মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২১

গন্ডার

 গন্ডার


ছবিতে থাকতে পারে: লোকেরা বসে আছে, আউটডোর, টেক্সট এবং প্রকৃতি

বাংলা 'গেঁড়াকল' ('গেঁড়া'=গন্ডার; 'কল'=ফাঁদ) উপমাটির উৎপত্তি সম্ভবত গন্ডার ধরার ফাঁদ থেকে।
তবে কি বাংলাদেশেও গন্ডার ছিল?
হ্যাঁ! বুনো পরিবেশে গন্ডারের পাঁচটি প্রজাতির বাস।
দুটো প্রজাতি আফ্রিকান ও তিনটি প্রজাতি এশিয়ান।
এককালে এশিয়ান তিনটি প্রজাতির সবকটির বিচরণ ছিল আমাদের দেশে!
দেশের উত্তরের বরেন্দ্র অঞ্চল,ময়মনসিংহ,সুন্দরবন,বরিশালে এক শিং-ওয়ালা এবং চট্টগ্রাম,কুমিল্লা,কক্সবাজার অঞ্চলে দুই শিং-ওয়ালা গন্ডারের বাস ছিল। কিন্তু মানববসতি বিস্তারের ফলে আবাসস্থল হারিয়ে এবং শিকার হয়ে প্রায় দেড়শত বছর আগে পূর্ববঙ্গ থেকে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায় স্থুলকায় এ বন্য প্রাণিটি।
প্রাচীনকালে সুন্দরবন অঞ্চলের অধিবাসীদের কাছে গন্ডারের মাংসের সমাদর ছিল। সুন্দরবনের প্রাচীন প্রত্নস্থলে প্রাপ্ত গন্ডারের দাঁতের জীবাশ্ম থেকে এটাই অনুমান করা হয়। তাছাড়া সেসময় গন্ডারের শিং ও চামড়ার চাহিদাও ছিল। সুন্দরবন থেকে গন্ডারের বেশকিছু কঙ্কাল/জীবাশ্ম পাওয়া গেছে।
জানা যায়,সুন্দরবন অঞ্চলে 'ঢালী' পদবির লোকজন গন্ডার শিকার করে চামড়া ছাড়িয়ে তা দিয়ে যুদ্ধের জন্য ঢাল তৈরি করত। এ থেকেই তারা 'ঢালী' পদবিতে পরিচিত হয়।
ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশ সাহেবদের লাগামহীন শিকারের ফলে অবশিষ্ট গন্ডারের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। ঔপনিবেশিক যুগে শিকার করা গন্ডারের চামড়া,শিং কিংবা পুরো দেহ প্রায়শই লন্ডন,বার্লিনে পাচার করা হতো জাদুঘরের শান বৃদ্ধির জন্য। ব্রিটিশ শাসনের শত বছর পেরোতে না পেরোতেই দেশীয় গন্ডার বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়।
দেশের শেষ 'জীবিত' গন্ডারটি উদ্ধার হয় ১৮৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে,চট্টগ্রামে। চোরাবালিতে আটকা পড়া দুইশিঙ্গি গন্ডারটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন প্রশাসনকে জানায়। ক্যাপ্টেন হুড এবং মি. উইকস আটটি হাতি নিয়ে টানা ১৬ ঘণ্টা চেষ্টা-চরিতের পর গন্ডারটিকে বন্দি করতে সমর্থ হন।
কিন্তু জন্মভূমিতে আর বেশিদিন তার ঠাঁই মেলেনি। ১৮৭২ সালে পাঁচ হাজার ডলারের বিনিময়ে বাংলাদেশের শেষ জীবিত গন্ডারটিকে বিক্রি করে দেওয়া হয় লন্ডন চিড়িয়াখানায়। লন্ডন চিড়িয়াখানায় গন্ডারটি 'বেগম' নামে পরিচিত হয় (ছবি কমেন্টবক্সে)। কিউলম্যান নামক এক চিত্রকর চিড়িয়াখানায় বেগমের একটি ছবিও আঁকেন।
এরপরও এ ভূখন্ডে গন্ডার শিকার এবং গন্ডারের পায়ের ছাপ দেখার কয়েকটি দাবি শোনা গেলেও জীবিত আর কোন গন্ডার উদ্ধার সম্ভব হয় নি। ১৮৭৬ সালে কুমিল্লায় শিকারির গুলিতে নিহত দুইশিঙ্গি আরেকটি গন্ডারের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এছাড়া জনৈক শিকারি কালাচাঁদের গুলিতে কাছাকাছি সময়েই আরেকটি গন্ডারের মৃত্যুর কথা জানা যায়। উনিশ শতকের মধ্যেই কিংবা বিশ শতকের শুরুতে নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ববঙ্গ) থেকে বন্য গন্ডারের সব প্রজাতি বিদায় নেয়।
শেয়ার করছেন :- প্রণব কুমার কুণ্ডূ


2

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন