অতি উগ্র, ভীষণ শিখাযুক্ত তোমার এই ত্রিশুল আমাদেরকে ভয় হতে রক্ষা করুক। হে দেবী চণ্ডীকে, অসুরগণের রক্ত ও মেদরূপ কর্দম মাখা তোমার উজ্জ্বল ঝকঝকে খড়গটি আমাদের মঙ্গল করুক।"
-তো দেবী কালীর এই ত্রিশুল এবং খড়গটি কিভাবে তার ভক্তদেরকে রক্ষা করবে ? বিপদে পড়ে দেবী কালীকে ডাকলে তিনি কি সশরীরে এসে তার ভক্তদেরকে রক্ষা করবে ? কখনোই নয়। এজন্যই আমি বলি দেব-দেবীর মূর্তির মধ্যে কোনো শক্তি নেই, শক্তি আছে সেই দেব-দেবীর আদর্শের মধ্যে। কেউ যদি চায় কালীর ত্রিশুল এবং খড়গ তার মঙ্গল করুক, তাহলে তাকে নিজেকেই সেই ত্রিশুল এবং খড়গ চালানো শিখতে হবে, এগুলোর ব্যবহার শিখতে হবে এবং এই ব্যবহার শেখার জন্য মাঝে মাঝে এগুলো নিয়ে চর্চা করতে হবে। এজন্যই চালু বলির সিস্টেম, এক কোপে পশুর গলা কাটতে কাটতে অভ্যাসে পরিণত হয়ে অসুররূপী সন্ত্রাসীদের গলা কাটতে যেন হাত, পা এবং বুক না কাঁপে; তাহলেই আপনি রক্ষা পাবেন মা কালীর আশীর্বাদে।
সনাতন ধর্ম মানুষের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান এবং এতে মানুষের আত্মরক্ষার ব্যাপারটি নিয়েও ভাবা হয়েছে। কিন্তু সনাতন ধর্মের মধ্যে চৈতন্যদেবের বৈষ্ণব মতবাদ অনুপ্রবেশ করে হিন্দু সমাজকে নপুংসকে পরিণত করে ফেলেছে এবং ফেলছে। কারণ, বৈষ্ণব মতবাদ অনুযায়ী একজন মানুষ হবে দীন হীন, তার কোনো অহংকার, রাগ জেদ, বিদ্বেষ থাকবে না, কেউ তার গালে একটা চড় মারলে, সে পাল্টা আঘাত করার পরিবর্তে বলবে- তোমার হাতে লাগে নি তো ? এর মানে হলো- মেরেছো কলসীর কানা, তাই বলে কি প্রেম দেবো না ?
এছাড়াও কোনো বৈষ্ণব কোনোদিন কিছু সঞ্চয় করবে না, প্রতিদিন সে মাধুকরী করে অর্থাৎ দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে তার জীবিকা অর্জন করবে; এই হলো একজন বৈষ্ণবের চরিত্র, এর বাইরে বৈষ্ণব মতবাদের মূল থিয়োরি মোতাবেক বৈষ্ণবের কোনো বিয়ে শাদী ঘর সংসার ছেলে মেয়ে নেই, ফলে বৈষ্ণব সমাজ বলেও কিছু নেই। যার স্ত্রী নেই, তার যেমন স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ এবং রক্ষার কোনো ব্যাপার নেই, বৈষ্ণব মতবাদেও তেমনি বৈষ্ণব সমাজ বলেই কিছু নেই, ফলে সেই সমাজ রক্ষার তাগিদ তার মধ্যে থাকবে কেনো ? তাই বৈষ্ণব মতবাদে আত্মরক্ষার কোনো ব্যাপার নেই, ব্যাপার আছে শুধু মার খাওয়ার এবং কান্নাকাটি করার।
আজ যারা বলির বিরুদ্ধে কথা বলছে বা বলে, তারা হয় এই বৈষ্ণব, না হয় চৈতন্যের বৈষ্ণব মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত নপুংসক। বৈষ্ণব মতবাদে সাধারণভাবে মাছ মাংস খাওয়াই অন্যায়, সেখানে তারা পশুবলির বিরুদ্ধে কথা বলবে না কেনো ? বৈষ্ণব মতবাদ, বিয়ে-শাদির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে, পরিবার গঠনের বিরুদ্ধে কাজ করে একদিকে যেমন হিন্দু সমাজের জনসংখ্যা কমাচ্ছে, অন্যদিকে হিন্দু সমাজকে নিরামিষ খাইয়ে হিন্দুদের কাম ক্রোধ ও দৈহিক শক্তিকে নিঃশেষ করে দিয়ে হিন্দু সমাজকে তার বিরোধী মুসলিম শক্তির কাছে মার খাওয়াইয়ে হিন্দু সমাজকে বিলুপ্ত করার জন্য তারা তাদের অজ্ঞাতেই কাজ করে চলেছে।
হিন্দুত্রাতা লেখক ড. রাধেশ্যাম ব্রহ্মচারী, পশ্চিমবঙ্গে বাম শাসনের ভয়াবহ কুফল উপলব্ধি করে তার সে সম্পর্কিত একটি বইয়ের নাম রেখেছেন, "বামপন্থা : বাংলার সর্বনাশ", একইভাবে আমি বলছি- বৈষ্ণব মতবাদ হলো সনাতন হিন্দুধর্মের সর্বনাশ। বামপন্থাকে ঝেড়ে ফেলেই যেমন পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা একটু একটু করে উঠে দাঁড়াচ্ছে, তেমনি বৈষ্ণব মতবাদকে মাথা থেকে সম্পূর্ণভাবে ঝেড়ে ফেললেই কেবল হিন্দুরা কোমর সোজা করে উঠে দাঁড়াতে পারবে, তারপর কারো ক্ষমতা নেই হিন্দুদেরকে কোনোভাবে দাবিয়ে রাখে।
মোদী-অমিত শাহ বর্তমানে ভারত শাসন করছেন সনাতন ধর্মের ক্ষত্রিয় নীতিতে, এর ফলে পাকিস্তান তো কোন ছাড়, সারা বিশ্ব বর্তমানে ভারতকে কুর্নিশ করতে বাধ্য হচ্ছে, একইভাবে প্রতিটি হিন্দু যখন বৈষ্ণবীয় নপুংসক নীতিকে পরিত্যাগ করে সনাতনী নীতিতে চলবে, তখন পৃথিবীর সমগ্র জাতি হিন্দুদের কাছে মাথা নত করে চলতে বাধ্য হবে। আর সনাতন ধর্মেরই একটি বিধি বা নীতি হলো দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে পশুবলি, যা হিন্দুদেরকে দেয় মানসিক শক্তি এবং দৈহিক ক্ষমতা, যে মানসিক শক্তি এবং দৈহিক ক্ষমতার বলে পৃথিবীতে টিকে থাকে এবং রাজ করে কোনো জাতি।
কিছু দিব্যজ্ঞানী এই প্রশ্ন তুলে যে- মা কেনো তার সন্তানের রক্ত চাইবে বা খাবে ? মা তার সন্তানের রক্ত খায় বা চায়, সেটা কে বলেছে ? জগদীশ্বরী হিসেবে মা যেমন তার সন্তানকে সৃষ্টি করেন, তেমনি নির্দিষ্ট সময় পর তাকে হত্যাও করেন এবং তারপর তাকে আরও উন্নত যোনী বা শ্রেণীতে আবার জন্ম দেন, আবারও হত্যা করেন, এই ভাবে কোনো আত্মাকে তিনি মানব কূলে জন্ম ঘটান, যে মানবকূল থেকে কেউ মোক্ষ লাভ করে ঈশ্বরের সাথে লীন হতে পারেন। তাই যখন কোনো মানুষ, কোনো পশুকে কোনো দেবীর চরণে উৎসর্গ করেন, সেটা ঐ পশুর সৌভাগ্য, কারণ সে দ্রুত মানব কূলে জন্ম নিতে পারবে এবং জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে বেরিয়ে মোক্ষ লাভ করতে পারবে। তাই কোনো পশুর বলি প্রদান, সেই পশুর ক্ষতি করা নয়, বরং তার উপকার করা। কারণ, তাকে বলি না দেওয়া হলেও তো সে দু চারদিন পর এমনিতেই মরবে।
এজন্যই তো যেকেনো দেশের সৈনিকরা দেশের জন্য নিজের প্রাণকে উৎসর্গ করে, কারণ তারা জানে যে সাধারণভাবে মরলে লোকজন কেউ তাদেরকে মনে রাখবে না, কিন্তু যদি দেশের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে মরে, তাহলে তারা বীরের মর্যাদা পাবে এবং দেশ ও জাতি তাদেরকে দীর্ঘদিন স্মরণ করবে। এজন্য যেকোনো সৈনিকের জন্য স্বাভাবিক মৃত্যুর চেয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের মৃত্যু অনেক বেশী গৌরব ও সম্মানের, যারা এটা বোঝে, তারা যুদ্ধক্ষেত্রের মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করে।
আশা করছি- উপরের আলোচনা থেকে পশুবলির মূল কারণ এবং তার শাস্ত্রীয় রেফারেন্স সম্পর্কে, আমার বন্ধুদেরকে অবগত করাতে পেরেছি।
জয় সনাতন।
জয় মা কালী।



পশুবলি প্রথা



প্রণব কুমার কুণ্ডু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন