শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২

পূজায় ঘট

 পূজায় ঘট


শেয়ার করেছেন : প্রণব কুমার কুণ্ডু













⚛️ পুজোর অংশবিশেষ ঘট কিসের প্রতীক?
🔯 পুজোর পূর্বে ঘট স্থাপন করা হয় কেন?
☸️ যে কোন পূজায় ঘট কেন অপরিহার্য?
✡️ ঘট কার প্রতিনিধিত্ব করে?
☸️ হিন্দুধর্মে_ঘট_ব্যবহার_করা_হয় _কেন?

ছোটবেলা থেকে অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে,যেকোনো পুজোয় ঘট কেন ব্যবহার করা হয়? দুর্গা পুজা, লক্ষ্মী পুজা, সরস্বতী পুজা , মনসা পুজা, প্রায় সব পুজায় দেখা যায় যে প্রতিমা থাকুক আর না থাকুক, ঘট থাকবেই।
কারো কারো মতে ঘট নিরাকার ব্রহ্মের প্রতীক! পরব্রহ্ম পরমেশ্বর ভগবানের নিরাকার অভিব্যক্তি।
আবার কারো কারো সিদ্ধান্ত এরূপ , যে কোন পুজোর সময় ঘট স্থাপন করা হয় তা কোন দেবী বা দেবতার প্রতিমা নয়। ঘট- পূজায় আহবানকৃত দেব অথবা দেবীর অবস্থার প্রতীক।

পুজোর সময় যেমন ভগবানের সাকার স্বরূপকে পুজো করা হয়, তেমনি পুজোতে ঘট বসিয়ে দেব অথবা দেবীর পুজো করা হয়। তাই ঘট স্থাপন প্রতি পুজোতে একান্ত আবশ্যক। ঘট স্থাপন ছাড়া পুজো অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। প্রায় সব পুজোয় ঘট লাগে। যারা ঘট স্থাপন করে পূজা করেন তারা ঘটের মধ্যে অনেক উপাদান ব্যবহার করে থাকেন। আসুন নিম্নে আমরা এ বিষয়ে জানবো।

🕉️পর্ব-১🕉️
সমাজের বেশিরভাগ লোকের মন্তব্য নিম্নরূপ!!!!

ঘট আমাদের দেহের প্রতিরূপ।পূজার সময় পঞ্চগুড়ি দিয়ে পিঠ তৈরী করা হয়।এই পঞ্চগুড়ি,পঞ্চমহাভূত অর্থাৎ ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম এর প্রতীক।এই পঞ্চমহাভূতের উপর মৃত্তিকা দিয়ে পিঠ করা হয়। মৃত্তিকা বেদীর উপর পঞ্চশষ্য দেওয়া হয়।পঞ্চশষ্য আমাদের কাম ক্রোধ,লোভ,মোহও মাৎসর্য্য এই পঞ্চবৃত্তির প্রতীক।এর উপর ঘটস্থাপন করা হয়। ঘট আমাদের দেহের প্রতীক।আধ্যাত্মিক ভাষায় দেহকে দেহ ঘট বলা হয়।ঘটের ভেতর পঞ্চরত্ন দেওয়া হয়।আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয় যথা-চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা,ত্বক ওজিহ্বা হলো পঞ্চরত্ন।এরপর ঘটে জল ঢেলে পূর্ণ করা হয়।জল হলো দেহরস অর্থাৎ রক্ত।ঘটে এবার পঞ্চ পল্লব দেওয়া হলো ,যা আমাদের গ্রীবা বা গলার রূপ।আমাদের গ্রীবায় পঞ্চবায়ু অর্থাৎ অপান,অপান,উদান,সমান ও ব্যান থাকে।এই পঞ্চবায়ুই পঞ্চ পল্লবের প্রতীক।এর উপরে ডাব বা নারিকেল দেওয়া হলো ,আমাদের মুখের মতোই নারিকেলেরও চোখ মুখ,নাক দেখা যায়।সেই কারণেই নারিকেল আমাদের মুখ মন্ডলের প্রতিরূপ।মস্তক থাকলে তাতে আচ্ছাদন দিতে হয়,আর সেই কারণে নারিকেলের উপর গামছা বা বস্ত্র দেওয়া হয়।এই হলো আমাদের দেহের প্রতিরুপ ।আর কান্ডকাঠী চার বেদের প্রতীক।

⚛️পর্ব-২,🔯
অনেক পণ্ডিত মহলের মন্তব্য নিম্নরূপ!!!!
"যে কোন পূজার সময় ঘট স্থাপন করতে হয়। ঘট কোন দেবী বা দেবতার মূর্তি নয়। ঘট ভগবানের নিরাকার অবস্থার প্রতীক। হিন্দুরা পূজার সময় যেমন ভগবানের সাকার স্বরূপ কে পূজা করে তেমনি নিরাকার স্বরূপকেও পূজা করেন । তাই ঘট স্থাপন প্রতি পূজাতে একান্ত আবশ্যক। ঘট স্থাপন ছাড়া পূজা অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। সর্ব পূজায় ঘট লাগে। ঘট স্থাপন করতে প্রয়োজন মাটি ( গঙ্গা মাটি হলে ভালো, অভাবে কোন পবিত্র পুষ্করিণী বা কোন নদীর মাটি), ধান , ঘট ( মাটি, পিতল, তামার ঘট প্রশস্ত – অভাবে স্টিলের ঘট ), জল, পল্লব ( আম্র পল্লব প্রশস্ত অভাবে অশ্বত্থ, বট, পাকুর ও যজ্ঞডুমুর পাঁচ বা সাতটি পাতা একত্রে ), গোটা ফল ( সশীষ কচি ডাব প্রশস্ত- অভাবে কাঁঠালী কলা, হরিতকী ) , পুস্পমালা, সিন্দুর ( ঘৃত সিন্দুর বা সরিষার তৈল ও সিন্দুর গোলা ), নতুন গামছা লাগে । মূর্তি তে পূজো করলে ঘট সম্পূর্ণ আচ্ছাদনের জন্য লাল শালু কাপড়, ৪ টে তিরকাঠি ও লাল ধাগা লাগে অন্যথায় প্রয়োজন নেই । প্রথমে নরম মাটি ভিজিয়ে মাটিতে দিন। ঘটে স্বস্তিক বা পুত্তলিকা সিঁদুর দিয়ে অঙ্কন করে ঘটে জল পূর্ণ করুন। ঘটের মুখে পল্লব দিন, পল্লবের প্রতিটি পাতায় সিঁদুরের ফোটা দিন। পল্লবের উপরে ফল বসান, ফলে পুত্তলিকা অথবা পাঁচটি সিঁদুরের ফোটা দিন। এবার গামছা দিয়ে ফল ঢেকে দিন। মালা দিন ঘটে । এবার ঘট সেই মাটির ওপর অল্প ধান দূর্বা দিয়ে তার ওপর দেবতার সামনে বসান। এবার মন্ত্র বলার পালা । সাধারণত ঋক, যজু, সাম বেদ মতে ঘট স্থাপন হয়। যেহেতু উত্তরপূর্ব ভারতে সাম বেদের মত বেশী- তাই এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন। মন্ত্র হল – ভূমিতে হাত দিয়ে বলুনঃ- ওঁ ভূমিরন্তরীক্ষং দ্যৌ র্দা ভূতায়াঃ । ধানে হাত দিয়ে বলুনঃ- ওঁ ধানাবন্তং করম্ভিণ- মপূপবন্তমুকথিনম্ । ইন্দ্র প্রাতর্জুযস্ব নঃ । জলে হাত দিয়ে বলুনঃ- ওঁ আ নো মিত্রাবরুণা ঘৃতৈর্গব্যৃতি মুক্ষতং । মধ্বা রজাংসি সুক্রুতু । পল্লব ধরে বলুনঃ- ওঁ অয়মুর্জাবতো বৃক্ষ উর্জীব ফলিনী ভব । পর্ণং বণস্পতে নুত্বা নুত্বা চ্ সূয়তাং রয়িঃ । ফল ধরে বলুনঃ- ওঁ ইন্দ্রং নরো নেমধিতা হবন্তে যৎ পার্য্যা যুনজতে ধিয়ন্তাঃ । শূরো নৃষাতা শ্রবসশ্চ কাম আগোমতি ব্রজে ভজা ত্বং নঃ । পুস্পমাল্য ধরে বলুনঃ- ওঁ পবমান বাশুহি রশ্মির্ভিবা জসাতমঃ । দধৎ স্ত্রোত্রে সুবীর্য্যাম ।। ইতি পুস্পেন । সিন্দুর ধরে বলুনঃ- ওঁ সিন্ধোরুচ্ছ্বাসে পতয়ন্তমুক্ষণং । হিরণ্যপাবাঃ পশুমপসু গৃভণতে ।। ঘট ধরে বলুনঃ- ওঁ ত্বাবতঃ পুরুবসো বয়মিন্দ্র প্রনেতঃ। স্মসি স্থাতর্হরীণাং ।। ওঁ স্থাং স্থীং স্থিরো ভব । হাত জোর করে দেবতার আহ্বানের জন্য বলুন ( পুরুষ দেবতা অর্থাৎ ভগবান)ঃ- ওঁ সর্বতীর্থোদ্ভবং বারি সর্বদেবসমন্বিতম্ । ইমং ঘটং সমারুহ্য দেবগণৈঃ সহ ।। ( মায়ের পূজোর ক্ষেত্রে )ঃ- ওঁ সর্বতীর্থোদ্ভবং বারি সর্বদেবসমন্বিতম্ । ইমং ঘটং সমারুহ্য দেবিগণৈঃ সহ ।। এরপর যে দেবতার পূজা করছেন সেই দেবতার গায়ত্রী ঘটের ওপর ১১ বার জপ করুন। চাইলে ১০৮ বার ও জপ করতে পারেন। ধরুন সরস্বতী দেবীর পূজা করছেন, তাহলে ঘটের ওপর মা সরস্বতীর গায়ত্রী জপ করবেন। ধরুন শিবের পূজো করছেন, তাহলে ঘটের ওপর শিব গায়ত্রী জপ করবেন । তারপর নিয়ম মতন ৫ মুদ্রা দ্বারা সেই দেবতার আহ্বান করতে হয়। সেটা অন্যদিন প্রকাশ করা হবে । পূজার সময় ঘট কোন কারনে পড়ে যাওয়া ঘোর অমঙ্গল। সেক্ষেত্রে ক্ষমা প্রার্থনা করে নতুন করে ঘট বসাতে হবে। আর পূজা শেষে ঘট বিসর্জন ( গৃহ লক্ষ্মী পূজায় গুরুবারে ঘট বসানো ব্যতিক্রম ) করবেন। আর যদি বিসর্জন না করেন, তাহলে সেই ভগবান বা সেই দেবী ঘটেই অবস্থান করবেন। প্রত্যহ নিয়মিত আপনাকে পূজা করতে হবে। তাই বেশীরভাগ ভক্ত পূজান্তে ঘট বিসর্জন করেন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন