আত্মার বৈশিষ্ট্য কি?
আত্মা এবং ঈশ্বর উভয় সচেতন (চেতন) এবং বিশুদ্ধ । উভয়ই অমর, অজাত এবং অনমনীয়।
কিন্তু মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, মহাবিশ্বের ব্যবস্থাপক, মহাবিশ্বের ধ্বংসকারী, অসীম জ্ঞান, অসীম শক্তি, অসীম সুখ ইত্যাদির মত অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য ঈশ্বরের রয়েছে, যেটা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
কোন কিছু অর্জন করার ইচ্ছা
কোন কিছু থেকে অপছন্দ (দ্বেষ)
চেষ্টা করার ইচ্ছা (প্রযত্ন)
সুখ অনুভব করা
দুঃখ অনুভব করা
জ্ঞান আছে
বৈশেষিক সূত্র ৩/২/৪ অনুসারে যখন আত্মা মরণশীল শরীরে থাকে তখন আত্মার বিস্তারিত বৈশিষ্ট্যগুলো হলঃ
শ্বাস গ্রহন
শ্বাস ত্যাগ
সংকোচন
শিথিলকরণ
মন এবং আত্মবোধ
চলাচল
ইন্দ্রিয় এবং কাজ করার অঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ
রূপান্তর।
আত্মা যখন একটি শরীরের মধ্যে থাকে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো উদ্ভাসিত হয়। যখন এটি শরীর ছেড়ে যায়, এই বৈশিষ্ট্যগুলো আর উপস্থিত থাকে না। এই সকল বিষয়গুলো হতে জ্ঞানীগন আত্মার অস্তিত্ব অনুমান করেন।
আত্মার আকার কি? এটা কি সারা শরীরকে পূর্ণ করে?
আত্মা মহাশূন্যের মাঝে একটি বিন্দুর মত। আত্মা বিন্দুর মত এবং জ্ঞানে সীমাবদ্ধ । ঈশ্বর আত্মার চেয়েও সুক্ষ্ম এবং অসীম জ্ঞানসম্পন্ন।
কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন যে একটি হাতির আত্মা একটি পিঁপড়া আত্মার চেয়ে বড়। এটা সত্য নয় । সকল আত্মা তাদের সম্ভাব্যতা এবং মাত্রায় সম্পূর্ণ সমান। বিভিন্ন আত্মার মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হল তাদের কর্মের ফল, যা তারা মুখোমুখি হয় তাদের বিভিন্ন কর্মের দ্বারা ।
সুতরাং আত্মা আকার পরিবর্তন করে না যখন এটি (মৃত্যুর পর) এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে গমন করে। শুধুমাত্র তার নিয়ন্ত্রণের স্থান পরিবর্তন হয় ।
তাহলে আপনি বলছেন যে ঈশ্বর আত্মার ভিতরে এবং বাইরে উভয়েই ? কিন্তু অন্য বস্তুটি কিভাবে থাকতে পারে যেখানে একটি বস্তু ইতিমধ্যে বিদ্যমান? অতএব, আত্মা যেখানে বিদ্যমান সেখানে ঈশ্বর বিদ্যমান থাকতে পারে না। তারা একে অপরের কাছাকাছি হতে পারে, কিন্তু ঈশ্বর আত্মার মধ্যে হতে পারে না।
দুইটি জিনিস তখনই একই স্থানে বিদ্যমান থাকতে পারে না, কেবলমাত্র যখন তারা একই মাত্রার ন্যায় আকারের থাকে । কিন্তু ঠিক যেভাবে লোহার মধ্যে সুক্ষ্মভাবে বিদ্যুতের উপস্থিতি থাকে, একইভাবে ঈশ্বর প্রতিটি আত্মার মধ্যে বাস করেন এবং প্রকৃতপক্ষে জগতের প্রত্যেকটি স্থানে বাস করেন। অতএব ঈশ্বর এবং আত্মার সম্পর্কটা হলো পরিব্যাপ্তকারী-পরিব্যাপ্তের শিকার, শাসক-শাসিত, পিতামাতা-সন্তান ইত্যাদি সম্পর্কিত।
আত্মা এবং ঈশ্বর কি কখনও এক হিসাবে একত্রিত হয়, নাকি সবসময় পৃথক থাকে?
আত্মা এবং ঈশ্বর কখনও পৃথক হয় না। কারণ পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে, ঈশ্বর আত্মার ভিতরে এবং বাইরে পরিব্যাপ্ত। সুতরাং, আত্মা কখনোই ইশ্বরের কাছ থেকে পৃথক হতে পারে না।
কিন্তু তার মানে এই নয় যে আত্মা কখনো ঈশ্বরে পরিণত হয় । যদি তাই হতো, তাহলে এমনটা ইতিমধ্যেই ঘটে যেত। সর্বোপরি, আত্মা এবং ঈশ্বর অনাদিকাল থেকে বিদ্যমান।
যাইহোক, যখন আত্মা অজ্ঞতার সমস্ত বীজ পুড়িয়ে দেয়, তখন এটি সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের সাথে সুসংগতভাবে কাজ করে। এখন এইরকম পরিস্থিতিতে, আত্মা সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বর আলোকিত হয়ে উঠে ঠিক যেভাবে যেভাবে বড় অগ্নিকুন্ডে একটি উত্তপ্ত লোহার টুকরা আগুনের একটি বল হয়ে ওঠে। এটি পরম সুখকর বা মুক্তির অবস্থা।
আমি বুঝতে পেরেছি আত্মা কি এবং ঈশ্বরের সঙ্গে তার সম্পর্কটা কি। কিন্তু এই জীবনে আমার কি করতে হবে? জীবনের উদ্দেশ্য কি?
এই জীবনের উদ্দেশ্য হল সঠিক কর্মের মাধ্যমে পরম সুখ বা মুক্তি অর্জন করা।
কীভাবে আমি সঠিক কর্ম সম্পর্কে জানতে পারি?
সঠিক কর্ম হচ্ছে ধর্ম অনুসারী কর্ম। ধর্ম আর religion এক নয়। ধর্ম মানে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। উদাহরণস্বরূপ, দগ্ধ করা আগুনের একটি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম এবং সিক্ত করা জলের ধর্ম। একইভাবে, আত্মার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম আছে। যাইহোক, অজ্ঞতার কারণে, এই অনুভুতি এবং ধর্ম অনুসারে কর্ম করা আমাদের মধ্যে ম্লান হয়ে গেছে। কিন্তু আপনি যদি লক্ষ্য করেন, দেখবেন ভিতরের কণ্ঠস্বর সবসময় আপনাকে নির্দেশনা দিয়ে থাকে । যখন আপনি ঐ ভেতরের কন্ঠস্বর অনুসরণ শুরু করেন, বাকি সবগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সঠিক পথে চলে আসে।
আপনি খুজে পাবেন যে, জালিয়াতি করা, নিষ্ঠুর হওয়া, চরিত্রহীন হওয়া, দেশপ্রেমিক না হওয়া, এবং অলস হওয়া এবং আরো অনেক কিছু আপনার কাছে অস্বাভাবিক মনে হবে। যখন আমরা স্ব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হতে শুরু করি, আমরা আরো বেশি সহজাত হতে তাড়না অনুভব করি- সুশৃঙ্খল হতে, প্রচেষ্টা করতে, সহানুভূতিশীল হতে, সত্যবাদী হতে, দেশপ্রেমিক হতে, বেদের জ্ঞান অনুসন্ধান করতে, সে আদর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে এবং পরম সুখের দিকে দ্রুত অগ্রসর হতে (তাড়না অনুভব করি)। এই সবই স্বাভাবিক ধর্ম। এতে এক জীবন লাগতে পারে, দুই জীবন বা বিভিন্ন জীবন লাগতে পারে, এবং ঈশ্বর নিশ্চিত করেন যে যাত্রাটি কখনোই ভাঙবে না।
আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে বৈদিক জ্ঞান সম্পূর্ণ স্বজ্ঞানমূলক (intuitive)।
ঈশ্বরের ন্যায় এই জ্ঞান ইতিমধ্যে আপনার মধ্যে আছে। অতএব, অন্ধ বিশ্বাস সম্পূর্ণরূপে প্রশ্নের বাইরে (অর্থাৎ অন্ধবিশ্বাসের প্রশ্নই আসে না)। এমনকি এটা বেদের ব্যাপারেও প্রযোজ্য। যাইহোক, বৈদিক সংস্কৃতির প্রতি কমিউনিস্টদের দ্বারা দেখানো সংশয়বাদ এবং অপ্রয়োজনীয় সমালোচনা এবং সবকিছুকে সন্দেহ করাও পশ্চাতবৃত্তির (অগ্রগতির বিপরীত) একটি ব্যবস্থাপত্র (recipe)।
এমন সব দলগুলি যারা ভয় বা প্রলোভনের মাধ্যমে কোন বইয়ের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস দাবী করে, ঈশ্বর প্রেরিত দূত, স্বর্গদূত, স্বর্গ এবং নরকে অন্ধ বিশ্বাস দাবী করে, তারা নিশ্চিতভাবেই আপনাকে ভুল কাজগুলি অনুসরণ করার দাবী জানাচ্ছে। তাদের কাছ থেকে দূরে থাকুন!
বাংলাদেশ অগ্নিবীর
সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন