দ্রৌপদী ( দুই )
শেয়ার করেছেন প্রণব কুমার কুণ্ডু
·
যাজ্ঞসেনীর জন্মবৃত্তান্ত : ডাঃ ইন্দ্রনীল আইচ
*************************************************
অস্ত্রশিক্ষা শেষ হওয়ার পরে পাণ্ডব এবং কৌরবদের থেকে গুরুদক্ষিণা চাইলেন দ্রোণাচার্য। বললেন, "পাঞ্চালরাজ দ্রুপদকে চাই আমার...জীবিত...ধরে আনো তাঁকে"। প্রথমে ছুটলেন ধৃতরাষ্ট্রের একশো ছেলে...সঙ্গে হস্তিনাপুরের সেনা। দুর্যোধন ভেবেছিলেন কাজটা খুবই সহজ হবে। দ্রুপদ খুব একটা হেলাফেলা করার লোক ছিলেন না...কুরু রাজ্যের মতোই বড় পাঞ্চাল রাজ্যের রাজা ছিলেন তিনি। দ্রুপদ ছিলেন মহারথী...একই সঙ্গে যুদ্ধের ট্যাকটিক খুব ভালো বুঝতেন। যুদ্ধক্ষেত্রে নবাগত দুর্যোধন এবং তাঁর নিরানব্বই ভাইকে পর্যুদস্ত করলেন দ্রুপদ। দুর্যোধন এবং তাঁর ভাইয়েরা কোনমতে প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে এলেন।
এবার পান্ডবদের পালা। পাঁচ ভাই দ্রুপদের বিশাল সেনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। মাত্র পাঁচজনকে দেখে দ্রুপদের তো হেসে গড়িয়ে পড়বার মতো অবস্থা। সেনাপতিদের বললেন, "কচুকাটা কর ব্যাটাদের...আমার সঙ্গে যুদ্ধ করবার সাধ ঘুচিয়ে দে"। শুরু হলো যুদ্ধ। সবার সামনে ভীম...তাঁর পিছনে যুধিষ্ঠির, নকুল এবং সহদেব কোনমতে দ্রুপদের সেনাবাহিনীকে ট্যাকল করতে শুরু করলেন। সবার অলক্ষ্যে অর্জুন একপাশ দিয়ে দ্রুপদের দিকে এগোতে শুরু করলেন। কৌতুকের সঙ্গে এই অসম যুদ্ধ দেখতে ব্যাস্ত দ্রুপদ খেয়াল করলেন না যে কখন অর্জুনের রথ তাঁর রথের পাশে চলে এসেছে! নিজের রথ থেকে লাফিয়ে দ্রুপদের রথে উঠে দ্রুপদের গলায় ছুরি ধরলেন অর্জুন। বললেন, "আমার গুরু দ্রোণের নামে আমি আপনাকে বন্দী করলাম মহারাজ...নিজের সেনাদের বলুন অস্ত্রত্যাগ করতে...যুদ্ধ শেষ!"
দ্রুপদের হাতে শেকল পরিয়ে দ্রোণের সামনে হাজির করলেন পান্ডবরা। দ্রোণ বললেন, "ছোটোবেলায় তোমার দেওয়া কথা অনুযায়ী...তোমার রাজত্বের অর্ধেক আমি নিলাম। বিশ বছর আগে একটা গরু চাইতেই তো তোমার কাছে গিয়েছিলাম। তাও নিজের জন্য চাইতে যাইনি...আমার ছেলে অশ্বত্থামা দুধ খেতে চেয়েছিল...ওকে দুধ খাওয়ানোর আর্থিক ক্ষমতা আমার ছিল না। তাই সেই দুধের জন্যই তোমার কাছে একটা গরু চেয়েছিলাম। তুমি সেদিন আমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলে। সেইজন্য যে অর্ধেক রাজত্ব তোমার রইলো...তার থেকে মাত্র একটা গরু আমি নিলাম। যাও...তুমি মুক্ত...এবার থেকে অর্ধেক রাজত্ব নিয়ে শান্তিতে থাকো"।
মুক্তি পেয়ে নিজের রাজ্যের দিকে ফিরতে লাগলেন দ্রুপদ। রাগে, অপমানে ফুঁসছেন তখন তিনি। মাথায় একটাই চিন্তা…বদলা চাই এই অপমানের...প্রতিশোধ চাই। কি প্রতিশোধ? দ্রোণের মৃত্যু...তাছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু কিভাবে? দ্রোণ দ্রুপদের সহপাঠী ছিলেন। দ্রুপদ জানেন, স্বয়ং মহাদেব, পরশুরাম এবং ভীষ্ম ছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রোণকে পরাজিত করবার ক্ষমতা কারও নেই...তাঁরও নেই। তাহলে উপায়? উপায় একটাই...যজ্ঞের মাধ্যমে অলৌকিক উপায়ে এমন একজন পুরুষকে উৎপন্ন করা, যার জন্মই হবে দ্রোণকে বধ করবার জন্য। কিন্তু এই যজ্ঞ করবে কে?
দ্রুপদ গঙ্গা এবং যমুনা নদীর তীরে ঘোরাঘুরি করে এমন একজন ঋষির সন্ধান করতে লাগলেন, যিনি দ্রুপদের হয়ে এই কাজটি করতে পারবেন...অর্থাৎ যার হোমাগ্নির মধ্যে থেকে সন্তান উৎপাদন করবার ক্ষমতা আছে। অবশেষে তিনি উপযাজ নামক এক ঋষির সন্ধান পেলেন...যিনি এই কাজ করতে পারেন। দ্রুপদ উপযাজকে অনেক পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে বললেন, "ঋষিবর...আপনি দয়া করে আমার এই কাজটা করে দিন"। কিন্তু উপযাজ কিছুতেই রাজি হলেন না। বললেন, "রাজন...এই পাপ কাজ আমি কিছুতেই করতে পারবো না"। দ্রুপদ উপযাজের পিছনে প্রায় এক বছর লেগে রইলেন, কিন্তু উপযাজের সেই এক কথা…"আমি পারবো না রাজন...আপনি অন্য উপায় দেখুন"।
অবশেষে একদিন উপযাজের দয়া হলো। তিনি দ্রুপদকে বললেন, "এখান থেকে কিছু দূরে আমার দাদা থাকেন। তাঁর নাম যাজ। তাঁর শুচি-অশুচি বোধ নেই। আপনি তাঁকে অনুরোধ করুন...আমার বিশ্বাস তিনি আপনার কাজ করে দেবেন"।
পরদিনই দ্রুপদ ছুটলেন যাজের কাছে। সব শুনে যাজ বললেন, "রাজন...বৃক্ষ থেকে বৃন্তচ্যুত হয়ে কোনো ফল যদি আঁস্তাকুড়েও পড়ে...তাহলেও সেই ফল কখনোই আঁস্তাকুড়ের হয় না...সেই ফল সর্বদা সেই বৃক্ষের বলেই গণ্য করা হয়। অতএব...আমি তোমার কাজটি করবো"।
যজ্ঞের দিনক্ষণ ঠিক হল। যাজ বললেন...যজ্ঞের পূর্ণাহুতি দ্রুপদের স্ত্রী অর্থাৎ রাজমহিষীকে দিতে হবে। এই পূর্ণাহুতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যজ্ঞের আগুন থেকে বার হবে দ্রুপদের বহুকাঙ্ক্ষিত পূত্র...যিনি ভবিষ্যতে দ্রোণ বধ করবেন। বেশ কথা। শুরু হল যজ্ঞ। অগ্নি সংযোগ থেকে আহুতিপ্রদান সবকিছুই নির্বিঘ্নে হয়ে গেল। সময় এলো পূর্ণাহুতি দেওয়ার। ডাক পড়ল রাজমহিষীর। একজন সান্ত্রী রানীকে ডাকতে ছুটল। খানিকবাদে সে ফিরে এসে বলল, "রানীমা বললেন যে তিনি স্নান করছেন...আসতে দেরী হবে!"
এ কি কথা! যে রানীর দেওয়া পূর্ণাহুতির উপর তাঁর স্বামী অর্থাৎ দ্রুপদের অপমানের প্রতিশোধ নির্ভর করে রয়েছে...পূর্ণাহুতির সময় সেই রানী কিনা স্নান করছেন! ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন যাজ। বললেন, "আমার যজ্ঞের পূর্ণাহুতি কারও স্নানের জন্য আটকে থাকতে পারে না...পূর্ণাহুতি আমি নিজেই দেবো!" যাজ নিজেই পূর্ণাহুতি দিলেন...পরক্ষণেই যজ্ঞের আগুন থেকে বার হলেন অস্ত্রসজ্জিত ধৃষ্টদ্যুম্ন। একটু বিরতি। হোমাগ্নি থেকে বার হলেন একজন কৃষ্ণাঙ্গী নারী...অপরূপ মুখশ্রী...তন্বী...নাম কৃষ্ণা...দ্রৌপদী।
একটু পরে যজ্ঞস্থলে এলেন রানী। একঝলক তাকিয়ে দেখলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং দ্রৌপদীর দিকে। দ্রুপদকে বললেন, "এরা যেন আজ থেকে আমাকেই মা বলে মানে"।
ব্যাস...দ্রৌপদীর জন্মবৃত্তান্ত এতদূর অবধি জানলেই হবে। আমরা সকলেই এই গল্প অল্পবিস্তর জানি। আমরা সকলেই জানি যে দ্রৌপদী এবং ধৃষ্টদ্যুম্ন ছিলেন দিব্যজন্মা...তাঁরা দুজনেই পরিণত অবস্থায় যজ্ঞের আগুন থেকে জন্মেছিলেন...অর্থাৎ তাঁদের শৈশব বা কৈশোর বলে কিছু ছিল না...এমনটাই আমরা পড়ে এসেছি।
আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন...কেউ কি পরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করতে পারে? তাও আবার যজ্ঞের আগুন থেকে? মেডিকেল সায়েন্স বা ফিজিক্স...বা বিজ্ঞানের অন্য কোনো ধারা কি এহেন জন্মপদ্ধতিকে ব্যাখ্যা করতে পারে? উত্তর একটাই...না, পারে না। তাহলে আসলে কি ঘটেছিল?
মহাজ্ঞানী বেদব্যাস দ্রৌপদীর জন্ম উপাখ্যান নিয়ে যত শব্দ খরচা করেছেন...সম্ভবত মহাভারতের অন্য কোনো চরিত্রের জন্ম উপাখ্যানে এতো শব্দ তিনি খরচা করেননি। তিনি দ্রৌপদীর জন্মকে অলৌকিক বলে বর্ণনা করেছেন...একই সঙ্গে সেই উপাখ্যানের পরতে পরতে এমন কিছু ক্লু রেখে গেছেন, যার মাধ্যমে যে কেউ আসল সত্যকে উদ্ঘাটিত করতে পারে। উপাখ্যানের মধ্যে এমন কিছু গ্যাপ বা প্রশ্ন আছে, যার উত্তরগুলিই হলো আসল সত্যের চাবিকাঠি। কি সেই প্রশ্ন?
প্রশ্ন ১ : মহাভারতের যুগে অলৌকিক উপায়ে অভীষ্ট বস্তু লাভের জন্য প্রত্যেকেই হিমালয় বা বনে গিয়ে তপস্যা করতেন। দ্রুপদ গঙ্গা এবং যমুনার তীরে ঘোরাঘুরি করছিলেন কেন?
প্রশ্ন ২ : মহাভারতে দ্রোণের জন্ম হয়েছিল কুনিকার মধ্যে, দুর্যোধনসহ একশো কৌরবের জন্ম হয়েছিল জালার মধ্যে; ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু এবং পঞ্চপান্ডবরা ছিলেন ক্ষেত্রজ পুত্র...সন্তান লাভ করবার এই প্রচলিত পদ্ধতিগুলি ত্যাগ করে দ্রুপদ যজ্ঞের আগুন থেকে সন্তান পাওয়ার ব্যাকডেটেড পদ্ধতিকে বেছে নিলেন কেন? (রামচন্দ্র এবং তাঁর তিন ভাইয়ের জন্মবৃত্তান্ত মনে করুন...সেটা ত্রেতা যুগের কথা অর্থাৎ মহাভারতের ঘটনার অনেক আগে ঘটেছিল)
প্রশ্ন ৩ : যজ্ঞের মাধ্যমে সন্তান লাভের জন্য দ্রুপদ উপযাজ নামক এক অখ্যাত ঋষিকে বেছে নিলেন কেন? উপযাজের কথা মহাভারতের আর কোথাও নেই। যজ্ঞের আগুন থেকে সন্তান বার করবার ক্ষমতা আদেও কি উপযাজের ছিল? এতোবড় ক্ষমতার অধিকারী হলে তো তিনি এলিট সম্প্রদায়ের ঋষি বলে গণ্য হতেন...কিন্তু তা তো তিনি হননি...আর কোনো ধর্মগ্রন্থে উপযাজের উল্লেখ নেই।
প্রশ্ন ৪ : দ্রুপদ সন্তানলাভের বাসনা নিয়ে অন্য কোনো বিগশট ঋষির কাছে গেলেন না কেন? সেইসময়টা তো ব্যাস, পরাশর, দূর্বাসার মতো বিগশট ঋষিদের। ব্যাপারটা তো এইসব ঋষিদের কাছে "বাঁয়ে হাত কা খেল" ছিল। দ্রুপদতো এদের অ্যাপ্রোচই করলেন না। কেন? তিনি কি বুঝেছিলেন যে এইসব ঋষিদের (যাদের কন্ট্যাক্ট বিশাল) অনুরোধ করলে ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যাবে? কি গোপন রাখতে চাইছিলেন দ্রুপদ? তিনি কি আগেই জানতেন যে এই কাজটি এনারা করবেন না?
প্রশ্ন ৫ : দ্রুপদের অনুরোধের উত্তরে উপযাজ বললেন যে এই পাপকাজ তিনি করতে পারবেন না। কিসের পাপ? দ্রুপদ তো কেবলমাত্র সন্তান চাইছেন...এর মধ্যে পাপ এলো কোথা থেকে?
প্রশ্ন ৬ : উপযাজ দ্রুপদকে নিজের দাদা যাজের রেফারেন্স দেওয়ার সময় বললেন, "যাজের শুচি-অশুচি বোধ নেই...সে আপনার কাজটা করে দেবে"। সন্তানলাভের সঙ্গে শুচি-অশুচি বোধের সম্পর্ক কোথায়? ব্যাস কেনই বা এই পার্টিকুলার লাইনটা মহাভারতে লিখলেন? কি বোঝাতে চাইছেন তিনি?
প্রশ্ন ৭ : দ্রুপদ যখন যাজের কাছে হাজির হলেন, যাজ বললেন, "বৃক্ষ থেকে ফল যদি আঁস্তাকুড়ে পড়ে...সেক্ষেত্রেও ফল সর্বদা বৃক্ষেরই থাকে...কখনোই সেটা আঁস্তাকুড়ের হয়ে যায় না"। অদ্ভুত কথা! দ্রুপদ তো কেবলমাত্র সন্তান চাইছেন। তাহলে যাজ "বৃক্ষ", "ফল", "আঁস্তাকুড়" এসব কি বলছেন? কেন বলছেন? ব্যাসই বা এইসব প্রলাপকে আলাদাভাবে মহাভারতে উদ্ধৃত করছেন কেন? কি বোঝাতে চাইছেন তিনি?
প্রশ্ন ৮ : পূর্ণাহুতি দেওয়ার কথা ছিল রানীর অর্থাৎ দ্রুপদের স্ত্রীর। তাহলে রানী যজ্ঞের শুরু থেকে যজ্ঞস্থলে উপস্থিত ছিলেন না কেন? এটা তো তাঁর স্বামীর জীবনমরণের প্রশ্ন...তাহলে এহেন ক্রুশিয়াল মোমেন্টে তিনি "স্নান করছিলেন" কেন? সম্ভাবনা দুটি। এক...তিনি নিজেই আসতে চাননি। দুই...যজ্ঞ এবং পূর্ণাহুতির টাইমিং সম্বন্ধে তাঁকে ভুল ইনফরমেশন দেওয়া হয়েছিল যাতে পূর্ণাহুতির সময়ে তিনি অনুপস্থিত থাকেন এবং ধৃষ্টদ্যুম্ন ও দ্রৌপদীর অগ্নিকুন্ড থেকে আবির্ভাব তাঁর অবর্তমানে ঘটে...অর্থাৎ এই ঘটনার কোনো সাক্ষী না থাকে। যদি প্রথম সম্ভাবনার কথা বিচার করি...যজ্ঞস্থলে নিজেই না আসতে চাওয়ার পিছনে কারণ কি থাকতে পারে? রানীও কি উপযাজের মতো এই ঘটনাকে মন থেকে মানতে পারছিলেন না? কেন?
প্রশ্ন ৯ : যজ্ঞ শেষে রানী এলেন। এসে বললেন, "এখন থেকে এরা যেন আমাকেই মা বলে মানে"। কথাটা লক্ষ্য করুন। কথাটা "আমাকে" নয়…"আমাকেই"। একটা "ই" এখানে অতিরিক্ত প্রয়োগ করা হয়েছে। কেন? এই একটা "ই" এক্সট্রা প্রয়োগের মাধ্যমে একটা অল্টারনেটিভ সম্ভাবনার কথা মাথায় আসে। "ওকে" নয়…"আমাকেই"। তবে কি "মা" বলে ডাকার জন্য দ্রৌপদী এবং ধৃষ্টদ্যুম্নের কাছে আরও কোনো অপশন ছিল? অন্য কোনো "মা"...অন্য কোনো নারী...যার কাছে এতদিন ধরে মানুষ হয়েছিলেন দু'জনে? আবার দেখুন, রানী কিন্তু একটাবারের জন্যেও দ্রুপদকে দেখিয়ে বললেন না, "আজ থেকে ওনাকেই তোমরা বাবা বলে মানবে"। কেন বললেন না? তবে কি এতদিন ধরে ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং দ্রৌপদী দ্রুপদকেই বাবা বলে জানতেন...তাই তাঁর পরিচয় দেওয়াটা রানী প্রয়োজনীয় মনে করেননি?
প্রশ্ন ১০ : যজ্ঞ থেকে আবির্ভূতা বলে দ্রৌপদীর আরেকটি নাম "যাজ্ঞসেনী"। কিন্তু দ্রৌপদীর জন্মের আগে উপযাজের সঙ্গে কথোপকথনের সময় উপযাজ দ্রুপদকে একবার "যজ্ঞসেন" নামে অভিহিত করেছেন। অর্থাৎ দ্রুপদের আরেক নাম যজ্ঞসেন। অর্থাৎ দ্রৌপদী যজ্ঞ থেকে আবির্ভূতা বলে বাই ডিফল্ট ওনার নাম যাজ্ঞসেনী...ব্যাপারটা এমন নাও হতে পারে। এমনটাও হতে পারে যে যজ্ঞসেনের মেয়ে বলে ওনার নাম যাজ্ঞসেনী। মজার ব্যাপার হলো, ব্যাস এই একবারই দ্রুপদকে যজ্ঞসেন নামে অভিহিত করেছেন এবং সেটা দ্রৌপদীর জন্মের আগে। এমনটা কেন? এটা কি ব্যাস ভুল করে করলেন না কি ইচ্ছাকৃতভাবে করলেন? উনি কি পাঠকদের এটা বোঝাতে চাইলেন যে "যজ্ঞসেনের মেয়ে বলেই ওর নাম যাজ্ঞসেনী...যজ্ঞ থেকে উৎপন্ন হয়েছে বলে নয়"?
প্রশ্ন ১১ : দ্রৌপদীর চরিত্রটা যদি আপনি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে দেখবেন, ওনার রকমসকম ঠিক আর্য নারীসুলভ নয়। তৎকালীন আর্য নারীরা স্বভাবে একটু নমনীয় হতেন। কুন্তী, গান্ধারী, সুভদ্রা ইত্যাদি মহাভারতীয় নারীরা সাধারণত বাক্যে মার্জিত ছিলেন...ফোরফ্রন্টে খুব একটা আসতেন না। দ্রৌপদী ঠিক উল্টো। দুর্যোধন ইন্দ্রপ্রস্থের চৌবাচ্চায় পরে যাওয়ার পরে দ্রৌপদী তাঁকে বলেছিলেন, "অন্ধের ছেলেটাও অন্ধ"। নিজের স্বয়ম্বর সভায় যখন কর্ণ ধনুকে জ্যা পড়াচ্ছেন, দ্রৌপদী অনায়াসে তাঁকে বলে দিয়েছিলেন, "সারথীর ছেলের গলায় আমি মালা দেবো না"। দুঃশাসন যখন তাঁর চুল ধরে টানতে টানতে কুরু রাজসভায় নিয়ে আসছেন, ওই অবস্থায় দ্রৌপদী চিৎকার করে বলছেন, "শুনে রাখ দুঃশাসন...তোর রক্তে আগে এই চুল ধোবো...তারপরে বাঁধবো...যতদিন না তোর রক্ত চুলে লাগাতে পারছি...ততদিন এই চুল খোলাই থাকবে"। অজ্ঞাতবাসের সময় কীচকের কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় যখন কীচক দ্রৌপদীকে সর্বসমক্ষে অপমান করলেন, দ্রৌপদী তখন কীচককে বলেছিলেন, "তুই আজ থেকে দিন গুনতে আরম্ভ কর...তোর সময় হয়ে গেছে"। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে যখন শ্রীকৃষ্ণ শান্তিদূত হয়ে হস্তিনাপুর যাচ্ছেন, দ্রৌপদী তাঁকে বলছেন, "আমার পাঁচটা স্বামী যে কতো বড় বীরপুরুষ সেটা তো আমার থেকে বেশী কেউ জানে না...কিন্তু কেশব তুমি তো আমার বন্ধু...তুমি আজ শান্তি চাইছো? আমার এই খোলা চুল তোমার নজরে আসছে না?" প্রকৃতপক্ষে কাটাকাটা কথা বলার জন্য পান্ডবরা দ্রৌপদীর সঙ্গে তর্কাতর্কিতে বিশেষ যেতেন না। দ্রৌপদীর এই স্বভাবটা ঠিক আর্য নারীসুলভ নয়।
উপরের এই এগারোটি প্রশ্নের উত্তর এবং তৎসম্পর্কিত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আগে আমি একটি ঘটনার কথা বলতে চাই। আজ থেকে প্রায় বছর দুয়েক আগে আমার গুরু মহাভারত বিশেষজ্ঞ শ্রী নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি'র বাড়িতে বসে প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে আমার এই অবজারভেশনগুলো ওনাকে শুনিয়েছিলাম। ওনার স্টাডিরুমের একটা চেয়ারে বসে আমি অনর্গল বকে যাচ্ছিলাম...উনি আরেকটা চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে শুনে যাচ্ছিলেন। এই এগারোটা পয়েন্ট বলবার পরে যখন আমি বললাম, "স্যার, আমার মনে হয়…."...তখনই উনি একটা হাত তুলে বলেছিলেন, "এসব কথা কখনোই লিখতে যাস না...লিখলে একদিন মার খেয়ে মরবি...দিনকাল খারাপ। আমি জানি তোর কনক্লিউশন কি হবে। তুই ঠিকই ভাবছিস...কিন্তু এই ভাবনার সাপোর্টিভ এভিডেন্স তুই কোথাও পাবি না...নিজের বক্তব্যকে কখনোই স্ট্যান্ড করাতে পারবি না। একটা কথা জেনে রাখিস...অলৌকিক বলে কিছু হয় না...মহাভারতে যেখানে যেখানে অলৌকিকতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে… সেখানে কিছু না কিছু অপ্রিয় সত্যকে লোকানো হয়েছে"।
আমার মনে হয় ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং দ্রৌপদী ছিলেন দ্রুপদ এবং কোনো এক অনার্য নারী বা শূদ্রাণী'র সন্তান...দ্রুপদের প্রথম যৌবনের ভুল...তাঁর অবৈধ সন্তান...যাদের তিনি আর পাঁচজনের থেকে লুকিয়ে রেখে ছিলেন। দ্রৌপদী এবং ধৃষ্টদ্যুম্ন জন্ম থেকে মানুষ হয়েছিলেন তাঁদের মা'র কাছে। কে সেই মা...জানা নেই...বেদব্যাস তাঁর ব্যাপারে মৌন।
দ্রোণের হাতে অপমানিত হওয়ার পরে দ্রুপদ প্রতিশোধের জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন। তিনি জানতেন, তাঁর এবং তাঁর পুত্র সত্যজিৎ ও শিখন্ডির পক্ষে দ্রোণের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাঁর দরকার ছিল বলবীর্য্যে ভরপুর একটি পুত্র সন্তানের। কিন্তু ওই বয়সে পুনরায় বাবা হওয়া হয়তো তাঁর পক্ষে অসম্ভব ছিল। যদিও বাঁ তিনি পুত্র উৎপাদনে সক্ষম হতেন...সেই পুত্র যুবক অবস্থায় যে একজন মহারথীই হতেন...সেই গ্যারান্টি ছিল না। তাছাড়া সেই পুত্র যুবক অবস্থাপ্রাপ্ত হওয়া অবধি যে দ্রোণ বেঁচে থাকবেন...সেটাও সিওর ছিল না। অন্য কোনো বীরপুরুষকে দত্তক নিয়ে যে তিনি নিজের কার্যসিদ্ধি করবেন...তারও উপায় নেই। কারণ সেক্ষেত্রে তাঁর নিজের সিংহাসন অসুরক্ষিত হয়ে পড়বে...তাঁর নিজের ছেলেদের উত্তরাধিকারও অসুরক্ষিত হয়ে পড়বে।
দ্রুপদের দরকার ছিল ইন্সট্যান্ট সলিউশন। এই অবস্থায় হয়তো তাঁর মনে পড়েছিল ধৃষ্টদ্যুম্নের কথা। তিনি নিজের সেই লোকানো ছেলের বাহুবল সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন (মনে রাখতে হবে ধৃষ্টদ্যুম্ন ছিলেন পাণ্ডবদের প্রধান সেনাপতি)। দ্রুপদ ঠিক করলেন, নিজের অবৈধ সন্তান ধৃষ্টদ্যুম্নকেই কাজে লাগাবেন। কিন্তু কিভাবে? ধৃষ্টদ্যুম্ন অবৈধ...কেউ তাঁর কথা জানে না...কিভাবে তিনি তাঁকে জনসমক্ষে হাজির করবেন? দ্রুপদ ঠিক করলেন, প্রথমে এই অবৈধ সন্তানকে বৈধতা দিতে হবে। কিন্তু কিভাবে? কেন? যজ্ঞের মাধ্যমে। যদি তিনি সবাইকে বলেন যে তাঁর এই ছেলে যজ্ঞের আগুন থেকে বেরিয়েছে, তৎকালীন ধর্মভীরু ভারতীয় জনগন তাঁর কথা নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করবে।
কিন্তু এই সাজানো যজ্ঞের ঋত্বিক কে হবেন? যিনিই হন না কেন...তাঁর কাছে অন্তত দ্রুপদকে সত্যি কথাটা বলতেই হবে এবং ঘুষ দিয়ে তাঁর মুখ বন্ধ করতে হবে। বড় মাপের কোনো ঋষির কাছে গেলে চলবে না...কারণ তাঁরা কেউ এই কাজটি করবেন না, উপরন্তু কথাটা পাঁচকান হয়ে যাবে...শাপশাপান্তও জুটতে পারে। দ্রুপদের চাই বি বা সি গ্রেডেড কোনো ঋষি।
দ্রুপদ পেয়ে গেলেন উপযাজকে। প্রচুর ঘুষের লোভ দেখালেন। কিন্তু উপযাজ রাজি হলেন না। সময়টা বর্ণাশ্রমের...সমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র...এই চারটি বর্ণ বর্তমান। এই সাজানো যজ্ঞের মাধ্যমে একজন শূদ্রকে ক্ষত্রিয়ের তকমা দিতে হবে। উপযাজ ভয় পেয়ে গেলেন...জানাজানি হলে ব্রাহ্মণ সমাজে তিনি একঘরে হয়ে যাবেন। কিংবা এই সাজানো যজ্ঞ করতে তাঁর ধর্মভীরু মন সায় দিলো না...এমনই কিছু একটা হবে। তিনি কেসটা রেফার করে দিলেন তাঁর দাদা যাজকে।
যাজ একটু ডেয়ার ডেভিল টাইপ...পাপ পুণ্য বোধ কম। নিজেকে এবং দ্রুপদকে যাজ বোঝালেন…"আরে শূদ্রের ঘরে মানুষ হলে কি হবে...ওরা তো আপনারই অর্থাৎ ক্ষত্রিয়েরই সন্তান" (বৃক্ষ হতে বৃন্তচ্যুত ফল যদি আস্তাকুঁড়েও পরে...সেই ফল বৃক্ষেরই থাকে...কখনোই আঁস্তাকুড়ের হয় না)। কিন্তু রানী? রানীর মুখ বন্ধ করবেন কি করে?
মোক্ষম গেম খেললেন দ্রুপদ। যজ্ঞের টাইমিং সম্পর্কে ভুল ইনফরমেশন দিলেন রানীকে। বললেন, "ঘন্টাপাঁচেক যজ্ঞ চলবে। পূর্ণাহুতি তো একেবারে শেষে হবে। তিন ঘণ্টার মাথায় তোমাকে খবর পাঠাবো...টুক করে স্নান সেরেই চলে আসবে"। প্রকৃতপক্ষে সাজানো যজ্ঞ চললো ঘন্টাদুয়েক। দু'ঘণ্টার মাথায় যখন দ্রুপদ রানীকে ডাক পাঠালেন, তখন রানী একেবারেই অপ্রস্তুত...স্নান হয়নি। উত্তর দিলেন, "স্নান সেরেই আসছি"। এসে দেখলেন পূর্ণাহুতি দিয়ে দিয়েছেন যাজ এবং পর্দার আড়াল থেকে ধৃষ্টদ্যুম্ন ও দ্রৌপদীকে বার করা হয়ে গেছে। গোটা ব্যাপারটার উল্লেখযোগ্য সাক্ষী মাত্র দু'জন...যাজ এবং দ্রুপদ!
আবার ব্যাপারটা এমনও হতে পারে যে দ্রুপদের মতলবের আঁচ রানী আগেই পেয়ে গিয়েছিলেন। নিজের সন্তানদের উত্তরাধিকার বিঘ্নিত হতে পারে বুঝে গিয়ে দ্রুপদের মতলবে সায় দেননি। তিনি হয়তো দ্রুপদকে বলে দিয়েছিলেন, "তুমি যা করছো করো...আমি এসবের মধ্যে নেই"। দ্রৌপদী এবং ধৃষ্টদ্যুম্ন আবির্ভূত হওয়ার পরে তিনি অনিচ্ছাসত্ত্বেও যজ্ঞস্থলে যান এবং দু'জনকে বলেন, "নিজেদের অতীত ভুলে যাও...এখন থেকে আমিই তোমাদের মা"(এখন থেকে এরা যেন আমাকেই মা বলে মানে)।
প্রিয় পাঠক, হয়তো এসবই আমার কষ্টকল্পনা। অল্পস্বল্প মহাভারত ঘেঁটে আমি যেটুকু বুঝেছি...তার একটা অংশ আপনাদের সামনে ফেলে দিলাম...সিদ্ধান্ত আপনাদের। আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে...বেদব্যাস সত্যি কথাটা লিখলেন না কেন? কেন জানেন? সত্যযুগের যেমন রেণুকা, ত্রেতাযুগের যেমন সীতা, ইলিয়াডের যেমন হেলেন...মহাভারতের তেমনই দ্রৌপদী...একজন সেন্ট্রাল ক্যারেক্টার...যাকে ঘিরে তৈরী হচ্ছে মহাভারতের ঘটনাসমূহ। এই সেন্ট্রাল ক্যারেক্টারের বেস যদি নড়বড়ে হয়ে যায়...গোটা মহাভারতের শিরদাঁড়া ভেঙে যাবে। রচয়িতা হিসাবে বেদব্যাস সেটা কখনোই চাননি বলেই আমার মনে হয়। কিন্তু তিনিও একজন ধুরন্ধর ন্যারেটর...সে যুগের স্টলওয়ার্ট ঋষিদের মধ্যে একজন...সত্যি কথাটা সরাসরি না বললেও, পরতে পরতে আসল ঘটনার ক্লু রেখে গেছেন। যেন বলতে চেয়েছেন, "যা বললাম...তার চাইতে অনেক বেশী বললাম না। কিন্তু আভাস রেখে গেলাম...দেখার চোখ থাকলে দেখে নে"। মহাভারতকে এমনি এমনি "পঞ্চমবেদ" বলে না।
মহাভারতের অন্যতম বিতর্কিত চরিত্র দ্রৌপদী। তিনি তাঁর পাঁচ স্বামীর মধ্যে সবচাইতে বেশী ভালোবাসতেন অর্জুনকে...কারণ স্বয়ম্বর সভায় অর্জুনই তাঁকে জিতেছিলেন। কিন্তু পাঁচ পান্ডবের মধ্যে দ্রৌপদীকে সবচাইতে বেশী ভালোবাসতেন ভীম। কুরু রাজসভায় দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় পাঁচ পান্ডবের মধ্যে চারজন নতমস্তকে বসেছিলেন...প্রতিবাদ করেছিলেন একমাত্র ভীম। চিৎকার করে বলেছিলেন, "যদি যুদ্ধক্ষেত্রে এই পাপিষ্ঠ দুঃশাসনের বুক চিরে রক্ত না খেতে পারি...তবে যেন আমি কোনদিন স্বর্গে গিয়ে নিজের পূর্বপুরুষদের এই মুখ দেখাতে না পারি"। বনবাসের সময় দ্রৌপদী একবার ভীমের কাছে কিছু পদ্মফুল চেয়েছিলেন। বিস্তর লড়াই করে ভীম সেই পদ্মফুল জোগাড় করেছিলেন। কীচকের হাতে অপমানিত হওয়ার পরে বাকি চারজনকে ছেড়ে দ্রৌপদী ভীমের কাছেই অনুযোগ করেছিলেন। তিনি জানতেন কীচকবধ যুধিষ্ঠির, নকুল এবং সহদেবের দ্বারা সম্ভব নয়। অর্জুন যে যুধিষ্ঠিরের অনুমতি ছাড়া এক পাও নড়বেন না সেটাও দ্রৌপদী জানতেন। একমাত্র ভরসা ভীম। সব শুনে ভীম দ্রৌপদীকে বলেছিলেন, "নিশ্চিন্তে থাকো...কীচক কালকের সূর্যোদয় দেখবে না"। পরের ঘটনা আমরা সবাই জানি। কুরুক্ষেত্রে দুঃশাসনের সঙ্গে যুদ্ধে দুঃশাসনকে পিটিয়ে আধমরা বানিয়ে তাঁর হাত ছিঁড়তে ছিঁড়তে ভীম বলেছিলেন, "এই সেই হাত না রে? এই হাত দিয়েই তো দ্রৌপদীর চুল ধরেছিলি?" দুঃশাসনের বুক চিরে রক্ত হাতে করে নিয়ে ভীম ছুটেছিলেন শিবিরে...দ্রৌপদীর হাতে সেই রক্ত দিয়ে বলেছিলেন ওই রক্ত দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে।
মহাপ্রস্থানের পথে চলেছেন পাঁচ ভাই এবং দ্রৌপদী। প্রথমেই পড়ে গেলেন দ্রৌপদী। ভীম চিৎকার করে যুধিষ্ঠিরকে বললেন, "মহারাজ...দ্রৌপদী পড়ে গেছে...দ্রৌপদী পড়ে গেছে মহারাজ"। যুধিষ্ঠির উত্তর দিলেন না...এগিয়ে চললেন। ভীম আবার জিজ্ঞাসা করলেন, "দ্রৌপদী কেন পড়ে গেল মহারাজ?" যুধিষ্ঠির উত্তর দিলেন, "অর্জুনের উপর পক্ষপাতিত্ব ছিল দ্রৌপদীর...এটাই ওর পতনের কারণ"।
অর্জুনের উপর পক্ষপাতিত্ব ছিল দ্রৌপদীর। কেনই বা থাকবে না? ঘূর্ণায়মান মাছের চোখে তীর তো অর্জুনই বিধিয়েছিলেন। এক স্বামী চেয়েছিলেন তিনি। অদৃষ্টের পরিহাসে পাঁচ স্বামী জুটে গিয়েছিলো তাঁর। সুখী হয়েছিলেন কি? মনে হয় না। তাঁর নিজের দেওর সবার সামনে বস্ত্রহরণ করবার চেষ্টা করেছিল, কর্ণ তাঁকে সবার সামনে "বেশ্যা" বলে অপমান করেছিলেন, রাজার মেয়ে এবং বউ হওয়া সত্ত্বেও বারোটা বছর কাটাতে হয়েছিল জঙ্গলে জঙ্গলে, এক বছর দাসীবৃত্তি করতে হয়েছিল, যুদ্ধে জেতার পরেও হারাতে হয়েছিল তাঁর পাঁচ সন্তানকে।
দুঃশাসন দ্রৌপদীর শাড়ি ধরে টানছেন। শাড়ি খুলছে তো খুলছেই...শেষ আর হয় না! কেন? কি ভাবে? এটা কি কোনো ম্যাজিক? শ্রীকৃষ্ণ কি সত্যিই অলৌকিক উপায়ে দ্রৌপদীকে শাড়ি সাপ্লাই করেছিলেন নাকি এই ঘটনার পিছনে দ্রৌপদীর জন্মরহস্যের মতোই অন্য কোনো ঘটনা রয়েছে? কোনো একদিন বলবো সেই কথা।
লেখাটা অত্যধিক বড় হয়ে যাওয়ার জন্য দুঃখিত।
1
বাঁশ ফল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন